চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ১৭
লেখা আশিকা জামান
সামনে একগাদা শাড়ীর সমাহার। নানা রঙ্গের নানা ডিজাইনের বলাই বাহুল্য। চারপাশে রঙ চকচকে দেয়াল আর দেয়াল জুড়ে রকমারি আলোর ঝলকানি। লুকিং গ্লাস আর আলো ঝকঝকে সন্ধ্যেয় পরিবেশটা আজ অন্যরকম সৌন্দর্য্যের আধাঁর হিসেবে অঙ্কনের চোখে ধরা দিচ্ছে।
অনন্যার একটা পীচ কালার শাড়ি নাড়াচাড়া করছে। খেয়াল বশত শাড়িটা গায়ের উপর মেলে ধরলো। অঙ্কন হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো। অবশ্য এখানে আসার পর থেকেই চোখদুটো বারবারই অনন্যাকেই দেখছিলো। যাই হোক শাড়িটা খুব সুন্দর। অনন্যাকে বেশ মানিয়েছে। অনন্যা শাড়িটা নামিয়ে রাখলো। মুডটাই খারাপ হয়ে গেছে। ইমিডিয়েট এদের থামানো দরকার নাহলে
ওদিকে বাকবিতণ্ডা বাজলো বলে!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অনীহা জেদ ধরেছে সে রিসেপশনে লেহেঙ্গা পড়বে। ওদিকে তৃষ্ণা ফুপিও জেদ ধরেছে অনীহাকে শাড়ি ই পড়তে হবে। আর মাঝখানে পড়ে তানভীর কাউকে না সামলাতে পেরে পালাবার পথ খুঁজছে।
অবশ্য এটাই যেন স্বাভাবিক। অঙ্কন ভ্রুক্ষেপহীনভাবে অনন্যার দিকে আবার মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো।
” তৃষ্ণা এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে?এখনকার যুগটাই আলাদা। তুই যদি এখন সেই আগের যুগটাই ধরে নিয়ে বসে থাকিস। তাহলে তো কিছু বলার নেই তাইনা! তাছাড়া রিসেপশনটা অনীহার এখানে ওর মতামত ইজ ভেরি ইম্পোর্টেন্ট।”
” ভাবি, তুমি কি কোনভাবে আমাকে ব্যাকডেটেড প্রমাণ করতে চাইছো? আমি ব্যাকডেটেড! ”
” আমি কখন এই কথা বললাম? দুই লাইন বেশি বুঝার স্বভাবটা তোর আজও গেলো না। এখন শাশুড়ী হচ্ছিস একটুতো ধীরস্থির হওয়া প্রয়োজন। ”
” যেহেতু অনীহা আমার ছেলের বউ তাই বেশি বুঝবো না কম বুঝবো সেটা আমিই ঠিক করবো। তোমাকে এত কথা বলতে তো কেউ বলে নি। এইজন্যেই লোকে বলে নিজেদের মধ্যে আত্নীয় করতে হয় না।”
” তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তোর ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্যে একেবারে পা ধরে বসে ছিলাম।”
এতক্ষণ অনীহা চুপ করে বসে ছিলো এবার সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ” প্লিজ সবাই চুপ করো। আমি শাড়ীই কিনব। প্লিজ তবু তোমরা চুপ করো। ”
তৃষ্ণা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো,
” আমি কি কঞ্জুস! কিপটা! তুই লেহেঙ্গা একটা কেন পাঁচটা কিন কিন্তু তোকে শাড়িই পড়তে হবে।”
” ঘাউরামি জীবনেও যাবে না। অনীহা দেখ দেখ পঁচা শামুকে পা কাটলে কেমন মজা পাওয়া যায় এবার বোঝ।” অনীলা মুখ ঝামটা মেরে বললো।
” আমাদের বউ শাশুড়ীর ব্যাপারে তোমাকেতো কেউ নাক গলাতে বলে নি। এই ব্যাপারে আর একটাও কথা হবে।”
অন্বেষার মাথা ব্যাথা করছে এক্ষুনি এখান থেকে সে চলে যাবে। অনেক হয়েছে আর না। অঙ্কনের হাত ধরে টানতে টানতে অন্বেষা বললো,
” ভাইয়া প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল। আর কিছুক্ষন থাকলে আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাব।”
অঙ্কন ও মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, ” হ্যাঁ চল। আমি যদি আগে জানতাম মা আর ফুপি দুইজন একসাথে শপিং এ আসবে ট্রাস্ট মি আমি কক্ষনোই আসতাম না।।এদের ফেস করা আর যুদ্ধ জয় করা একই জীনিস।”
” আহারে, তুইতো চান্সটা পেয়েছিলি আবারতো নায়িকার দেখা পেয়ে কেমন ড্যাং ড্যাং করে ফিরে এলি।”
অঙ্কন কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
” চলে যাব কিন্তু এক্ষুনি ..।”
কথাটা শেষ না করে আরেকবার অনন্যার দিকে তাকায়। অন্বেষা ও ভাইএর চোখ অনুসরণ করে তাকিয়ে পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বললো,
” ছেড়ে দে। ভাবিস না। এদের যদি কেউ সামলাতে পারেতো অনন্যাই পারবে রে।”
অঙ্কন ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।
অনন্যা উঠে দাঁড়িয়েছে। মুখে হাসির প্রগলভা।
” আন্টি, কিন্তু আমি যে কিছু বলবো।”
” তুমি আবার কি বলবে?”
তৃষ্ণা ভ্রুকুচকে প্রশ্ন করলো।
” আন্টি ধরো অনীহাকে তুমি শাড়ি পরালে রিসেপশনে। সবাই বললো বাহ্ কি সুন্দর বউ। সব্বাই খুশিতে গদগদ। কিন্তু বেচারি অনীহা সে শাড়িটা ঠিকমতো ক্যারি করতেই পারলোনা। এতে কি হবে ওর কনফিডেন্স লেভেলটা লো হয়ে যাবে। সারাক্ষণ উশখুশ করবে আর এরজন্য ওর ফেসটা ঠিক দেখাবে না। সবাই ব্যাপারটা আড়চোখে দেখবে। ভালোভাবে কেউ নিবে না। তুমি নিশ্চয়ই চাও বিয়েতে সব দ্বিধা ভুলে সবাই মন খুলে আনন্দ করুক।
তাহলে এবার তুমি একটু অনীহাকে দেখো ও কিন্তু ওর মতামত দিয়ে দিয়েছে তোমার ইচ্ছেমতো শাড়ি পরতে সে রাজি। এটা, যে ও মন থেকে বলেনি তোমার মন রাখতে বলেছে তুমি নিশ্চয়ই এটুকু বুঝেছো।
আর বিয়ে এমন একটা সুখকর মুহুর্তের সমষ্টি যেটা সবার মনে সারাজীবন অম্লান হয়ে থাকে। তেমনি অনিহার যতবার এই রিসেপশনের কথা মনে হবে ততবারই মনে পড়বে তোমার জন্য সে রিসেপশনে লেহেঙ্গা পড়তে পারেনি। তুমি নিশ্চয় চাইবে না তোমার কোন কাজে অনীহার সুখের স্মৃতিতে কিঞ্চিৎ কষ্টের আভাস থাকুক।”
তৃষ্ণা, উঠে দাড়াঁলো।
অনীলার দিকে কাষ্ঠ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” ভাবি চলোতো আমার সাথে।”
অনন্যা অবাক হয়ে তাকালো। কি হচ্ছে কিছুই সে বুঝতে পারছে না। হয়তো কেউই বুঝতে পারছে না।
” কোথায় যাবো?” অনীলা বিস্মিত হয়ে বললো।
” কোথায় আবার! আমাদের নিজেদের ও তো কেনাকাটা বাকি। চলো চলো।”
তৃষ্ণা অনীলার হাত ধরে টেনে বসা থেকে দাড়ঁ করিয়ে ফেললো। অনীলা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, ” কিন্তু অনীহা!”
” আমার মনে হয় অনীহা আর তানভীর ওদের যা যা কেনার দরকার ওরাই কিনতে পারবে। তাছাড়া সব ভাই বোন, অনন্যা ওরা তো থাকলোই। তুমি চলোতো..”
অনীলা হাসতে হাসতে বললো,
” তোর যে মাঝেমাঝে কি হয়। চল তাহলে।”
” কি রে ভাইয়া, কি বলছিলাম। দেখলিতো..
অনন্যা মেয়েটাকে কিন্তু আমার বেশ লাগছে।”
অন্বেষা ভাইয়ার কাধে হাত রাখতে রাখতে বললো।
” আমারতো মনে হয় মেয়েটার হিপ্নোটাইজ করার ক্ষমতা আছে। মা আর ফুপিতো শুরু থেকেই এবার বাকি সবার সাথে তুই ও যোগ দিচ্ছিস। এখনতো মনে হচ্ছে এই মেয়ের থেকে সাবধানে থাকা উচিৎ ।”
” হ্যাঁ, তাইতো। তুই কিরকম সাবধানে আছিস তাতো দেখাই যাচ্ছে। সেটা আর নাই বা বললাম।”
অঙ্কন বোধ হয় অন্বেষার বলা কথাটা শুনতে পেলো না হয়তো শুনেও এড়িয়ে গেলো। কেননা দৃষ্টিটা তখন অনন্যার দিকে নিবদ্ধ।
অনন্যা, চিন্তিত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়িয়েছে। তার এখন অতিজরুরী ভিত্তিতে বাড়ি ফেরা দরকার। মাত্রই বাবা ফোন করেছিলো তার নাকি পেট খারাপ করেছে। এই পেট খারাপ অনন্যার খুব চেনা! এটা আবার যে সে পেট খারাপ নয়! যতক্ষণ পেটে ভালো কিছু না পড়বে ততক্ষণ যে কিছুতেই সারবে না।
এর একটাই মানে, তার টম এন্ড জেরি বাবা মা নির্ঘাৎ কিছু একটা ক্যাচাল লাগিয়েছে। আর সিক্স সেন্স বলছে বাসায় ফিরেই তাকে চুলা গুতাতে হবে আর বাবার পছন্দের সব রীচ রীচ মেন্যু’র প্রিপারেশন করতে হবে। সাথে মায়ের দুই একটাও এড হতে পারে। আর সব শেষে সবাই পেট শান্তি করে ঘুমাতে যাবে। এসব ভেবেই অনন্যা এসির ভেতর ঘেমে উঠলো।
যাই হোক তৃষ্ণা আন্টিকে বলতে হবে যে সে আর থাকতে পারছে না।
তৃষ্ণা কিছুক্ষণ গাইগুই করলেও পরে ঠিকি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। তবে একা ছাড়েননি অনীলা ঠিক অঙ্কনকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মনে মনে তিনি মহা খুশি। ইতিমধ্যে ছেলের মনোভাব তিনি বুঝে ফেলেছেন। এবার খালি একটু আলাদা স্পেসের দরকার তবেই কেল্লাফতে। যাই হোক ফাইনালি ছেলের গলায় যে কোন অর্ধ উলঙ্গ নায়িকা ঝুলে পড়েনি এতেই উনি বেশ আয়েশ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। সাধারণ ভাবে ছেলে ছেলের বউ নাতি নাতনি নিয়ে সংসার করবেন এটাই উনার একমাত্র আশা।
” আমাকে কি ড্রাইভার মনে হয়? আমি ড্রাইভার।”
অনন্যা ভ্রুকুচকে সামনে তাকায়। এরপর ইতস্তত ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসতে বসতে বললো,
” আমি কখন সেকথা বললাম?
তাছাড়া আমি ভেবেছিলাম ড্রাইভার ড্রাইভ করবে। আর তুমি যে আসবে সেটাতো আমি জানতাম না।”
” কেন মা যখন তোমাকে বললো যে অঙ্কনের গাড়িতে উঠো তখন তুমি বুঝোনি যে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসবো।”
” নাহ্ সত্যিই বুঝিনি। তুমি কি এখন আমার সাথে ঝগড়া করতে আসছো।”
” না আমার এইমুহুর্তে কোন কিছুর ইচ্ছেই ছিলোনা। কেবল মা জোর করলো তাই।”
” ওকে, তোমাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করতে হবে না। আমি নেমে যাচ্ছি।”
অনন্যা নামতে উদ্যত হতেই অঙ্কন হাত ধরে আটকিয়ে বললো,
” থামো। এত তাড়া কিসের?”
” অঙ্কন প্লিজ আমার এখন বাসায় যাওয়াটা খুব দরকার। আমার ঝগড়া এক দমই ভাল্লাগছে না।”
” আমি ঝগড়া করছি তুমি কি করছো?
তুমিওতো ঝগড়াই করছো।
আচ্ছা একএকটা কথা বলো তুমিতো দেখি সবাইকে বেশ ম্যানেজ করে কথা বলো। কেবল আমার বেলাতেই এত চ্যাটাং চ্যাটাং কথা কেন?”
অনন্যা মুখ ভার করে বসে থাকলো।
অঙ্কন সেদিকে একবার তাকিয়ে থেকে তারপর নিচুস্বরে বললো,
” আমি কিন্তু উত্তরটা জানি তবুও তোমার মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম৷ সে যখন তুমি দেবেই না। তো আমি বলি।”
অনন্যা চমকে উঠে বললো,
” কি বলবে তুমি?”
” এই যে কথা কাটাকাটি খেলাটা তোমার খুব প্রিয়৷ আমার সাথে এই খেলাটা খেলতে তুমি পছন্দ করো। তুমি যথেষ্ট শান্ত আর ধৈর্য্যশীল হওয়া সত্ত্বেও আমার সাথে কপট রাগ দেখিয়ে তালে তাল দাও। আর সব থেকে মজার ব্যাপার হলো তুমি মনে মনে চাও যে আমি বরাবরের মত এই স্বভাবটাই ধরে থাকি। আর আমার হুট করেই রেগে যাওয়া ব্যাপারটা তুমি খুব উপভোগ করো। কি ঠিক বললাম তো।”
অনন্যা বিস্মিত আর হতবাক হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে এতোক্ষণে।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/