চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ১৬
লেখা আশিকা জামান
” মা আমি এক্ষুণি চলে যাচ্ছি। আমার মাথা ধরেছে! আমি গেলাম, তোমরা থাকো যার যা ইচ্ছে তাই করো পারলে গোটা দোকানটাই কিনে নিও প্লিজ এর মধ্যে আমাকে টাইনো না।” অঙ্কন চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললো।
এরপর আপনমনে চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে নির্বিকারভাবে সামনের দিকে পা বাড়ায়।
অনীলা কিছুক্ষণ গাইগুই করেও ছেলেকে আটকে রাখতে পারলেন না। ভেবেছিলেন ছেলে আসার পূর্বে একটু শরীর খারাপের অভিনয় করবেন কিন্তু কে জানে মহারাজা পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে এত দ্রুত এসে পড়বেন!
অনীলা মার্ভেলাস জুয়েলার্স এর শোরুমে একটারপর একটা জুয়েলারি নামিয়েই চলেছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। কোনটা ছেড়ে কোনটা নিবেন। এমনি এক সিদ্ধান্তহীনতায় অনীহার লাফালাফি! সে এমন সব ডিজাইন পছন্দ করছে যা দেখে অনীলার মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড়। কিছু বলতেও পারছেন না আবার না ও করতে পারছেন, এ এক জ্বালা!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অদূরে অন্বেষা একা একা বোর হচ্ছে৷ তার ও অঙ্কনের মত মাথা ধরেছে৷ এখনো অনেক বাকি শাড়ি থেকে শুরু করে আরো কত রকমের এক্সেসরিস! অনীহা আর মা এই দুই স্ক্রু ঢিলার সাথে শপিং এ আসা আর আনলিমিটেড যন্ত্রণাকে বরণ করে নেয়া একই জীনস। না হলেও ১০০ টা শোরুমে ঘুরাবে, এটা না ওটা, ওটা না তারপরের টা এভাবে একটার পর একটা ক্লান্তিহীন ট্রায়াল দিতে থাকবে।
তার উপর তানভীর ভাইয়ার কস্টিউমস! এই জন্যেই ভাইয়াকে ডেকে আনা হয়েছিলো। তাও আবার মিথ্যে বলে যে মা শপিং এ এসে হঠাৎ ই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ব্যাস অঙ্কন চৌধুরী কপোকাত! মা আর বোনের অবস্থা স্বচক্ষে অবলোকন করে অঙ্কন যে আর একমুহূর্তও দাঁড়াবে না এটা অন্বেষা ভালোভাবেই জানে। কিন্তু সে কোন অজুহাতেই পার পাবে না। আগামী কয়েক ঘন্টা তাকে এসব সহ্য করতে হবে।
এসবই ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই চোখটা এস্কেলেটর উপর আটকে যায়।
তার গুণধর ভাইয়ের এতোক্ষণে শপিং মল পার হবার কথা ছিলো কিন্তু সে আবার ফিরে আসতেছে! কিন্তু কেন?
ঠিক তখনি অন্বেষাকে অবাক করে দিয়ে অঙ্কনের পেছন পেছন অনন্যা, তৃষ্ণা ফুপি আর তানভীর সিক্সথ ফ্লোরে এসে নামে। ও এই তাহলে ভাইয়ার প্রত্যাবর্তনের আসল কারণ। অন্বেষা দূরে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাতে থাকলো সাথে দাঁতগুলোও বের করলো যাতে অঙ্কনের মনোযোগ সহজেই আকর্ষিত হয়।
” হ্যাঁরে অঙ্কন তোর মা, অনীহা ওরাও তাহলে এসেছে? আগে জানলেতো সবাই একসাথেই আসতে পারতাম।”
” তা তে কি কোইন্সেন্ডলিতো একসাথে হয়েই গেলে।”
তৃষ্ণা হাসতে হাসতে বললো, ” ঐ আরকি। তা তুই কি চলে যাচ্ছিলো নাকি মাত্রই আসলি বুঝলাম না কিছুই।”
অঙ্কন যেন বিব্রতবোধ করলো এটা সকলের চোখ এড়ালেও অনন্যার চোখ এড়ায় নি। তাছাড়া কথাবলার সময় বারবার অনন্যার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো আর প্রতিবারই অনন্যার চোখে ধরা খেয়ে যাচ্ছিলো। ব্যাপারটা সত্যিই বিব্রতকর।
অঙ্কন মুখ খোলার আগেই অন্বেষা আগমন ঘটে। তবে মুখ ফসকে নয়, সে ইচ্ছে করেই বলতে লাগলো,
” ভাইয়া তুই না চলে…”
এটুকুই বলতে পেরেছিলো। বাকীটুকু বলা হয়ে উঠেনি৷ তার কিঞ্চিৎ পূর্বেই অঙ্কন অন্বেষার মুখ ছাঁপিয়ে হাত ধরে অস্বাভাবিকভাবে টানতে লাগলো। ব্যাপারটা এতোটাই দৃষ্টিকটু একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।
নিরাপদ দূরত্বে আসা মাত্রই অঙ্কন অন্বেষার হাত ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
” এই কথাটা ওদের সামনে না তুললে তোর হচ্ছিলো না! তুই কি কিচ্ছু বুঝিস না।”
” কে বলেছে কিচ্ছু বুঝিনা! তুই যে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস এটাতো ঠিক বুঝতে পারছি।”
“কচু বুঝেছিস। যা নারে যা কি কি কিনবি একটু ভালো করে দেখগে। আমার ব্যাপারে উল্টাপাল্টা কথাটা একটু কম বলার চেষ্টা কর এবার থেকে নাইলে কিন্তু আমি খুব রেগে যাবো।”
” তুই যাবি রেগে তাও আমার উপর
এমনটা কখনো হয়েছে! হয়নিতো। আর হবেও না। একটা সত্যি কথা বলবো?”
” বল। না করেছে কে? তাছাড়া আমি না করলেও যে তুই বলবি এটাতো জানা কথা।”
” তোর হবু প্রেমিকার সামনে তোর প্রেস্টিজ আই মিন তুই যে ড্যাম কেয়ার মার্কা এটিটিউড সব সময় দেখাস এটা একেবারের জন্যেই ধূলোয় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিলাম তাও স্বইচ্ছায় স্বজ্ঞানে। আফসোস সেটাও তুই হতে দিলি না।”
অঙ্কন খুঁক খুঁক করে কাঁশতে লাগলো। অন্বেষা তাই দেখে একটু বিচলিত বোধ করলোনা বরং ভ্রুকুটি করে বললো,
” ভাইয়া, পানি খাবি। একটু খা। দেখনা কেমন তরতর করে নার্ভটা কুল হয়ে যাবে।”
” এই তুই থামবি। আমি ঠিক আছি।”
অঙ্কন রাগে গজগজ করতে করতে অন্যদিকে হাটা ধরতেই অন্বেষা চেঁচিয়ে বললো,
” তুই যে আগামী কয়েক ঘন্টা ঠিক থাকতে চাইলেও ঠিক থাকতে পারবিনা ভাইয়া। আর একটা কথা আমাকে আটকাতে পারলেও মা আর অনীহা মেবি এতোক্ষণে তোর প্রেস্টিজ পানচার করে দিয়েছে। গিয়ে দেখতে পারিস। ”
অঙ্কন ঘুরে দাঁড়িয়ে কটমট করে বললো, ” আমার এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে। আমি চলে যাচ্ছি এবার সবাই হ্যাপি।”
তার খুব রাগ হচ্ছে৷ সে এক্ষুনি চলে যাবে। চলেইতো গিয়েছিল আবার এই সার্কাস পার্টি দেখার জন্য ফিরে আসার কি খুব দরকার ছিলো।
” অঙ্কন, বাবু আমার আমি জানতাম তুই যেতেই পারিস না। মিথ্যে বলেছি বলেইতো আর মায়ের উপর আর রাগ করে থাকা যায়না। তাই না বাবু।”
পেছন থেকে মায়ের কথা শুনতে পেয়ে অঙ্কন মায়ের দিকে বিব্রত ভঙ্গিতে তাকায়। মায়ের মুখে যতোবারই বাবু ডাক শোনেছে ততোবারই একটা না একটা উদ্দেশ্য ঠিকি ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে। এবার যে কি বলে বসবে কে জানে!
তবে এই মুহুর্তে অস্বস্তির আরেকটা কারণ হলো মায়ের সাথে অনন্যাও দাড়িয়ে আছে। ওর মুখ চোখ দেখে মনে হচ্ছে ও নিশ্চয়ই বিড়বিড় করে বলেছে, ” এতবড় দামড়া ছেলেকে আবার বাবু বলা হচ্ছে।
বাবু, খোকা বাবু
মায়ের আচলের তলায় থেকে
করো খালি কাবু কাবু!!”
নিজের অজান্তেই অঙ্কন হাসতে লাগলো।
” কি হলো হাসছিস কেন?”
অঙ্কন লজ্জা পেয়ে বললো, ” কি যেন বলবে বলো।”
অনীলা কিছু মনে করার ভাণ ধরে বললো,” আমি কি কিছু বলতে এসেছিলাম? ও মনে পড়েছে একটা রিং পছন্দ করে দে না বাবু।”
অঙ্কন সহাস্যে বললো, ” চলো।”
অনীলা সামনে হাটছে পেছন পেছন অঙ্কন আর অনন্যা।
অনীহা এসে অন্বেষা কেও টেনে নিয়ে গেছে শাড়ী পছন্দ করে দেয়ার জন্য।
” গরজিয়াস! ইউ আর লুকিং গরজিয়াস!”
অনন্যা ভ্রুকুচকে বললো, ” আমাকে বলছো? যদি আমাকে বলো তাহলে বলবো আমি অতি সাধারণ সাজে সাধারণ ভাবে সালোয়ার কামিজ পরেছি। এটাকে গর্জিয়াস বললে তোমার হিরোইনদের তো অপমান করা হবে। ইট’স নট ফেয়ার। আর একটা কথা তোমার সাথে ঘুরা বাকি সেলেব্রেটি গার্লদের মত আল্ট্রামর্ডান ওয়েস্টার্ন ড্রেসাপ ক্যারি করতে আমি পারি না। তাছাড়া ইচ্ছেও নেই। ”
” তোমাকে তো কেউ ক্যারি করতে বলিনি। নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ট থাকাটাই কি বেটার নয়!”
” ওয়েট। তোমাকে এই কথাটা কে বললো আমি নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ট নই!”
” কে যে বললো সেটাতো বলতে পারছিনা। তবে একটা কথা বুঝতে পারছি, আমার হিরোইনদের প্রতি তো তুমি খুউব জেলাস!”
কথাটা শোনামাত্র অনন্যা ঘুরে দাঁড়ালো। রাগে গালদুটো টমেটোর মত লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। নাকের ডগায় তীক্ষ্ণ রাগের রেখা ফুটিয়ে খলবিল করে উঠলো, ” আমি মোটাও জেলাস ফিল করিনি। ইনফ্যাক্ট কোন কারণ নেই। আমি খামোকা কেন জেলাস ফিল করবো? যা মনে হয় তাই একদম বলবে না।”
” কি রে অঙ্কন ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস দুজনে। এদিকে আয়।”
অঙ্কন কথা না বাড়িয়ে মায়ের দিকে যেতে থাকে। অনন্যাও পেছন পেছন আসে।
” দেখতো অঙ্কন কোনটা নেবো।”
অঙ্কন একটা ছয় ক্যারেটের ডায়মন্ড রিং হাতে নিয়ে মায়ের দিকে ইশারা করে।
অনীলার মুখটা হা হয়ে যায়।
” ওয়াও কি সুন্দর! অনন্যা দেখোতো রিং টা কেমন, পছন্দ হয়।”
অনন্যা বিব্রত ভঙ্গিতে বললো, ” হ্যাঁ খুব সুন্দর।”
” মা,এটা কার জন্য নিলে সেটাতো বললেনা?” অঙ্কন কৌতুহোলি দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।
” খুউব স্পেশাল একজনের জন্যে। সময় হলে দেখতে পাবে।” অনীলা একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে অনন্যার হাত ধরে বললো,
” চলো, চলো তৃষ্ণা তোমাকে ডাকছে। শাড়ি পছন্দ করতে হবে না।”
” হ্যাঁ, চলুন। ”
অনন্যার পেছন পেছন অঙ্কন ও যেতে থাকে।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/