চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে
লেখা আশিকা জামান
নিনিতের ঘুম ভেঙেছিলো ভোরেই। ধাতস্থ হতেই তার খেয়াল হয় সাইমুন ওঁকে আষ্টৃপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। আৎকে উঠে নিজের দিকে তাকায়। জোর খাটিয়ে সাইমুনকে সরিয়ে দেয়ায় তারও ঘুম ভেঙে যায়। বলাবাহুল্য স্বস্তির ঘুমটার অকাল বোধঁনে সে কিঞ্চিৎ বিরসমুখে তাকায়। চোখ পড়ে যায় নিনতের আৎকে উঠা মুখটার দিকে।
” তুই এখানে কী করছিস!”
নিনিতের চোখেমুখে ভয়, উৎকন্ঠা, দুশ্চিন্তার ছাঁপ।
” না-মানে। তুই কালকে কাঁদতে কাঁদতে আমার কাধে মাথা দিয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে গিয়েছিলি। তোর ঘুমটা ভাঙ্গাতে ইচ্ছে করেনি। এই অবস্থায় তোকে ফেলে যেতে পারিনি।” গলায় অনুনয় ঝরে পড়ছিলো।
” আর সেই সুযোগে তুই…
ছিঃ…।” নিনিতের চোখে হুট করে কোথা থেকে যেন একদল কান্নারা নেমে এলো। ভাসিয়ে দিয়ে গেল দু’চোখের কোণ।
” বিশ্বাস কর! আমি তোর গায়ে ফুলের টোকাও দেইনি। প্লিজ এইভাবে অবিশ্বাস করিসনা। আমি তোকে ভালোবাসি নিনিত।”
সাইমুন নিনিতের হাত আকঁড়ে ধরে বলতে লাগলো।
ঠিক তখনই দরজা নক হওয়ার শব্দে দু’জনেই স্তম্ভিত হয়ে তাকায়।
নিনিত দিশোহারা হয়ে বলল,
” এবার কী! আমার মানসম্মত সব চুলোয় যাক সেটাইতো চেয়েছিলি। তাই হচ্ছে। এবার খুশিতো!
” আশ্চর্য নিনিত! কে কী ভাবলো না ভাবলো তাতে আমার যায় আসেনা। আমি জানি আমি কী করেছি কতটা করেছি! আর যাই হোক মানসম্মান খুঁয়ানোর মতো কিছু আমরা করি নাই।”
” তোর বোধ- বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। তুই এক্ষুনি চলে যা।”
এবারও বেশ কয়েকবার নক হওয়ার শব্দ হচ্ছে।
সাইমুন দরজা খুলে অনন্যাকে দেখে চোরের মতো বের হয়ে যায়। চোখেমুখে চাপা রাগের ছাঁপ। এদিকে নিনিতের দু’চোখে ভরা জল। ওর মাথায় কিছুই ঢুকছেনা।
” সাইমুন এখানে কী করছে। এতসকালে ও এখানে কেন!”
কথাটা বলেই বিছানার দিকে চোখ পড়ে যায়। হুট করেই একটা উড়ো চিন্তা মাথায় চেপে বসে। বেশ সন্দেহ নিয়ে বলতে লাগল,
” সাইমুনের সাথে তোর কী! ও এখানেই ছিলো। ”
নিনিত চমকে উঠে তবে এই চমকানো মুখটা ঢাকতে অহেতুক রেগে যায়।
” এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।”
” নিনিত শাট আপ! কী হয়েছে এমন করছিস কেন? সাইমুন ইচ্ছাকৃতভাবে তোকে কিছু করেছে। বলনা কী হয়েছে।”
” তুই তোর হবুবরের সাথে যাচ্ছেতাই করছিস কই আমিতো কিছু প্রশ্ন করিনা। দেখেও না দেখার ভাণ ধরে থাকি। তুই বিয়ে না করেই ঢ্যাং ঢ্যাং করে রাত কাটিয়ে ফিরলি। তোর লজ্জা করেনা।”
” নিনিত আমাকে তোর তাই মনে হয়!আমাকে এই চিনলি। আমরা বিয়ে করেছি!” অনন্যা চিৎকার করে কথাটা বলে ফ্লোরে বসে পড়লো।
নিনিতের এই অচেনা রুপ দেখে তার দু’চোখ ঝাপসা হতে লাগল।
নিনিত কতক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলো। তারপর উঠে গিয়ে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরলো
” অনন্যা, আমার মাথা কাজ করছেনা। জানিনা কী থেকে কী বলছি। মাফ করে দে!”
এরপর একে একে ঘটে যাওয়া সব বলতে থাকে। অনন্যাও বলতে থাকে। এতোদিন পর কাউকে সবটা বলে অনন্যাও যেন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
★★★★★★
ব্রেকফাস্ট করেই সবাই আপনমনে হাটছিলো লেক সাইড রোড ধরে।
পোখরার অন্যতম সৌন্দর্য ফেওয়া লেক। এ লেকের পাশ দিয়েই গড়ে উঠেছে এখানকার পর্যটন বাণিজ্য। সেজন্যই এটা লেকসাইড রোড। রোডের দু’পাশে অসংখ্য হোটেল-রেস্টুরেন্ট। আরও আছে ট্রাভেল এজেন্সি, গরম কাপড়, চিত্রকর্ম, গহনা, চা, ঐতিহ্যবাহী ও পর্যটন স্মারকসহ নানা পণ্যের দোকান। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন লেকসাইড রোড এলাকাটি জমজমাট নানা দেশের পর্যটকের ভিড়ে। তবে রোডে গাড়ি চলাচলের তেমন একটা আওয়াজ নেই। আসলে এখানকার চালকরা খুব প্রয়োজন না হলে হর্ন দেন না। তাই পাশ দিয়ে গাড়ি চলে গেলেও খুব একটা টের পাওয়া যায় না। আর পুরো এলাকায় কোথাও কোনো ময়লা-আবর্জনা দেখা যায় না। কারণ, শহর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে খুবই সচেতন। তারা এ শহরকে পুরোটাই পরিবেশ ও পর্যটনবান্ধব হিসেবে গড়েছেন।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে ফেওয়া লেকের পাড়ে আসে। রেস্টুরেন্ট ও পথের দু’পাশের দোকানগুলোতে পর্যটকের ভিড়। একটা রেস্টুরেন্টে বসে সবাই চা খায়।
লেকের উপর ভেসে থাকা লাল, নীল, হলদে, গোলাপি, সবুজ রঙ বেরঙের নৌকা যেন সৌন্দর্য্য আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। এগুলো ভাড়ায় পাওয়া যায়, প্যাডেল বোট ও পালতোলা নৌকাও পাওয়া যায়। সময় হিসেব করে ভাড়া মেটাতে হয়। লেকের প্রবেশ পথেই টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ভিনদেশী পর্যটকদের চেয়ে সার্কভুক্ত দেশের জন্য টিকেটের দাম অনেক কম রাখা হয়। লেকের মাঝে একটি মন্দীর আছে, নাম “বারাহি হিন্দু মন্দির”। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই নৌকায় পার হয়ে মন্দিরে যাচ্ছে অনেক পর্যটকও যাচ্ছে সেখানে। নৌকা নিয়ে ফেওয়া লেকে না ঘুরলে ভ্রমনটাই বৃথা।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
এখানে নৌকার ভাড়া নির্ধারন করে দেয়া। তাই দামাদামির কিছু নাই। ছোট এবং বড় দুই ধরনের নৌকা আছে। ওরা একটা বড় নৌকা নেয় ৮ জন অনায়াসেই উঠতে পারলো। অনন্যার বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিলো চোখ ধাঁধানো সুন্দর এই লেকের দিকে। হঠাৎ করে দেখলে ইউরোপের কোন লেক মনে হতেই পারে। পাহাড়ের গা ঘেষে চলতে কার না ভালো লাগে!
অনেককে দেখা গেল প্যারাগ্লাইডিং করছে। অঙ্কন সেদিকে তাকিয়ে বলল,
” অনন্যা, একটা চান্স নিব।”
অনন্যা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
” নো। হাত-পা ভাঙ্গার শখ হয়েছে বুড়ো বয়সে।”
” কী বলো এখনো ছেলে-মেয়ের বাবা হলাম না আর তুমি বলছো বুড়ো হয়ে গেছি। এই কথাও শুনতে হলো!”
” হ্যাঁ শুনতে হলো এবং যতবার উদ্ভট ইচ্ছে হবে ততবার আমি এইগুলাই বলব।”
” তুমি ভয় পাচ্ছো। ভীতুর ডিম প্যারাস্যুটে একজন এক্সপার্ট থাকবে। তাই হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।”
” সে যতবড় মহামানবই থাক আপনি যাচ্ছেন না। কথা বুঝা গেল।”
” জো হুকুম ম্যাডাম। আপনার কথা কী আমি ফেলতে পারি।”
নেহাকে বেশ কয়েকবার ঘুরঘুর করতে দেখা গেল সাইমুনের আশেপাশে। কিছু বলতে চেয়েও সযত্নে লুকালো একান্ত বাধ্য হয়ে। সত্যি বলতে কোন স্পেস পাওয়া গেলনা আলাদা কথা বলার। কাল রাতে সাইমুন তার ঘরে ছিলোনা এটা নিশ্চিত। সে বেশ কয়েকবার সাইমুনের রুমের সামনে পায়চারি করেছিলো। অস্থির রাত পার করেছে ফোন না তুলায়। কাল রাতে কোথায় ছিল এই প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।
আল্ট্রা লাইট এয়ারক্রাফটের দিকে সাইমুন বিষন্ন মুখে তাকিয়ে আছে। অন্যসময় হলে হয়তো চান্সটা সে লুফে নিত। কিন্তু আজ আর সেই ইচ্ছে বা শক্তি কোনটাই অবিশিষ্ট নেই। যতবার নিনিতের দিকে চোখ পড়ছে ততবারই অজানা ব্যাথায় সে কুকঁড়ে যেতে থাকলো।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কীরে তানভির, এই আল্ট্রা লাইট এয়ার ক্রাফটে চড়বি! একটা চান্স নিয়ে নে।”
” ভাই আমার ভয় লাগে। এই অবাক করা জিনিসটায় চড়ার ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু! ”
অনীহা মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
” কিন্তু আমি তোমাকে একা যেতে দিচ্ছিনা। এই আজব জীনিসটা কেমন উপরে উঠেই ইঞ্জিন বন্ধ করে দিচ্ছে তবুও উড়ছে! কি আশ্চর্য! তুমি গেলে আমাকেও নিতে হবে।”
” এখানে পাইলট ছাড়া আর একজন বসতে পারে। তোমাকে কিভাবে নিব।”
” থাক, কারো যাওয়ার দরকার নাই আর ১৫ মিনিটের জন্য ৬ হাজার রুপি খুঁয়ানোরও প্রয়োজন নেই।”
অনীহা কথাটা বলেই চুপ করে গেল।
” সাইমুন তোর রুম কাল রাতে লক করা ছিল কেনরে! কোথায় গিয়েছিলি?”
তানভীরের কথা শুনে সাইমুন নিনিত দু’জন একসাথে চমকে উঠলো। কিছুক্ষণ কোন কথা বলতে পারলোনা কেউ!
কিছুটা ধাতস্থ হয়ে সাইমুন নিজেই হুট করে বলে বসলো,
” সবাই আছিস আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিলো!”
সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেও নিনিত ভয়ার্ত চোখে চেয়ে থাকল। সাইমুন কী বলতে চাইছে ও জানেনা এমনকি বুঝতেও পারছেনা।
বুঝে থাকলেও এই ছেলেকে বাধা দেয়া কোনমতেই সম্ভব নয়।
” আমি নিনিতকে ভালোবাসি!”
কথাটা শোনামাত্র গোটা পরিবেশটাই কেমন গুমোট অন্ধকারে ছেঁয়ে গেল।
” সাইমুন প্লিজ আর একটাও কথা ও
বলবিনা তুই। আমি তোকে ভালোবাসি না। বলেছিনা তোকে!”
নিনিত অগ্নিগরম চোখে চেয়ে বলল।
দীশা চট করে রেগে গিয়ে বলল,
” থাক নিনিত ন্যাকামি আর না করলেও চলবে।”
নেহা রাগে, দুঃখে উঠে দাঁড়ায়। এখানে সে আর একমুহুর্তও থাকবেনা। নিনিত! নিনিত তার সাথে এতবড় বেঈমানী করবে এটা স্বপ্নেও ভাবেনি। সাইমুনের সাথে নেহার যুগলবন্দী করিয়ে দেয়ার কথা ছিল নিনিতের! আর শুরু থেকেই সে সব জানতো। আর আজ কীনা নিজেই সাইমুনের সাথে জোড় বেধেছে। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। দীশা নেহার হাত ধরে বলল,
” দাঁড়া! আমিও যাব তোর সাথে।”
নিনিত আহত চোখে তাকায়। কাতর সুরে বলল,
” নেহা, প্লিজ যাসনা। আমার কথাটা শোন!”
নেহা পেছনে ফিরেনা গটগট করে চলে যায়। নিনিতের দু’চোখ জলে ভরে যায়। অনন্যা উঠে আসে। এরকম পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবে বুঝতে পারেনা।
” নিনিত, প্লিজ শান্ত হ। নেহাকে যেতে দে। ওর একটু আলাদা স্পেস দরকার। আমি না হয় পরে ওর সাথে কথা বলব।”
চলবে…
Next part ta tara tari din plz