চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ১৩
লেখা আশিকা জামান
অনন্যা এক ধ্যানে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। দুইপাশের দোকানপাট, মানুষজন, ভীড় ঠ্যালাঠ্যালি, কখনো বা কোথাও কপোত কপোতি লাজুক হেসে হাত ধরে হেটে চলেছে, স্কুল, কলেজ, মসজিদ,
আবার মানুষের কোলাহল, রিক্সায় ঘোমটা টানা নববধূ পাশে স্বামী হয়তো কোন মধুর সময় পার করছে দুজনের চাহনিতেই লজ্জার ছাপ স্পষ্ট, ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আবার একদল বন্ধুর হল্লা পনা, এইসব মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করছিলো। সত্যি বলতে আজ তার সবকিছুই কেমন অন্যরকম ভালো লাগছে।
” বাহিরে দেখা শেষ হলে এদিকেও একটু নজর দিলে বোধ হয় খুব একটা ক্ষতি হবেনা!” অঙ্কন একটু কাশলো। হয়তো মনোযোগ কাড়তে চাইলো।
” ওহ, সরি।” অনন্যা চমকে অঙ্কনের দিকে চাইলো। মানুষটা আহত দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সেদিকে তাকিয়ে কেমন যেন এক অপরাধবোধ কাজ করতে থাকলো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
” সরি, বলার কিছু কি হয়েছে? ওভাবে মুগ্ধ হয়ে কি দেখছিলে?”
” রাতের শহরটাকে আমার চমৎকার লাগে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পিচঢালা রাস্তায় হাত ধরে হাটঁতে খুব ভালো লাগে। মৃদু বাতাসে আর চাঁদের আলোয় রাতের শহরটাকেও দেখবেন কেমন মোহনীয় লাগে। জানেন আমি আর ভাইয়া আগে প্রায়শই কাউকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যেতাম। রাতের নিস্তব্ধতায় হাটতে ভালো লাগতো। অবশ্য এই মুগ্ধতা কিছুটা বাবার থেকে ইনফ্লুয়েন্সড হয়েছে। ছোটবেলায় বাবার আঙুল ছুঁয়েই মধ্যরাতে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাটতাম। এমন কোন উইকেন্ড নেই যেদিন আমি বাবা আর ভাইয়া না ঘুরতে যেতাম। মা এসব পছন্দ করেনা আর আমরাও জোর করতাম না। আমরা বড় হতে হতে বাবাও ব্যাস্ত হয়ে পড়ে তারপর একদিন ভাইয়াও ফুডুৎ! আর আমিও এখন বড্ড ঘরমুখো। তাই এখন আর আগের মতো তেমন সময় কাটানো হয় না।”
কথা বলতে বলতে অনন্যার চোখদুটো কেমন চিকচিক করে উঠলো। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ” থ্যাংকস, আপনার জন্যে তবুও অনেকদিনপর লং ড্রাইভে যাওয়া হলো।”
অঙ্কন উত্তরে কিছু বললো না। সামনের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে কিছুদূর আগানোর পর হুট করে গাড়ি থামায়। অনন্যা বিস্মিত হয়ে তাকাতেই সে মৃদুসুরে বললো,
” গাড়ি থেকে নামো।”
অনন্যা ভয়ার্ত কন্ঠে বললো, ” আপনি গাড়ি ঘুরিয়ে এরকম নির্জন রাস্তায় আসলেন কেন আর আমাকে নামতেই বা বলছেন কেন?”
অঙ্কন আবার মৃদু হাসলো। এই হাসিটা বড় রহস্যময় ঠেকলো অনন্যার কাছে। সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার বললো,
” বাই এনি চান্স, আপনি কি এখন আমাকে মাঝরাস্তায় ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন! দেখুন খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। আমি এই অবস্থায় বাসায় যাবো কি করে একটু বোঝার চেষ্টা করুন।”
অনন্যা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই অঙ্কন দরজা খোলে দিয়ে বললো,
” নিজে থেকে নামো নয়তো কোলে করে নামাবো।”
অনন্যা সাথে সাথে নেমে পড়লো। রাগে দুঃখে বললো,
” আপনি একটা চরম অসভ্য! ”
” একমত, সত্যিই আমি অসভ্য।” অনন্যাকে একদম অবাক করে দিয়ে অঙ্কন বলে উঠলো। সত্যিই অবিশ্বাস্য অঙ্কন আজঁ একদমই তর্ক করলো না। বিনাবাক্য ব্যায়ে মাথা পেতে নিলো।
গাড়িটা পার্ক করে এসে অনন্যাকে দ্বিতীয় দফা চমকিয়ে হাত ধরে ফেললো। ইশারায় সামনে তাকাতে বললোও সে অবুঝের মতো ফ্যালফ্যাল করে অঙ্কনের মুখের দিকে তাকিয়েই থাকলো।
নীলচে আকাশজুড়ে ভরা পূর্নিমা! চাঁদের আলোয় নির্জন রাস্তাটাকে নদীর মতো মনে হচ্ছে। সেই নদীর একটা সুন্দর নামও অনন্যা দিয়ে ফেললো ময়ুরাক্ষী! ময়ুরাক্ষী নদীর মাঝখান চিরে একজোড়া কপোত কপোতি হেটে চলেছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। বাহিরে বেশ বাতাস বইছে। শীত পড়বে পড়বে ভাব। নিঃশব্দে হাঁটতে হাঁটতে দুজনেরই কেমন যেব উষ্ণ অনুভব করছিলো। হঠাৎ অঙ্কন অনন্যার কাধ জড়িয়ে হাঁটতে থাকলো। অনন্যাও বিনা দ্বিধায় অঙ্কনের একহাত শক্ত করে ধরে রাখলো। যেন এটাই সহজাত কোন অস্বাভাবিকতা নেই। কিছুদূর যাওয়ার পর লেকের পাড়ের জারুল গাছের নীচের বেঞ্চটায় বসে পড়লো। অন্ধকার আর চাঁদের আবছা আলোয় অনন্যা সরাসরি চাইলো অঙ্কনের গভীর দুটো চোখের অতল গহব্বরে। যে চোখদুটো বেখেয়ালিভাবে ওকেই দেখছিলো। এই মুহূর্তে চোখ দুটোকে ব্ল্যাকহোলের সাথে তুলনা করলে খুব একটা ভুল হবেনা। অনন্যা তলিয়ে যাচ্ছে! সত্যিই পড়ে যাচ্ছে ব্ল্যাকহোলগুলো ওকে তীব্রভাবে আকর্ষন করছে। অঙ্কনের নিঃশ্বাসগুলো দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে অনন্যার মুখের উপর আছড়ে পড়ছে। মাথাটা অনন্যার দিকে বেশ খানিকটাই ঝুঁকে গেছে অনন্যাও ঝুঁকিয়েছে এনেছে। থরথর করে কাঁপছে ঠোটদুটো। পলকহীনভাবে তাকিয়ে অনন্যার ঠোঁটদুটো অঙ্কনের অধর বন্দী হওয়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে কেমন যেন এক মাতাল করা শরীরের মিষ্টি সুগন্ধ নাকে আসতেই অনন্যা ছিটকে সরে আসে। ঠিক এই মুহুর্তেই সময় যেন থমকে যায়। আকাশ বাতাস সাথে রাতের অন্ধকার একাত্ন হয়ে চিৎকার করে যেন ভুলটা চোখের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। অনন্যা চোখ তুলে তাকানোর সাহস হারিয়ে ফেললো। অঙ্কন নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে থাকলো। এরপরের মুহুর্তটা বেশ তাড়াতাড়িই কেটে যায় অঙ্কন গাড়িতে গিয়ে উঠে অনন্যাও অনুসরণ করে পেছন পেছন আসে। মাঝখানে এই এতটুকু সময় নিস্তব্ধতা দুজনকেই ঘিরে ধরলো। কেউ ভাষার প্রয়োগ ঠিক ভাবে করতে পারলো না। এমনকি বাড়ির সামনে নেমেও অনন্যা অঙ্কনকে বিদায় জানাতে ও পারলো না। অঙ্কনও চোখ তুলে চাইলো না। নিঃশব্দে চলে গেলো। যেন এই মানুষটার সাথে বাক্যবিনিময় করতে চাইলে দ্বিতীয়বার জন্ম নিতে হবে।
গাড়ির শব্দে সবাই নিচে নেমে এলো। আয়েশা খলবিল করে উঠলো, ” অনন্যা, তুই কি রে? অঙ্কনকে একবার ভেতরেও আসতে বললি না।”
অনন্যার মুখ দেখে মনে হলোনা ও কিছু শুনতে পেয়েছে! সত্যিই সে কিছুই শুনতে পেলো না।
আহনাফ সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচঁকিয়ে বললো, ” আয়েশা ওকে ঘরে নিয়ে যাওতো। কালকে থেকে কোথায় কোথায় ঘুরছে। সব কথা পরে হবে।”
উনি মেয়ের কাধ জড়িয়ে ধরে উপরে নিয়ে এলেন।
অনন্যা এসে থেকেই সোফায় নির্বিকারভাবে বসে থাকলো। অনেকক্ষন আগেই আয়েশা মেয়েকে ফ্রেস হতে বলেছিলেন। মেয়েতো ফ্রেস হয়নি এমনকি নিজের ঘরেও যায়নি উনার ভেতরে ভেতরে কেমন যেন অদ্ভুত চিন্তা খেলে গেলো। তবে কিছু প্রকাশ করলেন না বরং মেয়েকে ঠেলে ঘরে পাঠিয়ে দিলেন।
অনন্যা ঘরে এসেও বিছানায় এক ধ্যানে বসে থাকলো। অনিক চিন্তিত ভঙ্গিতে বোনের ঘরে ঢুকে বোনকে দুই তিনবার ডাকলেও অনন্যা সাড়া দিলো না। কি অদ্ভুত বিষয় সামনে বসে আছে কিন্তু ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না। তাই দেখে বোনের কাধে হাত রাখতেই অনন্যা লাফিয়ে উঠে অনিকের দিকে তাকায়। তারপর বললো,
” ও ভাইয়া তুই?”
” তা কাকে ভেবেছিলি? ”
” কই কাউকেই নাতো।” অনন্যা কথাটা বলেই মুখ লুকাতে এদিক সেদিক তাকালো।
” বিছানায় বসে কথা বলি। তোকে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।”
অনন্যা বিছানায় বসে ভাইয়ের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো।
” আমি কালকেই রিচমন্ড ফিরে যাচ্ছি। তাই তোকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। আশা করি তুই ঠিকঠাক উত্তর দিবি।”
” হ্যাঁ বলতে পারো।”
” মা তোর বিয়ে নিয়ে ভাবছে সাথে বাবাকেও দলে টেনেছে। আমি যাস্ট জানতে চাচ্ছি তুই কি চাস?”
” সরি, আমি তোমার প্রশ্নটা বুঝতে পারছিনা ভাইয়া।”
” তুই খুব ব্লিলিয়ান্ট আমি শুধু তোকে এতটুকুই বলবো তুই কি তোর হায়ার স্টাডিজ নাকি বিয়ে এইদুটোর মধ্যে কোনটা বেছে নিবি।”
অনন্যা মাথা নিচু করে থাকলো।
অনিক বিস্ময়মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে আবার বললো, ” বাই এনি চান্স তুই কি অঙ্কন চৌধুরীকে ভালোবেসে ফেলেছিস।”
অনন্যা চমকে উঠে বললো, ” না সেরকম কিছু নয় ভাইয়া। ”
” তো সমস্যা কোথায়?”
” ভাইয়া আমি এখানে বুঝতে পারছিনা উনি আমাকে পছন্দ করেন কি না? বা অন্য কোন অ্যাফেয়ার আছে কিনা।”
” তার মানে তুই এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিস হাউ রিডিউকিউলাস অনন্যা! আমি এই উত্তরটা অন্তত আশা করিনি।”
” আমি কখন বললাম যে আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি। দেখ তুমি জানোই আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি আমার ক্যারিয়ার এখানে আমি কোন কম্প্রোমাইজ করবো না। আমি জানি তুমি এই ভয়টাই পাচ্ছো যে আমার কোন ভুল সিদ্ধান্তে আমার ক্যারিয়ারটা না নষ্ট হয়ে যায়। তুমি চিন্তা করোনা ভাইয়া যে আমাকে ভালোবাসবে সে আমার স্বপ্ন আর সিদ্ধান্তকে সমানভাবেই গুরুত্ব দেবে।
অনিক আস্বস্ত ভঙ্গিতে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/