চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৩
লেখা আশিকা জামান
অনেকদিনের আকাঙখিত রাত! দুজনেই গভীর ঘুমে মত্ত। কখন ভোর হয়ে গেছে কারো খেয়ালই নেই। সকাল সাতটা নাগাদ ফোনের স্ক্রিন জ্বলে উঠল। রিংটোনটা আজ বড্ড বিদঁঘুটে শোনাচ্ছে।
অনন্যা হকচকিয়ে চোখ খুলে। । বিরক্তিতে কান ঝালাপালা হয়ে আসে। অঙ্কনকে বলতে যাবে ফোনটা ধরতে কিন্তু তার পূর্বেই অঙ্কন আধঁ ভাঙ্গা গলায় গেয়ে উঠে,
” অনন্যা, প্লিজ পিক আপ দ্যা ফোন!”
” তোমার ফোন! উফ্ ধরছোনা কেন?” নিজেকে অঙ্কনের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অনন্যা সরে যেতেই হাতের বাধঁন আলগা হয়। বুকে এক নিদারুণ শূন্যতা তৈরি হয়। বিছানায় উপুড় হয়ে ফোন খুঁজতে থাকে। বিরক্তিকর খুঁজাখুঁজির খচর খচর শব্দে অনন্যাও বিছানায় উঠে বসে। নিজেও হাত চালায়। শেষে ফোনটা পাওয়া যায় কী না বিছানার এক কোণায়। ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে দলাই মলাই অবস্থায়। স্ক্রিনে অনীহার নম্বর। অঙ্কন কল ব্যাক করে।
এরপরই অনীহা চিৎকার করে বলল,
” ভাইয়া, তুই এক্ষুনি আমার রুমে আয়।”
” কিছু হয়েছে? কোন সমস্যা!”
অনীহা রাগে ফোন কেটে দেয়।
***************
” সামান্য কারণে তোমার ভাইকে ডাকা লাগে!” নিহা অতিমাত্রায় বিরক্তিতে না বলে থাকতে পারলোনা।
” আমার ভাইকে আমি ডেকেছি। তোমাদের কি? তোমরা কেন আসছো!” অনীহা চোখ কচলাতে কচলাতে বলল।
” সাতসকালে ঝগড়া করছো আমরা আসব না! আমাদের সাথেই যখন এসেছো তখন না চাইলেও ইন্টারফেয়ার করব। ” নিনিত চোখ কপালে তুলে বলল।
” শালার এই লাইগ্যাই মাইয়া মানুষ নিয়া কোথাও যাওয়া লাগে না!” সাইমুন মুখ ফঁসকে কথাটা বলেছে মাত্র সব মেয়েরা ওঁকে একরকম যেন চিবিয়ে খাবে এরকম কটাক্ষ ভরে তাকায়।
” তুই কি! আমাদের সবাইকে তানভীরের বউ এর দলে ফেললি! তোর মনে হয় আমরা এক! আমাদের এক কাতারে ফেলা যায়?” নিনিত রেগে গেছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
” না, মানে…..” সাইমুন আমতাআমতা করে। নিজেও বুঝে যায় যে বেফাঁস কিছু বলে ফেলেছে।
” কথা ক্লিয়ার কর! মানে মানে কি করছিস।” নিনিত ধমকিয়ে উঠে।
” হ, দুনিয়ার সব মাইয়ারাই এক। খালি ঝগড়াঝাটি ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। তোরা হইছিস লাইক হেডফোন যতই সুন্দর কইরা গুছাইনা ক্যান ঠিক প্যাঁচাইয়া যাইবোই।”
দীশা এতক্ষণ চুপ ছিলো কিন্তু এইবার মাথা গরম হয়ে গেছে। দ্রুত হাতে পা থেকে স্যান্ডেল খুলতে থাকে। সাইমুন সেদিকে আড়ঁচোখে তাকিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই দীশা স্যান্ডেল ছুড়ে মারে। সাইমুন কালবিলম্ব না করে দেয় এক দৌড়। হুমড়ি খেয়ে পরে দরজার ওপাশে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসা অঙ্কনের উপর। ধপাস করে পরতে গিয়েও অনন্যার হাতের টানে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
অনন্যা হতবাক শূন্য হয়ে সামনের দিকে তাকায়। দীশা স্যান্ডেল হাতে এদিকেই তেড়ে আসতেছে। অঙ্কন বুঝে উঠতে পারে না। এখানে ঠিক কি হচ্ছে! কিছু না বুঝেই কথার ভেতরে ঢুকে যাওয়া অঙ্কনের স্বভাববিরুদ্ধ! তাই সে বরাবরের মতোই চুপ থাকার চেষ্টা করল।
অনন্যা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
” এখানে হচ্ছেটা কি?”
এই কথায় দীশা, সাইমুন দু’জনের কি হলো কে জানে দু’জনেই চোখ বড়বড় করে অনন্যার দিকে তাকায়। এদের দু’জনকে দেখে এইমুহুর্তে বুঝার উপায় নেই এদের মধ্যে আদৌ কোন বাগবিতিন্ডা চলছিল কি না! তবে চোখ দু’টো কেবল অনন্যার দিকেই সীমাবদ্ধ থাকছে না ঘুরে ফিরে বারবার অঙ্কনের দিকেও দেখছে। বিশেষ করে টি-শার্ট এর গলার কাছে ঠিক ডানপার্শ্বে লালচে দাগ! এটাও কাকতালীয় ব্যাপার হতেই পারতো! এইরকম একজন এলিজেবল ব্যাচেলর হিরোর এইধরণের গুরুচন্ডালী দোষ ধর্তব্যের মধ্য পড়ে না।
কিন্তু তাই বলে তাদের চিরচেনা সাদাসিধা অনন্যার এমন আমূল পরিবর্তন মেনে নিতে যতটা না কষ্ট হচ্ছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করতে।
এই সাত সকালে এলোমেলো বিধধস্ত অবস্থায় শাড়ি পরা অনন্যাকে আজ বড় অন্যরকম লাগছে। লাগছে একেবারে অচেনা! না চাইতেও কাধ, গলা, পিঠ আর চিবুকের ভাঁজে স্পষ্ট হয়ে উঠা লালচে দাগগুলো যেন অনেক না বলা কথাই বলে দিচ্ছে।
একইসাথে দু’জনের এইভাবে ছুটে আসাটা মোটেও কাকতালীয় ব্যাপার নয়। আর যাই হোক ওদের দু’জনের মুখ এইমুহুর্তে পাংশুটে রঙ ধারণ করেছে। গভীর কোন ঝড় হয়তো অচিরেই ধেয়ে আসছে প্রিয় বন্ধুর সুন্দর সাজানো গুছানো জীবনে, এটা আঁচ করতে পেরেই যেন আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে। অধঃপতন মেনে নেয়ার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে।
” কি হলো, জীবনে দেখিস নাই এইভাবে হা করে তাকায়া আছিস যে! আর বাচ্চাদের মতো! উফ্ আমি ভাবতে পারছি না ইম্ম্যাচিউর পোলাপানের মত স্যান্ডেল নিয়া দৌড়া দৌড়ি করতাছিস! তোদের কি কোন কমন সেন্স নাই।”
অনন্যার ঝাঁঝের সাথে বলা কথাগুলো শুনে ভাবনার জগৎ থেকে দু’জনেই বের হয়ে আসে। ফ্যালফ্যাল করে আরও একবার অনন্যার মুখপানে তাকায়। গভীর দীর্ঘশ্বাস আছড়ে পড়ে।
” অনন্যা, তুই কবে থেকে এতোটা ম্যাচিউর হয়ে গেলিরে!” কথাটা মুখের কাছে এনেও কেউ বলতে পারলো না।
অঙ্কন কিছু না বলে সরাসরি তানভীরের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
অনন্যাও তাদের পাশ কাটিয়ে অঙ্কনের পিছু নিতে যায়। ওঁকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে এখন খুব বিরক্ত! বন্ধুদের এই বাচ্চাসুলভ কার্যকলাপের জন্য লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে।
সাইমুন পেছন থেকে ডেকে উঠে,
” অনন্যা, তোর চুলে গোলাপের পাপড়ি! ”
সাইমুনের এই একটা কথাতেই অনন্যা অসাড় নিস্তেজ জড়পদার্থের ন্যায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
দীশা দ্রুত হাত চালিয়ে এলোমেলো চুল থেকে গোলাপের পাপড়ি বের করে এনে অনন্যার চোখের সামনে ধরে। অনন্যা ভয়ার্ত চোখে তাকায়। ফুলের পাপড়ি নিয়ে ছুড়ে মারতে মারতে বলে।
” আমার কাছে একটা গোলাপ ছিলো ওটা বালিশের কাছে রাখছিলাম। রাতে ঘুমের ঘোরে হয়তো ছিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে চুলে লেগে গেছে।”
দীশা কেবল শুনেই গেল। সাইমুন কিছুক্ষণ ইতস্তত করে তারপর বলল,
” অনন্যা আমার মনে হয় তোর সবার সামনে যাওয়ার দরকার নাই। তুই রুমে যা।”
অনন্যার কপাল কুঁচকে তাকায়। সাইমুন সেদিকে ভ্রুঁক্ষেপ না করে গটগট করে সামনে এগিয়ে যায়।
অনন্যা হতবাক হয়ে দীশার দিকে তাকায়।
” অনন্যা, সাইমুন কিন্তু ঠিকই বলেছে। তোর এই মিনিংলেস ঝামেলায় না জড়ানোই ভালো। তুই গেলে ঝামেলা আরেকটা লাগবে। অনেক কথাই উঠবে। যেগুলার উত্তর দেয়ার জন্য এইমুহুর্তে তুই প্রস্তুত না।”
অনন্যার আরও একদফা চমকায়। দীশা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় তবে যাওয়ার আগে ফিসফিস করে বলল,
” দাগগুলো খুব দৃষ্টিকটু। গলার কাছে শাড়ি ভালো করে জড়িয়ে রাখ।”
দীশা চলে যাওয়ার পর আরও প্রায় মিনিট পাঁচেক অনন্যা সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। থেকে থেকে কেবলই ভয় হচ্ছে ওরা কি সব জেনে গেছে? বুঝে গেছে? কি হবে ওর! সবাইকে কি বলে দিবে? কি ভাবছে ওঁকে! খুব খারাপ! খারাপ কিছু!
অনন্যার আর কিছু ভাবতে পারে নি। ওয়াশরুমে বসে দু’চোখের জল টপটপ করে গড়িয়ে পড়েছে। গালে, চিবুকে এরপর গলা বেয়ে বেয়ে বুকের কাছে নেমে এসে মিশে গেছে সেই অনন্তলোকে!
*************
অঙ্কন মহাবিরক্ত! বোন আর তানভীরের প্রতি সে মহাবিরক্ত। চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে কেবল দু’জনের কীর্তিকলাপই দেখে গেল এবার আর পারছে না!
আর না পারছে দু’জনকেই ধমকে সোজা করতে। এই রুমে থাকা বাকি সবার জন্য সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। সবাই যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তাকে। সো মাচ ইরিটেটিং!
তবুও অঙ্কন আর থাকতে না পেরে বলল
” তোমরা দু’জনেই যথেষ্ট ম্যাচিউর এরপরেও এই বাচ্চামোগুলা করো কি করে! এইরকম সামান্য কথা নিয়া কেউ ঝগড়া করতে পারে। সত্যিই আমার মাথায় আসে না।”
” ভাইয়া, তানভীর আমাকে কি বলেছে সব না শুনেই তুমি আগেই রিএক্ট করছো কেন? আর তুমি ওঁকে কিছু না বলে দু’জনকেই কেন বলছো।”
” শাট আপ! একটাও কথা বলবা না। যা হইছে সব একমুহুর্তে পাস্ট৷ ওঁকে এই টপিকে আর একটাও কথা হবে না। ক্লিয়ার!”
অনীহা চোখ কাচুমাচু করে তাকায়। অঙ্কন সেদিকে তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বলল,
” সবাই রেডি হয়ে নাও। আমরা একসাথে ব্রেকফাস্ট সারব আর এরপরই যাব দি লাস্ট রিসোর্ট! বান্জি আর ক্যানিয়ন সুইং এর অভিজ্ঞতা নিতে। ওঁকেই।”
সবাই চেঁচিয়ে উঠলো খুশিতে। অনীহা একগাল ভর্তি হাসি হাসি মুখ করে বলল,
” ভাইয়া তুমিও যাচ্ছ আমাদের সাথে!”
অঙ্কন ভ্রু নাচিয়ে সম্মতি জানায়।
” দেখছো তানভীর, আমার ভাইয়া ঠিক আমাদের সাথে যাচ্ছে। সব কাজ ফেলে। দেখছো আমার ভাইয়া আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।” অনীহা গদগদ হয়ে বলল।
তবে তানভীর মুখে ক্লোজআপ মার্কা হাসি ঝুলিয়ে মনেমনে বিড়বিড় করে বলল,
” তোমার ভাই যে ঠিক কার জন্যে যাচ্ছে ওইটা বুঝার মতো বোধ যদি তোমার থাকতো! ” তবে প্রকাশ্যে বলার সাহস আর হলো না। আর যাই হোক এইরকম তালে মাতাল জাতে ঠিক মহিলাকে কিছু বলাই ঘাট!
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
Tanveer and aniha r bepar ta khub beshi e haissokor ????