চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৩
লেখা আশিকা জামান
” অঙ্কন চৌধুরী! ও এম জি!!”
অল্পবয়সী দুই জন মেয়ে অনন্যার ঠিক পেছনেই বসেছিল অঙ্কনকে দেখামাত্রই লাফিয়ে উঠল। যে কোন উপায়ে তাদের ক্রাশ হিরোর সাথে একটা সেলফি নিতেই হবে।
অঙ্কন হন্তদন্ত হয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল। অনন্যা এখন ফোনটাও তুলছে না।
” এই মেয়ে ফোনটা তো তুলবি!! আমাকে টেনশনে না রাখলে তো তার পেটের ভাতই হজম হবে না।” বিড়বিড় করতে করতে সে সামনে তাকায়। সামনে রীতিমতো ভীড় জমে গেছে তাই দেখে অঙ্কনের চোয়াল সামনের দিকে ঝুলে গেলো। সে অতিমাত্রায় বিব্রত, বিরক্ত আর সীমাহিত দ্বিধাগ্রস্থ। তবে মুহূর্তেই ফিঁচেল হাসিতে মুখবয়ব পরিবর্তিত করতে অঙ্কনের দু’মিনিট ও সময় লাগল না।
জিহাদ ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিল। হতাশ ভঙ্গিতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনন্যাকে খুঁজতে লাগল সে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অটোগ্রাফ!! প্লিজ একটা সেল্ফি!! প্লিজ! প্লিজ!
সামনে দাঁড়ানো অল্পবয়সী মেয়েদের জটলায় অঙ্কনের খেই হারানোর মতো অবস্থা। দু’একজনকে অটোগ্রাফ দিয়ে ভীড় ঠ্যালে বের হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সে।
এরমধ্যে পুরো হস্পিটালে ব্যাপারটা চাউর হয়ে গেছে। একে একে সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে।
অঙ্কন ধৈর্য্যহারা হয়ে সামনে তাকায়। এত অস্বস্তি হচ্ছে কাউকে বুঝাতে পারছে না।
ভীড় ঠ্যালে পিঠ বরাবর চেনা হাতের স্পর্শে অঙ্কন কেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। জিহাদ হাত ধরে টেনে সামনে নিয়ে যায়।
পেছনে বলা কিছু কথা এইমুহুর্তে তার কানে প্রবেশ করলো না।
” সো মাচ মুডি! দেখলে কিভাবে ইগনোর করে চলে গেলো। ”
” আরে ধুর, কি হ্যান্ডসাম দেখেছিস। আমি তো বেহুশ আমারে কেউ ধর। ”
” এহ্ দেখ আমার সাথে সেলফি। আমার তো নিজেরে হিরোইন মনে হচ্ছে। দাড়া এক্ষুনি আপলোড দেই।”
কিছুক্ষণ পর সবার দৃষ্টি একটা যায়গায় স্থির হয়ে যায়। ডক্টর আরিফুর রহমানের চেম্বারের ঠিক সামনে তাদের হিরো সাহেব একটা মেয়ের দুই চিবুক শক্ত করে চেপে ধরে আছে। কটাক্ষ দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে কারো কারো কলিজা পুড়ে ছারখার হতে লাগল।
” অনন্যা, কি হয়েছে তোমার? এভাবে অর্ধেক কথা বলে ফোন কেন রেখে দিয়েছো। আমার কতটা টেনশন হচ্ছিলো তুমি বুঝতে পারছো।”
অঙ্কন হাপাতে হাপাতে বলল।
অনন্যা নির্বিকারভাবে বলল,
” আমার তো কিছু হয়নি। হয়েছে তোমার।”
” হুয়াট??” অঙ্কন অস্ফুট স্বরে উচ্চ্বারণ করল। হতবিহ্বল হয়ে আর কিছু বলতে চাইছিল তার আগেই একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে সামনে দাঁড়ায়।
” এক্সট্রেমলি সরি স্যার! আমার একটু লেট হয়ে গেল। প্লিজ প্লিজ আসুন আপনার একটা এপোয়েন্ট আছে।”
উত্তরে অঙ্কন বিস্মিত হয়ে তাকায়। ডাক্তার তাই দেখে মৃদু হেসে বলল,
“আপনি খামোকা কেন কষ্ট করে আসতে গেলেন। আপনি চাইলে আমি নিজেই যেতাম। এটা কিন্তু অবিশ্বাস্য!”
” আপনি??” অঙ্কন দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বলল।
” আমি চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ডক্টর আরিফুর রহমান। আসুন ভেতরে আসুন।”
অঙ্কন কিছু বুঝে উঠার আগেই অনন্যা হাত ধরে টেনে তাকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
” আপনি কাইন্ডলি যদি সমস্যাটা আমাকে খুলে বলতেন!”
” মানে কার সমস্যা? আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না। আমার কোন সমস্যা নেই বুঝেছেন।”
ডাক্তার শুষ্ক হেসে বলল,
” দেখুন ম্যাক্সিমাম পেশেন্টরাই লজ্জায় কারো সাথে এসব শেয়ার করতে চান না। কিন্তু আপনার বেলায় তো এমনটা আশা করা যায়না। আপনি আসার পূর্বে উনার সাথে আপনার ব্যাপারে কথা হয়েছে। আই থিংক আপনি মনে হয় উনার সামনে লজ্জা পাচ্ছেন। উনি চলে গেলে নিশ্চয়ই ফ্রিলি কথা বলতে পারবেন।”
ঠিক এইমুহুর্তে প্রচন্ড রাগে অঙ্কনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। অনন্যা যে ঠিক এইরকম একটা কাজ করতে পারে এটা ভেবেই নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে। এরকম স্টুপিড গার্ল জীবনে সে দ্বিতীয়টি দেখেনি।
” নাহ্ অনন্যা এখানে থাকবে। আমার এমন কোন সমস্যা হয় নাই যা আমি ওর সামনে বলতে পারব না। অনন্যা এক্সাটলি আপনাকে ঠিক কি বলেছে প্লিজ আমি শুনতে চাচ্ছি।”
অনন্যা এবার একটু ভয় পেতে লাগল। আচ্ছা সে কি একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলল? কি জানি!
” আপনি মানে বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন! ফিজিক্যালি প্রবলেম যদি থেকে থাকে আপনি শেয়ার করুন। সলভ অবশ্যই করা সম্ভব।”
” শাট আপ! আমি ফিজিক্যালি আনফিট! কে বলেছে আপনাকে? অনন্যা বলেছে এই কথা? অনন্যা বলেছে?” অঙ্কন হতবাক হয়ে একসময় লাফিয়ে উঠল।
” না মা-নে? মা-নে?”
” মানে মানে কি করছেন, আমাকে আপনার আনফিট মনে হয়? আমি শারীরিক ভাবে অক্ষম!”
” দেখুন আমি কি করে বলব? আমিতো আপনার উড বি ওয়াইফ নই। উনাকে জিজ্ঞেস করুন।”
অঙ্কন অনন্যার দিকে তাকিয়ে রাগে কটমট করে ওখান থেকে বের হয়ে আসে।
ডাক্তার আরিফুর রহমান অনন্যার দিকে তীর্যকভাবে তাকিয়ে বলল,
” দেখুন, আমার সময়ের দাম আছে। আমি এখানে নকশা করতে আসি নি। এরকমটা কেউ করে? আপনি বুঝতে পারছেন উনি রেগে গেছেন। প্লিজ এই ধরনের ফাজলামো আর কারো সাথেই করবেন না।” ডাক্তার গোমড়া মুখে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল।
অনন্যা মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওখান থেকে বের হয়ে আসে। ততক্ষণে অঙ্কন লাপাত্তা। কি করতে চাইল আর কি হল? সব দোষ নিনিতের!! ওরাই তো বুদ্ধি দিলো। আচ্ছা অঙ্কনের প্রেমে পড়ে বোধ হয় তার জ্ঞান বুদ্ধি সব লোপ পেতে চলেছে। না হলে সে কেন অন্যের বুদ্ধিতে চলবে। অঙ্কনের বোন অন্বেষা তারও বোধ হয় ওর থেকে বেশি বুদ্ধি।
উফ্ অনন্যারই বা কি দোষ বিয়েটাই বা কেন করতে চাইবে না। সব দোষ অঙ্কনের। অনন্যা মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আনমনে হাটতে লাগল।
লিফটে উঠেও সে সাত পাঁচ ভাবতেছিল। যখন গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঠিক তখন জিহাদ এসে বলল,
” ম্যাডাম, স্যার আপনাকে গাড়িতে যেতে বলেছেন।”
অনন্যা ঢোক গিলে আশেপাশে তাকাতেই ডান দিকের রাস্তায় অঙ্কনের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল।
জিহাদ সেদিকে ইশারায় যেতে বলল। অনন্যা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
” আপনিও আসুন।”
” সরি ম্যাডাম! আমার ওখানে থাকা নিষেধ। স্যার স্ট্রিক্টলি বারণ করে দিয়েছে। আপনি যান।”
অনন্যা দোয়া দরুদ পড়ে গাড়ির সামনে যায়। যেঁচে বাগের গুহায় যেতে হচ্ছে কি কপাল! সামনের দরজা খোলাই ছিল। অনন্যা শান্তভাবে বসে পড়ে। অঙ্কনের দিকে আড়চোখে তাকায়। চোখদুটো রক্তজবার মতো টকটকে লাল। যেন এখুনি রক্ত ঝরে পড়বে। নাকের ডগায় রাগের পাহাড় জমে আছে। যেন কিঞ্চিৎ পরেই পাহাড় অনন্যার উপর ধসে পড়বে। আল্লাহ বাচাও! অনন্যা ভয়ে এসির ভেতরেও ঘামছিলো।
অঙ্কন দ্রুত ড্রাইভ করতে থাকে। কোথায় যাচ্ছে অনন্যা কিচ্ছু জানে না। তবে জাহান্নামে নিয়ে গেলেও যে আজ তার বাধা দেওয়ার শক্তি নেই।
আর ওদিকে অঙ্কন মুখ ফুটে কিচ্ছু বলছেও না।
এদিকে রাত হয়ে এসেছে। কয়টা বাজে? সাড়ে নয়’টা বাজে। ফোনটা বেজে উঠে। অনন্যা রিসিভ করে, বাবা ফোন করেছে।
অঙ্কন আড়চোখে ব্যাপারটা দেখে হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে কেটে দেয়।
অনন্যা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বলল,
” ফোন কেটে দিলে কেন? এটা কি ধরনের অসভ্যতামি। বাবা ফোন করেছে। কি ভাববে।”
” আমি সব ধরনের অসভ্যতামিতে এক্সপার্ট এটাও একধরনের অসভ্যতামি। নাও আবার ফোন করো। নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করছে তুমি কোথায়। তুমি বলো, তুমি তোমার কোন এক ফেন্ড এর বাসায়। আসতে পারছো না। আজ রাতে থাকছো। নাউ হারি আপ!” অঙ্কন ধমকিয়ে উঠে।
” তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?”
” জাহান্নামে, কোন অসুবিধে আছে?”
” অবশ্যই আছে! আমি বাসায় যাব৷ বাসায় দিয়ে আসো।”
” তোমাকে আমি যা করতে বলেছি তুমি ঠিক তাই করবে। নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
অঙ্কনের অগ্নিগরম চোখের দিকে তাকিয়ে অনন্যা ফোন করতে বাধ্য হয়। এবং তোতা পাখির মতো শেখানো বুলি আওড়ে যায়।
অঙ্কন আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করে না।
চলবে…
চলছে দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রি-অর্ডার যারা যারা করতে চান এখনি করতে পারেন….
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/