চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩২
লেখা আশিকা জামান
বিস্ময় ভরা মুখটা জিহাদ সামলিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে বলল,
” আরেকটু আগেই যে গেলো সে অনন্যা তাই তো!”
অঙ্কন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” হ্যাঁ। ”
” আপনি মেয়েটাকে ইচ্ছেকরে কাঁদিয়েছেন? যাকে এত ভালোবাসেন তাকে এভাবে কাঁদাচ্ছেন কেন? বস, মেয়েটার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যায় সে আপনারে খুব ভালোবাসে।”
” সেখানেই তো ভয়! বেশি ভালোবাসা জিনিসটা ভালো নয়।”
” বিশ্বাস করুন, আপনাকে ইদানীং আমিও বুঝতে পারি না। আপনি কি চাইছেন বলুন তো!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
” আপাতত বিয়েটা না হোক। কিন্তু কিভাবে জানি না। সেটাই ভাবতে হবে। জিহাদ এই হ্যাভ এনি আইডিয়া!”
” আপনি কি করে ভাবলেন বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আপনাকে আমি আইডিয়া দেব!”
” তাহলে দেবে না!”
” নাহ্”
” তাহলে তোমার চাকরি নট। বুঝছো।”
” তাহলে যাইগা।” জিহাদ নির্বিকারভাবে উঠে দাঁড়ায়।
” আরে বসো, বসো! তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে জিহাদ!”
” আমি জানি সেটা! আপনি মেয়েটার সাথে প্রথম মিটের দিন এমন একটা জায়গা বেছে নিলেন যেখানে মিডিয়া ইজিলি কভার করতে পারে। কি হাস্যকর!
পরের দিন ইচ্ছে করে নিউজ হলেন।”
” হাস্যকর হলেও এটাই সত্যি আমি তাহার ছবি দেখেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম! তাই এরকম একটা নিউজের ফলে তাহার কি এক্সপ্রেশন হয় সেটাই জানতে চেয়েছিলাম!”
” বাহ! খুব ভালো কাজ করছেন। মিডিয়া পাড়ায় তো আপনার রমরমা প্রেম কাহিনি কয় দিন ভালোই মার্কেট পাইলো। আপনি এই মেয়ের সাথে অপেনলি আরও বহু জায়গায় ঘোরাফেরা করলেন। শেষে রাস্তায় মারামারিও করলেন এগুলা কি ঠিক করছেন। পাবলিক এগুলো ভালো চোখে দেখছে না। আপনার মতো সেলেব্রেটির সাধারণ মানুষের মত লাইফ মানায় না! এই কথাটা ভুলে গেলে চলবে না।”
” জিহাদ তুমি কি আমাকে এখন জেরা করবে!”
” নাহ্ সে স্পর্ধা আমার নেই। তবে আপনার কাজের ভালো মন্দ দিক নিয়ে খোলামেলা আলাপ আমি করতেই পারি।”
অঙ্কন চুপ করে থাকলো। তাই দেখে জিহাদ নিজের শুষ্ক ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে ভেজাতে ভেজাতে বলল,
” আপনি হয়তো ভাবছেন হু কেয়ার্স! বাট মেয়েটার দিকটা ভেবে দেখুন, আপনার সাথে তার নাম সোসাইটিতে জড়িয়ে গেছে। এঙ্গেইজমেন্ট হয়ে গেছে। এখন আপনি চাইছেন বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে! এসব কি ছেলে খেলা। মেয়েটার কি হবে! সমাজ কি মেয়েটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিবে। কে বিয়ে করবে তাকে? বা
করলেও আমাদের রক্ষণশীল সমাজে কিন্তু এই ব্যাপারগুলো খুব স্পর্শকাতর! তাদের দাম্পত্য জীবনটা কি আদৌ সুখের হবে।”
” জিহাদ, এখানে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে অনন্যার অন্য কোথাও বিয়ে হওয়ার কথাটা কেন আসছে!” অঙ্কনের চোয়াল ঝুলে পড়লো সহসাই। তাই দেখে জিহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” কেন আপনার কষ্ট হচ্ছে?
অঙ্কন কপাল কুঁচকে বসে থাকে।
“আপনি উনাকে বিয়ে করবেন না এটা জেনেও উনি মনের দুঃখে বাকি জীবন চিরকুমারী থাকবে! এটাই ভেবেছিলেন তো!
এই হাস্যকর আবদার গুলো আপনি করেন কি করে।”
” শাট আপ জিহাদ! তুমি কিন্তু কন্টিনিউয়াসলি আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছ।”
” আমি রাগিয়ে দিচ্ছি? বাট হুয়াই!”
” আমি অনন্যাকে ভালোবাসি! ”
অঙ্কন কথাটা বলেই ফট করেই মাথা নিচু করল।
” আমাকে বলছেন কেন? আমি কি শুনতে চেয়েছি? যেখানে দরকার সেখানে গিয়ে বলুন।”
” বলে কি হবে? বিয়েপাগলী আরও পাগলামি করুক তুমি তাই চাও।”
অঙ্কন ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
” পাগলামি একেবারেই থামিয়ে দিলেই তো হয়!”
” জিহাদ, তোমার আমাকে কি মনে হয়! আমি ঠিক কেন এমন করছি অন্তত তোমার বুঝা উচিৎ। কিন্তু উল্টো তুমিও আমাকে দোষারোপ করছো। ”
অঙ্কন উঠে দাঁড়ায়। স্লাইডিং ডোরে হাত লাগাতে লাগাতে বলল,
” জিহাদ আমি যা করছি তা অনন্যার ভালোর জন্যই করছি। ও খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট! আমি যতটুকু জানি এইবার ডিপার্টমেন্টের টপার স্কোরার সে- ই হবে। ওর স্বপ্ন হায়ার স্টাডিজের জন্য এবরোড যাবে। তাই একদম শুরুর দিক থেকেই নিজেকে সেই ভাবেই প্রিপায়েরড করেছে। ও ওর ক্যারিয়ারের প্রতি খুব কনসার্ন ছিলো, তবে আমাদের দেখা হওয়ার আগে। আমি খেয়াল করেছি একটু একটু করে অনন্যা তার লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ও ভাবছে আমদের বিয়ে হবে দ্যান সে পড়তে যাবে, ব্যাপারটা এতোটাই ইজি!
আমি মাকে চিনি মা কিছুতেই এই ব্যাপারটাতে সায় দিবে না। আমি আউটডোর শ্যুটিং এ দেশ বিদেশ ঘুরবো আর অনন্যা একা একা বিদেশে পড়বে এই সাধারণ ব্যাপারটা মা জটিল করে তুলবে। এখন পর্যন্ত আমার ফ্যামিলি এই টিপিক্যাল মেন্টালিটি নিয়া চলে এটাই মেইন প্রবলেম।
আর তাছাড়া এই বিষয়টা মা বাবা কেউ মনে হয় না জানে! আর সবচেয়ে মেইন পয়েন্ট হচ্ছে অনন্যা দিন কে দিন যে পরিমাণ ডেস্পারেট হয়ে
যাচ্ছে! আমাকে পাওয়ার জন্য সব ছাড়তে বিনা বাক্যে রাজি হয়ে যাবে। আর আবেগের বশে এই ডিসিশন টাই হবে সবচেয়ে বড় ভূল। একবার আমার ফ্যামিলিতে এসে পড়লে মা অনন্যার মাথা থেকে বিদেশে যাওয়ার ভূত অতি দ্রুত ছাড়িয়ে দিবে। কিন্তু সেটা হবে চাপে পড়ে। একসময় মানসিকভাবে অনন্যা ভেঙ্গে পড়বে এই ভুল সিদ্ধান্তটাই সেদিন কাল হয়ে দাঁড়াবে। আমি চাইনা আমার জন্য অনন্যা কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিক। তাড়াহুড়ো করে কোন ভুল সম্পর্ক আমি গড়তে চাইনা। আমি চাই না একসময় সম্পর্ক টা কোন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াক।
তাছাড়া আমার অতীত টা কিন্তু ওর জানা জরুরি। তাই ওকে আরেকটু সময় দিতে চাই। আবেগ আর বাস্তবতার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক এটা ওকে বুঝাতে চাই। আর এই সময়টাই আমাদের সম্পর্কটা আরও মজবুত করে তুলবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।”
কথা বলতে অঙ্কনের গলাটা ধরে এলো। জিহাদ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো। পরমুহূর্তে কি জানি কি ভেবে নিয়ে বলল,
” এটা তো গেলো আপনার দিক! কিন্তু অনন্যা ম্যাডামের উপর এই গোটা ব্যাপারটাই কি রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এটা কি বুঝতে পারছেন। উনি আপনাকে ভুল বুঝছেন। আপনার উচিৎ ঠান্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা কনফেস করা! তা না করে আপনি সোজা কথায় ইগনোর করছেন! এরপর উনার ও রাগ, দুঃখ, অভিমান হতে পারে! এভাবে উনি আপনার থেকে দূরে সরে যাবেন একটু বুঝার চেষ্টা করুন।”
অঙ্কন সিগারেট ধরাতে লাগলো। মাথাটা বড্ড ভারী ভারী লাগছে। সিগেরেটে এক টান দিয়ে জিহাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
” জিহাদ আমার মাথাটা ধরেছে। তুমি প্লিজ একটু বাইরে যাও। কথা বলতে ভালো লাগছে না।”
” কিন্তু হাতে সময় কম আপনাকে এক ঘন্টার ভেতর রেডি হতে হবে। আজকে একটা প্রেস ব্রিফিং রয়েছে। প্রডিউসার অনিকেত রায় বেশ কয়েকবার ফোন করে তাড়া দিচ্ছে। আপনি এক কাজ করুন তাড়াতাড়ি একটা হট শাওয়ার নিয়ে নিন। আর সমস্ত দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন মিটিং এ আপনাকে স্ট্রেস ফ্রি দেখাটা জরুরি। আমি আপনার কস্টিউম অলরেডি ভেবে রেখেছি। প্লিজ লেইট করবেন না। আর একটা কথা ব্যাক্তিগত জীবনকে কর্মক্ষেত্রে টেনে আনা মোটেও সুখকর নয়।”
*********************
সন্ধ্যা পাঁচটা বাজতেছে। অনন্যা টিউলিপ হসপিটালের সিক্সথ ফ্লোরে বসে আছে। এবার কেবল অঙ্কনের আসার পালা। বেশ খানিক্ষন পূর্বেই হিরো সাহেব কে ফোন করা হয়েছিলো হিসেব মতে এখন সে অন দ্যা ওয়ে। তবে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে এসে ঠিক কি রকম রি এক্ট করবে!
” স্যার, এসে গেছি।”
জিহাদের কথায় অঙ্কন চকিত তাকায়। হন্তদন্ত হয়ে নামতে উদ্যত হয়। জিহাদ অবস্থা বুঝে বাধা দেয়।
” আপনি বসুন, আমি দেখে আসছি।”
অঙ্কন বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকায়। রাগ গলায় ঝড়ে পড়ে,
” জিহাদ, প্লিজ আমার সব ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করাটা বন্ধ করো।আমাকে যেতে হবে। অনন্যা হসপিটালে বুঝতে পারছো!”
” সেইজন্যেই তো আমি আগে পরিস্থিতিটা স্বচক্ষে দেখে আসতে চাইছি। উনি হসপিটালে এর মানে এটাই নয় যে উনি অসুস্থ! অন্য কেউ তো হতে পারে। আপনি এতো অধৈর্য্য হচ্ছেন কেন। এটা একটা পাবলিক প্লেস এখানে তিল থেকে তাল হতে বেশি সময় লাগবে না বুঝোন একটু!”
” আমি শুধু শুধু অধৈর্য্য হচ্ছি!” অঙ্কন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এরপর গাড়ি থেকে নেমে গটগট করে
হসপিটালের দিকে এগিয়ে যায়।
জিহাদ হাজার বুঝিয়েও থামাতে পারে না।
চলবে…
নেক্সট কি হবে এনি আইডিয়া??
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/