চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ২৬

0
2450

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ২৬
আশিকা জামান

পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও তানভীরের মুখ দেখে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্নিঝড়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অন্বেষা কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে গেলেও অনীহাকে মোটেও চিন্তিত দেখালো না। সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নতুন বউ এর মতো চুপচাপ বসে আছে। তবে সে যে লজ্জা পাচ্ছে এমনটাও না।

হঠাৎ তানভীর এক কাজ করে বসলো। বউকে ছাড়াই নেমে পড়লো আর এক হাতে টেনে অন্বেষাকে নিজের যায়গায় বসিয়ে দিলো। অন্বেষা অবাক হয়ে তাকাতেই তানভীর কানে কানে কিছু একটা বললো। কানকথা শোনামাত্র অন্বেষার মুখটা দেখার মত হয়েছিলো। তার আৎকে উঠা মুখটা দেখে উপস্থিত সবার চক্ষুশূল।

অনীলা থম থমে গলায় বললো,
” তানভীর তোকে কি বললোরে?”

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


অন্বেষা মায়ের ভয়ার্ত দৃষ্টি অনুসরণ করে ঢোক গিলে বললো, না মানে মা,…অনীহার….”

অনীলা আবার জোরে ধমকিয়ে উঠলেন। ধমক খেয়ে অন্বেষা মুখ কাচুমাচু করে বললো,
” শাড়ি খুলে গেছে!”

অনীলা বিস্মিত হয়ে বললো, ” কি? এক ধমক খেয়েই তোর শাড়ি খুলে গেলো! ফাজলামো পাইছস, ফাজলামো । কই ঠিকই তো আছে।”

” অনীহার।”

বিয়েবাড়িতে হৈ হৈ পড়ে গেছে। নতুন বউ এর শাড়ি খুলে গেছে।
লজ্জায় সবার মাথা কাটা যাচ্ছে। মল্লিকা গম গম করে বলে উঠলো,
” এই যে বউ মা, সামান্য শাড়ি ই সামলাতো পারো না সংসার সামলাবে কি করে।”

মল্লিকার কথায় অনীহার তেমন ভাবান্তর হলোনা। তাই দেখে মল্লিকা আরো চটে গেলেন। গজগজ করতে করতে বললেন,
” ভাবি, তুমি তোমার ছেলের বউকে এক্ষুনি নামতে বলো। তারপর তোমার গুণধর পুত্র কিভাবে তার স্ত্রীর শাড়ি সামলিয়ে ঘরে নিয়ে যায় সেটাই আজঁ দেখার পালা।”

এই কথা শুনে বাকি সবাই আৎকে উঠলেও তানভীর মোটেও চমকালো না। সে এক দৌড়ে নিজের ঘরের দিকে ছুটে যায়। এইবার অনীহার টনক নড়ে। আজগুবি চিন্তাগুলো মাথায় কিলবিল করে উঠে । আচ্ছা তানভীর কি পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে, পালালো? তাহলে ওর পিন্ডি চটকাতে সে দুইবার ভাববে না। অনীহা রাগে মুখ চোখ কালো করে বসে রইলো। তবে বেশিক্ষণ লাগলো না তার লিজেন্ড জামাইয়ের গর্বে বুকটা ফুলে ফেঁপে উঠতে।
তানভীর ইন্টেক একটা বেল্ট অনীহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাপেটের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। জিন্স আর টি শার্ট এ অভ্যস্ত অনীহা বেল্ট পেয়ে যেন সাপের পাঁচ পা দেখলো।
তানভীরের কাজিনেরা সব হৈ হৈ করে উঠলো।
” জিও বস! এই না হলে আমাদের ভাই।”
সবাই হৈ হৈ করে ধরে বেধে তানভীরকে একরকম উপরে তুলে ফেললো।।
কেবল রিজভী তার মায়ের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হেসে বললো,
” মাম্মা শকড, উই আর রকস। এই জেনারেশনের পিছে লাগার শিক্ষে হলোতো মা।”

মল্লিকা রাগে গজগজ করতে করতে উঠে চলে যায়। তবে যাবার আগে মুখ ঝামটা মেরে বলে গেলেন,
” এমন বউ আমি জন্মেও দেখিনি। বউ পরে বেল্ট! হায় আল্লাহ! কালে কালে আর যে কতো কি দেখবো!”
আয়েশা আর অনীলা কোন এক অদ্ভুত কারণে হেসে ফেললেন। মুখভর্তি হাসি ধরে দুজনে একসাথ বলে উঠলেন,
” যেমন বউ তার তেমন জামাই।”

*********************

আরমানের চোখ দুটো চকচক করছে! এমন সুযোগ হাতছাড়া করা জাস্ট বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।
“আজ তো দেখা যাচ্ছে মেঘ না চাইতেই জল।” আরমান ফোন কানে নিয়ে কতক্ষণ কি সব বিড়বিড় করে গেলো। ওপাশের রিএকশন দেখে সুযোগসন্ধানী লোভাতুর মনটা লকলক করতে লাগলো। নাহ্ আজ আর কোন ভুল স্টেপ নেয়া যাবেনা।

একদম লাস্ট কর্ণারে অঙ্কনকে মদ্যপান করতে দেখা যাচ্ছে। আরমান এখন সেদিকেই যাবে। ইদানিং অঙ্কনকে নিয়ে বেশ নিউজ হচ্ছে! মিডিয়াপাড়ায় কানাকানি পড়ে যাচ্ছে। গোপন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী আজকে অঙ্কনের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। তবে এটা এখন আর গোপন নেই। তার উপর মরার উপর খাড়ার গা হলো কিছুক্ষণ আগেই অঙ্কন কোন এক ড্রাইভারের সাথে ওপেন রাস্তায় মারামারি করেছে৷ হাউ রিডিউকিউলাস! অচিরেই নিজের ইমেজ নিজেই নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আরমান মুখ দিয়ে চো চো শব্দ করে উঠলো। ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
” তাতে আমার কি? আমিতো এটাই চাই। বোকার মতো কাজ আরও বেশি করে করো তাতে বরং আমারই লাভ।”

হুট করে আরমান চমকে উঠলো! নাহ্ অঙ্কন তো
বোকা নয়। আর যাই হোক সে বোকা হতে পারে না। তাহলে কি মতিভ্রম! হো হো করে হাসতে লাগলো আবার। হ্যাঁ মতিভ্রম, প্রেমে পড়লে সবার কমবেশি মতিভ্রম হয়। নাহলে যে অঙ্কন সবসময় তার পি এ জিহাদকে লেঙ্গুর বানিয়ে রাখে যার কথার তাপিস্যে কাছে ঘেঁষা দায়! বাবারে বাবা ওইটার চোখ নয়তো যেন শকুনের চোখ। আর অলটাইম প্রপার সিকিউরিটি মেইনটেইন করে চলা অঙ্কন এভাবে লাটাই বিহীন ঘুড়ি মতো খোলা আকাশে, ভাবা যায়!

” আরে অঙ্কন যে! অনেকদিন পর দেখলাম। ওয়ান্ডার্স ক্লাবে স্বাগতম, ডিয়ার।” আরমান স্মিতহাস্যে হাত বাড়ায় অঙ্কনের দিকে।

ব্লু লেভেল হুইস্কির গ্লাসটা একপাশে সরিয়ে ঝুলঝুলে চোখে অঙ্কন আরমানের হাতে হাত মেলায়। তার বেশ নেশা হয়ে গেছে।

আরমান চোখে ইশারা করতেই ওয়েটার দুইটা দেড় ইঞ্চি গ্লাস নিয়ে হাজির।
আরমান নিজে একটা নিয়ে আরেকটা অঙ্কনের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
” আমি হুইস্কিতেই ঠিক আছি। টাকিলায় আমি খুব একটা অভ্যস্ত নই।”

” আরে নাও নাও। সেলিব্রেট করো। আরেকটু আগেই তোমার এংগেইজমেন্ট হয়েছে। লেট’স সেলিব্রেট।”

এংগেইজমেন্ট এর কথা মনে পড়তেই আংটিটার দিকে চোখ যায়। অনন্যার মুখটা মনে পড়ে যায়। অসহ্য যন্ত্রণায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এমন দূর্বল অবস্থায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও আরমানের জোরাজুরিতে গ্লাসে চুমুক দিতে বাধ্য হয়।

আরমান ক্রুর হাসি হেসে বিড়বিড় করে বললো,
” আহা! অঙ্কন একটু পরেই তোমার মাথার সব তার টাং টাং করে ছিড়ে যাবে। আর আমি বসে বসে মজা দেখবো।”
এর ফাকে আরমান একবার ফোন চেক করে নেয়।

*****************

রিচমন্ডের একটা ইন্সটিটিউটে হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে কাজ করায় ডক্টর অনিক আহমেদ বোনের মেন্টাল কন্ডিশনটা ভালোভাবেই বুঝতে পারলেন। বোনের বাধভাঙ্গা কান্নার প্রতিউত্তরে উনি হো হো করে হাসতে লাগলেন। এতে অনন্যার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। বিস্মিত হচ্ছে একই সাথে রাগান্বিত ও হয়ে পড়ছে।
” অনন্যা,
লিসেন এই সামান্য কারণে কেউ এইভাবে ভেঙে পড়ে। বিশ্বাস কর আমি না হেসে পারছি না।”

” আশ্চর্য তুমি হাসছো! তোমার কাছে যারা এই ধরনের কেস নিয়ে আসে তুমি কি সলভ করার বদলে, প্রতিউত্তরে এই বদ হাসিগুলাই দাও। তাতে নিশ্চয় উনাদের ৮০% প্রবলেম সলভড হয়ে যায়।”

” এইটা কিন্তু তুই ঠিক বলেছিস। অবশ্যই হাসি এবং হাসিই হচ্ছে সমস্ত ফ্রাস্ট্রেশনে আক্রান্ত পেশেন্টদের মেইন ওষুধ। এখন আমি তোকে কয়েকটা কথা বলবো তুই মনযোগ দিয়ে শুনবি কেমন!
প্রথমত, তুই কিন্তু এখন অব্দি অঙ্কনকে তোর ভালোবাসার কথা বলিস নাই। তুই আশা করেছিলো এই কথাটা অঙ্কন তোকে বলবে। যেহেতু সে তোর আকাঙ্ক্ষিত কথাটা মুখ ফুটে বলেনি, তাই তোর আতেঁ ঘা লেগেছে। এম আই রাইট! ”

” নো, ব্যাপারটা এমন নয়। শুধু এইজন্যেই আমি কষ্ট পাইনি। তুই সব একতরফা বলছিস।”

অনিক বোনকে থামিয়ে দেয়।
” আমাকে আগে শেষ করতে দে। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড অনন্যা, এভাবে ভালোবাসা হয়না। ভালোবাসা স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার এটা এমনিই আসে। আর মেইন পয়েন্ট হচ্ছে এতো ইগো নিয়ে ভালোবাসা হয়না। তুই একজনকে ভালোবাসিস মানে তাকে যেকোন উপায়ে অনুভূতিটা পরিষ্কার করে বুঝাতে হবে। তাতে সে যা খুশি তাই ভাবতে পারে। নান অফ ইউর হ্যাডেক।
আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তোর কাছ থেকে অঙ্কনের সম্পর্কে যা যা শুনলাম তাতে আমি ড্যাম শিউর সেও তোকে ভালোবাসে। একটা কথা মাথায় রাখবি, প্রত্যেকটা মানুষ যেমন ভিন্ন তেমনি তাদের প্রকাশভঙ্গীও বৈচিত্রময়। সবসময় নিজের দিকটা না ভেবে অপরপক্ষে থাকা মানুষটার যায়গায় নিজেকে দাঁড় করানো উচিৎ। লুকিং গ্লাস থিওরি বলেও একটা কথা আছে। আর আই থিংক অঙ্কন কিছু ট্রিক্সস খাটিয়ে তোর থেকে অনুভূতিটা জানতে চাইতো আর তুমি উলটা বুঝে তোমার সেন্সিটিভ যায়গায় আঘাত লাগার যাতনায় ভ্যা ভ্যা করতা নয়তো অহেতুক তর্কে মেতে উঠতা। ইট’স নট ফেয়ার অনন্যা, ভালোবাসি কথাটা বোল্ডলি বলতে হয়। প্লিজ এইভাবে ইমোশনাল না হয়ে পূর্বের মত প্র‍্যাক্টিক্যালি ভাব। আমি তোকে সেই আগের অনন্যা হিসেবে দেখতে চাই এভাবে একদম ভাল্লাগছে না।”
অনন্যা এবার একদম মেনী বিড়ালের মতো চুপচাপ হয়ে গেলো। ওপাশ থেকে অনিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
তারপর হাসতে হাসতে বললো,
” তোদের সমস্যা হচ্ছে তোরা দুজনে একই স্বভাবের। আরে বাবা একজনকেতো কম্প্রোমাইজ করতে হবে। এরকম করলে কিচ্ছুটি হবে না।”
চলবে….

চলবে…

রেগুলার পাঠকদের রেসপন্স চাই।??

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে