চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ১১

0
3302

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ১১
লেখা আশিকা জামান

” কি যেন বলছিলে?” কথা শেষ করে ফোনটা প্যান্টের পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে অঙ্কন বললো।
অনন্যা উত্তরে কেবল হাসলো। অঙ্কন বরাবরের মতোই অধৈর্য্য গলায় বললো,
” এভাবে হাসছো কেন? তুমি কি মনে করো হাসলেই তোমাকে ঐশ্বরিয়ার মতো লাগবে? মোটেও না একেবারে বিদঘুটে হাসি যেটাকে বলে তোমার হাসিটা তেমনই।”

অনন্যা আবার হাসলো। হাসলো বলতে দাঁতে দাঁত চেপে হাসি আটকাতে চাইলো কিন্তু কিছুতেই পারলো না! এখন নিশ্চয় তার রাগ করার কথা কিন্তু সে উল্টো কাজটাই করলো। কারণ নিজে রেগে যাওয়ার থেকে অন্যকে রাগাতে যে তার বেশ লাগে।
অঙ্কন দাঁত কটমট করে গাড়ির উপর সজোরে ঘুষি বসিয়ে অন্যদিকে ফিরে।
” এইতো হিরো সাহেব নিজের ফর্মে ফিরে এসেছেন। বিশ্বাস করুন এভাবেই ঠিক আছেন! দয়া করে ভ্যারাইটিজ ক্যারেক্টার প্লে করতে যাবেন না আপনি তাল সামলাতে না পেরে জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলেন। এই খবরটা আপনার ভক্তদের কাছে মোটেও সুখকর হবে না।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



কথাটা কানে যেতেই অঙ্কন ঘুরে তাকিয়ে বললো,” কি বললে তুমি? বললেটা কি?”

” আল্লাহ আপনি শুনতে পাননি? আমি কিন্তু আবার বলতে পারবো না। এমনিতেও আপনার সাথে কথা বলতে বলতে মুখ ব্যাথা হয়ে গেছে।”
অনন্যা কথাটা শেষ করতে পারে না তার আগেই অঙ্কন দুই হাতে শক্ত করে কাধ চেপে ধরে।
অনন্যা বিস্ফোরিত চোখে অস্বাভাবিক ভাবে অঙ্কনের দিকে তাকায়। অঙ্কন ফুঁস ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। চোয়াল পূর্বের ন্যায় শক্ত৷ মাথামোটা লোকেটা ঠিক কি করতে চাইছে অনন্যার বোধগম্য হচ্ছে না। এই মুহুর্তে সে ভয়ে ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। তবে যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলোনা কেননা অঙ্কন চিৎকার করে বলতে লাগলো,
” আমার সাথে কথা বলতে তোমার ঠিকই মুখব্যাথা হয়ে যায় কিন্তু চুমু খেতে মুখ ঠিকই চুলচুলায়! আসলে কথা বলার বদলে তুমি চাইছো যে আমি তোমাকে চুমু খাই তাইতো! ওকেই, আফটার অল অঙ্কন চৌধুরী কারো ঋন রাখেনা। কড়ায় গন্ডায় সুদে আসলে ফেরত দিতে জানে।” অঙ্কন ভ্রু নাচাতে নাচাতে অনন্যার দিকে মুখ ঝুঁকিয়ে আনে।
এরকম একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির জন্য অনন্যা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। সে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে অঙ্কনের ঠোঁট দু’হাতে চেপে ধরে বললো,
” এই না না প্লিজ। আপনি এরকমটা করতে পারেন না।”
অঙ্কনও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! তাকে যে রাগানো হয়েছে, ঝাল টা তো তুলতেই হয়। সে ও তার হাত দিয়ে অনন্যার হাত চেপে ধরে সরিয়ে দেয়। তারপর ছাড়া পেয়ে গড়গড় করে বলবো,
” আমি কি করতে পারি আর না পারি য়্যু হ্যাভ নো আইডিয়া।”
অনন্য ভয়ে জবুথবু হয়ে পাথরের মতো নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর সজোরে এক ধাক্কা দিয়ে অঙ্কনকে সরিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে থাকে।
নিঃশ্বাসের ফুঁস ফুঁস শব্দ আর উত্তেজনায় কাঁপতে থাকা অনন্যার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে অঙ্কনের খুবই করুন হাসি পেলো।
হাসির আতিশয্যে একসময় পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো।
হাসি শুনে অনন্যা প্রথমে কুঞ্চিত চোখে তাকায় তারপর কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে অঙ্কনের কাছে যেতে যেতে বললো,” আপনি রীতিমতো অসভ্য প্রকৃতির! ”
” থ্যাংকস ফর য়্যু’র কমপ্লিমেন্টস।”
অনন্যা অবাক হলো অঙ্কনের উত্তর শুনে। কিন্তু বেশীক্ষণ স্থায়ী হলোনা। অঙ্কন আবার বলে উঠলো, ” তুমি সকালে যেটা করলে সেটাকে বুঝি সভ্যতা বলে! নিজের বেলায় সভ্যতা আর অন্য কেউ কেবল মুখে বলেই অসভ্য বনে গেলো হাউ ফানি!”
অনন্যা মুখ লুকিয়ে ইতস্তত করে বললো,
” আসলে আপনি যেমন ভাবছেন তেমনটা নয়!
আপনার গালে না একটা মশা বসেছিলো….
আর আমি…” এটুকু বলতেই অঙ্কন অনন্যার মুখ চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,
” আর মশাটা আমাকে আলতো ভাবে চুমু দিয়ে দৌড়ে পালায়। কিন্তু আফসোস মশাটা না আমার হাত থেকে কিছুতেই পালাতে পারেনি। এই যে আমি শক্তভাবে এখনো তার হাত ধরে আছি। ভাবছি আর পালাতে দিবো না। এমন চুমু প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গাক এই আকূল ইচ্ছেটাকে আমরণ বাচিঁয়ে রাখতে চাই।”
অনন্যার মনে হলো এখনি সে হার্টবিট মিস করলো। অথবা এতক্ষণ ধরে যা যা ঘটছে পুরোটাই স্বপ্ন। কিন্তু অঙ্কনের স্পর্শ! সে তো এখনো তার দুইহাত শক্ত করে মুঠোয় ভরে নিয়েছে। নিজেকে এক সর্বনাশা ঘোরের মধ্যে আবিষ্কার করলো সে। মনে হচ্ছে এক্ষুণি তলিয়ে যাবে। নিচের দিকে অবনত মুখটাকে থুতনি ধরে বড় অবাধ্যভাবে অঙ্কন উপরে তুলে ফেললো। একেবারে নিজের চোখের সামনে। যেখানে দূরত্ব
বলে কোন জিনিস আছে বলে মনে হলো না। সেই অন্তর্ভেদি দৃষ্টির দিকে চোখ পড়তেই অনন্যার বুকটা কেমন যেন ধকধক করে উঠিলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। হঠাৎ কি হলো অনন্যা অঙ্কনের বুকে মুখ লুকোলো। ততক্ষণে অঙ্কন ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। কতক্ষণ কে জানে! হয়তো সময় থমকে গেলেই বোধ হয় ভালো ছিলো।
” ভাইয়া, তুমি কি শ্যুটিং করছো!”
অঙ্কন পারলে অনন্যাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। অনন্যা ছিটকে সরে গিয়ে গাড়িতে দুই হাত শক্ত করে আকঁড়ে ধরে যাতে না পড়ে যায়। লজ্জায়,অপমানে কটাক্ষভাবে এক চোখে অঙ্কনের দিকে তাকায়। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি গিলে খেতে। অসভ্য লোক জড়িয়ে ধরেছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবার জন্য।
” ভাইয়া লাইট, ক্যামেরা, ডিরেক্টর ইনফ্যাক্ট তোমার টিমের কাউকেইতো দেখছিনা। তাহলে খোলা রাস্তায় কিসের রিহার্সাল হচ্ছিলোরে?”
অনীহার কথা শুনে অঙ্কন বিব্রত বোধ করতে থাকে। কিছুক্ষণ গলা খাঁকারি দিয়েও কিছু বলতে পারেনা। তানভীর কেবল বিস্ফোরিত চোখে একবার অনন্যা আরেকবার অঙ্কনের দিকে তাকায়। দুজনেই অপ্রস্তুত এক পরিস্থিতিতে পড়ে হাসঁফাসঁ করতে লাগলো।
ব্যাপারটা কিছুক্ষণ পর অনীহা নিজেই সহজ করে দেয়। অনন্যার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো, ” আমি না আপনাকে চিনি, আপনি তানভীরের বন্ধু। আপনি আমাদের সেদিন একটু ও হেল্প করেননি।”
অনন্যা চট করে উত্তর দিলো, ” হ্যাঁ সেজন্যে আমি এক্সট্রেমলি সরি। তাই নিজের ভুল বুঝতে পেরে কালকে থেকে তোমাদের খুঁজছি।”
অনীহা ভ্রু কুচকালো। অঙ্কনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো, ” ভাইয়া তুই উনাকে আগে থেকেই চিনতিস!”
অঙ্কন আমতা আমতা করে বললো,
” ও হচ্ছে মায়ের পছন্দের অনন্যা!”
অনীহা লাফ দেয়ার মতন চিৎকার দিয়ে বললো,
” অনন্যা আপু..”
কথাটা বলেই সে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে বললো। ” অনন্যা আপু , সেই সৎসাহস ওয়ালা আপু!”
” মানে, কি বলছো? বুঝতেছিনাতো। ”
” তোমাদের প্রথম মিটের দিন ভাইয়া বাসায় এসে কি ভাঙচুর…”
এটুকু বলতেই অঙ্কন এসে অনীহার মুখ চেপে ধরে।
” খুব বেড়েছিস তাইনা। কালকে থেকে সব কাজ ফেলে পাগলের মতো খুঁজতেছি। যা গাড়িতে উঠ।”
অনীহা ধমক করে গাড়ির দিকে যেতে থাকে। অনন্য তানভীরের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
” সরি দোস্ত ,তুই কি আমার উপর রেগে আছিস!”
” আরে না আমিতো চিন্তায় আছি বাড়ি ফিরলে কপালে কি উত্তম মাধ্যম অপেক্ষা করছে।”
” চিন্তা করিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।” কথাটা বলেই অনন্যা তানভীরের হাতে হাত রাখে।
উত্তরে তানভীর কেবল হাসলো।
অনীহা গাড়ির পেছনের সিটে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। অঙ্কন ড্রাইভিং সিটে বসতে যাবে তখন অনীহা বললো,” শুনেছি বিয়ে করলে বড়রা আশীর্বাদ করে উপহার কিনে দেয় আর আমার বেলায় বকা দেয়া হচ্ছে।”
অঙ্কন মুখ ঘুরিয়ে বললো,
” শুধু বকা না বাসায় যাও মা তোমায় মেরে ছাল না তুলে! ”
অনীহা হঠাৎ ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
” মা মারবে আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে।”
” অবশ্যই না! আমিও ইচ্ছেমতো মাইর দেব। কারণ এইরকম মারের কম্পিটেশন পার্টিসিপেট না করলে কি লোকে শুধু শুধু বড় ভাই বলবে।”
” ভাইয়া…”
অনীহা কাঁদতে কাঁদতে প্রায় হিঁচকি তুলে ফেললো। অঙ্কনের কোনদিনই অনীহার কথায় কথায় কান্না করাটা মোটেও ভালো লাগেনি। তবে আজ লাগছে।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে