#চাঁদের_বাড়ি_বহুদূর(৫ম পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda
মায়া বাসায় ফিরছে। আমিও মায়ার খবর শুনে ওদের বাসায় গেলাম। মায়া কোথায় গিয়েছিলো তা প্রকাশ করছে না। ওর বাবা বারেবার জিজ্ঞেস করছে, কিন্তু মায়ার মুখে কোনো জবাব নেই। মায়ার বাবা প্রচন্ডভাবে রেগে আছে।
আমিও ভেবেছিলাম কিছু একটা বলবো,কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কিছু বলার সাহস পেলাম না। মায়া যেহেতু ফিরে এসেছে,কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। কিন্তু আমার মাঝেও প্রশ্ন মায়া এতদিন কোথায় ছিলো,এবং কেনোই বা এমন করলো। মায়ার কারণে তো আমি ফেঁসে যাচ্ছিলাম। ওর কারণে কয়েকবার আবার থানায় যেতে হয়েছে।
মায়া আমাকে সন্ধ্যা বেলায় ফোন করলো। ফোন করেই হঠাৎ বলে উঠলো….
– আবিদ তুমি আমাকে দুই এক দিনের ভেতরে বিয়ে করতে পারবে?
– তুমি যখন বলবে তখনই পারবো।
– কিন্তু একটা শর্ত আছে।
– বলো কি শর্ত!
– আমাকে বিয়ের পরে তুমি কারো পরিচয় দিতে পারবে না শুধু আমি ছাড়া।
– এটা কেমন কথা?
– তুমি যদি পারো তাহলে তোমাকে আমি বিয়ে করতে রাজি আছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমার মা…
– দেখো আমি কোনো অযুহাত শুনতে চাচ্ছি না৷ আরেকটা কথা তুমি যেমন তোমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না, তেমনি আমিও আমার ফ্যামিলি ছেড়ে দূরে থাকবো। তোমার যেমন বাবার বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি থাকবে না, ঠিক আমার বেলায়ও তেমন।
– আচ্ছা ঠিক আছে। বলো কখন বিয়ে করবে?
– আরেকটা শর্ত আছে।
– আবার কি শর্ত?
– আমাদের বিয়ের সাত দিনের ভেতর দেশের বাহিরে চলে যেতে হবে। এই ক বছর আমি যেমন তোমাকে ছাড়া থাকতে পেরেছি,আরো একটা বছরও থাকতে পারবো। আর হ্যা তুমি আমাকে এক বছরের ভেতরে তোমার কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। এই একটা বছর আমি দূরে কোথাও থাকবো।
– আর কি করতে হবে শুনি?
– আমি আর কিছুই চাই না।
– রাতে আসব? বের হতে পারবে?
– না, বিয়ের দিন দেখা হবে আমাদের।
– কোথায় কিভাবে বিয়েটা হবে আমাদের?
– সেটা আমি ব্যবস্থা করবো। তুমি পুরুষ হয়ে স্ট্রংলি যেহেতু কিছুই করতে পারলে না, তাই আমারই করতে হবে সব কিছু। আর হ্যাঁ তুমি আগে ভেবে চিন্তা করে দেখো আমার শর্ত মানতে পারবে কিনা।
– তুমি তাহলে তোমার বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে কেনো?
– ছোট মানুষের মত প্রশ্ন করো না তো। বিয়েটা তো হচ্ছে না তাই না?
– হ্যা তা অবশ্য ঠিক।
মায়ার কথা শুনে আমি বেশ অবাক হয়েছি। হঠাৎ করে মায়ার এমন চিন্তাভাবনার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। তিনদিন নিখোঁজ হওয়ার পরে হঠাৎ এসে এমন সিদ্ধান্ত কেনো নিলো। আমিও মায়ার শর্তে রাজি হয়ে গেলাম। কারণ আমি মায়াকে হারাতে চাই না৷ মায়া কখনো এমন বলেনি সবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবে। ও সব সময় বলে এসেছে পরিবারের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করতে পারবে না। এখন নিজের ইচ্ছাতেই আমাকে বিয়েটা করছে।
আমি ভাবলাম মায়ের সাথে বিষয়টা শেয়ার করি। কিন্তু পরে মনে হলো এইটা যদি আমার বাবা কোনোভাবে জানতে পারে তাহলে সে অনেক ঝামেলা করে বসবে। তাই কাউকে কিছুই জানালাম না।
আমার বাবা আমাকে এসে বললেন,
– মায়া তো ফিরে এসেছে। এখন ঝামেলা মুক্ত। কিন্তু তুমি কি করতে চাও?
– আমি কি করতে চাই বলতে?
– তোমাকে দেশে এনেছি বিয়ে দেওয়ার জন্য।
– ওহ আচ্ছা। আমার তো একটাই কথা। বিয়ে করলে মায়াকেই করবো,নাহলে কাউকেই করব না।
– এটাই শেষ কথা?
– হ্যাঁ!
– তাহলে তোমার যেটা ইচ্ছে হয় সেটাই করো। তবে মায়াকে বাদ দিয়ে। তুমি যদি মায়াকে ধরেই থাকো তাহলে কারো জন্য মঙ্গল হবে না।
– দেখেন বিয়ে করে সংসারটা আমিই করবো, তাই বিয়ের সিদ্ধান্ত একান্তই আমার। আমি আমার ভালোবাসার কথা জানিয়েছি, আপনি যদি রাজি হন তাহলে ভালো,আর রাজি না হলে আপনার মতের বাহিরে যেতে হবে।
– তাই?
– হ্যাঁ তাই।
আমি বাবার সাথে আগে এমন ভাবে ব্যবহার করিনি কখনো। কিন্তু ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করলে নিজেকে কঠোর বানাতে হয়। আর মায়া যে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে তাই বলে ব্যপারটা এমন না। দিন যতই যাচ্ছে ততই আমাকে প্রেশার দিয়ে চ্যাপ্টা করে দিচ্ছে।
এর পরে সপ্তাহ খানেক ভালোই চলছিলাম। সব কিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসছে। মায়াকেও বিয়ের চাপ দিচ্ছে না আর অন্যদিকে বাবাও আমাকে কিছু বলছে না। মায়াকে এর মধ্যে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি ‘আমরা বিয়েটা কবে করব?’। মায়ার কাছ থেকে সঠিক কোনো এন্সার আমি পাইনি। তবুও স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছি।
হঠাৎ করে আমার কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। বাবার কাছে চাইতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। আমাকে জবাবে তিনি বললেন…
– যার সিদ্ধান্ত সে নিজেই একা নিতে পারে,তার বাবাকে কোনো প্রয়োজন হয়না। আমি কোনো টাকা পয়সা দিতে পারবো না। আমার কাছে টাকা নেই।
– পাঁচবছরে আমি যে টাকা দিয়েছি সেই টাকা কোথায়?
– জমি কিনেছি আর এই বাড়ি করেছি।
– আমার পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে আগামীকালই।
– আমি কোনো টাকা দিতে পারবো না।
– আপনি দিতে পারবেন না তো কে দিবে? আমি তো টাকা জমাইনি। সবই আপনাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
– তো আমি কি করবো?
– আপনি কি করবেন সেটা আমি কি জানি? আমার টাকা দরকার।
– দেখো তুমি ছুটিতে এসেছো। তাই আমি চাইনা মানুষে কোনো কিছু বলুক।
– তার মানে আপনি টাকা দিবেন না তাই তো?
– হ্যাঁ।
এখন আমার মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি নিজের জন্য কোন কিছু না করে। আজ আমি যদি পরিবারের কথা চিন্তা না করে নিজের জন্য কিছু করতাম তাহলে হয়তো আজকে এই দিনটা আমার দেখতে হতো না। আমি বিদেশ গিয়ে বাবাকে লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছি কিন্তু আমার যে পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রয়োজন এখন বাবার কাছে সেই টাকাটা পাচ্ছিনা। বাবার সাথে একটাই অপরাধ করেছি সেটা হচ্ছে আমার ভালবাসাকে চাওয়া। বাবার ভালোবাসার ফল এখন আমার পোহাতে হবে এটা কখনো ভাবতেই পারিনি।
আমি কি করবো ভেবে উঠতে পারছিনা। যে আমি সব সময় আমার পরিবারের কথা চিন্তা করছি সেই আমার বাবা আমার দিকে তাকালো না। কোন কিছু ভেবে উঠতে না পেরে আমি আমার মায়ের কাছে গেলাম। মাকে গিয়ে বললাম…
– বাবা আমার সাথে এমন করছে কেন? আমার প্রয়োজনে বাবার কাছে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা চাইলাম সে আমাকে মুখের উপরে বলে দিল সে টাকা দিতে পারবে না। মা আমি তো নিজের জন্য কোন কিছুই করিনি। আমি যে টাকা ইনকাম করেছি মাস শেষে সেই টাকা বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে তো এখন কোন টাকা নেই। আমার যদি টাকার প্রয়োজন হয় আমি তাহলে কার কাছে টাকা চাইবো?
– সারা জীবন তো দেখে আসছিস তোর বাবা এমনই একজন মানুষ। সে নিজের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কিছুই করে না। তার কাছে যেটা সঠিক মনে হয় সে সব সময় সেটাই করে।
– তুমি আমাকে হাজার পঞ্চাশেক টাকা ম্যানেজ করে দিতে পারবে?
– দেখি কি করা যায়, চিন্তা করিস না।
মায়ার সাথে আমার কথা হলো। মায়া আমাকে ফোন দিয়ে জানালো আগামীকালকেই আমরা বিয়ে করছি। বিয়ে করতে তো বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন সেই টাকাটা এখন আমার কাছে নেই। আমি মায়াকে বলতে পারছিনা যে আমার কাছে কোন টাকা নেই। তবুও মায়া যেহেতু বলেছে আমার তো কালকে বিয়ে করতেই হবে এবং বিয়ে করার সপ্তাহখানেক এর ভেতরে নাকি আমার দেশের বাইরে চলে যেতে হবে। তাই আমি আমার এক বন্ধুর কাছে কিছু টাকা চাইলাম।
পরের দিন সকালে বাসা থেকে বের হলাম মায়াকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে। এরপরে যেটা আমি শুনলাম তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না…..
#চলবে……