#চাঁদের_বাড়ি_বহুদূর(৩য় পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda
মায়া নিখোঁজ! গতকাল রাতেও আমার সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু সকাল থেকে মায়াকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল শেষ হয়ে দুপুরও গড়িয়ে গেলো। কিন্তু মায়ার কোনো হদিস মিলছে না। মায়া হঠাৎ করে এভাবে হারিয়ে যাওয়ার কারণটা খুঁজে পেলাম না।
মায়ার বাবা বলাবলি করছে আমি নাকি মায়াকে লুকিয়েছি। অথচ এই ব্যপারে আমি কিছুই জানি না। মায়া এমনিতেই আমার সাথে ঠিকঠাক ভাবে কথা বলছিল না। আমি কিভাবে মায়াকে ওর বাসা থেকে সরিয়ে নিবো? মায়ার চিন্তায় আমি নিজেই শেষ হয়ে যাচ্ছি সেখানে মায়াকে আমি লুকিয়ে রাখবো কি করে। আর তাছাড়া মায়া নিজেই আমাকে বলেছে ওর বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে। সেখানে আমার কথা মত মায়া পালিয়ে যাবে, এমনটা তো কখনোই হওয়ার কথা না।
যদি সম্ভব হতো আমি দেশে এসেই মায়াকে পালিয়ে বিয়ে করতাম,কাউকে না জানিয়েই। যেখানে আমি দেখছি আমার পরিবার মায়াকে মেনে নিচ্ছে না। সবার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েটা করাটা অসম্ভব ছিল না। কিন্তু তা আমি করিনি। আমি যদি মায়াকে বিয়েই করতাম নিজের ইচ্ছায় তাহলে,মায়ার বাবা এই গ্রামে টিকতে পারতো না। আমার বাবা তার উপরে ক্ষমতার অপব্যবহার করতো। মায়ার পরিবারকে অপমানিত করতো। মায়ার বাবা সাদাসিধে একজন মানুষ। আর তাছাড়া মায়া কখনো চাইবে না ওর পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে। আমাকে যেমন ভালোবাসে তেমন ওর পরিবারকেও ঠিক সেরকম ভাবে ভালোবাসে। ভালোবেসে সবার অমতে গিয়ে বিয়ে ঠিকই করা যায়,কিন্তু পরিবার বিরোধিতা করলে দুজনের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
মায়ার নিখোঁজ হওয়াতে নাকি ওর বাবা থানায় ডায়েরি করেছে। সবার চোখ নাকি আমার দিকে। কিন্তু আমার বাবার কারণে কেউ ওপেনলি বলতে পারছে না মায়াকে আমি সরিয়েছি। থানা থেকে ফোন আসলো। আমার বাবার আমাকে নিয়ে থানায় গেলো। গিয়ে বললো…
– দেখুন আমার ছেলেকে সন্দেহ করাটা স্বাভাবিক ব্যপার। কারণ আমার ছেলের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিলো ওই মেয়েটির। আমি ওদের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় মায়ার বাবা মায়ার বিয়ে ঠিক করেছে। এই দিকে আমিও আমার ছেলের জন্য মেয়ে দেখছি। খুব তাড়াতাড়ি ওর বিয়েটাও হয়ে যাবে। আমি চাইনা আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো ডায়েরি থাকুক। মাত্র তিন মাসের ছুটিতে দেশে এসেছে। আপনি সাধারণ ডায়েরিটা তুলে নিন। এই নিন…
বাবা পুলিশ অফিসারের দিকে দুইটা বান্ডিল এগিয়ে দিলেন। পুলিশ অফিসার হেসে দিয়ে বললেন…
-ছি! এসবের দরকার নেই।
– রেখেদিন, চা খাবেন।
আমার ইনকামের টাকা দিয়ে বাবা অপব্যবহার করছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমি টাকা ইনকাম করেছি,আর বাবা আমার সেই টাকা যেখানে-সেখানে ঢালছে। আমি শুধু বাবার কর্মকাণ্ড দেখছি। সে একটাবারও আমার কথা চিন্তা করলো না।
আমার হাত-পায়ে শক্তি পাচ্ছি না। দেশে এসে আমি বড় ধরনের বিপদে পড়ে গেলাম। কারণ আমি যদি না আসতাম তাহলে এরকম সিচুয়েশনে আমার পরতে হতো না। নানান দিক থেকে আমি ফেঁসে যাচ্ছি । অথচ এমনটা হওয়ার কোন কথাই ছিল না। আমি যদি দেশে না আসতাম তাহলে হয়তো এত সহজেই মায়াকে আমি হারাতাম না। ওর সাথে আমার যোগাযোগ হতো কন্টিনিউ।
মায়াকে আমার যেকরেই হোক খুঁজে বের করতে হব। প্রথমত সবাই আমার দিকে আঙ্গুল তুলছে। আর দ্বিতীয়ত মায়াকে আমি ভালোবাসি। ভালোবাসাকে পেতে হলে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। যেমন জীবনের মায়া ত্যাগ করতে হয়, আবার কোন কারনে পরিবারের মায়াও ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু আমি কোন কিছুই পারছি না কারণ আমি যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, সেই পরিবারে থেকে কোন কিছুই করা সম্ভব না। আমি আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু করলে সব দ্বায়ভার নিতে হবে মায়া পরিবারের।
ইন্টার ফাইনালে ইয়ারে আমি মায়াকে যখন প্রপোজ করি..
” মায়া বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে কখন কিভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি জানি না। এতদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে তোমাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারিনি। কিন্তু ভেবে দেখলাম সময় যতই গড়িয়ে যাবে ততই তোমাকে হারানোর ভয়টা আমার ভেতরে কাজ করবে। তাই আর দেরি না করে আমার ভালোবাসার কথাটা জানিয়ে দিলাম। প্লিজ সারাজীবন এর জন্য তুমি আমার হয়ে যাও।”
মায়া আমাকে জবাবে বলেছিলো..
” আবিদ তুমি ভালো করেই জানো আমার বাবা একজন শিক্ষক, আর তোমার বাবার রাজনৈতিক পাওয়ার আছে। তাই আমি চাইনা তোমার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে আমার বাবাকে কথা শুনাতে। তুমি আমার সেই ছোট বেলার বন্ধুর মতই থেকে যাও।”
– দেখো মায়া ভালোবাসার কাছে, বর্ণ,ধর্ম,সমাজ কিংবা, পারিবারিক কিছুই মানে না। ভাবতে পারো এটা আমার ছেলে মানুষি, কিন্তু সত্যিই আমি ভালোবাসি। এবং তোমাকেই আমি সারাজীবন জন্য চাই।”
এর পরে আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্ক ভালোবাসায় পরিনত হয়। তারপর থেকে আমি মায়ার পরিবারের কথা চিন্তা করে বা ওর বাবার সম্মানের দিকে তাকিয়ে বাড়াবাড়ি করতে যাইনি। তা নাহলে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি মায়াকে আপন করে নিতে পারতাম।
কিন্তু এখন নিজেকে স্বার্থপর মনে হচ্ছে কিংবা অপরাধী মনে হচ্ছে। আমার কারণেই মায়ার পরিবারের এই অবস্থা। এমনকি মায়াও নিখোঁজ।
দুইদিন পাড় হয়ে গেলো মায়ার কোনো সন্ধান মিললো না। মায়ার বাবা সব জায়গা খোঁজ নিয়েছে কিন্তু কারো বাসায় বা কারো কাছে মায়া যায়নি।। এক পর্যায়ে মায়ার বাবা আমাকে তার কাছে ডেকে পাঠালেন। আমি তার কাছে যাওয়ার পরে বললেন…
– আবিদ আমি তোমার বা তোমার পরিবারের কোনো ক্ষতি করেছি কিনা যানি না। কিংবা আমার মনেও পড়ছে না। তোমরা কেনো আমার সাথে এমন করছো? প্লিজ তুমি আমার মায়াকে ফিরিয়ে দাও। সামনে ওর বিয়ে, এখন মায়ার এই অবস্থা যদি ছেলে পক্ষ শুনতে পারে তাহলে কি মায়ার বিয়েটা হবে? আর তোমার বাবা যেমন তোমাদের সম্পর্ক মানবে না ঠিক তেমনি আমিও মানবো না। তোমার কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছি প্লিজ তুমি মায়াকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
– চাচা আপনি কি বলছেন? মায়াকে আমিই যদি নিয়ে যাই তাহলে আমি বাড়িতে কেনো থাকবো? আর আমি তো চাইলে পালিয়ে বিয়েও করতে পারতাম। আপনারা আমাকে যেভাবে প্রশার দিচ্ছেন তা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
– দেখো আবিদ সব কিছুর পেছনে দ্বায়ী তুমি। তুমি যদি এর কোনো সমাধান না করো তাহলে ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।
আমি এখন কোথায় যাবো কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। সবাই এখন আমার বিরুদ্ধে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম খুব তাড়াতাড়ি দেশ ছেড়ে আমার কর্মস্থলে চলে যাবো। টিকেট কাটার জন্য এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করলাম। কিন্তু ইমিডিয়েট ভাবে টিকেটের কোনো ব্যবস্থা নেই। তিন চারদিন পরের টিকেটে যেতে হবে। তাই টিকেটটা কনফার্ম করলাম না। আরেকটু ভাবতে হবে আমাকে।
আমি যে ফোনে এজেন্সির সাথে কথা বলেছি তা আমার মা শুনে ফেলেছে। সন্ধ্যা টাইমে আমি পুকুরপাড়ে বসে আছি। মা অজু করতে আসলেন। আমাকে একা পেয়ে বললেন…
– আবিদ এভাবে হেরে গেলে তো হবে না। তোর বাবার ভয়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিস না যে মায়া আর তুই আলাদা হয়ে যাবি।
– আলাদা হতে আর দূর কোথায় মা ?
– দেখ মায়া হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে। মায়া বাড়িতে ফিরলে যেকোনো ভাবে ওকে তুই বিয়ে করে নিবি। এতদিন তো আমি সব কিছুই দেখেছি। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। আর সত্যি কথা বলতে মায়াকে আমার সেই আগে থেকেই পছন্দ। আমিও চাই মায়া আমার ছেলের বউ হয়ে এই বাড়িতে আসুক। আমি তোর মা হয়ে তোকে অর্ডার করলাম মায়াকে খুঁজে বের করে যেভাবেই হোক ওকে আমার ছেলের বউ করে আনবি। সারা জীবন তোর বাবার অত্যাচার আমি সহ্য করে গিয়েছি,তার মানে এই নয় তোরাও সেই অত্যাচার সহ্য করবি……
#চলবে…..