চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ১০

0
3350

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ১০
লেখা আশিকা জামান

পাখিদের ককলকাকলীতে জাগতিক ভোরের সূচনা হয়েছে। পূব আকাশের লালচে আভা আস্তে আস্তে চারপাশটা এক অনাবিল আলোয় ভরিয়ে দিচ্ছে। সেই আলো জানালার পর্দা ভেদ করে চোখেমুখে পড়তেই যখন চনমনে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় তখন সকালটাকে বড়ই মোহনীয় বলে মনে হয়। তবে আজকের সকালটাকে অনন্যার চোখে বড় অন্যরকম হয়ে ধরা দিচ্ছে।

ঘুম ভেঙ্গে গেছে অনেক আগে তবে তার একটুও উঠতে ইচ্ছে করছেনা। যেমনভাবে জাপটে ধরে ছিলো হাত দুটো তেমনভাবেই অঙ্কনকে আষ্টৃপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। তবে মজার বিষয় হলো এতে তার বিন্দুপরিমাণও সঙ্কোচ, লজ্জা, ভয় কিচ্ছু হচ্ছে না। আচ্ছা তার কি সমস্ত লজ্জা উঠে গেছে? কথাটা মাথায় আসলেও বাড়তে দিলো না। সে ফ্যালফ্যাল করে আরো একবার অঙ্কনের দিকে তাকালো। মানুষটা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। অবশ্য এতে তার সুবিধেই হয়েছে যেভাবে খুশি সেভাবে দু’চোখ ভরে তাকিয়ে থাকতে পারছে। ঘুমন্ত মানুষ হুট করে চোখ তুলে চাইবে না আর তার লজ্জা, অস্বস্তিতে পড়তে হবে না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



সামনের ঢেউ খেলানো চুলগুলো বার বার প্রশস্ত কপালজুড়ে খেলা করছিলো এ দৃশ্যে চোখ ফিরিয়ে নিলে যে সৌন্দর্য্যের অবমাননা করা হবে। কুচকুচে কালো দীঘল চোখের পাপড়ির ছায়া পড়েছে চোখের কোলজুড়ে।
চিবুকের এক পাশে নরম রোদ এসে পড়ায় মুখটা বড্ড বেশী উজ্জ্বল লাগছে। অঙ্কনকে এই মুহুর্তে দেবদূতের মতো লাগছে। অনন্যার হঠাৎ যেন কি হলো, চিবুকের যে স্থানে নরম রোদ পড়ে চিকচিক করছে সেই স্থানে নিঃশ্বব্দে চুমু খেয়ে নিলো।
এতটুকু হলে বোধ হয় ভালো ছিলো। কিন্তু কে জানতো ঘুমন্ত অঙ্কন অনন্যার সমস্ত থিওরি উপেক্ষা করে হুট করে তখনি চোখ খুলে মুখের সামনে ঝুঁকে বসা লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখে ফেলবে!
ঘটনার আকস্মিকতায় অনন্যা প্রায় বাকশক্তিহীন, অসাড়, লজ্জিত, বিস্মিত আর সীমাহীন সঙ্কোচিত বোধ করলো। শেষে পালিয়ে বাঁচলো।

অঙ্কন কিছু বললো না কেবল হতভম্ব হয়ে অনন্যার ছুটে যাওয়া দেখলো। এক্ষুণি এই বিষয়ে পুলিশের মত জেরা করে মেয়েটাকে কোনমতেই অস্বস্তিতে ফেলা তার কাম্য নয়। তাছাড়া সঠিক সময় আর সুযোগ বলেও একটা ব্যাপার আছে।

অঙ্কনের ইচ্ছে ফ্রেস হয়ে নাস্তা সেরে তবেই বের হবে। এখানে বেকার বেকার টাইম ওয়েস্ট করার মত সময় তার হাতে নেই। এমনিতেও অনেক টাইম ওয়েস্ট হয়ে গেছে।

অঙ্কন ফ্রেস হয়ে মুনসেরকে অনন্যাকে ডেকে নিয়াসতে বলে। নিজে যায়নি। অনন্যা এসে চুপচাপ টেবিলে বসে। ভুলেও অঙ্কনের দিকে চোখ তুলে তাকায় নি। তবে গলা দিয়ে খাবার নামছিলো না। হঠাৎ করেই গলায় খাবার আটকে যাওয়ায় খুঁক খুঁক করে কেশে উঠলো।
অঙ্কন তড়িঘড়ি করে পানির গ্লাসটা তার মুখে সামনে ধরতেই সে ঢকঢক করে পানি গিলে অঙ্কনের দিকে সরুচোখে তাকায়।
অঙ্কন স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই পূর্বের মতোই বললো,
” তুমিতো দেখছি প্রত্যেকটা কাজেই অমনোযোগী! এভাবে হলে কি করে চলবে। ”
অনন্যা কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালো। তার আর খেতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোন কাজ সে জীবনেও করেনি আজও করবেনা।
অঙ্কন সেদিকে তাকিয়ে চিঁবিয়ে চিঁবিয়ে বললো,
” সব কিছুই অসম্পূর্ণ করে পালিয়ে যাবে তাইতো? খুব মজা তাই না!”
অনন্যা চমকিয়ে উঠে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। অঙ্কন চোখ মুখ লাল করে উঠে গেলো তবে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো,
” আমি এক্ষুনি বেরোব। যদি কারো যাওয়ার ইচ্ছে থাকেতো আসতে পারে।”

অনন্যা নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে ঠিকি বেরিয়ে পড়ে। তবে অঙ্কন আটঁকে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে একদম ঘিরে রেখেছে। এই মুহুর্তে মুনসেরের উপর প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। মনে মনে ভয়াবহ রকমের গালি দিয়ে ভীড় ঠ্যালে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
ভেবেছিলো গাড়িতে বসলে একটু ভালোলাগবে কিন্তু না মেজাজ সপ্তম আকাশে! কারণ অনন্যা নিজেই নিজের সিটবেল্ট বেধেঁ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। এটা নিশ্চয় রাগ করার মতো কোন কারণ নয় কিন্তু হিরোসাহেব ঠিক রেগে গেলেন! কিন্তু কেন? কারণটা সে বেমালুম এড়িয়ে গেলো। এবং এত জোরে গাড়ী ড্রাইভ করলো যে অনন্যা ভয় পেয়ে কুঞ্চিত চোখে অঙ্কনের দিকে তাঁকাতে বাধ্য হয়। কিছুদূর যাবার পর অঙ্কনের মনে হয় তানভীর বা অনীহা দুজনের নম্বরে এখন আরেকবার ডায়াল করা দরকার যদি পাওয়া যায়। অনীহার নম্বর ডায়াল করলো কিন্তু আগের মতোই সুইচড অফ। তাই বলে তানভীরের নম্বর ডায়াল করবে না এতোটা অধৈর্য্যশীল সে বোধ হয় নয়। একবার ডায়াল হতেই তানভীর ছ্যাচড়ার মতো ফোন ধরে বললো,
” অঙ্কন ভাই, কি খবর?”
অঙ্কনের ভয়াভহ রকমের গালি মনে পড়ে গেলেও সেটাকে না আওড়িয়ে ভদ্র ভাষায় শান্ত গলায় বললো,
” খুব ভালো, আমি সন্ন্যাসী হয়ে বনে বাদাড়ে তোমাদের খুঁজছি ভাই। তুই কি চাস, আমি আজীবনের মতো সন্ন্যাসী হয়ে যাই।”
তানভীর মনে হয় গলে গেলো,
” ভাই, অনেকতো হলো এবার ভাবছি বাড়ি ফেরা যাক। তাই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছি। ”
” কোথায় তোরা! আমরা রসূলপুরে তোরা কি কাছাকাছি?”
” হ্যাঁ, তোমরা এতদূর আসলে কিভাবে? আচ্ছা কে বললো আমরা ঠিক এখানেই আছি।”
” আমার সাথে এক পেত্নি আছেতো সেই ঘাড়ে ধরে নিয়েসেছে। তোরা ঠিক হাফ এন আওয়ারের মধ্যেই এসে পড়। আমি আর আগালাম না! আবার ওদিকে কত কাজ তোকেতো আবার জামাই আদর করে বরণ করতে হবে। ”
তানভীর কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার আগেই অঙ্কন ফোন কেটে দিয়েছে। গাড়িটা থামাতেই অনন্যা ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলো,
” তানভীরের সাথে কথা হলো?”
” তুমি কি কালা শুনতে পেলে না!”

” হ্যাঁ, শুনতে পেয়েছি তবে ওর দিকটাতো শুনতে পাইনি।”
” এলেই শুনতে পাবে।”
অঙ্কন গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। লাইটার বের করে সিগেরেট ধরাতে ধরাতে শাল গজারির গভীর জঙ্গলের দিকে উদাসভাব তাকায়। জারুল গাছে নীলচে ফুল ছেয়ে আছে। তারই মগডালে শালিক পাখি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অনন্যা গাড়ি থেকে নেমে অঙ্কনের কাছে এসে দাঁড়ায়। অঙ্কন সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে উদাস গলায় বললো,
” কালকে থেকে বড্ড খারাপভাবে সময় কাটছে আপনার তাই না! একজন অপছন্দের মানুষের সাথে গোটা একটা রাত কাটাতে হলো! আমার বোনের জন্য আপনার অনেক কষ্ট করতে হলো। সবকিছুর জন্যে থ্যাংকস!”
কথাটা শুনে অনন্যা নিভলো। গলাটা খাদে নামিয়ে বললো,
” আপনি বোধ হয় আমাকে তুমি করে বলতেন!”
” হ্যাঁ, বলেছিলাম তবে অনুমতি না নিয়ে। দুঃখ পেয়ে থাকলে সরি। আমি এরকমই। তাছাড়া কেউ একজনও বোধ হয় রাতে আমাকে তুমি করে বলেছিলো। সে হয়তো বেমালুম ভুলে যেতে পারে তবে আমি ইচ্ছে করে ভুলে যাওয়ার চেষ্টাটাতো করতে পারি। নাকি পারিনা!” প্রশ্নবিদ্ধ গলায় অঙ্কন অনন্যার দিকে তাকায়। আজঁ যেন হঠাৎ কি হয়েছে কেমন সিরিয়াস মুডে কথাগুলো বলে চলেছে। নিজেকে কোনমতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না।

” হ্যাঁ, তা পারেন! সেলিব্রেটিরা এরকম হাজার হাজার ফলোয়ার, শত শত মেয়েদের ইমোশনস, ফিলিংস দেখে দেখে অভ্যস্ত। এগুলা তাদের কাছে দুধভাত। ভুলে যাওয়াটাও স্বাভাবিক ব্যাপার।”

অঙ্কন সিগারেট ফেলে দিয়ে অনন্যার দিকে ঘুরে তাকায়। মেয়েটার অসম্ভব কালো কুচকুচে চোখ দুটো দীঘির স্বচ্ছ জলের মতো টলমল করছে। হঠাৎ করেই যেন কি হয়ে গেলো একটানে অনন্যাকে নিজের খুব কাছে এনে দাঁড় করায়। ফিসফিসিয়ে বললো,
” আপনারও কি তেমন অনুভূতি কাজ করে ?”

” করলেওতো সেটা বাকি সবার মত স্বাভাবিক ব্যাপার হবে! এটাকে আলাদা করে বলার মত কিছু কি আছে?”

” আমি শুধু জানতে চেয়েছি ইয়েস অর নো। উত্তরটা আমার কাছে কোন বিশেষত্ব বহন করবে কি করবে না সেটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। সেটা আপনার অনুমানের উপর নিশ্চয়ই নির্ভর করবে না।”

অনন্যা অতি সাবধানে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার জন্য আবার বলে উঠলো,
” আপনি কিন্তু আমাকে আবার আপনি করে বলছেন আমার অস্বস্তি হচ্ছে। শুনতে ভালো লাগছে না। ”

এইমুহূর্তে অঙ্কনের মেজাজ বিগড়ে গেলো। না এই মেয়ের কাছে কিছু আশা করাটাই বোকামো। নচ্ছার মেয়ে একটা কিভাবে কথা ঘুরিয়ে দিলো৷ বাঁজখাই গলায় বললো,
” তোমাকে তুমি করে বলার মতো আদৌ কোন কারণ আছে কি?”
অনন্যা উত্তরে মুচকি হেসে কি বললো তা শোনা গেলো না কারণ তার আগেই অঙ্কনের ফোন বেজে উঠেছে।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে