চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৯

0
3233

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৯
লেখা আশিকা জামান

আচাঁনক জানালা খুলে গেলো। পর্দাগুলো অন্ধকারে দুলছে। অনন্যা বিছানা ছেড়ে উঠে বসেছে। কোনরকম বাতাসের তান্ডব নেই উলটো ভ্যাপসা গরম। আশ্চর্য! পরদা দুলে উঠেছে সাথে জানালাও খুলে গেছে। কিন্তু তার স্পষ্ট মনে আছে জানালা দরজা বন্ধ করে শুয়েছে। অনন্যার মাথা কাজ করছেনা। মনের ভুল ভেবে আবার শুয়ে পড়ে। একটুপরেই কেমন যেন একটা শব্দ শুনতে পেলো। শব্দটা ক্রমশ কাছে আসতে থাকে।

অনন্যা দোয়া ইউনুস পড়তে পড়তে বিছানায় জড়সড়ভাবে বসে পড়ে। জানালার দিকে চোখ পড়তেই ভয়ে পিলে চমকে উঠে। শরীর অনবরত কাঁপতে থাকে। একটা ছায়ামূর্তি জানালা ধরে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। বিকট জোড়ে চিৎকার দিয়ে অনন্যা ঘর থেকে বের হয়ে অঙ্কনের রুমের দরজায় অনবরত ধাক্কাতে থাকে।
অঙ্কন একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খোলে মাত্রই চোখটা লেগে আসছিলো। অনন্যা কাঁপতে কাঁপতে অঙ্কনকে জড়িয়ে ধরে। ক্ষীণ স্বরে বারবার প্রলাপ বকার মতন করে বলে উঠে,

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



” ভুত, ভুউউত! ভুুউউউত!!”
অঙ্কন কিছুমাত্রও অবাক হলো না বরং এমন একটা ভাব দেখালো যেন এমনটাই হওয়ার ছিলো। যেখানে যেঁচে পড়ে মেয়েটা চান্স দিচ্ছে সেখানে অন্যসকল পুরুষ হলে বোধ হয় সুযোগটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টাটাই চালাতো কিন্তু আমাদের হিরো সাহেব নিজেকে ছাড়াতেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো ভাবা যায়! তবে অনন্যাও ভয়ের চোটে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য সেও দ্বিগুন শক্তিতে অঙ্কনের বুকে করে আঁছড়ে পড়তে লাগলো।
অঙ্কন না পেরে খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠলো,
” রাতদুপুরে কি সার্কাস শুরু হলো!
প্লিজ ছাড়ো অস্বস্তি হচ্ছে।”
কাধের উপর সজোরে ঝাকুনি খেয়ে অনন্যা ছিটকে সরে অঙ্কনের দিকে তাকায়।
শার্টলেস অঙ্কন তার আকর্ষনীয় সুঠাম, ব্যায়ামপুষ্ট দেহ নিয়ে একরাশ বিরক্তি ভরা চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। না চাইতেও চোখ ফিরিয়ে নিতে পারছেনা। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েই রইলো।
অঙ্কন অনন্যার চোখ অনুসরণ করে নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তিতে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ ই অন্যসুরে ধমকিয়ে উঠলো, ” কি দেখছো এভাবে?”

” ভুত। ” অনন্যা চট করে বলে উঠলো।

” হোয়াট! আমি ভুত। আমাকে তোমার ভুত মনে হচ্ছে।” চোখ মুখ শক্ত করে অনন্যার হাত টেনে ধরে দরজার কাছে যেতে যেতে আবার বললো,
“গেট আউট। এক্ষুনি যাও বলছি।”

অনন্যা ফের অঙ্কনের দু’হাত আঁকড়ে ধরে বললো,
” প্লিজ, আমাকে পাশের ঘরে যেতে বলবেন না। আমি ভয়ে মরেই যাবো। বিশ্বাস করুন ঐ ঘরে ভুত। আমি নিজ চোখে দেখেছি।”

” আচ্ছা তুমি কি ঠিক করেই এসেছো আমাকে একটুও শান্তি দিবেনা! সেই সন্ধ্যে থেকে ভুস ভুস করে আমার উপরে ঘুমুলে আমি কিচ্ছু বলিনি। আর এখন বাকি রাতটুকুও আমাকে জ্বালানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছো৷ এই প্লিজ এই ভুতের তান্ডব এপিসোড টা একটু বন্ধ করবে? আমাকে একটু শান্তি দিবে? দোহাই তোমার আমি বড় ক্লান্ত।”

” হ্যাঁ সে ঠিক আছে। বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে একটুও ডিস্টার্ব করবোনা কেবল আপনার পাশে লক্ষী মেয়ের মতো একটু ঘুমুবো।”

” হোয়াট? হ্যাভ ইউ গন ম্যাড??
না আমর হাজব্যান্ড ওয়াইফ আর না কাপল! হাউ কুড ইট পসিবল? গট ইট!”

” আমি একা একা ঐ ঘরে যেতে পারবোনা ব্যাস আমি আর কিচ্ছু জানিনা জানতেও চাইনা। ” অনন্যা সটান হয়ে অঙ্কনের বিছানায় বসে পড়লো। এমনভাবে বসলো যেন অঙ্কনের বাপের ও সাধ্য নেই ওকে সরানোর।

” চোখের সামনে এরকম একজন সেলিব্রেটিকে দেখে কি আউট অফ কন্ট্রোলে চলে গেছো?”

” যা খুশি তাই বলুন তবু যেতে বলবেন না।”

” দেখো, অনন্যা তুমি এই রাতদুপুরে এসে ভুত ভুত বলে চিল্লালেই কি আমাকে তা মেনে নিতে হবে!
আই থিংক তোমার খুব খিদে লেগেছে তাই ঘুম না আসায় কিসব উল্টাপাল্টা হ্যালুসিনেশন হয়েছে। এসো খাও। খেয়ে মুড ঠিক করে রুমে যাও। কুইক।”

অঙ্কন টেবিল থেকে খাবারের প্লেট হাতে তুলতে তুলতে বিছানার দিকে আগায়। অনন্যা লাফিয়ে উঠে বললো,
” না আমি খাবো না। গলা দিয়ে নামবে না। খেয়ে চলে যেতে বলবেন না প্লিজ। একটু বিশ্বাস করুন। ”

” ওকে যেতে বলছিনা তুমি আগে খাও।”
অনন্যার হাতে প্লেট তুলে দিয়ে নিজেও প্লেট হাতে তুলে নেয়। তাই দেখে অনন্যা কপাল কুঞ্চিত করে বললো,
” আপনি কি না খেয়েই শুয়েছিলেন?”

এই কথাতে কি এমন মহার্ত্য ছিলো আমাদের হিরো সাহেব খুক খুক করে কাশতে থাকলো। অনন্যা গ্লাস এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে পানি গিলে হঠাৎ ফুঁস করে উঠলো,
” কি ভেবেছোটা কি তোমাকে ছাতিম ফুলের স্পেশাল ডিশ খেতে দেয়ার দুঃখে, বিরহে আমি নিজেও না খেয়ে আছি। তুমি এটা ভাবলে কি করে? নিজেকে এতোটাই ইম্পোর্টেন্ট মনে করার আদৌ কোন কারণ আছে কি? নেই।” অতিমাত্রায় উত্তেজনায় গলা কাঁপছে।

” শান্ত হোন এতটা হাইপার হচ্ছেন কেন, শুধু শুধুই। আমি মোটেও এরকম ভাবিনি। বিষয়টা এমন হয়ে গেলো না, ঠাকুরঘরে কেরে? আমি কলা খাইনি। ”

” হোয়াট! কেউ খেলে ভদ্রতা করে কিছু খেতে হয় তাই আমিও খেতে বসেছি। এখন তুমি না চাইলে এই যে খাচ্ছিনা। ” হঠাৎ ছেলেমানুষের মত অঙ্কন প্লেট থেকে হাত উঠিয়ে ফেললো।

অনন্যা কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে এই বদমেজাজী লোকটার দিকে তাকায়। এখন যদি তাকে যেতে বলে! এই লোকের মতিগতির কোন ঠিক নেই। অসম্ভব সে যেতে পারবেনা। তাই ঢোক গিলে বললো, ” আ’ম সরি৷ প্লিজ আপনি না খেলে আমিও খাচ্ছিনা। প্লিজ আমার কথায় কিছু মনে করবেন না।”
শেষমেষ অনন্যার জোরাজোরিতে খেতে বসতে হলো। তবে ভালো করে খাওয়া হলো না।

খাওয়া শেষ করে অনন্যা বালিশ টেনে নিয়ে বিছানার এক পাশে গুটিসুটি মেরে শুতে লাগলো।
অঙ্কন তখন কিছুটা ইতস্ততভাবে বিছানার এক কোণে বসে বললো,
” তুমি কি শিউর! এখানেই ঘুমোবে।”
” আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। আমি শুয়ে পড়েছি।”
” হ্যাঁ তাতো দেখতেই পাচ্ছি। আচ্ছা আমার সাথে থাকতে তোমার ভয় করছেনা!”

” না। এইমুহূর্তে ভুতের হাত না থেকে বাচঁতে আপনার সাথে এক বিছানায় থাকতেও রাজি। ।”

” বাট, আমার অস্বস্তি হচ্ছে। আমি নিচে শুচ্ছি। ”
অনন্যা কিছু বললো না। হঠাৎ সেই ভয়ংকর শব্দটা এই ঘরেও শুনতে পেলো। তার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। ভয়ার্ত ককন্ঠে অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে বললো, ” শুনতে পাচ্ছেন কিছু? শুনতে পাচ্ছেন?”

” কি শুনবো। ” অঙ্কন ড্যাম কেয়ার ভাব দেখিয়ে নিচে শুতে যাওয়ার বন্দোবস্ত করতে লাগলো।
অনন্যা আবার সেই বিকট শব্দটা শুনতে লাগলো। যেন শব্দটা তার কানের কাছেই বাজছে। জানালার দিকে তাকাতেই একটা রক্তমাখা কাটা হাত দেখতে পেয়ে এক চিৎকার দিয়ে অঙ্কনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
দুই হাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে ধরতে বললো, ” জানালায় দিকে রক্ত মাথা হাত! মেরে ফেললো আমায়৷ মেরে ফেললো। প্লিজ আমাকে ফেলে নিচে যেও না। মেরে ফেললো আমায়।”
অঙ্কন ঢোক গিলে জানালার দিকে তাকিয়ে কিছুই দেখতে না পেয়ে হতাশভঙ্গিতে ফের অনন্যার দিকে তাকায়। মেয়েটা তাকে খাঁমচে ধরে আছে৷ উত্তেজনায় পিঠেও বেশ কয়েকটা নখের আচঁড় পড়েছে। তবে সে এইমুহূর্তে কোন ব্যাথা পেয়েছে বলে মনে হলোনা। মুখে সেই বিখ্যাত ক্রুর হাসি। তবে সেই হাসিটা অনন্যার দেখার সৌভাগ্য হলো না সে অতিমাত্রায় ভয়ের তাড়নায় চোখে অন্ধকার দেখছে।
অনন্যা কিছুটা ধাতস্থ হতেই অঙ্কন বললো,
” আমি তোমার সাথেই বিছানায় শুচ্ছি। প্লিজ তবু ভয় পেয়োনা। সাহস করে জানালায় দেখো কিচ্ছু নেই। ভুত বলে আসলে কিচ্ছু নেই। তাকাও তাকাও।” সেই আশ্বাস অনন্যার ভয়ার্ত হৃদয়ে কোন আশার আলো দেখাতে পারলোনা। সে তার চোখ বন্ধ করেই রাখলো। জীবনে প্রথমবারের মত অন্ধ আর বধির না হওয়ার জন্য আফসোস হলো।
তবে এতকিছুর মধ্যে অঙ্কনকে সে একমুহুর্তের জন্যেও ছাড়লো না। জাপটে ধরে রইলো। অঙ্কনের গল ব্লাডার ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলেও নিজেকে ছাড়াতে পারলোনা। ভীষণ ভয়ানক সুন্দর কিছু মুহুর্তের আনন্দের আতিশয্যে অঙ্কনের প্রায় বেহুঁশ অবস্থা। কিভাবে সারারাত নিজেকে সামলে রাখবে তাই এখন দেখার পালা। নাহ্ ব্যাপারটা এত জটিল হবে ভাবলে হয়তো অন্যকিছু প্ল্যান করতো। মহারানী তো জোকের মতো পেচিয়ে আরামচেঁ ঘুমুচ্ছে। যত জ্বালা হয়েছে তার!
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে