চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৪

0
3628

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৪
লেখা আশিকা জামান

অনন্যার রাগ দিবস সফল হয়নি। এইমুহুর্তে সে বিস্মিত হয়ে সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এখন মনে হচ্ছে রাগ দিবসের বদলে বিস্মিত দিবস পালন করলে বোধ হয় ভালো হতো।

” অনন্যা, হা টা বন্ধ কর। মুখেতো মশা ঢুকে যাবে।”
অনন্যা মুখটা বন্ধ করলো কিন্তু কৌতুহোলি চোখ দমাতে পারলো না।

” ভেতরে আসতে বলবি না। নাকি দাড়ঁ করিয়ে রাখবি।”

” বলবো কিন্তু তার আগে তুই আমাকে বল এত রাতে তোর এই গার্লফ্রেন্ড সমেত আমার বাড়ির দরজায়?”

তানভীর চোখ মুখ অন্ধকার করে বললো, ” ওতো আমার বউ। এখন আর গার্লফ্রন্ড নয় সো রাত বিরেতে যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি।”

অনন্যা কথাটা না শোনার ভাণ করে বললো,
” কি বললি শুনতে পাইনি?”

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


” আমরা আরেকটু আগে বিয়ে করেছি।” অনীহা মিনমিনিয়ে বললো।

” ওয়েল ভালো করেছিস! কিন্তু আমার বাড়ির সামনে কেন? আমার বাপ কি তোর পাতানো আব্বা লাগে নাকি? যা না নিজের বাড়িতে যা নারে।”

তানভীর খপ করে অনন্যার হাত ধরে কাদোঁকাদোঁ হয়ে বললো,
” হায় হায় কি বলতেছিস! বাড়িতে গেলেতো মা অনীহার চুল ছিড়বে। আমাকেও যায়গা দিবে না।দোস্ত ওদের বাড়ির কেউ ও তো মানবে না। একটু কন্সিডার কর অনলি আজকের রাতটা।”

” মানে কি? আজকের রাতটা কি কন্সিডার করবো? বিয়ে করার আগে কি আমাকে জানাইছিলি? তাহলে এখন তোর দায়িত্ব আমি কেন নিবরে বাপ।”

” আহা! বুঝস না কেন মাত্র বিয়ে করলাম বাসর রাত বলেও তো একটা কথা আছে। দোস্ত প্লিজ আজকের রাতটা কালকে সকালেই চলে যাব৷ এই দেখ তোকে ছুঁয়ে প্রমিজ করছি।”

অনন্যা এক কদম পিছিয়ে যায়। ” এই খবরদার একদম ছুঁবি না। তোর উল্টাপাল্টা প্রমিজের ঠ্যালায় মরার শখ নাই। আর আমি আশ্চর্য হচ্ছি এতবড় একটা কাজ করে এসে আবার বাসর করার সখ হয় কেমনে রে?”

” আল্লাহ কি বলেন! বিয়ের রাতেইতো বাসর হয়৷ এতে আবার আশ্চর্য হওয়ার কি আছে। আপনার যখন বিয়ে হবেনা তখন আপনারো বাসর করার শখ হবে।” অনীহা কথাটা বলে আবার তানভীরের দিকে তাকিয়ে বললো, ” তাহলে আমাদের বাসর হবে না বাবু?”

অনন্যা রাগে কটমট করতে থাকে। কি ন্যাকারে বাবা। লাজ শরমের বালাই বলতে নেই।

” হবে সোনা আর একটু ধৈর্য্য ধরো।”

“আমারে কি পাগলা কুত্তা কামড়াইছে।
তোরে যদি এখন আমি যায়গা দেই আমার বাপ মা আমারে ত্যাজ্যকন্যা করবে৷ আর এই মেয়ের ফ্যামিলি তোর ফ্যামিলি সব দোষতো আমারে দিবে৷ থানা পুলিশ হলেতো আমিও ফাঁসবো। দোস্ত আমি মাফ চাই তুই একলা একলা বিয়া করছস এবার বাসর রাত ফুলসয্যা যা খুশি করগা। আমি কাউরে কিচ্ছু কমুনা কিন্তু ভাই আমার বাসায় যায়গা নাই। ক্লিয়ার।”
কথাটা বলেই অনন্যা মুখের উপর দরজা লাগিয়ে সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। কি সাংঘাতিক! মেয়েরে বাবা।

” অনন্যা, কে আসছিলো রে? ” আয়েশা নিজের ঘর থেকেই উচ্চ্বস্বরে প্রশ্ন করে উঠেন।

” কেউ না। তুমি মনোযোগ দিয়ে সিরিয়াল দেখো। ”
অনন্যা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। কেমন যেন ভেতর থেকে খচখচ করতে লাগলো। কেবলই মনে হলো কাজটা ঠিক হয়নি।

********************

ব্রেকফাস্ট টেবিলে মায়ের মরাকান্না দেখে অনন্যা কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেও মুখে কিছু বললোনা। সত্যি বলতে মাকে কিছু বলার সাহস ওর নেই। কি আর বলবে। তাই নিজ দায়িত্বে উরাধুরা বকা শোনেই যাচ্ছে কাল রাত থেকে। তাছাড়া ওকেও যে খুব একটা দোষ দেয়া যায়না। তখন কে জানতো যে এই ঘরপালানো মেয়েটিই মায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ওরফে অঙ্কন চৌধুরীর বোন। এখন সব জানাজানি হওয়াতে সব দোষ কেমন অনন্যার ঘাড়ে চাপলো। সবার হাড়ীর মত মুখ দেখে মনে হচ্ছে দুই বিচ্ছুকে ঘরে যায়গা না দিয়ে একেবারে মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছে। এদের যায়গায় যদি অন্য কোন বন্ধু হতো তবেতো মা বাবা দুজনেই ওকেই ঝেটিয়ে বিদেয় করতো। এখনো সেই দিনটা ভুলেনি। সেই ক্লাস নাইনে তার একবান্ধবী এক ছেলের সাথে পালালো। সব দোষ কেমন তার ঘাড়ে এসে পড়লো। যত রকমের মন্দ কথা সব শুনতে হয়েছিলো। এতকিছুর পর আজকেও দ্বিতীয় ভুলটা স্বভাববশতই অনন্যা করতে চায়নি। কিন্তু বিধি বাম হলে যা হয়। এখানেও তার দোষ।

অনন্যা চুপচাপ টোস্ট মুখে পুরে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো এক্ষুনি সে বাসা থেকে বের হয়ে যাবে৷ এই পরের মেয়ের জন্যে ন্যাকা কান্না একদম সহ্য হচ্ছেনা। তার থেকে ভার্সিটির ক্যান্টিনের সুবল দা’র চাটুকারিতা শোনা ঢের ভালো।
একটা কথা আছে না ‘অভাগা যেথায় যায় সাগর শুকিয়ে যায়’। এখানেও তাই ঘটলো।
কলিং বেলটা বাজতেই মা মেয়ে একরকম চঞ্চল হয়ে উঠলো। দরজার ওপারে অঙ্কন চৌধুরীকে দেখেতো অনন্যার চক্ষু চড়কগাছ। ” এই হিরো এখানে কি করতে আসছে। হিরোগিরী।” অনন্যা বিড়বিড় করে বললো।
আয়েশাতো প্রায় জামাই আদর শুরু করে দেয়। তবে অঙ্কনের ঘোর নিষেধাজ্ঞা শুনে একটু থমকে গেলেও নিজেকে দমাতে পারেনা।
” প্লিজ ব্যাস্ত হবেন না। আমি এখানে বসতে আসিনি। মিস অনন্যা আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।”

অনন্যা ঠোঁট বাকিয়ে তাকায়। নাহ্ অন্য দিনের তুলনায় আজ বেশ মার্জিত পোষাক পরেই এসেছে। তবে একটু এলোমেলো, অসংলগ্ন লাগছে। হয়তো বোনের চিন্তায় চিন্তায়! সে যে কারানেই হোক অনন্যা মোটেও ভাবতে চায়না।
” অসভ্য, ইতর, লুচো, বোন পালিয়েছে বলে একেবারে মান সম্মানের ভয়ে এইটুকুন হয়ে গেছে আর নিজে যখন ওপেনলি একশত মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করে তখন যেন মানসম্মান বাড়ে!” অনন্যা ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকায়।

” ও মা তাই! আমি বরং অন্য ঘরে যাই। তোমরা বরং কথা বলো।” আয়েশা কিঞ্চিৎ হাসার চেষ্টা করলো। তবে এই পর্যায়ে মায়ের বাড়াবাড়িটা বড়ই অসহ্য লাগছে।

” না আপনি চাইলে থাকতে পারেন। তেমন কোন পার্সোনাল ইস্যু নয়।” তারপর অনন্যার দিকে ঘুরে বললো,
” তানভীর আপনার খুব ভালো ফ্রেন্ড তাইতো।”

” হ্যাঁ। ” অনন্যা মৃদুস্বরে উত্তর দিলো।”

” আচ্ছা আপনার কি কোন আইডিয়া আছে ওরা ঠিক কোথায় যেতে পারে।”

” আসলে আমি বলতে পারছিনা। তবে অন্যসব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারি।”

” হ্যাঁ আপনি সবার নম্বর আর অ্যাড্রেস কাইন্ডলি একটু দিতে পারবেন। আমি আবার খুঁজতে বের হব। বুঝতে পারছেন তো এটা একটা অনেক বড় প্রেস্টিজ ইস্যু। আমার ইমিডিয়েট ওদের চাই।”

” সে কি! তুমি একা কেন খুঁজতে যাবে। তোমার সাথে বরং অনন্যা যাক। ওর বন্ধুবান্ধব অনন্যা গেলেই বরং সুবিধে হবে। তাছাড়া সবতো ওর জন্যেই ও যদি কালকে ওদের ফিরিয়ে না দিতো তাহলে আজকে এই পরিস্থিতিই তৈরী হতোনা। তাই গোটা ব্যাপারটাই দায় অনন্যা কিছুতেই এড়াতে পারেনা।” আয়েশার কথা শুনে অঙ্কন, অনন্যা দুজনেই চকিতে তাকায়। অনন্যার মাথায় জেদ চেপে যায়৷ এই আয়েশা নির্ঘাত তার সৎ মা নয়তো সে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে। ভাবা যায় নিজের মেয়েকে কেউ এইভাবে ফাঁসাতে পারে। কি দুঃসাহস রে বাবা। “অঙ্কন কি তোর মেয়ের জামাই লাগেরে? এইভাবে ধরে বেধে পাঠাচ্ছিস।” অনন্যা বিড়বিড় করে একপলক মায়ের দিকে তাকিয়ে তারপর অঙ্কনের দিকে চোখ তুলে তাঁকায়।
” আপনি বসুন। আমি এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসছি।” দাঁত কিড়মিড় করে অনন্যা উঠে চলে যায়।
অঙ্কন সরুচোখে অনন্যার দিকে তাকায়। “অনন্যা মিস অনন্যা এবার তুমি বুঝবে অঙ্কন চৌধুরী কাকে বলে? কত প্রকার? কি কি?” আনমনে কিছুক্ষন বিড়বিড় করে। ভাবওয়ালীর জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে