চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০২
লেখা আশিকা জামান
কালকে থেকে সেমিষ্টার ফাইনাল। অন্বেষা মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলো। কিন্তু কিছুতেই মনোযোগী হতে পারছিলো না। ধড়াম ধড়াম আওয়াজটা শত চেষ্টাতেও উপেক্ষা করা যাচ্ছিলো না। কি জ্বালা হলো?
” অন্বা, অন্বা, শিগগির আয়। ভাইয়া নিজের রুমে তান্ডব চালাচ্ছে? শিগগিরই আয়। নইলে যে কি হবে।”
অনীহা প্রায় কেঁদে দেয়। অন্বেষা চরম বিরক্তবোধ করতে থাকে। দুইবোন যমজ হলেও দুইজন দুই মেরুর। অনীহা সারাদিন সাজগোঁজ আর হাল ফ্যাশনের আপ টু ডেট নিয়েই ব্যাস্ত সময় কাটায়। পড়াশোনায় মনোযোগ প্রায় শূন্যের কোঠায়। এই যে কাল থেকে তার এক্সাম তবুও কেমন হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয় শিক্ষাজীবনের প্রত্যেকটি ধাপ বোনের খাতা কপি করেই উৎরিয়েছে! ওর ভাষ্যমতে পড়াশোনার মত বোরিং বিষয় নিয়ে বেকার টাইম ওয়েস্ট করার কোন মানেই হয়না। তার থেকে ঘুমানো আর সিনেমার বোকা বোকা ডায়লগ উৎরে যাওয়া ঢের ভালো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অপরদিনে অন্বেষা পড়াশোনায় খুব ভালো। দক্ষ আর্কিটেক্ট হওয়ার স্বপ্নে তার ঘুম উবে যায়। বাস্তববাদী, যুক্তি দিয়ে কাউকে বোঝানোর ক্ষমতা প্রশংসনীয়। দুই বোনের মধ্যে অন্বেষাকেই অঙ্কনের বেশি পছন্দ। বলা চলে সে তার বাবার ধাঁচে আর অনীহা বরাবরের মতোই তার বোকা বোকা মায়ের গুণটাই নিজের করে নিয়েছে। সে যাই হোক এই মুহুর্তে অন্বেষা ব্যাতিত অঙ্কনকে কেউ সামলাতে পারবে না।
অন্বেষা বইটা শব্দ করে বন্ধ করে দিয়ে ধড়াম করে উঠে দাঁড়ায়। চশমাটা নাকের উপরে তোলে
বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে ভাইয়ের ঘরের দিকে পা বাড়াঁয়।
” অন্বা, অনন্যা আপু মনে হয় ভাইয়াকে কিছু একটা করেছে? নাহলে এসেই এমন তান্ডবলীলা চালাবে কেন? ওহ্ এই সময়ে আম্মু ও বাসায় নেই। আমি যে কি করি।”
” তোকে কেউ কিছু করতে বলে নি? তুই খালি চুপ থাক তাহলেই আমার অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে।”
অনীহা চুপ করলেও অন্বেষার মাথায় কিছুতেই খেলছে না এই গোটা ব্যাপারটাই সে কিভাবে ভুলে গেলো।
অন্বেষা তো ভেবে রেখেছিলো ভাইয়া ফিরলেই অনন্যা আপু সম্পর্কে সাত পাঁচ জিজ্ঞেস করবে। হয়তো পরীক্ষার চিন্তায় মাথা থেকেই বের হয়ে গেছে।
ক্রমাগত ভাঙচুর চালিয়েছে। রুমের অবস্থা বেজাই করুন। এই রুম ঠিক ঠাক করতে গেলে অন্বেষার সারাদিন লেগে যাবে।
আজ শেফালিরও ছুটি নিতে হলো! অবশ্য এ আর নতুন কি? শেফালিও যেন পণ করে বসে আছে যেদিন বেশি কাজের চাপ সেদিনই তার ছুটি চাই-ই চাই।
” ভাইয়া, তুই কি এতক্ষন কুস্তি করলি? হয়েছে টা কি?”
অঙ্কন খালি গায়ে বিছানায় বসেছিলো। পিঠ বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছিলো। বোনর গলার স্বর শুনতে পেয়ে সে দিশোহারা হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
অন্বেষা সেদিকে সরুচোখে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে ভাবতে থাকে। জন্মের পর এই প্রথম ভাইকে এরকম এলোমেলো অসংলগ্ন অবস্থায় দেখছে। তবে এ নিয়ে অন্বেষা তেমন বিচলিতও হলো না। অঙ্কনই গলা উচিঁয়ে বলতে লাগলো,
” অন্বা, কত বড় সাহস জানিস আমাকে পশুর সাথে তুলনা করলো? আমার ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন তুললো। আর আমাকে, এই অঙ্কন চৌধুরীকে রিফিউজ করলো? কতবড় দুঃসাহস একবার চিন্তা কর।”
অনীহা কিছুক্ষন হাঁ করে রইলো৷ তারপর বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে বললো,
” ভাইয়া আমি না তিনবার চিন্তা করলাম। কিন্তু মেয়েটার দুঃসাহস না সৎসাহস একদম গুলিয়ে ফেললাম রে। আচ্ছা আমি কি আরেকবার চিন্তা করবো?”
” না।”
অঙ্কন প্রথমে শান্ত গলায় না করলেও এরপর হঠাৎ দ্বিগুন জোরে চেঁচিয়ে উঠলো,
“অন্বা এই গাধীকে এই মুহুর্তে সামনে থেকে দূর হতে বল।”
” হ্যাঁ, অনী তুই একটু যাতো বোন। দেখছিস না ভাইয়া কেমন রেগে আছে।”
” আচ্ছা যাচ্ছি সেই ভালো।” অনীহা দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে বললো,
” ভাইয়া দেখতো কয়টা বাজে।”
অঙ্কন মুখ না তুলেই বললো,
” কেন?”
” আহা দেখনা।”
” তিনটা বেজে চল্লিশ মিনিট। ”
” হায় আল্লাহ আমার ফেভারাইট সিরিয়াল! দশ মিনিট ওভার! ওহ্ শিট কিরাণ আজকে নেহাকে প্রপোজ করবে! কি মিসটাই না হলো।”
অনীহা বিড়বিড় করতে করতে ড্রয়িংরুমের টিভিটা অন করে।
অন্বেষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বোনের দিকে তাকায়। এরপর অঙ্কনের দিকে মনোযোগ দেয়।
” ভাইয়া, আমি না বুঝতে পারছি না তুই এতোটা রিএক্ট করছিস কেন? ইনফ্যাক্ট তোরতো খুশি হওয়ার কথা! এই যা মেয়েটাই তোকে রিফিউজ করলো তোর আর আগ বাড়িয়ে কিছু করতে হলো না। তাছাড়া তুইতো এটাই চেয়েছিলি। সে হিসেবে কিন্তু ভালোই হয়েছে কি বলিস!”
” গেট লস্ট আই সে গেট লস্ট!
অঙ্কনের ধমক খেয়েও অন্বেষা নির্বাকারভাবে বললো,
” বাই এনি চান্স তুই কি মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছিস?”
অঙ্কন অগ্নিচোখে তাকিয়ে কাটা কাটা ভাবে বললো,
” গেট লস্ট!”
অন্বেষা ঘাড় ঘুরিয়ে অঙ্কনের দিকে তাকায়।
” ভাইয়া আমার কথা শোন!”
অঙ্কন ধড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
” যে আমার চেহারা তার নাম সেহারা! বলে কিনা আমি ঐ স্টুপিড মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছি। আগামী এক ঘন্টা অন্বার সাথে কথা বন্ধ৷ বেশী লাই পেয়ে মাথায় চড়ে গেছে।”
***************
” এরকম ক্যাটকেটে কালার লিপস্টিক কেন লাগিয়েছো? একদম বাজে লাগছে। এক্ষুণি মুছবে?”
আয়েশা নতুন কেনা লিপস্টিকটা লাগিয়ে বড় ভাব নিয়ে মেয়েকে দেখাতে এসেছিলেন।
এক গাল হাসি ভর্তি মুখটা মুহুর্তেই আমষেটে বানিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
” আহু, ভালো লাগছে না আমাকে?”
আহনাফ এক হাতে ল্যাপটপ বন্ধ করতে করতে স্ত্রীর দিকে একপলক তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে বললেন,
” নাহ্ খুব ভালো সুন্দর লাগছে। ইচ্ছে করছে শো কেসে সাজিয়ে রাখতে।অনিক, তোর মাকে ধরে বেধে শোকেসে ঢুকিয়ে দেতো। রোজ সকালে ঘুম
ভেঙ্গে আর রাতে ঘুমাতে যাবার আগে একবার তার দর্শন নিবো। বাকি সময় সে ওখানেই বসে থাকবে। আর টকটকে ঠোঁট নেড়ে বলবে, আশীর্বাদ করি সদা প্রভু মঙ্গলময়। দেখবি সংসারের সব ঝামেলাই ম্যাজিকের মত গায়েব।”
এখানে থেমে গেলেই বোধ হয় ভালো হতো। কিন্তু না আহনাফ সাহেব অনিক, অনন্যা দুজনকেই সোফা থেকে টেনে তুলে বললো,
” এই বেলা বসে না থেকে যা মায়ের পদধূলি নে। নাহলে কৈলাশপর্বতটা ঠিক ঘাড়ে চড়ে নাচবে? তখন কিন্তু চাইলেও তোদের বাচাঁতে পারবো না। যা সর্বনাশ হবার হয়ে যাবে…”
এহেন কথাবার্তায় আয়েশার যুক্ত ভ্রুযুগল মুহুর্তেই সূচালো আর চোয়ালটাও কিঞ্চিৎ শক্ত হয়ে গেলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
” আমি কৈলাসপর্বত! ছেলেমেয়েদের সামনে আমাকে নিয়ে রসিকতা। এর রস আমি বের করেই ছাড়বো।”
ফুসঁতে ফু্ঁসতে আয়েশা তক্ষুনি নিজের ঘরে চলে যায়।
” বাবা, আই থিংক তুমি একটু বেশিই বলে ফেলেছো। মা কে এইভাবে চটিয়ে একদম ভালো করোনি।”
অনিকের কথায় বাপ মেয়ে মোটেও বিচলিত হলো না। বরং অনন্যা টেবিল খাবার সাজাতে সাজাতে বললো,
” সবাই চেয়ার টেনে বসোতো। এমনিতেই লেট হয়ে গেছে।”
অনিক তাতে আরো বিরক্ত হয়ে বললো,
” মাকে ছাড়াই লাঞ্চ করে নিবো৷ তোদের করার দরকার তোরাই কর।” অনিক উঠতে উদ্যত হতেই বিস্মিত হয়ে সিড়ির দিকে তাকায়। আয়েশা খবরের কাগজ হাতে বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নামছে। এমনভাবে হাসছেন যেন হিস্টিরিয়া রোগী। আহনাফ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না এই পাচঁ মিনিটের মধ্যে কি এমন হয়ে গেলো যে এভাবে হাসতে হচ্ছে!
প্রশ্ন করতে যাবেন তার আগেই আয়েশা বিনোদনের পাতাটা আহনাফের চোখে সামনে ধরেন। উনি বিনোদনের পাতা কখনো পড়েন না। প্রায়শই ছুড়ে ফেলেন। উনার কাছে যাচ্ছেতাই লাগে। তাই উনার মূল্যবান সময় এই যাচ্ছে তাই মার্কা বিনোদন পড়ে নষ্ট করবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। তবে আজ পড়বেন। সত্যি বলতে সকালেই পড়া উচিৎ ছিলো তাহলে অন্তত এই পেজটা লুকিয়ে ফেলতে পারতেন। জীবনে প্রথমবার বিনোদনের পাতা না পড়ার জন্যে আফসোস হচ্ছে। আফসোস হচ্ছে মেয়ে এক্ষুণি মায়ের মত চটে যাবে। তবে তফাৎ হচ্ছে মায়ের মতো ফুড়ুৎ ফাড়ুৎ এর রাগ উঠেও না আবার সহজে নামেও না।
” ফাঁস হলো অভিনেতা অঙ্কনের গোপন প্রেমের রহস্য!!”
মাঝখানে বেশ বড় করে উইন্ড’স ব্লো রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসা অনন্যা আর অঙ্কনের ছবি। নিচে বেশ বড় করেই ইনিয়ে বিনিয়ে একটা আর্টিকেল লেখা হয়েছে।
” কি সুন্দর মানিয়েছে! অনিক দেখ দেখ৷ আল্লাহ এতোদিনে আমার চক্ষু সার্থক হইলো।”
অনন্যা রাগে মূর্ছা যেতে লাগলো। সব ঐ কালপ্রিট হিরোর কারসাজি!!
চলবে….
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/