চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ২৭

0
2547

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ২৭
আশিকা জামান

অঙ্কনের মাথাটা অসহ্য যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। তীব্র ব্যাথা নিয়ে আস্তে আস্তে দু’চোখ খুলার চেষ্টা করে।

এই মুহুর্তে ঠিক কোথায় আছে ঠাহর করতে পারছে না। তবে এটুকু বুঝতে পারছে এখানে ইতিপূর্বে কখনোই আসা হয়নি। কপালে হাত রেখেই সে উঠে বসতে চায়৷ চারপাশটা ভালোভাবে দেখতে চায়। কিন্তু মাথা ব্যাথার দরুন আবার শুয়ে পড়ে।

আস্তে আস্তে মনে করতে চায় কাল রাতে ঠিক কি হয়েছিলো। কেবল মনে পড়ে আরমানের সাথে একসাথে ড্রিংকস নেয়া হয়েছিলো। তার পর বোধ হয় সব আবছা আবছা। দৃশ্যমান সকল বস্তুরই দুটো’ করে প্রতিবিম্ব দেখছিলো। কোনটা ঠিক আর কোনটা মরীচিকা বোঝাই দুষ্কর হয়ে উঠেছিলো। এরকম আধো জাগরণ আধোঘুমের দ্যুদলমান অবস্থায় মনে হচ্ছে চেলসিয়াকে যেন একপলক দেখেছিলো। এরপর আর কিছু মনে নেই। অঙ্কন ফোন হাতড়াতে থাকে। এক্সাক্ট কয়টা বাজে বুঝতে পারছে না। ফোনটা প্যান্টের পকেটেই পেয়ে যায়। তবে সুইচড অফ। সম্ভবত চার্জ শেষ হয়ে গেছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



” ডিয়ার, তুমি উঠে পড়েছো? আমিতো আরও চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম। ”

অঙ্কন ভুত দেখার মত চমকে উঠে। একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে চিৎকার করে বললো,
” আমি এখানে কেন? কি করে এলাম! আন্সার মি চেলসিয়া। ”

চেলসিয়া পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে প্রায় অঙ্কনের গায়ে গড়াগড়ি খায়। অঙ্কন বিরক্ত হয়ে কিছুটা সরে বসে। পূর্বের মতই কপাল ভাঁজ করে তাকিয়ে ছিলো। তাতে চেলসিয়ার কোন ভাবান্তর হলোনা বরং হাসি থামিয়ে বললো,
” ব্রেকফাস্ট করবে তো! তা কি খাওয়াবো।”

অঙ্কন এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। বরং চোয়াল শক্ত করে আবার বললো,” আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। প্লিজ অ্যান্সার মি।”

” আশ্চর্য অঙ্কন, তুমি এমন বিহেভ করছো যেন তোমাকে উঠিয়ে এনে রেপ করা হয়েছে! আরে মশাই আমি একটা মামুলি মেয়ে মানুষ । রিলাক্স আপনার সাথে তেমন কিছুই হয়নি। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে কালকে ক্লাবে দেখা হয়েছিলো। কোন সেন্স ছিলো না তোমার। আরমান চলে গিয়েছিলো। আমি তোমাকে ওইভাবে ফেলে আসতে পারি নি। ”

” তাই বলে তুমি নিজের ফ্ল্যাটে নিয়াসবে। ও মাই গড, আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।”
কথাটা বলে সরু চোখে তাকিয়ে আবার প্রশ্ন করলো সে,
“এসব করে তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছো? লিসেন চেলসিয়া, তোমার এই কাজে আমি মোটেও খুশি হইনি। ওহ্ শিট, কাল হঠাৎ কি হয়ে গেলো।”
একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে সে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায়। এখানে আর একমুহূর্তও নয়।

চেলসিয়া এবার অঙ্কনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। আলতো হাতে ছুঁইয়ে দিলো চিবুকের মধ্যভাগ। অঙ্কন সরে দাঁড়ায়। বিতৃষ্ণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।
” আমার ছোঁয়ায় তুমি অপবিত্র হয়ে যাবে নাকি! তুমি তো দেখছি ইতিহাস গড়বে। বাই এনি চান্স তুমি কি নিজেকে ভার্জিন প্রমাণ করতে চাইছো।” চেলসিয়া হেসে উঠলো। খিলখিল করে হাসলো। যে হাসিতে ওর নোংরা, কদর্য্য রুপটাই প্রকাশ পাচ্ছে।
” মিডিয়া বনাম ভার্জিনিটি! ওহ মাই গড।” চেলসিয়ার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।
অঙ্কন চলে যেতে চায়। চেলসিয়া পথ আটকায়।
” অঙ্কন, আমার মতো এইরকম একটা গ্ল্যামারগার্লকে উপেক্ষা তুমি কিছুতেই করতে পারোনা।”
হঠাৎ আদুরে গলায় আবার বললো,
” আচ্ছা আমরা তো চাইলে কিছু মোমেন্ট ক্রিয়েট করতে পারি। জাস্ট লাইক ম্যাজিক্যাল! যেখানে কেবল তুমি আর আমি। আ’ম এগারলি ওয়েটিং ফর দিজ…” চেলসিয়া অঙ্কনের গলা জড়িয়ে ধরে।

” শেট আপ। এইরকম নোংরামি আমার সাথে না দেখালেও পারতে। তোমার থেকে এরকম কিছু কখনোই আশা করিনি। আর একটা কথা, নিজের মতো ডাস্টবিন সবাইকে ভেবোনা। আর হ্যাঁ গ্ল্যামার দেখিয়ে হয়তো নায়িকা হওয়া যায় বাট অঙ্কনের বিছানায় যাওয়া যায় না। ভুলেও এই চেষ্টা করোনা। এম আই ক্লিয়ার।” অঙ্কন চেলসিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হনহন করে চলে যায়।

অপমানিত চেলসিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,
” তাহলে কার যোগ্যতা আছে? ঐ ক্ষ্যাত মেয়েটা যার সাথে তোমার এংগেইজড হয়েছে।”

” সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই! আর হ্যাঁ ক্ষ্যাত হউক আর যাই হউক তোমার মতো বি গ্রেড তো আর নয়।”

চেলসিয়া রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে পড়ে।
” অকৃতজ্ঞ! এত রাতে কষ্ট করে নিজের ফ্ল্যাটে এনে যায়গা দিলাম তার জন্য এই অপমানটা করে গেলে। সত্যিই যেচে কারো উপকার করতে নেই। ”

” চেলস্, আই থিংক তোমার অবস্থা বেশীই খারপ। আমি তোমাকে একটা সাজেশন দিতে পারি। তুমি বরং আরমানের কাছে চলে যাও। আই হোপ, ও তোমাকে ফুলি স্যাটিসফাই করে দিবে।”

চেলসিয়া চোখ মুখ শক্ত করে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়।

*****************
ঘড়ির কাটা বারো ছুঁই ছুঁই। অনন্যা একা বাসায়। তবে একেবারে একা নয় কাজের মেয়ে নিলুফাও আছে।
নিলুফা অনন্যার চোখের সামনে বারবার হাত দিয়ে পরখ করতে লাগলো। বেশ কয়েকবার করার পর অনন্যার সম্বতি ফিরে৷ চোখ পাকিয়ে তাকায়।
” নিলু, হচ্ছেটা কি?”.

“না মানে আফা, আফনে কি টিভি দেখতাছেন?”

” তো কি করতেছি। মুখের সামনে টিভি চলছে কি জন্যে। ”

” আমিও তো তাই কই। টিভি মনে হয় ভুতে দেখতাছে। আফনে তো দুলাভাই এর ধ্যাণে বিভোর।” নিলুফা চোখ মেরে অনন্যার দিকে ফের তাকায়।

অনন্যা বিস্মিত হয়ে তাকায়।
” আফা, এমনে চাইয়্যা রইছুন ক্যা। আমি কি ভুল কইছি। আইচ্ছা আফনে কাইলকা গাড়িত বয়া বাচ্চাদের লাহান, কেমনে ঘুমাই গেলেন।”
অনন্যার মনে পড়ে যায় কাল রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তাহলে রুমে আসলো কি করে।

” নিলু, আমি রুমে আসলাম কিভাবে। ”

” ন্যাকা, জানেনা৷ দুলাভায়ের কোলে চইড়া। কি লজ্জা কি লজ্জা! আমিতো শ্যাষ।”

অনন্যা যেন শুনতে পায়নি শিউর হবার জন্য আবার জিজ্ঞেস করলো,
” কি বললি, অঙ্কন আমাকে কোলে করে নিয়াসছে।”

“হ দুলাভাই কালকে রাতে আপনারে ঐ গেটের ওইখান থেকে কোলে করে নিয়াইসা যেমনে শোয়াই দিছে আফনে অমনেই ঘুমাইছেন।
রাইতে মনে হয় ম্যালা স্বপ্ন দেখছেন তার লাইগা দেরি কইরা ঘুম থেকে উঠছেন।”

হঠাৎ স্বপ্নের কথা মনে পড়ায় অনন্যার মনটা খারাপ হয়ে যায়। তার একটু পরেই নিচে থেকে কেউ অনন্যার নাম ধরে ডাকছিলো। অনন্যা বিস্মিত হয়ে ড্রয়িং রুমের ব্যালকনিতে চলে যায়। এলোমেলো অবিন্যস্ত অবস্থায় অঙ্কন দাঁড়িয়ে৷ বুকের ভেতর ধড়াম ধড়াম হাতুড়ি পেটাতে থাকে। অনন্যা এক ছুটে নিচে চলে যায়।

অঙ্কন ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ভেবেছিলো বাড়ি ফিরে যাবে কিন্তু অনন্যাদের বাড়ির রাস্তায় এসে পড়ে। হয়তো অবচেতন মন এটাই চেয়েছিলো। অঙ্কন আজ তার মনের কথা শুনবে। দেখাই যাক না কি হয়।

” অঙ্কন!”
অনন্যা স্বাভাবিক ভাবে ডাকলো। অঙ্কন তার দিকে দু’কদম এগিয়ে গেলো। ভেবেছিলো অনন্যা হয়তো রেগে আছে। কাল যে রণচণ্ডী মূর্তি দেখিয়েছিলো। কিন্তু সে ভুল সত্যি ভুল।

” বাসায় এসো। কোথায় গিয়েছিলে রাতে! আন্টি সকালে ফোন করেছিলো তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।”

” বন্ধুর বাসায়। বাসায় কে কে আছে । ”

” আমি একা কেউ নেই।”

” তাহলে যাবোনা।”

” না নিলুও আছে। ”
” তাহলে চলো, যাই।”
অঙ্কন অনন্যার পিছুপিছু ড্রয়িংরুমে ঢুকে।
” অনন্যা, আমার খুব খিদে পেয়েছে। ব্রেকফাস্ট করিনি।”
” তুমিতো ফ্রেস ও হউনি ইভেন দাঁত ব্রাশ ও করোনি। যাও যাও ওয়াশরুমে যাও। নইলে ব্রেকফাস্ট জুটবে না”

অঙ্কন মৃদু হেসে অনন্যার দিকে তাকায়।
” তাকিয়ে থেকে লাভ নাই। এসো আমার সাথে। ফ্রেস হবে এসো।”
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে