চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গা পর্ব ০৮

0
3233

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গা পর্ব ০৮
লেখা আশিকা জামান

সাদা রঙের ডাক বাংলোর পেছনের দিকটা খুঁজা শেষ। সামনের দিকটা আরেকটু আগেই খুঁজেছে। এবার আশে পাশে আরও ভালোভাবে খুঁজতে হবে।
“উফ্ মেয়েটা আমাকে পাগল বানিয়ে তবেই ছাড়বে।” অঙ্কন বিড়বিড় করে বললো।

রাগে দুঃখে নিজের মাথার চুল নিজেরি ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। সামনে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। পায়ের নিচে নরম দূর্বা ঘাস আলো আধাঁরিতেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অঙ্কন হতবিহ্বল হয়ে এই পর্যায়ে দ্বিগবিদিক শূন্য হয়ে ছুটতে লাগলো। বাম চোখের পাতাটা নড়ছে। এইরকম ভয়ানক গা ছম ছম করা জঙ্গলে অনন্যার কোন বিপদ হয়নিতো! বুকের ভেতেরে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে!!
মুনসের নামের গার্ডের প্রতি মেজাজটা আরো দ্বিগুন খারাপ হচ্ছে! দরকার হলে ডাকবেতো দূরস্থান এর কোনও পাত্তাও নেই।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



” স্যার এরম পাগলা কুত্তার মত ছুটতাছেন কি জন্যে?” গম্ভীর ভরাট কোন গলার স্বরে অঙ্কন ভয়ে পেছনে তাকায়।
মুনসেরকে দেখতে পেয়ে যেন হালে পানি পেলো। ভয়ার্ত চেহারায় মুহুর্তেই রাগ, দুঃখ স্থান করে নিলো। চোখ মুখ শক্ত করে বললো, ” হোয়াট? ”
” আফনে কি রাগ করলেন নাকি!”
অঙ্কনের খুব রাগ হলে কাউকে কিছু না বলে ছেড়ে দিয়েছে এমন রেকর্ড ইতিপূর্বে ঘটেনি।
মিডিয়া পাড়ায় এ নিয়ে বেশ রগরগে খবর ও রয়েছে। প্রডিউসার থেকে শুরু করে ওয়াচম্যান পর্যন্ত সকলেই এই চট করে রাগ উঠা ব্যাপারটাকে বেশ শামলেই চলেন। তবে এই রাগ বেশীক্ষন স্থায়ী হয়না যাকে বলে পাতলা রাগ। অঙ্কন গলার স্বর যথাসম্ভব নিচু করে বললো,
” অনন্যাকে খুঁজে পাচ্ছি না।”
” কি যে কন দুপুর রাইতে মাইয়া মানুষ উধাও হয়া যাব কই। আহেনতো ভালামতে খুঁজি।”
অঙ্কন, মুনসেরের পিছু পিছু হাটা দেয়।
সামনে বেশ বড় করে বাগান। আবছা হলেও বুজা যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ফুল আর পাতাবাহারের সমাবেশ। এর সাইড দিয়ে সারি সারি ঝাউ গাছ। পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেই সামনের হলুদ বাড়িটার পেছনের কোন এক গাছের নিচে কেউ একজন লাফাচ্ছে। এটা একটা ফুলগাছ আর ফুল পাড়ার জন্যই মেয়েটা লাফাচ্ছে। এটুকু দূর থেকে আন্দাজ করা গেলেও মেয়েটাকে ঠিক ঠাঁহর করা গেলো না।
তবে মুনসের এক অবাক কান্ড করলো উল্টোদিকে ভোঁ দৌড় দিলো। ঠিক এমন এক ভাব যেন ভুত দেখেছে। অঙ্কন এক দৌড়ে পেছন থেকে মুনসের শার্ট টেনে ধরে চোখ মুখ শক্তকরে বললো,
” এখানে কি তামাশা হচ্ছে? অর্ধেক রাস্তা এসে একা ফেলে দৌড়াচ্ছ কেন? এটা কি ধরনের ভদ্রতা!”
” ভদ্রতা অভদ্রতাতো পরের ব্যাপার যদি আরকি বাইচাঁ থাকি। আমার মরনের সখ নাই।”
” আশ্চর্য এখানে কে কাকে মারতে আসছে আমিতো সেটাই বুঝলাম না।”

“ছাতিম গন্ধা আন্ধার রাইতে পরীরা নাইমা আহে। দেখলেন না ছাতিম গাছ তলে এক পরী লাফালাফি করতাছে! এরপরে ও কোন আক্কেলে ঐ দিকে যাই। স্যারগো স্যার আপনের পায়ে ধইরা কই বাচঁতে চাইলে আমার লগে ফিরা চলেন।”
” শেট আপ! প্লিজ স্টপ দিজ ননসেন্স। কি বলছিলে পরী! ওকেই তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো আর দেখো আমি তোমার পরীর সাথে কিভাবে প্রেমলীলায় মেতে উঠি।” অঙ্কন বিড়বিড় করে সামনের দিকে আগাতে থাকে।
“আমার সাথে ভাড়ামি। বেকুব আমাকে ভয় দেখাতে চায়। হাউ রিডিউকিউলাস! ”

অনন্যা লাফালাফি করে একটা ফুলও ছিড়তে পারলো না। এখন মনে হচ্ছে পন্ড শ্রম। আর একটু লম্বা হলে কি এমন ক্ষতি হতো। এ নিয়ে বড় আফসোস হলো। মনের দুঃখে বিরহে আর সীমাহীন কষ্টে অনন্যার হাত পা ছুড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। একটা ফুলের জন্য বাচ্চাদের মতো কাঁদাটা বোধ হয় বেশি হাস্যকর হয়ে যায়। তাছাড়া এখানে কেউ তার কান্না শুনে দৌড়ে ফুল পেরে দিতেও আসবে না। তাই বেকার চোখের জল অনন্যা ফেলবে না। সে এখন খালি হাতেই ফিরে যাবে। হঠাৎ করেই উষ্ণ দুটি হাত অনন্যার কোমড় জড়িয়ে ধরায় অনন্যা চমকে উঠে। ভয়ের তাড়নায় গলা দিয়ে কোন স্বর বের হলোনা
। আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরিয়ে অঙ্কনকে দেখতে পেয়ে হাত পা পাথরের মত জমে যায়। মনে হচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর অবশিষ্ট শক্তিটুকুও আর বেঁচে নেই।
” মুনসের দেখো তোমার পরীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি। পরীতো ‘প’ উচ্চারণ করতেও ভয় পাচ্ছে। এটা কি হলো আমিতো ভয় পেলামই না উলটো তোমার পরীই ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছে।” অঙ্কনের উচ্চ্বস্বরে বলা কথাটা শুনতে পেয়ে মুনসের পা টিপে টিপে সামনে আগায়।
এইসব উল্টাপাল্টা কি সব বলছে অঙ্কন! অনন্যার হতবাক হওয়ার শেষ রইলোনা। তার উপর এমনভাবে ঝাপ্টে ধরেছে অনন্যার মত চারটা আসলেও একে জোর করে ছাড়াতে পারবে না। এ নিশ্চিত এর বউকে বাসর রাতেই জাপ্টে ধরেই মেরে ফেলবে। অসম্ভব এমন বীরপুরুষ কে বিয়ে করে আর যাই হোক মরার সখ নেই।
মুনসের আসা মাত্রই অঙ্কন এক কাজ করলো অনন্যাকে কোমড় ধরে উঁচু করে তুললো অনন্যা খুশিতে আত্নহারা হয়ে ফুল ছিড়তে লাগলো। অনন্যার ইচ্ছা ছিলো আরো কয়েকটা ফুল ছিড়বে। কিন্তু তার আগেই তাকে উপর থেকে বড় বিদঘুটে ভাবে ছেড়ে দিলো। অনন্যা চিৎপটাৎ হয়ে ঘাসের উপর শুয়ে পড়লো।
” ও মাগো আমার কোমড় ভেঙ্গে গেলো। ভুতের বাচ্চা ভুত আমার কোমড়টাই ভেঙ্গে দিলো ও মা মাগো। এমন অসভ্য ইতর ভুত কিম্ভুত আমি বাপের জন্মেও দেখিনি।” অনন্যা বাচ্চাদের মতো প্রলাপ বকতে লাগলো আর বিচ্ছিরি ভাবে কাঁদতে লাগলো। অঙ্কন সেদিকে ফিরেও তাকালো না৷ কেবল যাবার আগে মুনসেরকে বলে গেলো,
“মুনসের, এই গাছের যত ফুল আছে এক্ষুনি আমার চোখের সামনে দেখতে চাই।”

মুনসের ভয়ে ভয়ে বললো, ” আমার নাম মোহাম্মদ মুনসের আলী।”

” ঐ একি হলো।”

অঙ্কন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমে বসে আছে। এখনো সে খায়নি। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে তবুও সে খায়নি। কেন খায়নি কারণটা সে স্বীকার করতে চাচ্ছেনা। পাশের রুমে অনন্যার চেচাঁমেচিঁ শোনা যাচ্ছে৷ অঙ্কন কি একটু আড়ি পাতবে । অবশ্যই পাতবে। অবশ্যই জানার দরকার আছে।

ফ্লোরে প্লেট পরে ভেঙ্গে ১২ টুকরো হয়ে গেছে। মুনসের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাঙ্গা টুকরো গুলো গুনছে। এক, দুই, তিন, চার…
অনন্যার ভয়াবহ রকমের মেজাজ খারাপ হচ্ছে তবে কার উপর ঠিক বুঝতে পারছে না।
” গেট আউট। আই সে গেট আউট।”
মুনসের দাঁড়িয়ে পড়লো তারপর ফিচেল হেসে বললো, ” আফনে হুদাই আমার উপ্রে চেততাছেন। দেহেন স্যার কইছে আইজকা ভাতের বদলে এই ছাতিম ফুল খাইতে দেয়ার জন্যে। আফনে নাকি এই ফুল খাইতে খুব ভালোবাসেন তাই দিছি। এইহানে আমার কি দোষ। ”
” এই তোমরা মানুষ! কোন এঙ্গেল দিয়ে তোমরা মানুষের পর্যায়ে পড়ো! একটা অভুক্ত মানুষকে পানি খেতে দিয়েছো! আরে পানির ভেতরেও ফুলের কস আর ফুল ছিড়ে ছিড়ে দিয়েছো। ছিঃ এই পানি আমি খাবো কি করে!”

” এমা এইডা কি কন আফনের জন্যে ঠান্ডা ঠান্ডা ইশপেশাল ছাতিম ওয়াটার। খুব ট্যাশ।” মুনসের দাঁত ক্যালিয়ে হাসতে থাকলো। আজ এতদিন পর সে বিনা টিকেটে ফ্রী ফ্রী বিনোদন পাচ্ছে। এটাকে মিস করার কোন মানেই হয়না।
অনন্যা হাতে ধরা গ্লাসটাও ছুড়ে মারলো।
” এক্ষুনি ঘর থেকে যাও আমি ঘুমাবো।”
” হ যামু তার আগে আফনের বিছনায় ছাতিম ফুল ছড়াইয়া ইট্টু সাজাই দেই দেখবেন ফুলের গন্ধে কেমন ভালা ঘুম হয়।”
অনন্যা মুনসেরের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়।
বিছানায় গা এলিয়ে দিতে হাত পা ছাড়িয়ে নিজের বোকামির কথা ভাবতে থাকে। এইরকম অসভ্য লোকের সাথে যেচেঁ পড়েঁ আসাটাই জীবনের সব থেকে বড় ভুল হয়েছে। বাবার কথা মনে পড়ছে। ভাইয়া আর মাকেও মনে পড়ছে। কি আশ্চর্য গোটা একটা দিন কেটে গেলো ওদের সাথে কথা না বলে। এটা কি করে সম্ভব। এই অসভ্য লোকটার সাথে থাকতে থাকতে তো তাহলে একসময় ওর বাপের নামই ভুলিয়ে দেবে। কি বিচ্ছিরি কান্ড হবে! ভাইবাতে যখন জিজ্ঞেস করবে ” অনন্যা মাহজাবিন আপনার বাবার নাম ?”
সে মাথা নিচু করে থাকবে। একসময় বলে দিবে জানিনা। না আর ভাবতে পারছে না। দরদর করে ঘাম ঝড়ছে। ফোনটা হাত নিয়ে দেখে সুইচড অফ। চার্জ শেষ। এটা কখন, কিভাবে হলো সে কিচ্ছু জানে না। অঙ্কন, অঙ্কন, অঙ্কন এই অসভ্য লোকটা ওকে পাগল করে দিচ্ছে।

চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে