চলো_না_হারিয়ে_যাই ❤️ [৩]
লেখকঃ জয়ন্ত_কুমার_জয়
মিষ্টি ঠো’ট বাকিয়ে বললো ” কি’স করতে চাসনি? তাহলে কি করতে চেয়েছিলি?তার থেকে বেশি কিছু? ”
বিষণ্ন বিষ্ময়ে চোখ বড়বড় করে একপলক তাকালো মিষ্টির দিকে।তারপর মাথা নিচু করে রইলো।বিষণ্নকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলতে পেরে মিষ্টির মনে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ হতে লাগলো।
বিষণ্ন প্রসঙ্গ পাল্টাতে চোখে মুখে গম্ভীর ভাব এনে বললো ” তোমার কি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে? ”
বিষণ্নর কথায় মিষ্টি ভ্রু কুঁচকে বললো ” হ্যা তো।তুই জানিস না? ”
বিষণ্নর মনে হতে লাগলো কেউ যেন ওর বুকে বিশাল এক পাহাড় তুলে দিয়েছে।মুহুর্তেই বিষণ্নর মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেলো।বিষণ্ন নির্লিপ্ত গলায় বললো
” আচ্ছা আমি যাই ”
একথা বলেই বিষণ্ণ ছুটে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।নামার পথে সিঁড়িতে বার কয়েক ধাক্কাও খেলো।মিষ্টির থেকে দ্রুত সরে আসার কারণ হলো বিষণ্ণর খুব কান্না পাচ্ছে।মিষ্টি হয়তো জানেনা,তার সহজ ভাবে বলা কথাটা বিষণ্নর বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছেটাও শেষ করে দিয়েছে।
———-
বিষণ্নকে ছুটে বেড়িয়ে যেতে দেখে মিষ্টির মা বিষন্নকে কয়েকবার ডাকলেন।বিষণ্ন কিছু না বলে এক হাতে চোখের জল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো।ব্যাপার কি বুঝতে মিষ্টির মা ছাঁদে আসলেন।দেখলেন মিষ্টি ছাঁদের রেলিঙ ধরে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তিনি মিষ্টির দিকে এগিয়ে আসছেন।পায়ের শব্দ পেয়ে মিষ্টি চোখের জল মুছলো।চোখ মোছার বিষয়টা মিষ্টির মা টের পেলেন।কাছে আসতেই মিষ্টি হাসি মুখে মায়ের দিক ফিরলো।মিষ্টির গালে এখনো কয়েক ফোঁটা জল জমে আছে। মা জিগ্যেস করে বললো
” মিষ্টি,কি হয়েছে তোর ”
মিষ্টি মুচকি হাসার ভান করে বললো ” কি আবার হবে। কিছুই তো হচ্ছে না ”
” তোর কলেজের ছেলেটার বিয়ের প্রস্তাবে না করে দিলি কেন বলবি?তোদের তো আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো ”
মিষ্টি চোখ মুখ শক্ত করে বললো ” ওনার সাথে আমার সম্পর্ক কে বলছে তোমায়?আমি কখনো বলছি?উনি ছ্যাচড়ার মতো পিছু ঘুরছে আর তোমরা ভেবে নিয়েছো ওনার সাথে আমার সম্পর্ক আছে।এমনটা যদি ভাবো তাহলে তো পুরো এলাকার ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে ”
মিষ্টির এমন উত্তরে মিষ্টির মা ভরকে গেলো।আমতা আমতা করে বললো ” উনি যে রাতে ফোন দিতো! ”
” উনি আমার স্যার হন।মুখের উপর তো ফোন কে’টে দিতে পারিনা ”
” একটু ভালোভাবে বললেও তো পারিস।এতো রাগ কেন তোর? ”
” তো কি করবো?বিষণ্নও তোমার মতো একই কথা ভেবে বসে আছে।ওরে কতবার বলছি,তবুও বারবার এক কথা বলে।দেইখো ওরে একদিন এমন মা’র মা’রবো! “।মিষ্টির রাগী চেহারা দেখে মিষ্টির মা আর কিছু বললেন না।
মিষ্টির বাবা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বই পড়ছেন।অফিস থেকে দুপুরের খাবারের জন্য তিনি বাড়িতে আসেন।খাওয়া শেষে কিছুক্ষণ উপন্যাস পড়েন।আজকেও পড়ছেন।এমন সময় মিষ্টির মা এসে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলেন।মিষ্টির বাবা এখন উপন্যাসের শুরুর দিকে,বেশ ইন্টারেস্টিং একটা কাহিনি চলছে।ত্রিমুখী প্রেম।এমন ইন্টারেস্টিং কাহিনির মাঝ পথে উপন্যাসের বই উধাও হয়ে গেলো।তিনি ধরফর করে দাঁড়ালেন।মিষ্টির মা বললো
” বই আমি নিছি।মিষ্টিকে নিয়ে একটা কথা বলবো মনোযোগ দিয়ে শুনো ”
মিষ্টির বাবার রাগ এখন আকাশচুম্বী।রাগ সামলে বললেন ” তোমায় হাজারবার বলেছি পড়ার সময় বই কেড়ে নিবে না ”
” ধুর,রাখো তো তোমার গল্প।বুড়ো বয়সে এতো প্রেমের গল্প কি পড়ো তুমি ”
তিনি কঠিন চোখে তাকিয়ে বললেন ” কি বলবে বলে বই দিয়ে চলে যাও ”
” বলছি,তুমি আগে কাছে বসো।জোরে বলা যাবে না ”
” হু বসছি।বলো ”
” কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি মিষ্টি মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকে।ঠিক মতো কলেজ যায় না,কান্না করে ”
” এই বয়সে এমন হয়।আমি তো ওর বয়সে দিনে দুইবার ম’রে যেতে চাইতাম ”
” সবসময় ফাজলামো করবে না ”
” আচ্ছা ”
” মিষ্টির মনে হয় কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে ”
” তো? ”
” তো মানে?তোমার মেয়ে প্রেম করছে,আর তোমার কাছে এটা স্বাভাবিক লাগছে? ”
” প্রেম তো খারাপ কিছু না।স্বর্গীয় একটা ব্যাপার ”
” হ্যা এমন স্বর্গীয় যে মেয়ে রোজ কান্না করছে ”
মিষ্টির বাবা চশমার ফাঁকে তাকিয়ে বললো ” তুমিও তো আমায় কম কাদাও নি। মনে আছে? সামান্য বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিতা।তখন আমার কান্না যেমন তুমি বুঝোনি তেমনি মিষ্টির কান্নাও ওই ছেলে বুঝতে পারছে না। যখন পারবে তখন আর কাঁদতে দিবে না ”
” ধুর ছাই,তোমায় বলাই ভুল হইছে ”
একথা বলে মিষ্টির মা হনহন করে বেড়িয়ে গেলেন।মিষ্টির বাবা বিছানা থেকে উপন্যাসের বইটা হাতে নিয়ে কোন যায়গা থেকে পড়া বাদ দিয়েছিলেন সেটা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।খানিক্ষনবাদেই মিষ্টিকে রুমের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে তিনি ডাকলেন।মিষ্টি বাবার পাশে এসে বসলো।উঁকি দিয়ে বললো
” কি পড়ো? ”
” উপন্যাস ”
” এসব উপন্যাসে কি পাও বলোতো?বিষণ্নও কিসব গল্প,উপন্যাস লেখে।আমার দেখেই বিরক্ত লাগে ”
” তুই কি ব্যস্ত? ”
” কই না তো ”
” তাহলে বস।একটু গল্প করি ”
” হু বসলাম।গল্প শুরু করো ”
” আমি একটা উপন্যাস লিখবো ভাবছি।সেখানে তোর বয়সী একটা মেয়ের ক্যারেক্টার আছে ”
” ভালো তো ”
” মেয়েটা প্রায় সময় মন খারাপ করে থাকে,কান্না করে।আচ্ছা তোর কখনো কান্না পায় না? ”
” না তো। আমি সুখী মেয়েদের একজন।আমার কান্না পাবে কেন? ”
” এই বয়সে কান্না করার মতো অনেক ব্যাপার ঘটে।তবে জানিস তো,এসব মন খারাপ বেশিক্ষণ থাকে না ”
মিষ্টি মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে।সে বুঝতে পেরেছে যে তাকে ইঙ্গিত করেই বাবা এসব বলছে।অথচ এমন ভাবে বলছে যে বোঝার কোনো উপায় নেই।বাবার এমন ইঙ্গিতে কথা বলা দেখে মিষ্টি খুব মুগ্ধ হয়।মিষ্টির কাছে তার বাবা সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং সাহসী একটা পুরুষ।মিষ্টি ঠিক করে নিয়েছে তার জীবনসঙ্গীকেও অতি বুদ্ধিমান হতে হবে।তারপর বিয়ের পর বুদ্ধিমান জামাইকে দিয়ে বাবাকে জব্দ করাবে।ভবিষ্যতে যে এমনটা হবে সেটাও মিষ্টি জানে।কারণ মিষ্টি যে ছেলেটাকে পছন্দ করে,নাম জায়ান,সেও খুব বুদ্ধিমান একটা ছেলে।তাকে দিয়ে বাবাকে সহজেই ধরা সাঁই করা যাবে।
কিন্তু কান্নার কথা বাবা জানলো কি করে?মা বলেছে? মা দেখি আজকাল সব কথাই বাবাকে বলে দেয়।মিষ্টি বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বাবাকে বললো ” তোমার উপন্যাসের মেয়েটার কষ্ট শীঘ্রই কমে যাবে বাবা। তুমি এসব নিয়ে ভেবো না তো।পৃথিবীতে এক ধরনের মানুষ আছে যাদের কাজ হলো কথার জালে অন্যকে মুগ্ধ করা।তুমি তাদের দলের একজন।চিন্তা তোমায় মানায় না ”
একথা বলে মিষ্টি বাবার গা’লে আদর করে টিপে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
———
বিষণ্নর চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে।পরপর তিনটা সিগারেট শেষ করে চতুর্থ নাম্বার সিগারেট ধরিয়েছে এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিষ্টির মা বললো
” এই শোন,কই তুই? ”
” মেসে ”
” তোকে একটা কাজ দিবো করবি?”
বিষণ্ন সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বললো ” কি কাজ?”
” ৮ ঘন্টার ডিউটি।একজনকে চোখে চোখে রাখতে হবে।পারবি না? ”
এমন প্রস্তাব শুনে বিষণ্নর খুব রাগ হতে লাগলো।একদিকে গ্লাস ভাঙ্গার জন্য পানিশমেন্ট অন্যদিকে মিষ্টির বিয়ে ঠিক হইছে,এসব ভেবেই বিষণ্নর আঁটসাঁট অবস্থা তার মধ্যে এমন প্রস্তাবে বিষণ্ণ রাগ কন্ট্রোল করে বললো
” আমার পরিক্ষা আছে আন্টি,এতো সময় তো দিতে পারবো না ”
মিষ্টির মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ” তাহলে কি আর করার!তীতুকেই বলতে হবে ”
তীতু তো মিষ্টির বান্ধবী।তীতুকে দিয়ে কার উপর নজরদারি করাবে আন্টি?ঘটনাটা কি জানার মনের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ জমতে লাগলো।বিষন্ন বললো ” তো কার উপর নজর রাখতে হবে? ”
” মিষ্টির উপর ”
বিষণ্ণ জরোসরো হয়ে বসলো।গম্ভীর হয়ে বললো ” কেন? ও কি করছে? ”
” কি করছে জানার জন্যই নজর রাখতে হবে। তোর তো পরিক্ষা। তুই পড় ”
” আরে আরে দাঁড়াও ফোন কেটো না ”
” কি? ”
” আমি থাকতে তীতু কেন? আমিই পারবো।তুমি বলো ”
” শোন বিষণ্ণ,এক মুখে কখনো দুই কথা বলবি না ”
” ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম।এখন বলো কি করতে হবে ”
” মিষ্টির উপর নজর রাখবি।কলেজে প্রাইভেটে সব যায়গায়,এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করবি না।ও কি করছে আমায় দশ মিনিট পরপর জানাবি ”
বিষণ্ণ অবাক হয়ে বললো “কিন্তু কেন? ”
” তোকে বলা ঠিক হবে না। তুই এখনো ছোট ”
বিষণ্ণ মুখ ভোতা করে বললো ” আমি ছোট না।কলেজে পড়ি। তুমি বলো ”
” আমার মনে হয় মিষ্টি কাউকে ভালোবাসে।কাকে ভালোবাসে তুই খোঁজ নিয়ে জানাবি ”
বিষণ্ণ খাপছাড়া হেসে বললো ” মিষ্টি যাকে ভালোবাসে তার সাথেই তো বিয়ে ঠিক করছো তোমরা।কৌশিক স্যার।জানোনা নাকি?”
” তোর মাথা ঠিক আছে?বিয়ে ঠিক করলাম কখন ”
বিষণ্ণ চোখমুখ কুঁচকে বললো ” মিষ্টি যে তখন বললো ”
” ও মজা করে বলছে।জানিস ই তো ওর মজা করার অভ্যাস আছে।কৌশিক স্যারের সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নাই।মিষ্টি ওনাকে ছ্যাচড়া বলছে ”
কথাগুলো বিষণ্ণর কাছে দ্রাম দ্রাম শব্দে বাজতে লাগলো।আন্টি যা বলছে সব কি সত্যি? কৌশিক স্যারের সাথে বিয়ে ঠিক হয়নি?ওনার সাথে কোনো সম্পর্কও নেই?আন্টি কি এটাই বললো? আমি ঠিক শুনছি তো? বিষণ্ণ উৎকন্ঠা চেপে বললো
” আন্টি কি বললে আরেেবার বলো প্লিজ ”
” এক কথা কয়বার বলবো? ”
নাহ,আন্টি তো এবারেও একই কথা বলছে।বিষন্ন হাসি চেপে রেখে চেঁচিয়ে বললো ” আন্টি দাড়াও,একটু পর ফোন দিচ্ছি ”
একথা বলে বিষন্ন ফোন কে’টে দিলো।পাগলের মতো দিশাহীন একটা ব্যাপার বিষণ্ণর মধ্যে কাজ করছে।মনে হচ্ছে পৃথিবীতে তার চেয়ে সুখী মানুষ খুব কম আছে।আনন্দে বিষণ্ণ কতক্ষণ যে ছাঁদে লাফালাফি করেছে সেদিকে কোনো হুস নেই।হুস ফিরলো মেসের তিনটা বড় ভাইয়ের ডাকে।তারা ঘুম জরিত কন্ঠে কড়া গলায় বললো
” সবাই ঘুমাচ্ছে দেখোস না? বান্দরের মতো লাফাস কেন? ”
বিষণ্ণ আনন্দ চেপে রাখতে না পেরে বড়ভাইদের সাথে নিয়ে লাফালাফি করতে শুরু করলো।বিষণ্ণ এখন যেন আর নিজের মধ্যে নেই।সিনিয়র ভাই রিয়াদ বারবার বলছে
” ব্যাডা লুঙ্গি ছাড়,গিট খুলে যাবে।লুঙ্গির নিচে কিছু পড়ি নাই।খুলে গেলে সর্বনাশ ”
কিন্তু সেই আকুতির কথা বিষণ্ণর কান অব্ধি গেলো না।লাফালাফির এক পর্যায়ে সিনিয়র ভাই রিয়াদের লুঙ্গি সত্যি সত্যিই খুলে নিচে পড়ে গেলো।সেই লুঙ্গি নিয়ে বিষণ্ণ ওর নিজের কো’মড়ে বাঁধলো।রিয়াদ লজ্জায় দুইহাতে লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করতে লাগলো।সুযোগ পেয়ে সাথে থাকা বাকি দুজন রিয়াদের নে’ংটু অবস্থার পটাপট পিক তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
পরেরদিন প্রিন্সিপালের রুমের মাঝে বিষণ্ণ করুণ মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বিষণ্নর হাতে একটা খাম।প্রিন্সিপাল বললেন
” খামটা খুলে দেখো ”
বিষণ্ণ খাম খুললো।দেখলো সেখানে স্পষ্ট লেখা, শিক্ষকের বাড়িতে গিয়া বেয়াদবি করিবার মতো ধৃষ্টতার শাস্তি স্বরুপ হিসেবে সামনের বছরের ভর্তি কার্যক্রম বাতিল করা হইলো।
নামঃবিষণ্ণ
রোল নম্বর-২০৪
চলবে?