#চন্দ্রাণী(২৯)
চন্দ্র শর্মীকে কোথাও না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলো। এতো রাতে শর্মী কোথায় গেলো?
বেশ খানিকটা সময় কেটে যাওয়ার পর চন্দ্রর হঠাৎ করে কি মনে পড়তেই ছাদের দিকে ছুটলো। ছাদ ছাড়া সবখানেই খোঁজা হয়েছে।
চন্দ্রর ধারণা সত্যি হলো। ছাদে গিয়ে দেখে শর্মী ফ্লোরে বসে আছে। সামনে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে কতোগুলো কাগজ।
চন্দ্রকে দেখে শর্মী মলিন হেসে বললো, “শেষ করে দিলাম আপা।তার সব স্মৃতি শেষ করে দিলাম।আমার জীবন থেকে তার সব ছায়া মুছে ফেললাম।আল্লাহ যাকে আমার ভাগ্যে রাখে নি তার স্মৃতি রেখে কি করবো আমি? ”
চন্দ্র বললো, “ভাগ্যে যা আছে তা মেনে নিতে শিখ।যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে। ”
শর্মী আগুনের দিকে তাকিয়ে বললো, “ভালো? কোন ভালো আপা?
সেই ভালো যা আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে? আমার ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিয়েছে?
আমার মন ভেঙে খানখান করে দিয়েছে? এতো ভালো কেনো হলো আপা?আমি তো এতো ভালো চাই নি আমার। আরেকটু কম হলেও তো ক্ষতি হতো না। ”
চন্দ্র বোনের পাশে বসে বললো, “আজ যা কষ্ট মনে হচ্ছে তোর দেখবি একদিন সেই কষ্ট তোর জীবনে সুখ হয়ে ধরা দিবে।
আজ যা হারিয়ে ভাবছিস সর্বহারা তুই,একদিন বলবি তা হারানোয় বুঝি জীবন এতো সহজ হয়েছে, সুন্দর হয়েছে।
বিষধর সাপ যতোই পোষ মানুক না কেনো,বিষদাঁত ফুটাতে কিন্তু সে ভুলে না।মনে রাখিস।”
শর্মী কিছু বললো না।
চন্দ্র বললো, “তোর এই জামার সাথের ওড়না কই?”
শর্মী বললো, “রুমেই আছে। ”
চন্দ্র বললো, “চল আমাকে দেখাবি।”
শর্মী বুঝতে পারলো না ওড়না দেখার কি আছে? তবুও বোনের সাথে নিচে নেমে গেলো।
নিচে গিয়ে দেখে সত্যি শর্মীর ওড়না বারান্দায় আছে। চন্দ্র এক মুহূর্ত ভেবে নিজের রুমে গেলো। খুঁজতে গিয়ে দেখে তার ওড়নাটাই নেই।
খাটের উপর বসে চন্দ্র মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। ভালো লাগছে না তার।কিছু ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে যেনো একটা গোলকধাঁধায় ঘুরছে সে।
কে নিলো তার ওড়না?
বাহিরে শাহজাহান তালুকদারের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘরে ঢুকেই চন্দ্রকে ডাকলেন।
চন্দ্র বাহিরে এসে দেখে এলাহি আয়োজন। কাচ্চি বিরিয়ানি , চিকেন চাপ,মিষ্টি।
শাহজাহান তালুকদার স্ত্রীকে চেয়ারে বসিয়ে বললেন, “একটা সময় তোমার প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিলো, যত্নের কমতি ছিলো। আমার অবহেলা, আমার দুর্ব্যবহার সহ্য করে তুমি আমার হাত ধরে এই পর্যন্ত এসেছ।আমার সকল ভুল নিজ গুণে ক্ষমা করে দিয়েছো।আমার দেওয়া আঘাতকে তুমি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছ।
আমি তোমার কাছে কতটা ঋণী তা কেউ না জানলেও আমার আল্লাহ জানে।
আজ আমি তোমার সাথে করা সব অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাই রেহানা।”
আজ কানিজের সাথে কথা বলে আসার পর শাহজাহান তালুকদার সিদ্ধান্ত নিলো যেই মানুষ্টা আজ পর্যন্ত তার সাথে সংসার করে যাচ্ছে, তার সব বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার প্রতি ভালোবাসা,কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাক।কখনো তাকে এভাবে স্পেশাল ফিল করানো হয় নি।আজ না হয় একটু ছেলেমানুষী করেই তাকে খুশি করবেন।
পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে হাটু গেড়ে বসলেন শাহজাহান তালুকদার।
চন্দ্র দ্রুত হাতে ফোন নিয়ে ভিডিও করতে শুরু করলো।
এরকম আনন্দময় একটা মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী না করলেই নয়।
রেহানার দুই চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে।সিতারা বেগম একটা চেয়ারে বসে ছেলের কর্মকাণ্ড দেখছেন।তার একরোখা, একগুণ ছেলেটার জীবনে কতো উত্থান পতন ঘটেছিলো তিনি তো সব কিছুর সাক্ষী ছিলেন।
রাতে সবাই মিলে কেক কাটলো।হৈহল্লা করে সবাই মিলে খাবার খেলো।
চন্দ্র একবার ভাবলো মা’কে জিজ্ঞেস করবে টগরের কথা। পরক্ষণে মত বদলালো।
যে মা পেটের সব কথা তাকে না বললে শান্তি পেতো না,সেই মা যখন এটা চেপে গেছে তবে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। চন্দ্রকে সেই কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
টগর বিছানায় শুয়ে আছে। মাথার ভেতর শুধু চন্দ্র চন্দ্র করছে।এতো কেনো উতলা লাগছে?
কবে চন্দ্রকে বাড়িতে নিয়ে আসবে?
শাহজাহান তালুকদার কি এতো সহজে মেনে নিবে সবটা?
টগর ভাবতে ভাবতে চোখ বুজলো।তন্দ্রা লেগে এসেছে টগরের।সেই মুহূর্তে অস্পষ্ট খট করে শব্দ হতে টগরের তন্দ্রা কেটে গেলো। চোখ বুঁজেই টের পেলো বিপদ আশেপাশেই আছে। মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে টগর কান পেতে রইলো আততায়ীর আক্রমণের অপেক্ষায়।
আজকে আবারও হামলা করবে টগরের ভাবনাতে ছিলো না। শোঁ করে একটা শব্দ হতেই টগর লাফিয়ে সরে গেলো। ছু//রি গিয়ে তোশকের মধ্যে গেঁথে গেলো।টগর লাফিয়ে নেমে এসে ঝাপটে ধরার আগেই হামলাকারী বোরকার পকেট থেকে আরেকটা ছু//রি বের করে টগরের ডান হাতে আঘাত করলো। বাম হাত দিয়ে টগর ডান হাত চেপে ধরে দুই পা পিছিয়ে গেলো।আততায়ী সামনে এগুতে যেতেই ল্যাং মেরে টগর তাকে ফ্লোরে ফেলে দিলো।
বিদ্যুতের গতিতে আক্রমনকারী স্থান ছেড়ে পালালো।
টগর পিছন নিলো না আর।এই বোরকা পরা মানুষটা কে টগর বুঝে গেছে।
ডান হাত গভীরভাবে কে//টে গেছে। আগে ফার্স্ট এইড নিতে হবে। তারপর নির্ঝরকে কল দিতে হবে।এতো সব বিপদের মধ্যে ও টগরের মন ভীষণ আনন্দিত লাগছে।
টগর ভেবে পেলো না এতো উৎফুল্ল হওয়ার কি আছে?
একটা মানুষকে ফিরে পাবে বলে এতটা আনন্দ কেনো লাগছে?নিজের মানুষ হলে বুঝি এরকমই হয়?
নিজের মানুষ! একটা নিজের মানুষের জন্য টগর কখনো তো এতো উদগ্রীব হয় নি।কাউকে কখনো পেতে ইচ্ছে করে নি।অথচ আজ মন কেমন করছে! নিজের এই বালখিল্যতায় নিজেই লজ্জা পেলো টগর।
হাতে ব্যান্ডেজ করে আপন মনে বললো, “আপনি আমার দূরে থাকা ভীষণ আপনজন চন্দ্র।”
চলবে……
রাজিয়া রহমান
#চন্দ্রাণী(৩০)
অবশেষে সকাল হলো। দীর্ঘ একটা রাত পার হয়ে সকাল হলো। রাতের অন্ধকার কেটে যাওয়ার সাথে সাথে কেটে গেলো চন্দ্রর জীবনের অনেক হিসাব নিকেশ।
চন্দ্র বসে আছে উঠানে একটা মোড়া নিয়ে।
আকাশ ভীষণ অন্ধকার হয়ে আছে। যেকোনো মুহূর্তে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে।চন্দ্র অপেক্ষা করছে বৃষ্টির জন্য।
রেহানা উঠানের চুলা ঢাকছে প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে। বৃষ্টি এলে চুলা ভিজে যাবে।চুলা ঢাকতে ঢাক্তে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, “খিচুড়ি খাবি চন্দ্র?”
চন্দ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, “খাবো।”
রেহানা চিৎকার করে শর্মীকে ডেকে বললেন,”শর্মী ফ্রিজ থাইকা গরুর গোস্ত আর ইলিশ মাছ বাইর কইরা ভিজা।তোর আপা খিচুড়ি খাইব।”
রেহানার কথা শেষ হতেই বৃষ্টি নামলো। ঝুম বৃষ্টি। রেহানা এক দৌড়ে ঘরে চলে গেলো। মেয়েকে বসে থাকতে দেখে ডাকতে লাগলো। চন্দ্র উঠছে না দেখে আবারও নেমে এলো উঠানে। হাত ধরে টানতে টানতে মেয়েকে ঘরে নিয়ে গেলো রেহানা।
ঘরে গিয়েই চন্দ্র মা’কে জড়িয়ে ধরলো। তারপর রেহানা কিছু বুঝে উঠার আগেই চন্দ্র হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। রেহানার বুকটা কেঁপে উঠলো। কেনো কাঁদছে তার মেয়ে?
অস্থির হয়ে রেহানা বললো, “ও মা,কি হইছে তোর?এতো কান্দো কেনো মা?কষ্ট হইতাছে তোর? কি হইছে মা’রে কও না মা।”
চন্দ্র কাঁদতে কাঁদতে বললো, “তুমি এমন কেনো মা?কেনো এমন তুমি?
রেহানা অস্থির হয়ে বললো, ” কেমন আমি?কি হইছে?”
চন্দ্র কিছু বললো না। শুভ্র চন্দ্রর কান্না দেখে নিজেও কান্না করতে লাগলো। রেহানা ভীষণ অস্থির হয়ে গেলো। চন্দ্র কাঁদছে!তার বড় মেয়ে,তার কলিজার টুকরো মেয়ে।
চন্দ্র কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। রেহানা শুভ্রর গলা টি//পে ধরলেন।অবুঝ ছেলেটা গোঁগোঁ শব্দ করতে লাগলো। রেহানার মাথায় খু//ন চেপেছে যেনো।ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন,”কি বলেছিস তুই?কি করেছিস তুই?চন্দ্র কাঁদছে কেনো?সকালে ও তোর রুমে গিয়েছিলো।কি হয়েছে আমার মেয়ের?কাল রাত থেকে ও এতো অস্থির হয়ে আছে কেনো?”
শুভ্রর দুই চোখ টলমল হয়ে গেছে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। শর্মী দ্রুত ছুটে এসে মা’কে টানতে লাগলো। সিতারা বানু ও ছুটে এলেন।
অনেক ধস্তাধস্তির পর রেহানাকে সরাতে পারলো দু’জনে। সিতারা বানু রেগে গিয়ে বললেন, “দুনিয়ার সব মানুষ দেখি সারাজীবন পোলার জন্য পাগল হয়,একটা মাত্র পোলা হইলে তারে চোখের মনি কইরা রাখে।আল্লাহ তোমাগোরে শুধু ব্যতিক্রম বানাইলো।মাইয়া কান্দে দেইখা পোলারে এমন কইরা গলা টিইপ্যা ধরে?
কিয়ের এতো আদর মাইয়ার লাইগা?মাইয়া কোন খেতের মুলা?”
রেহানা চিৎকার করে উঠলো। রেহানার দুই চোখ রক্তাক্ত হয়ে আছে। এক্ষুনি যেনো দুই চোখ বেয়ে জল নয় রক্ত ঝরবে।
ভীষণ রেগে বললো, “আমার বড় মেয়ে আমার সব আম্মা।আমার কলিজার পুরোটা আমার বড় মেয়ে।আমার চন্দ্র।চন্দ্ররে নিয়ে আর একটা বাজে কথা ও কইবেন না আম্মা।চন্দ্ররে নিয়ে একটা বাজে কথা যে কইবো তার জিভ আমি ছিঁড়ে ফেলবো।আমার অশান্তি, কষ্ট, যন্ত্রণাময় জীবনে আমার চন্দ্র এসেছিলো রহমত হয়ে। স্বামীর করা সকল আঘাতের মলম ছিলো আমার মেয়ে।আমার মেয়ে আসার পর থেকে আমি স্বামীর আদর ভালোবাসা সব একটু একটু করে ফিরে পাইছি।আমার চন্দ্র আমারে যতটা ভালোবাসে বাকি দুইটা তার এক ফোঁটা ও ভালোবাসতে পারবে না জীবনে। আমার মেয়ের চোখে পানি,আপনি বুঝবেন না আম্মা আমার কলিজা কে//টে রক্ত বের করলেও এতো কষ্ট হতো না আমার মেয়ের কান্না দেখে আমার যেই কষ্ট হচ্ছে।
পুরো দুনিয়া একদিকে আর আমার মেয়ে একদিকে। ”
সিতারা বানু চুপ হয়ে গেলেন।আজ নতুন না,এসব পাগলামি তো অনেক আগে থেকেই দেখছেন তিনি।
শর্মী শান্ত স্বরে বললো, “মা, ভাইরে মারতেছো কেনো?ভাই আপাকে কি করবে?ও কথা বলতে পারে না,কিছু বুঝে ও না।ও নিজেই তো আপার কান্না দেখে কান্না করতেছে।ওর উপর রাগ দেখিয়ে কি লাভ আছে মা?”
রেহানা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। বাহিরের ঝুম বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি জানি না। আমি কি করছি আমি জানি না।আমার চন্দ্র কান্দে ক্যান তাইলে?আমার মা ক্যান কান্দে?আমার সহ্য হয় না।”
শর্মী মা’কে কিছু না বলে রান্না বসাতে গেলো।কিছুক্ষণ পর মা যদি দেখে রান্না হয় নি তাহলে আবার শর্মীকে ধরবে।
ছাতা মাথায় দিয়ে বাবুল দাশ এলো।শর্মী হেসে বললো, “কাকু,খিচুড়ি খাইবেন বসেন।”
বাবুল দাশ নতজানু হয়ে বললো, “না গো জননী, তোমরা তো গোমাংস দিয়ে… ”
শর্মী হেসে বললো, “আরে না,আপনার জন্য আমি মুরগির মাংস দিয়ে রান্না করেছি।ভয় পাইয়েন না কাকু।”
বাবুল দাশ হাসলো। এই মেয়ে দুটোকে এজন্য বাবুল দাশের এতো বেশি ভালো লাগে। এরা সব খেয়াল করে। এতো ভালোবাসার প্রতিদান কি দিতে পারবেন তিনি কোনো দিন? তার মতো গরীব, কাজের লোকের প্রতি ওদের যে ভালোবাসা তার প্রতিদান কি হয় কিছু দিয়ে?
বাবুল দাশ খেয়ে চলে যেতেই শাহজাহান তালুকদার এলেন ঘরে। বৃষ্টি থেমেছে। রোদ ও উঠে গেছে। রেহানা থমথমে মুখ করে বসে আছে। তালুকদার বুঝতে না পেরে শুভ্রর দিকে তাকালো। পরক্ষণেই মনে হলো শুভ্র তো কিছু বলতে ও পারবে না।শর্মীকে ইশারা করতেই শর্মী চন্দ্রর রুমের দিকে দেখালো।তারপর ইশারা করলো দরজা নক করতে।
শাহজাহান তালুকদার গিয়ে মেয়ের দরজা নক করলেন।তারপর মেয়েকে কোমল গলায় বললেন,”মা,মা গো।দরজা খোলো গো মা।পিতার আকুল আবেদন অগ্রাহ্য করো না।”
শর্মী মুচকি হাসতে লাগলো। শাহজাহান তালুকদার মা মা বলে ডাকতেই লাগলেন।সিতারা বানুর বিরক্তি লাগছে।তার বুড়ো ছেলে কেমন নাটক করছে।বউ কেমন গম্ভীর হয়ে বসে আছে। অথচ নাতিনটা বের হচ্ছে না।
খানিকক্ষন পর শাহজাহান তালুকদার সুর করে বললেন,”ও মা,মাগো ফুল পরানের পরী।
তোমার জন্য রাখছি মাগো ফুলের বিছানা করি”
খুট করে দরজা খুলে চন্দ্র বের হলো। তারপর বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। রেহানার বুকের কাঁপন বন্ধ হয়ে গেলো। মেয়ের মুখ দেখে নির্ভার হলেন।
খেতে বসলো সবাই। খিচুড়ি মুখে দিয়ে চন্দ্র চোখ বন্ধ করে ফেললো। ভীষণ ভালো হয়েছে খিচুড়ি। হুট করে মনে পড়ে গেলো টগরের কথা। আচ্ছা টগর কি খাচ্ছে? এরকম বৃষ্টি হলে ওর ও কি খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করে?
কে করে দেয় ওকে খিচুড়ি?
চন্দ্রর ভাবনায় ছেদ ঘটলো বাহিরে ইন্সপেক্টর নির্ঝরের আওয়াজে। নির্ঝর চেয়ারম্যান সাহেব কে ডাকছে।
চেয়ারম্যান সাহেব উঠে গিয়ে দেখলেন টগর আর নির্ঝর দাঁড়িয়ে আছে।
মুহূর্তেই চেয়ারম্যানের হাসিমুখ কঠোর হয়ে গেলো। কঠোর গলায় বলে,”আসুন ভেতরে আসুন।”
ভেতরে এসে টগর অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সবাই খেতে বসেছে।চন্দ্র এক নজর টগরের দিকে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে নিলো।টগরের সাথে চোখাচোখি হওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব না এই মুহূর্তে। কেমন যেনো অনুভূতি শূন্য লাগছে চন্দ্রর। চন্দ্র জানে না কি হবে,কি হতে চলেছে। কি করবে চন্দ্র?
টগরের প্রতি মনের দুর্বলতা চন্দ্র অস্বীকার করতে পারবে না তেমনি বাবার সিদ্ধান্তের বাহিরেও যেতে পারবে না।
কিছুতেই চন্দ্রর পক্ষে সম্ভব না বাবাকে কষ্ট দেওয়া।
কিন্তু!
বাবা মা কেনো তার কাছে এতো কিছু লুকিয়েছে?
বুঝতে পারছে না চন্দ্র কিছু।
নির্ঝর আর টগর ও জয়েন করলো সবার সাথে।
টগরের যদিও কোনো ইচ্ছে ছিলো না বসার কিন্তু শর্মীর পাশের চেয়ারে বসার সুযোগ নির্ঝর মিস করতে চাইলো না।অগত্যা টগরকেও বসতে হলো নয়তো নির্ঝর লজ্জা পাবে।খাওয়ার পর চন্দ্র উঠলো নিজের রুমে যাওয়ার জন্য, সেই মুহূর্তে টগর বললো, “চন্দ্র,বসুন এখানে।কোথাও যাবেন না।”
শাহজাহান তালুকদার চমকে স্ত্রীর দিকে তাকালো। রেহানা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো টগরের দিকে।
চন্দ্র হতভম্ব!
বাবার সামনে টগর এরকম আদেশের সুরে কথা বলার সাহস পাচ্ছে কিভাবে?
হতবাক শর্মী ও।
টগর স্পষ্টভাবে আবারও বললো, “চন্দ্র,আমার বাম পাশের এই চেয়ারে এসে বসুন।আমি বসতে বলেছি আমার পাশে,দাঁড়িয়ে থাকবেন না।”
চন্দ্র ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো বাবা মা’র দিকে।বাবার দুই চোখে হতভম্বের চাপ,মা’য়ের চোখে ক্রোধ।
চলবে…..
রাজিয়া রহমান