#চন্দ্রাণী(০৯)
শাহজাহান তালুকদার বাহিরে এসে দেখে শর্মী দাঁড়িয়ে আছে। শর্মী বাবাকে দেখে যেনো বুকে বল পেলো।এতক্ষণ এই অভদ্র লোকটা কেমন জঘন্যভাবে তাকে দেখছিলো।
শর্মী বাবার উদ্দেশ্যে বললো, “আপা পিঠা পাঠিয়েছে আব্বা।”
এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে শর্মী চলে গেলো। নির্ঝর বিড়বিড় করে বললো, “এতো তাড়াহুড়ো করে যাওয়ার কি আছে,একটু না হয় বেহায়ার মতো তাকাচ্ছিলাম।সুন্দরের দিকে তাকাবো না?মানুষ তো আমি না-কি! ”
শাহজাহান তালুকদার পিঠার বাটি টেবিলে রেখে বললো, “নেন ইন্সপেক্টর সাহেব।গরীবের বাড়িতে আসছেন,খবর দিয়ে আসলে একটু ডাল ভাতের ব্যবস্থা করে রাখতাম।আমার সাথে একটু নাশতা করেন।”
নির্ঝর হেসে বললো, “ধন্যবাদ চেয়ারম্যান সাহেব।সরকার আমাকে বেতন দেয় জনগণের সেবার জন্য। তাদের বাড়িতে গিয়ে চা নাশতা খাওয়ার জন্য না।এই ইউনিফর্মটা যতক্ষণ গায়ে আছে আমি আমার নীতির সাথে আপোষ করতে পারবো না। ”
শাহজাহান তালুকদার ইমপ্রেস হয়ে বললেন,”এই পর্যন্ত যতজন ইন্সপেক্টর এসেছে আমাদের থানায়,এই প্রথম কাউকে পেলাম যে কিনা নীতির সাথে আপোষহীন। বলুন স্যার,আমার কাছে কেনো এসেছেন? ”
নির্ঝর সামনের দিকে ঝুঁকে এসে বললো, “আপনি তো এখানকার চেয়ারম্যান। আশা করছি আপনি আমার চাইতে ভালো জানবেন,গত কয়েকমাসে আপনার আশেপাশের গ্রাম থেকে ২৬ জন যুবতী নিখোঁজ হয়েছে। সর্বশেষ আপনার গ্রামের ও একটা মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে গত দুই তিন দিন আগে। এই থানার আন্ডারে যতগুলো ইউনিয়ন আছে,সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন কুসুমপুর।
আপনার গ্রামে ওপেনলি মদ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাছাড়া ড্রাগের একটা বড় গ্যাং, গ্যাং এরর মূল হোতা, সব কিছু আপনার কুসুমপুরকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। আর গতরাতে জেলেপাড়ায় একটা খুন ও হলো।
এসবের ব্যাখ্যা কি দিবেন আপনি? ”
শাহজাহান তালুকদার সটান হয়ে বসে বললো, “দেখুন অফিসার, আমি গ্রামের সামান্য একজন প্রতিনিধি। আমার ক্ষমতা ও খুব সামান্য। আপনার পোশাকের যেই ক্ষমতা তা আমার নেই।তাই কোথায় কি হচ্ছে, কেনো হচ্ছে তার সমাধান করার ক্ষমতা ও আমার নেই।আমার ক্ষমতা আছে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করার।আমি তা করছি।আমার গ্রামে রাতে পাহারাদার রেখেছি কয়েকজন। রাত হলে তারা পুরো গ্রাম টহল দেয়।স্কুল কলেজের সামনে কোনো বখাটে যাতে আড্ডা দিতে না পারে আমার গ্রামে তার জন্য বেশ কয়েকজনের নামে আমি জিডি করে রেখেছি যারা সন্দেহজনক।
মেয়েদের যাতে ইভটিজিং করতে না পারে সে জন্য ও ব্যবস্থা করে রেখেছি।কোনো মেয়ে অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।আমার পক্ষে যা করা সম্ভব আমি তা করি।
এখন ড্রাগ ডীলিং করে কারা,খুন করলো কে এসব ব্যাপারে আমি আসলেই জানি না।উল্টো আমি নিজেও ভিক্টিম।আমার একমাত্র ছেলে,ও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ওকে কে যেনো ড্রাগ দিয়েছে। আমার ছেলেকে নিয়েই আমার দৌড়াদৌড়ি ছিলো গতকাল।
আমি যদি জানতাম সবার আগে আমিই ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম।আপনি এসেছেন, তদন্ত করুন।যদি কোনো সাহায্য লাগে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।তবে আমার সন্দেহের কথা বলি।আমার প্রতিপক্ষ কাদের খাঁন, ওর ছেলে নিয়াজ খাঁন।যদি পারেন একটু খেয়াল রাখবেন ওদের উপর। ”
নির্ঝর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে কামড়াতে কামড়াতে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “ঠিক আছে।আজ আসি।”
শাহজাহান তালুকদার উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “আশা করছি একদিন এই ইউনিফর্ম এর বাহিরে আপনাকে পাবো,একদিন এই গরীবখানায় এসে আমার সাথে দুটো ডালভাত খাবেন।অতিথির সেবা করার সুযোগ পাব। ”
নির্ঝর হেসে বললো, “নিশ্চয়। ”
মনে মনে বললো, “একদিন না,একটা রাগী, দেমাগি মুখ দেখার লোভে হয়তো প্রতিদিনই আসতে পারি।”
চন্দ্র এলো বাবার কাচারি ঘরে বাবাকে ভাত খেতে যাওয়ার জন্য ডাকতে।এসে দেখে শাহজাহান তালুকদার একটা ডায়েরি দেখছেন বসে বসে।
মেয়েকে দেখে ডায়েরি সরিয়ে রেখে হেসে বললেন, “আয় মা,আয়।”
চন্দ্র বসে বললো, “ভাত খাবেন না আব্বা। চলেন, মা অপেক্ষা করছে। ”
শাহজাহান তালুকদার বললো, “ভালো লাগছে না রে মা।কি হচ্ছে গ্রামে এসব।পরশু রাতে নীলি হারিয়ে গেলো, শুভ্রর এরকম একটা কান্ড ঘটলো। আজ আবার জেলেপাড়ায় একটা খুন হলো।”
চন্দ্র বাবার পাশে বসে বললো, “এতো চিন্তা করবেন না আব্বা।পুলিশ আসছে যখন তদন্ত করলে সব বের হয়ে যাবে।
সবাই বলাবলি করতেছে,গতরাতে জেলেপাড়ায় না-কি ওই মাতাল ছেলেটা গিয়েছিলো, সকালে না-কি পুলিশ ওকে ধরে নিয়ে গেছে।”
শাহজাহান তালুকদার চুপ করে থেকে বললেন,”টগর! ওরে ছেড়ে দিছে আবার ও তো কাদের খাঁনের দলের লোক।ওরে কি আটকে রাখতে পারবে নাকি! ”
চন্দ্র কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবে।টগর গতকাল শাহজাহান তালুকদারের সাথে যেই ব্যবহার করেছে, তা শুনার পর থেকে চন্দ্রর চাপা ক্ষোভ জমে আছে টগরের উপর।
এই জাত মাতাল লোকটাকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে দিবে চন্দ্র।
চলবে……
রাজিয়া রহমান