চন্দ্ররঙা প্রেম ২ পর্ব-১৪+১৫

0
1192

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ১৪
#আর্শিয়া_সেহের

পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। বিথী একধ্যানে তাকিয়ে আছে শানের দিকে। বহু আকাঙ্ক্ষিত কিছু পেলে মানুষের চোখমুখ যেমন জ্বলজ্বল করে তেমনটাই হয়ে উঠছে বিথীর মুখ। হুট করেই বিথী উঠে এসে শানের বুকে আছড়ে পড়লো। বুকের মধ্যে আটকে থাকা কান্নারা দলা পাকিয়ে বেরিয়ে এলো। শানের শার্ট আঁকড়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে ফেললো বিথী। শান এখনো বিথীর এই অবস্থা মেনে নিতে পারছে না। এতো গুলো বছর পর প্রিয় বান্ধবীকে এই অবস্থায় দেখে শানেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে। সে বিথীর মাথায় হাত রাখলো।

রুশান আর উর্বিন্তা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শান আর বিথীর দিকে। রুশান তো ভেবেই নিলো যে এই মেয়েটি তার দুলাভাইয়ের প্রাক্তন। উর্বিন্তা বাচ্চাটাকে মেঝে থেকে কোলে তুলে নিলো। বাচ্চাটার বয়স হয়তো দুই-আড়াই বছর হবে। বাচ্চাটা একদম শান্ত হয়ে উর্বিন্তার বুকের সাথে লেপ্টে আছে। মা ছাড়া অন্য কারো ছোঁয়া হয়তো সে প্রথম পেয়েছে।

রুশান গলা খাঁকারি দিয়ে শানকে ডেকে উঠলো,
-“দুলাভাই?”
শান মাথা ঘুরিয়ে রুশানের দিকে তাকালো। রুশানের সামনে একটা মেয়েকে এভাবে ধরে বসে থাকাটা হয়তো আপত্তিজনক ব্যাপার কিন্তু যেখানে মেয়েটি তার বেস্ট ফ্রেন্ডদের একজন সেখানে কোনো আপোষ নেই। শান চোখের ইশারায় রুশানকে তার পাশে বসতে বললো। রুশান এগিয়ে যেতে যেতেই বিথী শানকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মেঝের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,
-“আমার মেয়ে,আমার মেয়ে কই? কোথায় গেলো আমার বিন্দু?”

উর্বিন্তা এগিয়ে এলো বিথীর দিকে। ধীর কন্ঠে বললো,
-“এই যে আপনার মেয়ে,আপু। আমার কোলে।”
বিথী মাথা তুলে তাকালো। তার চিৎকারে মেয়েটা হতভম্ব হয়ে গেছে । বিথী উঠে দাঁড়িয়ে বিন্দুকে কোলে নিলো। বিন্দু চুপ করে পড়ে রইলো মায়ের বুকে। বিথী শানের সামনে বসে পড়লো। ঝরঝর করে কেঁদে উঠে বললো,
-“ওরা আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে শান। আমার ছেলেটাকে বাঁচাতে পারিনি আমি। আমার বৃত্তটাকে আমার কোল থেকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো ওই পাষন্ড লোকটা। নিজের বাচ্চা ছেলেটার প্রতিও কোনো মায়া জাগে নি ওর। মেয়েটাকেও কেড়ে নিবে তিনবছর হলে। আমাকে জিন্দা লাশ বানিয়ে দিয়েছে ওই নরপশুটা।”

শান বিথীর চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-“আমি তোর কাছে কিছু শুনতে চেয়েছি এখন? চুপ করে থাক। মেয়েটাকে আমার কোলে দে। ”
বিথী চুপচাপ শানের কোলে তুলে দিলো বিন্দু কে। শান উর্বিন্তার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ওকে ধরে বাইরে নিয়ে এসো। ”
রুশান একটু জোর পায়ে হেঁটে শানের পাশে এলো। ফিসফিস করে বললো,
-“ইনি কে দুলাভাই?”
শান বিথীর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
-“প্রায় সাত বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বেস্ট ফ্রেন্ড। যে ভালোবাসা, বন্ধু সব হারিয়ে নিজেও হারিয়ে গিয়েছিলো ।”

রুশান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তার ধারনা ভুল হয়েছে এতেই সে খুশি। উর্বিন্তা বিথীকে ধরে বাইরে নিয়ে এলো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। ওরা বাইরে আসতেই দেখলো রাফিন হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে এসেছে। রুশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ওরা খুব পরিকল্পনা করে এই জায়গা বেছে নিয়েছিলো। এদিক দিয়ে পালানোর অনেক রাস্তা। জঙ্গলটাও বেশ গহীন। তিনজন চ্যালাপ্যালা ছাড়া কাউকে ধরা যায়নি। ওদের ধরাটা এবার আরো টাফ হবে রুশান।”

-“আমরা এর শেষ অবধি দেখবো স্যার। ওদেরকে তো ধরবোই। ওদের থেকে অনেক কিছুর হিসেব নেওয়া বাকি রয়ে যাবে নইলে।”
রুশান ক্ষীণ কন্ঠে জবাব দিলো।
রাফিন বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ভেতরে কিছু পেয়েছো?”
রুশান চোখ বন্ধ করে ফেললো। তারপর একদমে যা দেখেছে সবটাই বললো এবং বিথীকেও দেখালো। বিথী তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে । জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রুশানের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
-“তোমরা জীবিত কোনো বাচ্চা উদ্ধার করোনি? শুধুমাত্র মৃত বাচ্চা দেখেছো?”

রুশানেরও এবার টনক নড়লো। আসলেই তো , জীবিত বাচ্চাগুলো কোথায়? ওরা তো কোনো বাচ্চা সাথে নেয়নি তাহলে বাচ্চারা কোথায় গেলো?

রুশানের ভাবনার মাঝেই বিথী এগিয়ে এলো তার দিকে। ক্লান্ত চোখে মৃদূ হেঁসে বললো,
-“আমি জানি তোমরা পাওনি। আমার সাথে এসো।”
বিথীর পিছু পিছু সবাই আবার ভেতরে গেলো। উর্বিন্তাকে যেখানে বেঁধে রেখেছিলো ঠিক সেখানে এসে দাঁড়ালো বিথী।
রুশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এখানে বাঁধা অবস্থায় কে ছিলো?”
রুশান উর্বিন্তার দিকে ইশারা করে দেখালো। বিথী উর্বিন্তাকে ডেকে বললো,
-“গোল ফ্রেমের চশমা পড়া লোকটা কোথায় বসে ছিলো‌ শেষ পর্যন্ত? দেখেছো তুমি?”
উর্বিন্তা আঙ্গুল দিয়ে তার‌ সামনে থাকা একটা চেয়ার দেখালো। বিথী ব্যাস্ত পায়ে সেখানে গিয়ে চেয়ারের নিচে হাত দিলো। সেকেন্ড পাঁচেকের মধ্যেই একটা চাবি বের করে আনলো।

শান কপাল কুঁচকে এগিয়ে এসে বললো,
-“এই চেয়ারে চাবি আছে কিভাবে জানলি? এই রুমে তো‌ প্রায় বিশ-পঁচিশটা চেয়ার আছে।”
বিথী ব্যাথিত চোখে তাকালো। ছেলেটাকে বাঁচানোর জন্য সে এই দলের কাছে ভালো সাজার নাটক করেছিলো। সেভাবেই সবটা জানে সে। বিথী কান্না লুকিয়ে বললো,
-“একবার দেখেছিলাম সে যে চেয়ারে বসে সেই চেয়ারের নিচে চাবি আটকে রাখে।”
রুশান ফট করে প্রশ্ন করলো,
-“সে টা কে?”
বিথীর চোখে মুখে ঘৃনা ফুটে উঠলো। চোখ বুজে বললো,
-“আমার স্বামী। মিস্টার রাশেদ হাসান।”

রুশান এগিয়ে গিয়ে বিথীর হাত থেকে চাবি নিলো। জিজ্ঞেস করলো,
-“কোথাকার চাবি এটা?”
-“আমাকে যে রুমে পেয়েছেন তার পেছনের রুমের চাবি।”
রুশান দ্রুত হেঁটে সেই রুমের দিকে গেলো। দরজা খোলার সাথে সাথেই দু-একটা বাচ্চা মৃদু চিৎকার করে উঠলো। রুশান দেয়াল হাতড়ে সুইচ অন করে লাইট জ্বাললো। চল্লিশের উপরে বাচ্চা এই রুমে। বিথীসহ সকলেই পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে।
বিথী বাদে সবাই এতো গুলো বাচ্চাকে দেখে থ হয়ে গেছে। বাচ্চাগুলোর চোখেমুখে আতংক। কেউ আম্মু আম্মু করে কাঁদছে। কেউ বা চিৎকার করছে ওদেরকে দেখে। রুশান বিথীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“রুমটা সাউন্ড প্রুফ?”
বিথী হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।

রাফিন এগিয়ে এলো ভেতরে। বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তোমরা ভয় পেয়ো না । সবাই চুপ করো। আমরা তোমাদেরকে চকোলেট কিনে দিবো। তোমাদেরকে একটুও মারবো না।”
চকোলেটের কথায় কেউ কেউ থামলেও সবাই থামলো না। তিন- চার- পাঁচ বছরের বাচ্চারা বাবা-মা ছাড়া বোঝে কি? তাদেরকে কি আর চকলেট দিয়ে বাবা-মা ভোলানো যায়?
রাফিন রুশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এখানে আমি এবং কিছু পুলিশ থাকছি। তোমরা চলে যাও। থানায় জানিয়ে দাও যারা যারা বাচ্চা মিসিং কেস করেছে তারা যেন সকালে থানায় উপস্থিত থাকে।”
-“ওকে স্যার।”

রুশান উর্বিন্তা,শান,বিথী আর বিন্দুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আজ অনেকদিন পর, না অনেক বছর পর বিথী প্রকৃতির বুকে হাঁটছে। কতশত দিন সে একটা রুমে কাটিয়ে দিয়ে এসেছে। ভাবতেই পারেনি আবারও পৃথিবীকে কাছ থেকে দেখা হবে তার, হাঁটা হবে চিরচেনা পথে,দেখা হবে প্রিয়দের সাথে।

বিথীকে দেখে শানদের বাড়ির প্রত্যেকেই অবাক । সবাইতো ভেবেছিলো বিথী ইচ্ছে করেই দূরে চলে গিয়েছে। কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি যে বিথীর সাথে এতো খারাপ কিছু হয়েছে।
রাত প্রায় দশটা বাজে। একটু আগেই রুমঝুম হসপিটাল থেকে বাড়িতে এসেছে। মাহিমের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। ছেলেটার বয়স কম হলেও সে বেশ শক্ত। ভয়ভীতি একটু কমই আছে তার।

রুমঝুম বাড়িতে এসেই বিথীকে দেখে বেশ‌ অবাক হয়ে গেলো। প্রথমে ভাবলো দেখার ভুল। যখন সত্যি সত্যি বুঝলো এটা বিথী তখন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো বিথীকে। আবেগাপ্লুত হয়ে বললো,
-“কোথায় চলে গিয়েছিলে আপু তুমি? সবাই কত মিস করেছে তোমাকে জানো? এভাবে হারিয়ে যায় কেউ? ”

বিথীর কোলে বিন্দু ঘুমিয়ে আছে। তার দিকে একপলক তাকিয়ে বললো,
-“হারাতে চাইনি বোন,হারাতে হয়েছে। কোনোকিছু না ভেবেই নিয়ে নেওয়া একটা সিদ্ধান্ত আমার জীবনটাকেই ওলটপালট করে দিয়েছে। সেদিন এখান থেকে যাওয়ার পরই আমার কালো জীবনের শুরু হয়েছিলো। যদিও সেই কালো ছায়া আমার উপরে পড়েছিলো তোমার জন্মদিন পালন করলাম যেদিন সেদিন থেকেই।”

শান রুমঝুমকে ধমক দিয়ে বললো,
-“এসব পরে শোনা যাবে। হসপিটাল থেকে এসেছো,আগে ফ্রেশ হও যাও। ওকে রেস্ট করতে দাও।”
রুমঝুম মুখ ভেঙচি দিয়ে বিথীকে ছেড়ে দাঁড়ালো। সাঁঝ একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। বিথীর চোখ সাঁঝের দিকে পড়তেই সে আস্তে করে বললো,
-“মাশাআল্লাহ।‌ আমাদের জুনিয়র রুমঝুম। দেখেই বোঝা যায় মেয়েটা কার। আদুরে পুতুল।”
রুমঝুম হেঁসে সাঁঝকে বললো,
-“আন্টির কাছে বসো সোনা। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
সাঁঝ নাচতে নাচতে গিয়ে বিথীর পাশে বসে পড়লো। বিথী মমতা ভরা চোখে চেয়ে আছে সাঁঝের দিকে। তার ছেলেটা থাকলে আজ সাঁঝের মতোই হতো বা সাঁঝের চেয়ে একটু বড় হতো। সাঁঝের দিকে তাকালে তার ছেলেটার কথা একটু বেশিই মনে পড়ছে।

রুশান উর্বিন্তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তনিমের সাথে দেখা করতে গেছে। তনিম কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবে না এটা বেশ ভালো করেই জানে রুশান। আসল ব্যাপারটা জানার জন্যই তড়িঘড়ি করে যাচ্ছে তনিমের বাড়িতে।

উর্বিন্তা রুমে ঢুকে ব্যাগ নামালো পিঠ থেকে । সেই প্রথম থেকেই ব্যাগ এভাবে পিঠে চাপিয়ে রেখেছিলো। দুপুর থেকে এই রাত অবধি সেভাবেই আছে ব্যাগ। উর্বিন্তা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলো। সাথে সাথেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো একশত আঠারোটি মিসড কল এবং দুই শতাধিক ম্যাসেজ যা তার মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং নাম্বারে পাঠিয়েছে শান্ত।

শান্ত পাগল হয়ে গিয়েছিলো উর্বিন্তার সাথে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে না পেরে। এগুলাই তার প্রমাণ। উর্বিন্তা শান্তর পাঠানো শেষ এসএমএস টা দেখলো। সেখানে লিখেছে, ‘ তুমি যখন এই ম্যাসেজ,কলগুলো দেখবে তখন আমাকে একটা কল দিও, উর্বি।তোমার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে। তোমার ফোনের অপেক্ষায় রইলাম।’

উর্বিন্তা স্ক্রিনে হাত ছুঁইয়ে মুচকি হাসলো। বিরবির করে বললো, “পাগল একটা।”

-“তনিম তুমি কিভাবে পারলে এমন কাজ করতে? তুমি ওদেরকে কিভাবে বলে দিলে ডিআইজি স্যার আমাদেরকে হেল্প করছে সেই কথা? আজ যদি উর্বিন্তার কিছু হয়ে যেতো?তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকতে তুমি।”
তনিম রুশানের হাত ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
-“আমি কিছু বলিনি স্যার। আমি কাউকে কিছু বলিনি। আমাকে বিশ্বাস করুন।”
রুশান তনিমের হাত ছাড়িয়ে বললো,
-“ওরা নিজ মুখেই বলেছে তুমি ওদেরকে এসব জানিয়েছো সেটা।”

তনিম দিশেহারা হয়ে পড়েছে। রুশান তাকে ভুল বুঝছে এটা মানতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। রাস্তার পাশের নিয়ন আলোয় তনিমের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রুশান। তনিমের মুখ রক্তিম হয়ে উঠছে। কান্না চেপে রাখছে এজন্যই হয়তো। রুশান মুচকি হেঁসে এগিয়ে এলো। তনিমের দু’কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“আমি আমাকে যতটা বিশ্বাস করি,ঠিক ততটা তোমাকেও বিশ্বাস করি তনিম। আমি জানি তুমি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।”

তনিমের এতক্ষণে বুকটা হালকা হলো। বুক ভারী হয়ে ছিলো এতোটা সময়। জোরপূর্বক হেঁসে বললো,
-“আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম স্যার। আমি ভেবেছিলাম আপনি সত্যিই আমাকে ভুল বুঝেছেন, বিশ্বাসঘাতক ভাবছেন।”

-“তুমি আমাকে সকালে কি বলতে চেয়েছিলে তনিম?”
তনিম সকালের কথা মনে করলো। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
-“গতপরশু রাতে আমি বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে ডিআইজি স্যারের সাথে কথা বলছিলাম। এই কেসের ব্যাপারেই কথা হচ্ছিলো। কথা শেষে যখন আমি ফোন কেটে দিলাম তখন আমাদের গেটের আবডালে একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়ানো দেখলাম। আমার সাথে চোখাচোখি হতেই দৌড়ে পালালো সে। বেশভুষা পাগলের মতো ছিলো। তাই আমি আর পাত্তা দেইনি ব্যাপারটায়। কিন্তু গতকাল সারাদিন আমি যখন এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম তখন মনে হলো ওই লোকটা পাগল ছিলোনা। ওর হাতে কিছু একটা ছিলো। কিন্তু আমি মিলাতে পারছি না কোনো উত্তর। তাই মনে হলো এটা আপনাকে জানানো উচিৎ।”

রুশান বেশ‌ কিছুক্ষণ ভাবলো । তারপর তনিমকে বাড়িতে যেতে বলে নিজেও উল্টো পথে হাঁটা ধরলো।‌ তনিম পিছু ডাকলো। এগিয়ে এসে বললো,
-“আজকে আপনারা যে লোকেশনে গিয়েছিলেন ওই লোকেশন থেকে আরো কিছুটা সামনে হেলাল উদ্দিনের শ্বশুরবাড়ি।”

রুশান কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর হঠাৎ করেই ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটালো। হাঁসি ধরে রেখেই বললো,
-“অংক তাহলে মিলে গেলো। এখন অপরাধীদের ধরতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। তুমি বাড়িতে যাও তনিম। আগামীতে কি কি করতে হবে আমি বলে দিবো।”

রুশান চলে গেলো। তনিম আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। আজকে তার দরকারি আরো একটা কথা বলার ছিলো। কিন্তু কিভাবে বলবে বুঝে উঠতে পারেনি সে। কোনো প্রেমিকের সামনে তার প্রেমিকার বিয়ের কথা চলছে একথা বলা খুব একটা সহজ নয়।

চলবে……….

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ১৫
#আর্শিয়া_সেহের

শান কোনো বন্ধুকেই বলেনি বিথীকে পেয়েছে সে কথা। রুমঝুম আর শান মিলে প্লান করেছে বাকিদেরকে সারপ্রাইজ দিবে। সিন্থিয়া যেহেতু হসপিটালে আছে এখনো তাই মাহিম সুস্থ হওয়ার পরই ওদের সবাইকে বাড়িতে ইনভাইট করবে। তিহান দেশের বাইরে থাকায় ওকে আগে থেকেই ইনভাইট করে রাখা উচিত ভেবে শান তিহানকে কল করলো। তিহানও বছর খানেক আগে বিয়ে করেছে। মেয়েটা ভিনদেশী হলেও তিহানের সংস্পর্শে এসে তার চলাফেরা বেশ মার্জিত হয়ে গেছে। রুমঝুমের সাথে তার ভীষণ খাতির। মেয়েটার নাম অ্যামেলিয়া। তবে ওরা সবাই লিয়া বলে ডাকে। শানকে তিহানের সাথে কথা বলতে দেখে রুমঝুম বেরিয়ে পড়লো বিথীর কাছে যাওয়ার জন্য। মেয়েটা এতো বছরেও কি ভুলতে পেরেছে তিহান নামক তার প্রিয় বন্ধু, প্রিয়জন, ভালোবাসার মানুষটিকে?

-“দশ দিনের মধ্যেই দেশে আসবি। কিভাবে আসবি, আই ডোন্ট নো। তোকে আসতে হবে মানে হবে। ”
-“আরে ইয়ার এভাবে হয় নাকি? এখানে কত দরকারি কাজ আছে আমার । এগুলা ফেলে কিভাবে আসবো?”

শান বুঝলো এভাবে বললে হবে না। তিহান এমনিতেও দেশে আসতে চায় না। তাই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলো। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
-“আসলেই তো,কিভাবে আসবি? বড় কথা হলো আসার দরকারটা কি? এখানে আছে কে যে আসতে হবে? আচ্ছা শোন, তোর আসতে হবে না। রাখছি।”
তিহান তাড়াহুড়া করে বললো,
-“শোন শোন, শান শোন না। আমি সরি রে। আচ্ছা আমি আসবো। দশ দিনের মধ্যেই আসবো। রাগ করিস না তুই,প্লিজ।”

শান নিঃশব্দে হাসলো। কন্ঠটা যথাসম্ভব গম্ভীর রেখেই বললো,
-“আসবি কি আসবি না সম্পূর্ণ তোর ইচ্ছা।”
তিহান কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
-“আরে বাবা আসবো তো।‌ কবে আসবো জানিয়ে দিবো। রাগ করিস না দোস্ত।”
শান ঠোঁট কামড়ে হাঁসি আটকালো। পেট ফেটে হাসি আসছে তার । কিন্তু এখন হাসা যাবে না একদমই। হাসলেই সব শেষ।

সাঁঝ বিন্দুর সাথে খেলছে। আজকে সে স্কুলে যায়নি। রুমঝুম আর বিথী গেস্ট রুমে বসে আছে। রুশান আপাতত শান্তর রুমে আছে।
রুমঝুম বিথীর কাছে এগিয়ে এসে বসলো। বিথী মুচকি হেঁসে বললো,
-“আমি জানি তুমি কি চাও এখন।‌ ”
রুমঝুম প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“কি চাই বলো তো?”
-“জানতে চাও। আমার সাথে কি কি হয়েছে সবটা জানতে চাও।”
রুমঝুম অবাক হয়ে বললো,
-“কিভাবে বুঝলে আমি এটা জানতে চাই?”
বিথী হাসলো। কোনো উত্তর দিলো না। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর বললো,

-“তোমার জন্মদিনের দিনটা মনে আছে রুমঝুম? যেটা আমাদের সাথে কাটিয়েছিলে?”
-“হ্যাঁ আছে তো।”
-“সেই দিনটাই আমার কাল ছিলো। রেস্টুরেন্টে গিয়ে যখন আমরা চারপাশ সাজাচ্ছিলাম তখন কয়েকটা বাচ্চা ছিলো ওখানে। সিন্থিয়া কাজে মগ্ন থাকায় বাচ্চাগুলোর সাথে বেশি কথা বলেনি। আমি কাজে ফাঁকি দিয়ে দিয়ে ওদের সাথে গল্প, হাসাহাসি করছিলাম। তখনই ওই বদমাইশটা দেখেছিলো আমাকে। ওর আমাকে ভালো লাগেনি,ওর ভালো লেগেছিলো অচেনা বাচ্চাদের সাথে আমার মিশে যাওয়ার স্বভাবটা। ওদের‌ এই বাচ্চা পাচার করা কাজে এমন একজন দুজন মানুষ দরকার হয় যারা বাচ্চাদের সাথে খুব ভালো মিশতে পারবে, তাদের সামলাতে পারবে।
রাশেদ আমাকে ওই কাজের জন্যই বেছে নিয়েছিলো। আমার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ওর এই কালো অধ্যায় সেখানে অপ্রকাশিত ছিলো। রাশেদের আরেকটা ভাই আছে। ওর ব্যাপারে আমি বা কেউই তেমন কিছু জানি না। শুধু একবার দেখেছিলাম ওকে। সে দেশে খুবই কম থাকে। তবে এই কাজে সেও জড়িয়ে আছে এই ব্যাপারটা আমি জানি।

ওর আত্মীয়-স্বজন যারা আছে তারাও ভাবে ওরা দুই ভাই খুব সৎ। ওদের এই জঘন্য রুপটা কেউই দেখেনি। আমার পরিবারের সবাই এতো ভালো আর প্রতিষ্ঠিত ছেলে পেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়। রাজি ছিলাম না শুধু আমিই। তোমাদের বিয়ের পরেরদিন তিহানের একটা কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি। দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম এই বাড়ি থেকে। সেটাই আমার স্বাভাবিক জীবনের শেষ দিন ছিলো রুমঝুম।
সেদিন ঝোঁকের বশে নিয়ে নিয়েছিলাম জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত। রাজি হয়ে গিয়েছিলাম বিয়েতে। পরে আবার আমার মত পাল্টে যাবে ভেবে আমার পরিবার তাড়া দিলেন বিয়ের জন্য। কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দিলেন আমার।

ততদিনে আমার রাগ পানি হয়ে গিয়েছিলো। আমি চেয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে আবার যোগাযোগ করতে‌। ওদের না বলে বিয়ে করেছি এটার জন্য আফসোস হচ্ছিলো খুব। আমি ওদের কথা শেয়ার করেছিলাম রাশেদের সাথে। যখন আমি ওদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলাম তখন রাশেদ বারন করলো। বললো সারপ্রাইজ দিবে সবাইকে।”

-“সত্যিই আমি সারপ্রাইজড হয়েছি বিথী।”
বিথীর কথার মাঝেই শান বললো। শান এতোক্ষণ ধরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনছিলো যা ওরা খেয়াল করেনি। শানের কথা শুনে বিথী ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো।
শান‌ ভেতরে এসে রুমঝুমের পাশে বসলো। বিথীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তারপর কি হয়েছিলো?”

-“তারপর? তারপর আমি বিশ্বাস করেছিলাম রাশেদকে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ও আমার পরিবারকে বললো আমাকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে। আমার পরিবারও রাজি হয়ে গেলো। মেয়ে জামাইয়ের উপরে কথা বলা তো ঘোর অপরাধ। আমার পরিবারকে ঢাকায় শিফট করে দিলো রাশেদ। বাবাকে ওখানে চাকরি দিয়ে দিলো। আর আমাকে নিয়ে আটকালো অন্ধকার এক কুঠুরিতে। আমার পরিবার জানে কোনো এক এক্সিডেন্টে মারা গেছি আমি। তাদের মেয়েটা মৃত।
বিয়ের দেড় বছরের মাথায় আমার ছেলে বৃত্তের জন্ম হয়। ততদিনে আমি রাশেদের সব খারাপ কাজ সম্পর্কে জেনে গেছি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না। আমি পালাতে চেয়েও বারবার ব্যর্থ হয়েছি। বৃত্ত ওর নিজের ছেলে ছিলো। ভেবেছিলাম ছেলেটাকে হয়তো ছেড়ে দিবে। কিন্তু না! ছাড়েনি। ওকে বাঁচানোর জন্য হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম আমি। ছেলেটাও আমার বুকের মধ্যে লুকিয়ে ছিলো। টেনে হিচড়ে নিয়ে গেছে আমার বুক থেকে ওকে। এরপর একটা পাথরের মূর্তির মতো হয়ে গিয়েছিলাম আমি। ও আমাকে ছুঁতে এলেও নড়াচড়া করতাম না। যখন মেয়েটা পেটে এলো তখন থেকে আবার একটু একটু করে স্বাভাবিক হলাম। ওকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে নামলাম। তারপরেই তো শানদের সাথে দেখা। ”

রুমঝুম আর শান মনোযোগ সহকারে সবটা শুনলো। তারা সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু এটুকুই ভাবছে যে বাবা কিভাবে সন্তানকে মরনপথে ঠেলে দেয়? কিভাবে? সত্যিই এমন হয়?

দু’দিন ধরেই পুনমের সাথে তেমন কথা হচ্ছে না রুশানের। ব্যস্ত থাকার জন্য শুধুমাত্র খোঁজ খবর নেওয়ার মতই কথা হয়েছে দু’জনের। এখন আবার পুনম কে কল করবে তখনই তধিম এসে হাজির। সে এসেছে রুশানকে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রুশানও না বলার মতো কোনো কারন পেলো না। অগত্যা তধিমের সাথেই যেতে হলো।

দু’দিন ধরেই তনিম আর পিহু পুনমকে বলছে তার বিয়ে ঠিক হওয়ার ব্যাপারটা রুশানকে জানাতে। কিন্তু পুনম বারবার না বলছে। সে সরাসরি বলে দিয়েছে এই বিয়েতে সে রাজি। পিহু জানে এটার পেছনে কোনো কারন আছে। তবে পুনম মুখ খুলছে না বলেই জানা যাচ্ছে না। তাই আজ পুনমকেও সে নিয়ে এসেছে তার বাড়িতে।

তনিম আর রুশান সদর দরজায় এসেই শুনতে পেলো পুনম আর পিহুর কথা। পুনম কেঁদে কেঁদে বলছে,
-“আমাকে এই বিয়ে করতেই হবে আপু।তোরা কেউ বারন করিস না প্লিজ।”

রুশান তঝিমের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ইশারাতে জিজ্ঞেস করলো,
-“কার বিয়ের কথা বলছে? আর পুনম কাঁদছে কেন?”
তনিম চোখের ইশারায় বললো,
-“আগে সবটা শুনুন।”

-“কেন বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিস তুই? আমাকে বুঝিয়ে বল। মনে একজনকে রেখে অন্যজনের সাথে কেন সংসার করবি তুই? রুশান ভাইয়াও তোকে ভালোবাসে। তাদের অবস্থাও ভালো। তাহলে এই ছেলেমানুষী কেন পুনম?”
পিহু নরম কন্ঠে বললো।

পুনম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আগেরদিন মা আর মামা আমার বিয়ের কথা বলছিলো। ছেলেটা একবছর আগে মামার কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। তার নাকি অনেক টাকা। বেশিরভাগ সময় সে দেশের বাইরে কাটায়। আমাকে তার সাথে বিয়ে দিতে পারলে মামার অনেক লাভ বুঝলি আপু? মামার দুই ছেলেকেই ভালো চাকরি পাইয়ে দিবে। মামার হাত ভরে টাকা দিবে। এসব তো রুশান দিবে না।
মামা আমার পেছনে এই একবছর যা যা খরচ করেছে সব ওই ছেলের দেওয়া। আমি যদি বিয়ে না করি তাহলে সারাজীবন মামা মা’কে কথা শুনিয়ে যাবে আপু।”

পিহু চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
-” মা কে কেন কথা শোনাবে?”
পুনম পিহুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-” কারন একবছর আগে মা মামাকে কথা দিয়েছিলো ,মামা যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করবে মা তার সাথেই আমার বিয়ে দিবে। মা তখন আমার পড়াশোনা আর ভালো ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করেছিলো। মামা প্ল্যান করেই এটা করেছিলো তখন। একটা বছর আমাকে পড়িয়েছে শুধু দেখানো পড়ানো। মা এখন না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে। আমি তার মুখে অসহায়ত্ব দেখেছি আপু। মা আমার ভালোর জন্য আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষটার হাতেই তুলে দিবে আপু,আমি জানি। কিন্তু তারপর? আমি রুশানকে বিয়ে করলে আমরা ভালো‌ থাকবো, মা খুশি হবে কিন্তু মামা চিরকাল মা’কে বলবে তুই কথা দিয়ে কথা রাখিস নি। তোর দেওয়া ওয়াদা ভঙ্গ করেছিস তুই ‌।

আপু, মা এসব শুনে শুনে জীবন পার করবে কিভাবে বল? সে তো এই কথাগুলো শুনতে শুনতেই অর্ধেক মরে যাবে। তার চেয়ে ভালো আমিই আমার ভালোবাসাকে শেষ করে দেই। মা নাহয় সুখে থাকুক এবার। সে আর কত কষ্ট করবে বল ? এবারের কষ্টটা না হয় আমিই পেলাম। ”

পিহু থ হয়ে গেছে। তার মামা এতোটা নীচ সে বুঝতেই পারেনি কখনো। পুনম সোফা থেকে নেমে পিহুর পায়ের কাছে বসে পড়লো। পিহুর কোলে মুখ লুকিয়ে বললো,
-“আমি ওকে খুব ভালোবাসি, আপু। মা সেদিন মামাকে কথা না দিলে আমি যেভাবেই হোক রুশানকেই বিয়ে করতাম। আমি কিভাবে বাঁচবো ওকে ছাড়া? কিভাবে? ওকে ছাড়া আমার একটা দিন কাটে না আপু। ওর সাথে কথা বলতে না পারলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি মরে যাবো আপু,মরেই যাবো।”
পিহু মুখ চেপে কাঁদছে। একই আগুনে তারা দু’টো বোনই কেন পুড়লো? তাদের জীবনটাই কেন এমন হলো?

রুশান পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। পুনমের সব কথাই সে শুনেছে,বুঝেছে। মেয়েটা বড় বেশি ভালো। একটু স্বার্থপর হলে কি হতো? মায়ের কথা না ভেবে নিজের কথা কেন ভাবলো না মেয়েটা?
তনিম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুশানের দিকে। সে ভেবেছিলো রুশান কোনো রিঅ্যাক্ট করবে। কিন্তু রুশানকে একদম শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তনিম অবাকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালো।

রুশান নিঃশব্দে দরজা থেকে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলো। তনিমও এলো পিছু পিছু। রুশানের এলোমেলো ভাবে এগিয়ে চলা তনিমের চোখে পড়লো। সে ভালো করেই বুঝতে পারলো রুশানের মধ্যে কেমন তোলপাড় চলছে। গেটের কাছে এসে তনিম রুশানের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
-“আমি আপনাকে পৌঁছে দেই,স্যার?”
রুশানের হাতের ইশারায় থামতে বললো তনিমকে। বাইকে বসে বললো,
-“মেয়েটাকে বলে দিও ,ওকেও আমি ভীষণ ভালোবাসি।‌ ওকে ছাড়া আমারও দম বন্ধ হয়ে আসে। ওকে ছাড়া আমারও দিন কাটে না।”

রুশান বাইক স্টার্ট দিলো। ঝাপসা চোখে পথঘাট দেখতে কষ্ট হচ্ছে তার। তবুও সামনে এগোচ্ছে। জীবন তো এমনই। যাই হয়ে যাক, সামনে এগোতেই হয়।

চলবে……..

( রি-চেক দেইনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে