#চন্দ্রকিরণ
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব: ১৩
রাত ততটা গভীর হয়নি। জাহান ল্যাপটপের দিকে চেয়ে আছে। বেনামে ওর একাউন্টে কেউ ইমেইল পাঠিয়েছে সঙ্গে কিছু ভিডিও আর ছবি। জাহান মিষ্টি করে হাসলো। যেই এই কাজটা করেছে লোকটা বড্ড চালাক। জাহান হ্যাক করে আইডির পুরো ডাটা কালেক্ট করতে পারে ভেবে তথ্য ছাড়া একাউন্ট অপেন করা। জাহান বেশ মজা পেলো। কথায় বলে শেয়ালে শেয়ালে কোলাকুলি। বিষয়টা বেশ জমবে। আগামীকাল ওর ফিরে যাওয়ার দিন। রাত আটটার সময় ফ্লাইট তার আগেই সবটা গুছিয়ে নিয়ে হবে। আরিয়ানের সঙ্গে কথা বলা জরুরী। বিষয়টা ভেবে ও কল দিলো। চতুর্থ বারের সময় ফোন রিসিভ হলো। জাহান সালাম দিয়ে বলল,
> আপনার সঙ্গে দেখা করা জরুরী। দেখা করতে পারবেন নাকি ভয় পাচ্ছেন? পুরুষ মানুষের এতোটা ভয় সাজেনা।
জাহান উত্তরের অপেক্ষা না করেই নিজের মতো কথাগুলো বলে থামলো। ওপাশ থেকে চুপচাপ কোনো আওয়াজ আসছে না। মিনিট পেরিয়ে যাবার পর মেয়েলী কণ্ঠে উত্তর আসলো,
> কে বলছেন? উনিতো ঘুমাচ্ছেন। প্লিজ সকালে ফোন দিবেন। সারাদিন কাজকর্ম করে ক্লান্ত একটু বিশ্রাম নিবে তাও আপনাদের জন্য হচ্ছে না। কে বলুন তো আপনি? কাজ আমার সতীন হয়ে উঠেছে।
মেয়েটা এক নাগাড়ে বকবক করছে। জাহানের মাথাটা ঘুরে উঠলো। আরেকবার ফোন চেক করে দেখে নিলো নাম্বারটা ঠিক আছে কিনা। সব ঠিকঠিক তাহলে এই মেয়েটা কে? আরিয়ান আবারও বিয়ে করেছে? কিন্তু কিভাবে সম্ভব? সবটা কেমন এলোমেলো লাগছে। কেউ যেনো ওর গলা টিপে ধরেছে। আওয়াজ হচ্ছে না। রিপ্লাই করতে হবে ভেবে ঢোক গিলে বলল,
> আপনি কে?
ওপাশ থেকে ঝাঝালো কণ্ঠে আওয়াজ হলো,
> আমি কে মানে? আমি ফোনের মালিকের স্ত্রী। আজব মেয়েতো আপনি। বিবাহিত পুরুষ মানুষের কাছে রাতের বেলা ফোন করেছেন আবার বলছেন কে আমি। শুনুন আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলবো না। দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেম তারপর বিয়ে করেছি । যদিও বিয়েটা আমরা লুকিয়ে করেছি। আরিয়ানের ফুপিমা জানেনা। তাতে কি এবার সবাই জানবে। আমাদের বেবি আসছে। আমি মা হতে চলেছি বুঝেছেন?
> আপনি জানেন আমি কে? আমি আরিয়ান শাহরিয়ারের স্ত্রী। উম্মে দিলরুবা জাহান খান। আপনি যে মিথ্যা বলছেন না তার কি প্রমাণ আছে? হবু ব্যারিষ্টার আমি। চালাকি করে পার পাবেন না। ফোনটা চুরি করেছেন তাইনা?ব্যাপার না আমি খোঁজ ঠিক নিয়ে নিবো।
জাহান হুমকি দিলো। যদি সত্যিটা বের হয় কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। বরং ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ আসলো সঙ্গে উত্তর,
> ও আপনি? আরিয়ানের হয়ে সত্যি আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। আসলে ফুপি মায়ের কথা শুনতে ও বাধ্য হয়েছিল। আপনি বড়লোকের মেয়ে। এসব বিয়ে ডিভোর্স কোনো ব্যাপার না। প্লিজ আপা আমাদের বাচ্চাটার কথা ভেবে হলেও উনাকে ছেড়ে দিন। আমাদের সংসারটাকে নষ্ট করবেন না। আপনি নিজে থেকেই বলুন আরিয়ান কখনও আপনাকে স্পর্শ করেছে? ও জেনে বুঝে আপনার জীবন নষ্ট করতে চাইনি। যথেষ্ট দুরুত্ব রেখেছে আপনার থেকে। তাছাড়া বারবার চেয়েছে যোগাযোগ না করতে কিন্তু আপনি তো শুনছেন না। ক্ষমা করুন প্লিজ। আমাদের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ হয়ে আসবেন না। আমাদের নিজেদের মতো বাঁচতে দিন। আমার বাচ্চার কথাটা ভাবুন একবার।
মেয়েটা যেনো অতিরিক্ত কথা বলতে পছন্দ করে। জাহান থমকে গেলো। আরিয়ান ওকে ঠকিয়েছে কিভাবে পারলো এরকম করতে? নাকি কোনো রহস্য আছে? জাহান ভাবতে পারছে না। বুক কাঁপছে। যদি এমনটা হয় কিভাবে সহ্য করবে? ম*রেই যাবে। কতগুলো দিন এই লোকটার কথা ভেবে ওর পার হয়েছে। বিদেশের মাটিতে কতশত বন্ধু আছে। নিত্য দিন কত জন প্রপোজ করেছে শুধু একটা মানুষকে ভালোবেসে সবাইকে এড়িয়ে চলেছে। বুকের মধ্যে লুকানো পাহাড় সমান ভালোবাসার কিছুই যে প্রকাশ করা হলোনা। জাহান ফোনটা রেখে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে ল্যাপটপের উপরে এসে পড়ছে। কি যন্ত্রণা নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বুকের মধ্যে তোড়পাড় করছে। ভালোবাসলে এতোটা যন্ত্রণা পেতে হবে জানলে কখনও এই জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ঝাপ দেবার মতো পাপ ও করতো না। জাহান ভেঙে পড়ার মানুষ না। তাড়াতাড়ি ফোন করলো উকিলের কাছে। নোটিশ আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চৌধুরী বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আজকের পর থেকে হয়তো ঘুমের পরি ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। গতকাল বিলুর স্বীকারউক্তি সঙ্গে অচেনা নাম্বার থেকে আসার ভিডিও সবটাই অকার্যকর হয়ে গেলো। হাসপাতালে থাকা ভদ্রলোক সুস্থ অবস্থায় নেই। সবচেয়ে বড় সাক্ষী উনি। জাহান ছয় আস উনাকে রিহাবে পাঠিয়ে দিলো। উপযুক্ত প্রমাণ রেডি আছে শুধু সময়ের অপেক্ষা।
*************
চৌধুরী বাড়িতে আজকাল শান্তি নামক বস্তুটা অদৃশ্য হয়ে গেছে। লাবিব হাসপাতালে ভর্তি ফিরোজ নিজের মতো স্বাধীনভাবে ঘুরছে। মিটিং মিছিল করে সময় থাকলে এই বাড়িতে আসে না থাকলে শশুর বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। এই ছেলের লাজ লজ্জা খুব কম। জাবির চৌধুরী কমোলিনির দিকে চেয়ে হুঙ্কার ছাড়লেন,
> ফিরোজকে বলে দাও এই বাড়িতে ওকে আর কষ্ট করে ফিরতে হবে না। বেহা*য়া লজ্জাহীন ছেলের আমার কোনো প্রয়োজন নেই। সারাদিন কাজকর্ম ছেড়ে মিছিল মিটিং করে মাথা ফা*টিয়ে একাকার অবস্থা। মান সম্মান যা ছিল সব শেষ।
কমোলিনি মূদু কণ্ঠে উত্তর দিলো,
> চাচাজান ওই ছেলের সঙ্গে আমার কথা বলতেই ইচ্ছে করেনা। ককর্শ কণ্ঠ সঙ্গে গা জ্বালানো কথাবার্তা। আপনি বলুন যদি কাজ হয়।
জাবির চৌধুরী চুপ করলেন। ফিরোজের সঙ্গে কথা বলতে উনারও বিরক্ত লাগে। সম্মানতো দিবেই না বরং বরং নেবার জন্য মুখিয়ে থাকে। উনি কিছুটা দম নিয়ে বললেন,
> আরিয়ানকে ডাকো আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
> চাচাজান ওতো বাড়িতে নেই। রাইস মিলের কাজকর্ম নতুনভাবে চালু করতে হচ্ছে। অনেক ঝামেলা। ও ফিরলে আপনাকে বলবো।
> আচ্ছা যাও আমার জন্য কফি পাঠাও।
কমোলেনি মাথা নাড়িয়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো। হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটার দিকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হেসে ফুলিকে বলল,
> ফুলি আজ দুপুরে বিরানি রান্না হবে। রাতে দুই রকমের মাংস,চালের রুটি,পোলাও ইলিশ মাছ ভাজি আর রুই মাছের কালিয়া তৈরী করতে হবে। দুপুরের পর থেকেই রান্না শুরু করবি। রাতের খাবারে গড়মিল হচ্ছে।
ফুলি পানি চুলাই বসিয়ে দিয়ে বলল,
> খালাম্মা হঠাৎ আপনার পছন্দের খাবার রান্না হচ্ছে? আজকে কি আপনার জন্মবার? নাকি ওই যে কি বলে জানি কুলখানি নাকি বিয়ের দিন কি বলে ওইটা?
ফুলির কথা শুনে কমোলিনির মেজাজ বিগড়ে গেলো। কুলখানির মানে কি? ম*রে গেছে নাকি যে কুলখানি হবে? অশিক্ষিত কাজের বুয়া নিয়ে জীবন শেষ। উনি ধমক দিয়ে উত্তর দিলেন,
> তোর কাজ রান্না করা আপাতত সেটাই কর? একদম আজেবাজে কথাবার্তা বলে আমাকে বিরক্ত করবি না। যা এখান থেকে। ফাজি*ল মেয়ে।
ফুলি গাল ফুলিয়ে প্রস্থান করলো। ভাবলো ভুল কি বলেছি কে জানে। এই মহিলা হুদাই রাগারাগি করে। পড়ন্ত বিকেলে বাড়িতে ফিরলো আরিয়ান। ক্লান্ত শরীর। বুকের মধ্যে কেমন শূন্য শূন্য লাগছে। মন মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভেবে উঠে বসলো। তাড়াতাড়ি করে ল্যাপটপ অন করতেই সামনে একটা অচেনা মুখ ভেসে উঠলো। লোকটার গায়ের রং ফর্সা।মধ্য বয়সি ভদ্রলোকের চেহারার সঙ্গে ওর যেনো হুবহু না হলেও কিছুটা মিল আছে। আরিয়ান ভড়কে গেলো। নিচে ছোট্ট টেক্সট,
>সত্যিটা খুব তাড়াতাড়ি সামনে আসবে। নিজেকে প্রস্তর করুন। আমার থেকে দূরে থাকার জন্য এতো আয়োজন না করলেও পারতেন। আমি ফিরে যাচ্ছি। ছয় মাস সময় দিন আপনার কষ্টের দিন ইনশাআল্লাহ শেষ হবে।
জাহানের আইডি থেকে টেক্সট এসেছে। আরিয়ান রিপ্লাই করলো,
> আপনার জন্য শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন। পারলে এই অধমকে ভুলে যাবেন।
> নিশ্চয়ই। আমি কোনো বেইমা*নকে মনে রাখিনা। তবে দায়িত্ব পালনে আমি অবহেলা করবো না। যেটুকু প্রয়োজন ইনশাআল্লাহ করবো।ভালো থাকবেন। সব বোকামি আমি করেছি আপনি না। দায়বদ্ধতা আমার আপনি মুক্ত।
আরিয়ান কি বলবে কথা খুজেঁ পেলোনা। প্রতিটা লাইন বারবার করে পড়লো। রাগে দুঃখে হাতের ফোনটা আছাড় দিয়ে কপালের চুলগুলো টেনে ধরলো। এখন যদি চিৎকার করে কাঁদতে পারতো তবে শান্তি মিলতো। নিজের জীবনটা কিভাবে সুন্দর করে নিজ হাতে এলোমেলো করে ফেলল। শান্তির দেখা এজীবনে আর মিলবে না।
*****************
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছে জাহান। ইব্রাহিম খান মেয়ের হাতটা ধরে অনুরোধ করলেন,
> আম্মা ওখানে গিয়ে কিন্তু মাথা গরম করলে চলবে না। বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবে। আমার কিন্তু চিন্তা হয়। ছয় মাস পরে আমি সাত দিনের সফরে যাব ততদিন নিজের খেয়াল রাখবে। আজিয়া আন্টির কথা শুনবে। রাজনীতির ভুত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলো। আমার একটা মাত্র মেয়ে। তোমাকে আমি স্বাধীনতা দিয়েছি। যখন যা প্রয়োজন সবটা দিয়েছি। আব্বাজানের উপরে রাগ করতে পারবে না।
জাহান হুটকরে ইব্রাহিম খানকে জড়িয়ে ধরলো। চোখের পানি লুকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
> তোমার উপরে আমার রাগ আসে না তবে কিভাবে রাগ করবো আব্বাজান? আমি তোমার সব কথায় শুনবো প্রমিজ। তবে তুমিও কিন্তু আমার কথা শুনবে। আরিয়ান শাহরিয়ার কে আমার নাম্বার বা ঠিকানা কিছুতেই দিবা না। লোকটা আমাকে দুঃখ দিয়েছে আব্বা। আমি কিছুতেই ভুলবো না। আমার একরাশ ভালোবাসার সাদা শুভ্র কোমল পদতলে পৃষ্ট করেছে। আমি অপমানিত হয়েছিল। কতটা দুঃখ নিয়ে দেশ ছাড়ছি সে শুধু আমি আর আমার আল্লাহ জানেন। মানুষ এতো বোকা কিভাবে হয় আব্বা? লোকটা ভীতু আমার সঙ্গে যায়না। আমিতো ভেবেছিলাম লোকটা আমার জীবনে হিরো হয়ে এসেছে। সব মিথ্যা আব্বা। আমি সব ভুলে যেতে চাই। তুমি কাউকে বলোনা আমার কথা। আমার লজ্জা, আমার কষ্ট সবটা আমার থাক।
জাহান নিজেকে শক্ত রাখতে চেয়েছিল কিন্তু পারলোনা। ফুপিয়ে উঠলো। ইব্রাহিম খান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলেছেন। মনে মনে খেপে আছেন। আরিয়ানকে পেলে থা*প্পর লাগিয়ে উনি উচিৎ শিক্ষা দিবেন। মেয়েটার চোখের পানি উনি সহ্য করতে পারেন না। আজকের পর থেকে আরিয়ান শাহরিয়ারের ছায়া উনি মেয়ের উপরে পড়তে দিবেন না।
কয়েক মূহুর্ত এভাবেই পার হলো। আটটার সময় জাহানের ফ্লাইট। বাবার থেকে বিদায় নিয়ে এক বুক শূন্যতা নিয়ে পাড়ি দিলো নিজের গন্তব্যের দিকে।
চলবে
#চন্দ্রকিরণ
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৪
চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুম পূণরায় মিলন মেলাতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ উদ্দেশ্যে আরিয়ান নিজের বাবা চাচাদের ডেকেছে সঙ্গে চৌধুরী বাড়ির সদস্যরাতো আছেই। সবাইকে অপেক্ষায় রেখে আরিয়ান গভীর মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে খটখট আওয়াজে টাইপ করছে। কমোলিনি বিরক্ত হয়ে বলল,
> আরিয়ান এভাবে কতক্ষণ অপেক্ষা করবো? কি হচ্ছে বলবে? এতোগুলো মানুষ অপেক্ষা করছে তার দাম নেই ? তুমি জানো আমার শরীর তেমন ভালো নেই তবুও এমন করছো।
কমোলিনির কথা শুনে আরিয়ান ল্যাপটপ বন্ধ করে সকলের মুখের দিকে চাইলো। মৃদু হেসে বলল,
> এইতো যাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম উনার বাইরে অপেক্ষা করছে। ফুলি তুমি গিয়ে দরজা খুঁলে দাও।
আরিয়ানের বলতে দেরি হলো কিন্তু ফুলির দরজা খুলতে দেরি হলো না। একজন উকিল সঙ্গে আরও কয়েকজন এসে উপস্থিত হলো। আরিয়ান গিয়ে আলাপ করে জাবির চৌধুরীকে বলল,
> অনেক বছর পর আপনাদের একজন প্রিয় মানুষ ফিরে এসেছে। জানিনা লোকটা আপনাদের কাছে আজও প্রিয় আছে কিনা তবুও যদি অনুমতি দিতেন তবে তাকে ভেতরে আসতে বলতাম।
> তুমি হেয়ালি করছো কেনো? যাকে ডাকার তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।
আরিয়ান অনুমতি নিয়ে নিজে গিয়ে খানিকটা পরে একজন মধ্য বয়সী লোকের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলো। তাকে দেখে ড্রয়িং রুমে ছোটখাট একটা ভুমিকম্প বয়ে গেলো। বহু বছর পর এই পরিবারের ছোট ছেলে আহিল চৌধুরী ফিরে এসেছে। হুল্লোড় পড়ে গেলো। সকলে মিলে কান্নাকাটি হৈচৈ অবস্থা। আরিয়ান গিয়ে সবাই শান্ত করে বলল,
> উনি একটু অসুস্থ প্লিজ আপনারা শান্ত হোন। ফুপি আমার মায়ের জন্য আপনার ঘর ভেঙেছিলো সেই ঘর আমি জোড়া লাগিয়ে দিলাম। এবার খুশিতো? উনাকে আমার স্ত্রী উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলো।আমি নিয়ে এসেছি ভালো করিনি?
আরিয়ানের কথা শুনে সকলে এবার ওর দিকে মনোযোগ দিলো। কমোলিনি ততক্ষণে মুখ ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছে। উনার কিছু বলার আগের আহিল চৌধুরী বললেন,
> সুরমা তোমাকে সবাই মেনে নিয়েছে ? আমাদের সন্তান কোথায় ? আমি কতবার ওদেরকে বলেছিলাম আমাকে একটিবার আমার স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে দাও ওর কিছুতেই শুনলো না। কতদিন তোমাকে দেখিনি।
কমোলিনি কাঁপছে থরথর করে। বিষয়টা কি হচ্ছে বোঝার জন্য জাবির সাহেব এগিয়ে আসলেন,
> বউমা তুমি হঠাৎ ঘোমটা কেনো দিয়েছো? আর ছেলেটা সুরমার নাম কেন নিচ্ছে? সত্যি কি তোমার ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল?
আরিয়ান হাতে মুঠো শক্ত করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো কিন্তু হলোনা। লা*থি বসিয়ে দিলো টি টেবিলের উপরে। চারদিকে কাচ ভেঙে ঝনঝন আওয়াজ তুললো। মায়ের নামের বদ*নাম গুলো এতকাল দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে এসেছে। কিন্তু এখন? আরিয়ানকে রাগতে দেখে ফিরোজ চিৎকার করলো,
> আরে রাগারাগি করছো কেনো? কি হচ্ছে বিষয়টা বুঝিয়ে বলবে? চাচু তুমি বলবে তোমাকে কারা এতোদিন আটকে রেখেছিল?
আরিয়ান ওর কথা পাত্তা দিলো না। সোজাসুজি উকিলের সামনে গিয়ে একটা ফাইল তুলে নিয়ে বলল,
> এখানে তিনজন মানুষের ডিএনএ টেষ্টের রিপোর্ট, একটা কাবিননামা আর কিছু মূহুর্ত্তের ছবি আছে। ফুপিমা ও সরি, তোমার সঙ্গে তো আমার আবার রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি বলতে ভীষণ রুচিতে বাঁধছে তুই বললে কেমন জানি শোনায় তাই তুমি করেই বলছি। কেনো এমন করলে বলবে? এতোটাই লোভে অন্ধ ছিলে যে আমার মায়ের জীবন থেকে তার প্রিয় মানুষটাকে কেড়ে নিয়ে মৃ*ত্যুর মুখে ঠেলে দিলে? এখানে উপস্থিত সকলে জানত আমার মা অতি লোভী মহিলা ছিলেন। নিজের স্বার্থের জন্য ননদের বরের দিকে হাত বাড়িয়েছিলেন আসলেই কি কথাটা সত্য?
কমোলিনি এখনো কাঁপছে। মুখে কথা নেই। আহিল চৌধুরী অবাক হয়ে আরিয়ানকে বলল,
> তুমি আমার সুরমার ছেলে? আমার ছেলে? বাবা তোমার মা কোথায়? ওকে দেখছি না কেনো? আর কমোলিনি তুমি আমাদের বাড়িতে কি করছো? কি হচ্ছে বলবে?
আহিল সাহেব অধৈর্য হয়ে উঠলো। পরপর প্রশ্ন করে চলেছেন। আরিয়ান এগিয়ে এসে উনার হাতটা সাবধানে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
> আপনি অস্থির হবেন না। আমাকে কথা বলতে দিন।
> তুমি আমার ছেলেতো?এইটুকু বলো। শুধু এইটুকু বললেই আমি শান্ত হয়ে বসে থাকবো প্রমিজ।
আরিয়ান এক দৃষ্টিতে বাবার দিকে চেয়ে থেকে মাথা নাড়ালো। চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। এই অশ্রু শত অপমানের পর উপযুক্ত জবাব দেবার খুশির মুক্ত দানা। আরিয়ান মাথা নাড়াতেই ভদ্রলোক ওর হাতের মুঠোয় পরপর কয়েকটা চুমু বসিয়ে বলল,
> বাবা আমার, রাগ করোনা। আমি নিরুপায় ছিলাম। কত সখ ছিল তোমাকে নিজ চোখে বড় হতে দেখবো কিন্তু যে কিছুই যে হলোনা।
> আপনি চুপ করে বসুন আমাকে বলতে দিন।
আরিয়ান উঠে আসলো। আজ ওর কথা বলার দিন। চুপচাপ থাকলে চলবে না। একটা কাগজ জাবির চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
> আরোহী আর আরাপের ডিএনএ আহিল চৌধুরীর সঙ্গে ম্যাচ করেনি। অন্যটি দেখুন ওটা আমার। আরেকটা আমার মায়ের সঙ্গে আহিল চৌধুরীর বিবাহের উপযুক্ত কাবিননামা। আপনি চাইলে সাক্ষীসহ কাজীও হাজির করবো। উনারা জীবিত আছেন। আরও কিছু কি জানার প্রয়োজন আছে?কমোলিনি হচ্ছেন আমার মায়ের বান্ধবী। উনি জানিনা কেন আমার মাকে ফাঁসিয়ে বাবাকে আটকে রেখে এই বাড়িতে এসেছেন। এটা উনাকে বলতে বলুন। বাইরে পুলিশ অপেক্ষা করছে। আমি চুল পরিমাণ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না।
আরিয়ানের কথা শুনে উপস্থিত সকলে হতভম্ভ হয়ে গেলো। আহিল চৌধুরী যখন গোপনে সুরমাকে বিয়ে করে তখন কেউ সুরমাকে চিনতো না। জাবির সাহেব কমোলিনির দিকে ধমক দিলেন,
> এসব কি শুনেছি তোমার নামে? তোমাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম। পেটে পেটে তোমার এই বুদ্ধি? লোভ মানুষকে কতটা নিচে নামিয়ে দিতে পারে তুমি তার উজ্জল নির্দশন। কি প্রয়োজন ছিল বলো। আর তোমার ভাই কোথায়?
কমোলিনিল ভাই মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলল,
> আমার দোষ নেই সবটা ওর বুদ্ধি। ওই একদিন বলেছিল এগুলো করলে আমাদের অর্থের অভাব হবে না। জানিনা ও কার সঙ্গে সম্পর্কে করেছিল। অনৈতিক সম্পর্কের ফসল তখন ওর পেটে। বুদ্ধি বিবেচনা লোপ পেয়েছিলো। আমিও মান সম্মান আর লোভে পড়ে সাহায্য করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি আহিল চৌধুরীকে আটকে রাখা বা সুরমা ম্যাডামকে খু*ন করিনি।
ভদ্রলোকের কথা শেষ হলো না সুরমা ভেজা কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলো,
> সুরমা আমার বান্ধবী ছিল। আমি ওর থেকে সুন্দরী ছিলাম তবুও যাকে ভালোবেসে ছিলাম সে আমাকে ঠকালো। প্রচারণা করলো। ভালোবেসে ঠকে গিয়ে বেঁচে থাকার আশা মিটে গিয়েছিল। কি করতাম আমি? প্রচণ্ড হিং*সা হতো। একদিন সুযোগ পেয়ে আহিল সাহেবকে আটকে দিলাম। সুরমা যখন দিশেহারা অবস্থা তখন সাহায্যের নামে ওকে ব্যবহার করলাম। চৌধুরী বাড়িতে খরব দিলাম আহিল চৌধুরী নিখোঁজ উনার অনাগত সন্তানের মা কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছে। ছেলে হারিয়ে আহিল সাহেবের মা ভীষণ শোক পেয়েছিলেন তাই ছেলের স্ত্রীকে উনি মেনে নিলেন। আমি সময় নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সুরমা আর ওর বাচ্চাটাকে মে*রে ফেলবো। কিন্তু মারবো বললেইতো আর মারা যায়না। সিদ্ধান্ত নিলাম আজীবন সুরমার সন্তানকে আমার সেবার জন্য বড় করবো। ওর প্রতি ঘৃণা রাগ থেকেই এসব মাথায় এসেছিল কিন্তু আমি ওকে মা*রিনি। ও নিজেই মা*রা গেলো। মা*রা যাবার আগে হয়তো কিছু বুঝেছিলো তাই নিজের সন্তানকে আমার কাছেই রেখেছিল যাতে আমি ওর ক্ষতি করতে না পারি।
আরিয়ান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। ইচ্ছে হলো চিৎকার করে বলতে,”মা শুনতে পাচ্ছো? তুমি অপরাধী না তুমি পবিত্র। আমার মা ফুলের মতোই পবিত্র।”
দরজার মুখে পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল ফিরোজ গিয়ে উনাদের ডেকে এনে বলল,
> সবগুলোকে নিয়ে জান। উপযুক্ত প্রমাণ সাক্ষী সবটা আছে। ফাঁসি না হলেও আজীবন যাতে জেলে মধ্যে থাকতে পারে তেমন করে কেস সাজাবেন। আমার চাচাজানের জীবনটা ছারখার করে দিয়েছে এই লোভী মহিলা।
কমোলিনি চোখ মুখে রাগ।পূণরায় চিৎকার করলো,
> এতোটা সহজে আমাকে দমাতে পারবে না। ফার্ম হাউজ আমার নামে হতে চলেছে। আমার একাউন্টে কয়েক কোটি টাকা আছে। এগুলো আমি কিছুতেই দিব না।
আরিয়ান এগিয়ে আসল,
> তোমার মতো মহিলার সঙ্গে কিভাবে যে এতোটা দিন আছি সে শুধুমাত্র আমি জানি। মায়ের ডায়রী পড়ার পর থেকেই ঘৃণাতে শরীর ঘিনঘিন করে। তবুও বলছি আপনার একাউন্ট থেকে সব টাকা আমি সরিয়ে নিয়েছি ফার্ম হাউজের নাম করে। আর একশো গরু ছিল ওগুলো হারিয়ে যায়নি আমি ইচ্ছে করেই লুকিয়ে রেখেছি। ফার্ম হাউজ চৌধুরী বাড়ির বড় কর্তার নামেই আছে। তোমার কক্ষে পাওয়া কোটি টাকার সম্পত্তি সেসব আমার কাছে। তুমি যেমনটি এই বাড়িতে এসেছিলে তেমনিভাবে চলে যাবে। নেওয়ার মতো গায়ে থাকা পোশাকটা ছাড়া এক আনা পয়সা পযন্ত নেবার ক্ষমতা তোমার নেই। আমি আরিয়ান শাহরিয়ার চৌধুরী জেনে বুঝে একটু একটু করে তোমাকে রাস্তায় নামিয়েছি।
আরিয়ানের কথা শুনে কমোলিনি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো। এতোদিন যেই ছেলেকে নিজের হাতে মানুষ করেছেন তার এহেন কাজকর্মে উনি বাক্যহীন। পুলিশ এসে সবাইকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো। চৌধুরী বাড়ির লোকেরা তখনও চুপচাপ। কিভাবে এতো বড় একটা ঘটনা হজম করবেন বুঝতে পারছেন না। আহিল চৌধুরীর মা মালেকা বানু ছেলেকে ধরে কান্নাকাটি করছেন। আফসোস করছেন আরিয়ানের জন্য। এতোদিন কেনো চিনতে পারেনি ভেবে। আরিয়ান চুপচাপ শুনে মুখ খুললো,
> সবাইকে কিছু বলার আছে। আজ এই মূহুর্ত থেকে আমি আমার বাবা চৌধুরী বাড়ি ত্যাগ করছি। যেখানে আমার মায়ের সম্মান, মর্যাদা নিয়ে এতো কাহিনী হয়েছে সেখানে থাকার মতো রুচি আমার নেই। বাবার দায়িত্ব নেবার মতো যথেষ্ট উপযুক্ত আমি। বাবা তুমি কি আমার সঙ্গে যেতে চাও?
আহিল চৌধুরী সাড়া দিয়ে বললেন,
> আমার মেহের মাকে কি আমাদের সঙ্গে নিবে? তাকে কয়েকদিন দেখি না। আমার মা আগের মতোই আছে।
আরিয়ান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। বুকের মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রাণ*নাশিনীর বিরহ অনল সারা শরীর বেয়ে ধাবিত হচ্ছে। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত হচ্ছে সেই তিক্ত বি*ষের যন্ত্রণা। কিভাবে সেই প্রাণঘাতীনির সামনে দাঁড়িয়ে দুটো কথা বলবে?সেই মুখ যে ওর নেই। নিজ হাতে তার ভালোবাসার বরমাল্য নর্দমাতে ছুড়ে ফেলেছে। অথচ মেয়েটা নিজের কথা রেখেছে। দায়িত্ব নিয়ে সবটা করেছে। যাবার আগে সবকিছু ক্লিয়ার করে গেছে। আরিয়ান এই ঋণ হয়তো জীবন দিয়েও পরিশোধ করতে পারবেন না। জাহান কি নিজের রাগ অভিমান ভুলে আরিয়ানের নিকটে ফিরবে?
*****************
কয়েকমাস অতিবাহিত হয়েছে। বসন্তের প্রথম দিন। ফিরোজ এসে শশুর বাড়িতে। আরিয়ান চৌধুরী বাড়িতে থাকে না। বাবাকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে উঠেছে। ফিরোজ প্রায় দিন সেখানেই থাকে। আজ এসেছে নীহারিকাকে নিয়ে যেতে। চাচাজানের বায়না বউমা দেখবেন। ইব্রাহিম খান বাড়িতে নেই। এমপি মানুষ তাকে পাওয়া বেশ কঠিন। আলেয়া নেই থাকলে একচোট ঝগড়া হতো। ফিরোজ তাতেই স্বস্তি পাচ্ছে। এই আলেয়ার সঙ্গে যে কিসের শত্রুতা ওর আল্লাহ মালুম। মেয়েটা ওকে দুইচোখে দেখতে পারেনা। ফিরোজ আগে চুপচাপ থাকতো ইদানীং খেপে যায়। নীহারিকার হয়েছে যত যন্ত্রণা।। মেয়েটা শাড়ি পরে ঘোমটা নিয়ে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে আসলো। পাশেই লতিফা বানু ছিলেন। উনি বললেন,
> নীরু মা সাবধানে থাকবে। তোমার মামার থেকে অনুমতি নিলে না লোকটা হম্বিতম্বি করবে।
> কিছু হবে না মামি। আমি মামার সঙ্গে কথা বলবো। তুমি চিন্তা করোনা।
ফিরোজ নীহারিকার দিকে চেয়ে আছে। বউটাকে এতোটা সুন্দর লাগছে কেন?রূপের রহস্য কি? বউকি তার সুন্দরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে? এমনে পরিবর্তন হতে থাকলে বহু সমস্যা আছে। কথাটা ভেবে ঝটপট নীহারিকার হাত টেনে বলল,
> তাড়াতাড়ি চলো চাচাজান অপেক্ষা করছে।
নীরু মামির থেকে বিদাই নিয়ে বের হলো। গাড়িতে বসে ফিরোজ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
> নিরু তুমি যেমনি হও আমার কিন্তু অসুবিধা নেই। এতো সুন্দর হতে হবে না। তাছাড়া পাল্টিবাজ শশুরের মেয়েদের সুন্দরী হয়ে কোনো কাজ নেই। আমার ভাই বউয়ের বিরহে পাগল পাগল অবস্থা। তোমার মামা কিছুতেই যোগাযোগ করতে সাহায্য করছে না। আবার বলছে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠাবে। সবটা কি মামা বাড়ির আবদার? মানুষ ভুল করে না?।
নীহারিকা ভয়ংকর রেগে গেলো। কিছুতেই সে মামার নামে বদনাম শুনতে রাজি না। আলেয়া ঠিকই বলে চৌধুরী বাড়ির বাদর একটা। নীহারিকা মুখটা গম্ভীর করে উত্তর দিলো,
> আপনার ভাই যে আমার বোনকে কষ্ট দিলো তার কি হবে? আমার বোনের প্রচণ্ড ইগো জীবন থাকতে এসব ভুলবে না। আপনার ভাইয়ের একটা শাস্তি হওয়া উচিৎ।
ফিরোজ ওর কথা শুনে চুপ করলো। ভাই যে কতটা শাস্তি হচ্ছে সেতো ও খুব ভালো করে জানে। ছেলেটা কিছু বলেনা তাই। কিন্তু অতীত আর বর্তমানের মধ্যে যেন আকাশ পাতালের পার্থক্য।
চলবে