#চন্দ্রকিরণ
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৫
যখন বিপদ আসে চারদিক থেকেই আসে। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। ঠিক সময় বুঝে শাস্তি দিয়ে দেন। চৌধুরী বাড়িতেও তেমন অবস্থা। কমোলিনির অবস্থা শোচনীয়। চাউলের মিলসহ গোডাউন পু*ড়ে গেছে। খামার বাড়ি থেকে একশত গবাদি পশুর হদিস নেই। বাড়ি থেকে কোটি টাকার সম্পদ চুরি। জমানো টাকা থেকে ফার্ম হাউজ তৈরীতে প্রচুর অর্থ খরচ হয়েছে যার এখনো কিছুই হয়নি। টাকা ইনভেষ্ট করলেই লাভ চলে আসে না। বছর খানিকটা লেগে যায় লাভের মুখ দেখতে দেখতে। তাছাড়া স্বামীর চারটা ভাই পরিবার নিয়ে বাইরে থাকে। প্রতিমাসে বিপুল অর্থ ওদের একাউন্টে ফেলতে হয়। আরিয়ান দক্ষ হাতে এতোদিন সব সামলে আসছিলো কিন্তু হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে গেলো। ছোট ভাইয়ে ছেলে মফিজকে গত মাস থেকে উনি কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন একটু একটু করে সবটা শিখে ফেলবে। ব*জ্জাত ছেলে প্রথম দিনেই আরিয়ানকে রাইচ মিল থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সেখবর উনি আজ পেয়েছেন। মাথা উনার গরম হয়ে আছে। কক্ষে হাটাহাটি করছিলেন ঠিক তখনই মফিজ ভেতরে আসলো। মাথা নিচু করে বলল,
> ফুপিমা ডাকছিলেন?
কমোলিনি কথা বললো না। সোজাসুজি এসে ঠাস করে থা*প্পড় লাগিয়ে ওর কলার টেনে হুঙ্কার দিলো,
> লায়েক হয়ে গেছো? বাপের মতো অ*পদার্থ হয়েছো। বলেছিলাম আরিয়ানের সঙ্গে থেকে কাজ শিখবে তানা ওকে কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছো? তোমার সাহস কে দিলো? এতগুলো টাকা লস হয়েছে সেসব কি তোমার বাপ দিবে? আজ থেকে এই বাড়ির আশেপাশে তোমাকে যেনো আর না দেখি। এক মাসেই আমার ব্যবসার লালবাতি। গ*ণ্ডার একটা। খেয়ে খেয়ে মাটি করলে। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও। নয়তো কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো।
মফিজ কথা বলার সুযোগ পেলোনা। মাথা নিচু করে আছে। বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। আরিয়ানকে দেখলে ভীষণ হিং*সা হতো তাই ভেবেছিল এই সুযোগে ফুপিমায়ের কাছে ভালো হয়ে উঠবে কিন্তু হলো উল্টো। কথাগুলো ভেবে ও আস্তে করে সরে পড়লো। মফিজ বের হতেই উনি পেসারের ওষুধ নিয়ে বসলেন। আধা ঘন্টা আগে ওষুধ খেয়েছেন কিন্তু টেনশনে মনে নেই। এর মধ্যে আরোহী এসে হাজির। মেয়েটার ধৈর্য কম।কক্ষে প্রবেশের আগে যে অনুমতি নিতে হয় সেসবের হুশ নেই। ভেতরে এসেই হাপাতে হাপাতে বলল,
> আম্মা তুমি ওই মেয়েকে এখনো সহ্য করছো? আমার চোখের সামনে আরিয়ানের কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো কেমন লাগে বলো? আমার কিন্তু ভালো লাগছে না। তুমি এখুনি গিয়ে ওকে বাইরে ডাকবে। ওর কেনো আরিয়ানের কক্ষে থাকবে? ওর বোন আছে ওর সঙ্গে থাক। তুমি চলো।
আরোহী মায়ের হাত ধরতে রীতিমতো টানাটানি শুরু করলো। কমোলিনি হতবাক মেয়ের আচরণ দেখে। এই পাগলকে আর খেপিয়ে কাজ নেই ভেবে ঠান্ডা মাথায় বলল,
> মা আমার, এখন কিছু বলতে গেলে হিতের বিপরীত হয়ে যাবে। তুমি অষ্ট্রেলিয়া চলে যাও। দুদিন পর আরিয়ানকে আমি পাঠিয়ে দিব। এখানে গিয়ে তোমাদের যেমন ইচ্ছে সিদ্ধান্ত নিও। দয়াকরে এখন আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও। বাচ্চাদের মতো জিদ করোনা। ইব্রাহিম খান লোকটা বিশেষ সুবিধার না। যদি জানতে পারে উনার মেয়েকে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি তাহলে পুরো মফস্বল না বাংলাদেশের আনাচে কানাচে আমাদের বদনাম রটিয়ে দিবেন। মায়ের মুখের দিকে চেয়ে দয়াকরে নিজের কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো প্লিজ। যাও মা।
কমোলিনির কণ্ঠে মধু বর্ষণ হচ্ছে। এই মেয়েকে একবার অষ্ট্রেলিয়া পাঠাতে পারলে আরিয়ানের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিবে না। বিড়বিড় করলেন,বাপের মতো হইছে কেনো যে নিজের মতো হলোনা আফসোসের শেষ নেই। আরোহী মায়ের আদর মাখা কথা শুনে আহ্লাদী হয়ে খুশিতে লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে গেলো। আজ থেকে কোনো চিন্তা নেই। আরিয়ান শুধুমাত্র ওর নিজের।ভালোবাসা বুঝি এমনিই হয়। মনের মধ্যে কেউ বসবাস করলে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। যখন মনে হয় যেকোনো উপায়ে প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে চাই। একান্ত নিজের। তাকে অন্যের সঙ্গে দেখা মানে পাহাড় সমান যন্ত্রণা সহ্য করা
______________________
গভীর রাত ড্রয়িং রুমের দরজা খুলে কেউ সাবধানে পা চালিয়ে বাইরে যাচ্ছে। সিঁড়ির পাশে পিলারের পেছনে জাহান দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে ফিসফিস আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙেছে।তারপর বাইরে এসে এমন দৃশ্য চোখে পড়লো। অগন্তুকের বাইরে পা রাখার পরপরই একটা নারী ছায়া ওর পিছু নিলো। অন্ধকারের জন্য মুখ দেখা যাচ্ছে না। জাহান অনুমান করতে পারলোনা। নিজেও টানা পা ফেলে ওদেরকে ফলো করতে লাগলো। চৌধুরী বাড়ির সামনে বড় একটা ফুলের বাগান যেটা বাড়ির পেছন অবধি দীর্ঘ। পেছনের গেটের সঙ্গে পুকুরের সিঁড়ি। ছায়া মূর্তির পেছনে পেছনে গেটের কাছে এসে ও থমকে গেলো। ফিসফাস আওয়াজ হচ্ছে না কিন্তু পুকুরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সেই দুজন মানব মানবি গভীর অলিঙ্গে ব্যস্ত। জাহান উঁকিঝুঁকি কাটলো কিন্তু ফলাফল শূন্য। বাইরে অর্ধচন্দ্রের আলো তাছাড়া ঘন গাছের সারির জন্য পুরোপুরি দেখার উপাই নেই। সঙ্গে টর্চ থাকলে অসুবিধা হতো না। জাহান আরেক পা ফেলতেই চোখ মুখে বন্ধ করে নিলো খচমচ করে পায়ের তালুতে কিছু একটা বিঁধলো। এতোটা যন্ত্রণা হলো মুখ থেকে অনায়াসে শব্দ বেরিয়ে আসলো। ঠিক তখনই পেছন থেকে আরিয়ান ডেকে উঠলো,
> অন্ধকারে কি করছেন আপনি ?
ওদের দুজনের কথার আওয়াজ শুনে ওদিকে ধুপধাপ আওয়াজ হলো। যারা ছিল অন্ধকারে পালিয়েছে। জাহান সেসব ভুলে পায়ের যন্ত্রণায় বসে পড়লো। ওকে বসতে দেখে আরিয়ানের কপালে ভাজ পড়লো। ব্যস্ত হয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> একি বসলেন কেনো? অন্ধকারে ভুতের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন অদ্ভুত প্রাণী আপনি। এলিয়েন থেকে কম না।
আরিয়ানের কথার খোচা শুনে জাহানের রাগ হলো। দাঁত চেপে বলল,
> সখ হয়েছে তাই বসেছি চাইলে আপনিও আসুন। পায়ে কিছু ফুঁটেছে আমি য*ন্ত্রণায় মারা যাচ্ছি। তুলুন আমাকে। উঠতে পারছি না।
আরিয়ান ওর থেকে দূরুত্ব রেখে বসলো। হাতে থাকা ফোনের টর্চ অন করে পায়ের দিকে ধরেই চমকে উঠলত। এখানে কোথাও একটা বেল গাছ আছে। বেলের শুকনো কাটা পুরোপুরি পায়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। র*ক্ত ঝরছে। আরিয়ান ডান হাত পায়ের দিকে এগিয়ে দিলো। কিন্তু জাহান দ্রুতগতিতে পা সরিয়ে নিলো। বলল,
> আরে পা ধরবেন নাকি? পা ধরতে হবে না আপনি বরং হাতটা ধরুন তাতেই হবে।
> ক্ষমা চাইতে ধরছি না ম্যাম, কাটা বের না করলে ব্যাথা কমবে না। চোখ বন্ধ করুন আমি দেখছি।
আরিয়ান কথা শেষ করে উত্তরের অপেক্ষা করলোনা। কাটাসহ ছোট ডালটা টানতে শুরু করলো। জাহান ওর হাত ধরে বাঁধা দিতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। কয়েক সেকেন্ড পরেই কাটা বের হলো। জাহান এখনো ওর হাত ধরে রেখেছে সেটা দেখে আরিয়ান থমকে গেলো। এই প্রথম মেয়েটা ওকে স্পর্শ করেছে। ও দ্রুত নিজের হাতটা টেনে নিয়ে বলল,
> হাত ধরছেন কেনো? এবারতো পারবেন? উঠুন রুমে গিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দিব।
> ব্যাথা করছে হাটতে ভয় লাগে। আপনি কোলে নিন।
জাহানের কণ্ঠে জড়তা নেই। বেশ স্বাভাবিক কিন্তু আরিয়ান পারলোনা। সোজাসুজি বলল,
> দেনমোহরের টাকা পয়সা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে যদি আপনাকে ছুঁয়ে দিয়ে অপরাধ করে ফেলি তখন পাপতো হবেই আরও কথার খোটা শুনতে হবে। আপনি বরং নিজেই উঠুন।
আরিয়ানের জবাব শুনে জাহানের রাগ হলো। পা ছড়িয়ে বসলো। গাল ফুলিয়ে বলল,
> রুমে গিয়ে শোধ করে দিয়েন তাহলে পাপ হবে না। কয়েক মিনিটের জন্য কিছু হবে না। ধরুন প্লিজ। এরকম করছেন কেনো? রাতে বাইরে এসেছি তাই জন্য এমন করছেন তাইনা? আমি আইনের লোক তাই অনৈতিক বিষয় দেখলে বসে থাকতে পারিনা। আপনাদের বাড়ির দুজন লোক গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এখানে অন্ধকারে দেখা করতে এসেছিল। বলুনতো এই বাড়িতে শাড়ি পরে কয়জন মানুষ?
আরিয়ান বেশ অবাক হলো। এই বাড়িতে বেশ কিছু কাজের মানুষ আছে। তবে এসব করবে না। সকলেই বিবাহিত স্বামী সংসার আছে। আরেকজন আছে বয়স পঞ্চাশের উপরে। উনার পরিবার নেই। কিন্তু উনি এরকম মানুষ না। বেশ ভালো। তবে কে হতে পারে? আরিয়ানের ভাবতে দেখে জাহান পূণরায় বললো,
> পরে ভাবা যাবে আগে ভেতরে চলুন।
আরিয়ান কথা বললো না। জাহানের এক হাত শক্ত করে ধরে উঠিয়ে নিলো। এক পায়ে ভর লাগিয়ে কোনোরকমে ওরা ভেতরে আসলো। তখনও ড্রয়িং রুমের দরজা খোলা। নির্জন পরিবেশ কোথাও কেউ নেই। ফিরোজ বাড়িতে নেই। পার্টির কাজে বেশিরভাগ বাইরে থাকে।
*************
সকাল সাতটা। জাহান ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। পাশে ম্যানেজার সাহেব মলিন মুখে বসে আছে। বেচারার ব্যাথার চোটে জ্বর এসেছে গতকাল রাত থেকে মুখ তেতো হয়ে আছে। জাহান সেদিকে চেয়ে ছোট করে বলল,
> চাচা দুঃখিত আমি। প্লিজ ক্ষমা করে দিবেন। আপনাকে ইচ্ছা করে ব্যাথা দিতে চাইনি।
ম্যানেজার বেশ খুশী হলো। মেয়েটা ক্ষমা চাইছে দেখে গদগদ ভাব করে বলল,
> আরে নানা ক্ষমা চাইতে হবে না। আমি এমনিতেই কিছু মনে করিনি। নেহায়েত বাচ্চা একটা মেয়ে। ভুল হতেই পারে।
ম্যানেজারের কথা শেষ হতেই জাহান প্রশ্ন করে বসলো,
> চাচা গতকাল রাতে আপনি কোথায় ছিলেন? গভীর রাতে আপনি চুরি করে কার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সত্যি করে বলুন? তাইতো বলি আপনি সংসার ধর্ম না করে এখানে কি করতে পড়ে আছেন। ঝেড়ে কাসুন আর বলুন ওই মহিলা কে?
ম্যানেজার হতভম্ভ। অসহায় হয়ে এদিক ওদিক চাইলেন এই বিপদজনক নারীর থেকে উদ্ধারের পথ খোজার জন্য। আশেপাশে সবাই তখন ব্যস্ত। নিজেকে নিজেই কয়েকটা গা*লি দিলেন। এখানে বসা উচিত হয়নি। মেয়েটা ভুলভাল উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে সব এলোমেলো করে দিতে উস্তাদ। তাই ঢোক গিলে বললেন,
> মা কি বলছো এসব?
জাহান দমলো না বরং চড়া গলাই বলল,
> একদম আলাভোলা সাজার নাটক করবেন না। শস্যের মধ্যেই ভুত থাকে। বলুন কে সেই মহিলা?
কমোলিনি খবরের কাগজ নিতে এসে জাহানের কথা শুনে বেশ রেগে গেলেন ধমক দিয়ে বলেন,
> বেয়াদবি করছো কেনো? বাবার বয়সী মানুষের সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় জানোনা? এসে থেকে দেখছি আমাদের ম্যানেজারের উপরে তোমার নজর। উনাকে অপ্রস্তুত করতে উঠেপড়ে লেগেছো। নিজের রুমে যাও।
জাহান ধমক শুনে চুপসে গেলো। জীবনের প্রথম ধমকটা বুঝি কমোলিনির দেওয়া। রেকর্ড হয়ে রইল। কথাটা ভেবে ও কক্ষের দিকে ছুটলো। আরিয়ান কাজ করছিলো হঠাৎ জাহানকে দেখে থমকে গেলো।। মেয়েটার চোখে পানি। ব্যস্ত হয়ে
উঠে আসলো,
> কেউ কিছু বলেছে? কাঁদছেন কেনো? বলেছি না বাইরে যাবেন না।কথা শুনেন না।
জাহান মাথা নাড়িয়ে বলল,
> আপনার ফুপিমা আমাকে ধমক দিয়েছে। গতকাল রাতের বিষয়টা নিয়ে ম্যানেজার চাচাকে প্রশ্ন করেছি সেটা শুনেই উনি খেপেছে। জেরা না করলে সত্যি নামটা সামনে আসবে কিভাবে শুনি?
> আপনি যবে থেকে এসেছেন তবে থেকেই চাচার পেছনে হাত ধুয়ে পড়েছেন। উনাকে ছেড়ে দিন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন। যা করতে এসেছেন সেটাই করুন।
জাহান মাথা নাড়লো। এখানে এসেছে সেটা নিয়েই ভাববে কিন্তু তাইবলে কি ছেড়ে দেওয়া যায়? রাতের আঁধারে দুজন লোক বাইরে যাচ্ছে আসছে কেউ কিছুই জানেনা অদ্ভুত ব্যাপার। জাহান যেভাবে এসেছিল সেভাবেই বাম পায়ে ভর লাগিয়ে বেরিয়ে গেলো। আরিয়ান মায়ের নোটবুক নিয়ে বসেছে। এই ডায়রিতে মায়ের গন্ধ মিশে আছে। নানু বাড়ি থেকে ফিরে আসার সময় এটা সঙ্গে এনেছিলো। কিন্তু পড়ার সুযোগ হয়নি। আরিয়ান ডায়রিতে হাত বুলিয়ে প্রথম পৃষ্টা খুলে পড়তে শুরু করলো
” বন্ধু যখন শত্রু হয়ে সামনে উপস্থিত হয় পৃথিবী থমকে যায়। পায়ের নিচের মাটি সরে যায়।কাছের মানুষের বিশ্বাস ঘাতকতা মেনে নেওয়া বড্ড কঠিন। পৃথিবীতে বাবা মা ব্যতিত দুজন মানুষ আছে যারা আমার খুব প্রিয়। একজন আমার স্বামী আরেকজন আমার সখী। আমার সুখ দুঃখের সঙ্গী। বাবা স্কুল মাস্টার,পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস। আমিও ছাত্রী হিসেবে খারাপ না। সবে কলেজে পা রেখেছি। উড়ুউড়ু মন যা দেখি ভালো লাগে। দুঃখ কষ্ট বলতে কিছু নেই। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে যখন যা চেয়েছি পেয়েছি অনায়াসে। জানতাম না এটাই আমার জীবনের শেষ ভালো থাকা। প্রেমে পড়লাম।বর্ষার এলোমেলো বৃষ্টির ন্যায় প্রেমিকের উষ্ণ আলিঙ্গনে নিজেকে সিক্ত করলাম। সমাজ সংসার সব যেনো আবছা হতে শুরু করলো। চোখে প্রেমের রঙিন চশমা। বাস্তবতা ভুলে গেছি কবেই। যাকে ভালোবাসি লোকটা মোটেও সাধারণ ঘরের কেউ ছিল না। উত্তম প্রেমিক সে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু সমাজ সংসার বলতে একটা অদৃশ্য সংঘ আছে। সামাজিক বৈষম্য, ধনী গরীবের ভেদাভেদ সেসব প্রাচীনকাল হতে চলে আসছে। আমরা ভেবেছিলাম নিজেদের ভালোবাসা দিয়ে এই জাতীভেদ প্রথাকে চোখের নিমিষে উড়িয়ে দিব। সময় যায় আমাদের চোখ থেকে রঙিন চশমা খসে পড়ে। ওর পরিবার আমাকে কখনও মানবেনা। বিষয়টা বাড়িতে জানাজানি হলে ওকে কঠোরভাবে নিষেধ করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে। লোকটা সহজ সরল আমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারতো না। একদিন এসে বললো,
> সুরমা চলো বিয়ে করে ফেলি। একবার বিয়ে হয়ে গেলে সবাই মানতে বাধ্য হবে।
বোকার মতো আমিও রাজি হলাম। না হয়ে উপায় ছিল না। ভালোবাসার নদীতে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি বোধ বুদ্ধি শূন্য। উনি যেনো আমার আলোর বাহক। যেদিকে নিবে আমিও যেদিকে যেতে বাধ্য। বিয়ে করে আমাদের বাড়িতে ফিরলাম। বাবা ভীষণ কষ্ট পেলেন। মা ঘর বন্ধ করে কাঁদতে লাগলেন। বাবা রাগ করে আমাদের ঘর থেকে বের করে দিলেন। লোকটা নিজের বাড়িতে খবর পাঠালো সেখানেও ফলাফল শূণ্য তারা মানবে না। ওই বাড়িতে কারো জায়গা হবে না। কি করবো দিশেহারা অবস্থা। বাইরে ঘর ভাড়া করে কয়েকদিন থাকলাম। তখনও কিন্তু আশা ছাড়িনি। কষ্ট হতো তবুও ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়েছি এইটুকু সান্ত্বনা দিয়ে নিজেকে বুঝিয়ে রেখেছিলাম। ইতিমধ্যে দুঃখের দিনে সুখের আলো জ্বলে উঠলো। অনুভব করলাম এক খণ্ড চাঁদের কণা আমার কোলজুড়ে আসতে চলেছে। জানিনা সে ছেলে কিংবা মেয়ে। দুজন মিলে সারারাত জেগে জেগে কত কল্পনা জল্পনা করলাম । সেই সুখটুকুও ছিল ক্ষণকালীন। দুদিন পরেই লোকটা হারিয়ে গেলেন। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করলাম কিন্তু তিনি আর ফিরে আসলেন না। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমাদের বিয়ের খবর বাইরে জানাজানি হয়নি। ভাড়া বাড়িতে আমি একা। বুদ্ধি দেবার মতো পাশে কেউ নেই। বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসতে ভয় লাছিলো। যদি বলে লোকটা পালিয়ে গেছে আমাকে ঠকিয়ে। তখন কি হবে? বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখা আমার জন্য কষ্টের হবে। তখনই আমার পাশে আশায় আলো নিয়ে এগিয়ে আসলো আমার সখী। মানুষ বিপদে পড়লে যে কত রকমের ভুল করে আমি হয়তো তার উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলাম। ওর বুদ্ধিতে আমার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে সেসময় অন্য এক পুরুষের সঙ্গে মিথ্যা বিয়ের অভিনয় করতে হলো। যাকে আমি জীবনেও দেখিনি পরিচয়তো দূর।
আরিয়ান এইটুকু পড়ে থামলো। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।মায়ের জন্য ভীষণ আফসোস হচ্ছে। আরিয়ান থেমে আবারও শুরু করলো,
চলবে