চন্দ্রকিরণ পর্ব-০৪

0
601

#চন্দ্রকিরণ
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৪

ওয়াশরুম থেকে বের হতেই জাহানের মুখোমুখি হলো আরিয়ান। মেয়েটা এতো চনচল বোঝা যায়না কিছুদিন পরে ব্যারিষ্টার হয়ে ফিরবে। মাথা যে বুদ্ধির কারখানা সেটা বেশ বোঝা যায়। কথাটা ভেবে আরিয়া মুখ মুছতে মুছতে বলল,

> বসুন আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। ইচ্ছা ছিল কখনও আর আপনার সঙ্গে দেখা করবো না কিন্তু নিয়তি হয়তো অন্য কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে ভাববেন না আমি আপনাকে কিছু বলবো না। আপনার উপরে আমার নজর থাকবে।

আরিয়ানের কথা শুনে জাহান থপ করে বিছানায় বসে পড়লো। একটা বালিশ কোলের উপরে রেখে দুহাতে ভর লাগিয়ে বলল,

> স্ত্রীর উপরে নজর লাগানোর জন্য যথেষ্ট অধিকার আপনার আছে। আমি মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলি সেখানে নিজের অধিকার ছেড়ে দেওয়ার মতো বোকা আমি না। বিয়েটা ডিভোর্স করবো বলে করিনি। আমি বাস্তবতা জানি। যাচ্ছে ইচ্ছা আপনি অনায়াসে বলতে পারেন হ

আরিয়ান জাহানের মুখের দিকে তাকাতেই দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেলো। মেয়েটার দৃষ্টি ওর মুখের দিকে। আরিয়ান চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
> সেদিনের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। আমি ইচ্ছা করে আপনার চরিত্র নিয়ে কিছু বলিনি। আপনি ওতো রাতে ব্রিজের দাঁড়িয়ে ছিলেন তারপর আবার আমাকে আজেবাজে কথা বলে রাগিয়ে দিলেন তাই মুখ থেকে ওগুলো চলে এসেছে। আমি মেয়েদের সম্মান করতে জানি। আপনি ভেবেছেন আমি আপনাকে চিনতে পারবো না। এটা আপনার ভুল ধারণা। আপনার পায়ের দিকে চেয়ে প্রথমেই চিনেছি।

> আপনার নজর বেশ তীক্ষ্ণ। যাইহোক সরি বলতে হবে না। আসলে আমি একটু বেশি বেশি করে ফেলেছি। আমি ব্রিজের ওখানে ইচ্ছে করে যায়নি। সঙ্গে আপা আর আলেয়া ছিল ওরা গাড়িতে অপেক্ষা করছিলো। তখনই আপনি আসলেন। ভাবলাম একটু ভড়কে দিয়ে যায়। আর গায়ে হলুদের দিনের কথাগুলো আমি ইচ্ছে করেই আলেয়াকে বলতে বলেছিলাম। আমার চেহারা দেখলে এই বিয়ে কখনও হতোনা। আসলে বিয়েটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আপনি এখন না বুঝলেও কিছুদিন পরে ঠিকই বুঝবেন।

আরিয়ান বাঁকা হাসলো। সোফায় বসতে বসতে উত্তর দিলো,

> এইটুকু বোঝার ক্ষমতা আরিয়ান শাহরিয়ারের আছে। ভালো কাজের পাশে আমাকে অবশ্যই পাবেন কিন্তু যদি দেখেছি খারাপ কিছু করছেন তখন কিন্তু সঙ্গে পাবেন না। কিছুক্ষণ আগে চাইলে আমি ফুপি মায়ের হয়ে কথা বলতে পারতাম কিন্তু বলিনি। আপনি এসেছেন অধিকারের লড়া*ইয়ে। এটা আপনার আর আপনার নিজের লোকদের মধ্যের যু*দ্ধ।সেখানে আমি বাইরের মানুষ হয়ে কিছু বলতে আসা ঠিক হবে না।

আরিয়ানের কথা শুনে জাহান উত্তেজিত হয়ে পড়লো। কপালে হাত রেখে বলল,

> সবটা আপনি জানেন? মানে কিভাবে সম্ভব এটা?
আরিয়ান হাসলো ওর প্রশ্ন শুনে। সোফায় হেলান দিয়ে বলল,
> খালেদা বেগম নামের ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সেদিন বড়মামি মারা যাবার পূর্বে উনার জিম্মাদারিতে ছোট একটা পুতুল রেখে গিয়েছিলেন। আমার যতদূর মনে পড়ে মামি জানতে পেরেছিলেন মেহের আপাকে মা*রার পরিকল্পনা চলছে। এক মেয়েকে বাঁচাতে না পারলেও অন্যটাকে ঠিকই বাঁচিয়ে নিলেন। ইব্রাহিম খান আপনার মামা তাইনা?

জাহান ফুপিয়ে উঠলো। মায়ের কথা ভাবলেই কান্না আসে। কতটা যন্ত্রণা নিয়ে ওকে অন্য মানুষের হাতে তুলে দিয়েছিলো। ওর কান্না দেখে আরিয়ান চনচল হয়ে উঠলো। এই মেয়ে কাঁদতেও জানে। আরিয়ান ব্যস্ত হয়ে উঠে আসলো। ওর পাশে বসে খানিকটা হাত এগিয়ে দিয়েও আবার ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

> কাঁদলে দুর্বল হয়ে পড়বেন। যে জন্য এসেছেন তার কিছুই হবে না। অনেক রাত হয়েছে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন। আমার কক্ষে থাকতে আপনার অসুবিধা নেইতো? বিশ্বাস করতে পারেন।

জাহান চোখ মুখে পাশ ফিরে চাইলো। ঘন লম্বা চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে বলল,

> অসুবিধা কেন হবে? আমি কখনও কাঁদতে চাইনা জানেন? আব্বাজান আমাকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করেছেন। উনাকে আমি পর ভাবিনা। আল্লাহ যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন। তবে এই বাড়ির একটাকেও আমি ছাড়ছি না। এমনি এমনি ব্যারিষ্টার হতে বিদেশের মাটিতে পড়ে থাকি না।

আরিয়ান চুপচাপ বালিশ ঠিকঠাক করে এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। জাহান নিজের পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা করতে এসেছে সেখানে ও কেনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে? মেয়েটার চেহারা দেখে সন্দেহ হয়েছিল তাই খোঁজ নিয়ে কঠিন কিছু সত্যি জানতে পেরেছে। সেসব শুনেই চুপচাপ আছে। নিজেরই কেবল কিছু নেই। না আছে পরিবার আর না আছে বাবা মা। গভীর কোন রহস্যের অন্তরালে ডুবে আছে। মায়ের নামের কলঙ্ক কিভাবে মুছবে সেটাও ধোয়াসা। রাতে ঘুম আসেনা নানারকম চিন্তা ভাবনা হয়। জাহান ওর পাশেই ঘুমিয়েছে। রাত তিন প্রহর চলছে। ঘড়ির কাটা খসখস আওয়াজ করে ঘুরছে। হঠাৎ ঘুটখাট আওয়াজে জাহানের ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে তাঁকিয়ে দেখলো আরিয়ান নেই। বিছানা শূন্য,রুম অন্ধকার না আবছা আলো আছে। সামান্য উঁকি দিয়ে মনে হলো বেলকনিতে কারো ছায়া আছে। ও আর মাথা ঘামালোনা। আবারও বিছানায় ফিরে আসলো। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। মাথা টলছে।
**********
বাইরের হৈচৈ শুনে আরিয়ানের ঘুম ভাঙলো। আবার ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে ভেবে মাথায় হাত রাখলো। সকাল ছয়টা বাজে। দরজা সামান্য খোলা আছে পাশে জাহান নেই। মেয়েটা নিশ্চয়ই কারো সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়েছে ভেবে দ্রুত নিচে এসে থমকে গেলো। ম্যানেজার কপালে হাত রেখে ড্রয়িং রুমের মেঝেতে বসে আছে। পাশে ফুপি মা আরোহী আরও অনেকেই আছে। ম্যানেজারের কপাল কেটে একাকার অবস্থা। আরিয়ানকে দেখেই কমোলিনি অভিযোগ নিয়ে তেড়ে আসলো,

> দেখ বাবা এই মেয়েটা কাচের বাটি ছুড়ে তোর ম্যানেজার চাচার কপাল ফাঁটিয়ে দিয়েছে। কত সাহস দেখলি? এই অশান্তি আর ভালো লাগছে না। তুই কিছু একটা কর বাবা। ওকে ফিরিয়ে দিয়ে আই। আমি বাঁচি।

আরিয়ান ফুপি মায়ের কথা শুনে অবাক হলো। জাহানের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে গম্ভীর আওয়াজে জিঞ্জাসা করলো,

> আপনি চাচাকে মে*রেছেন? বড়দের সঙ্গে বেয়াদবি করছেন এই আপনার শিক্ষা?

জাহাজ ওর ধমকে দমলোনা। বরং ক্ষেপে উঠলো। আঙুল উঁচু করে বলল,

> আপনার ফুপিমা যে আমাকে চোর বলেছে তারবেলা কিছু না? আপনার ফুপিমায়ের ঘর থেকে বিশাল টাকার বক্স কে জানি চুরি করেছে তার দোষ দিচ্ছেন আমাকে? আমার কথা উনি মানতেই চাইছে না। তাই রাগ উঠে গিয়েছিল। বাটিটা উনার দিকে এমনি ছুড়েছি কিন্তু আপনাদের ম্যানেজার চাচার দরদ উথলে পড়লো। কিছু না ভেবেই সামনে খাড়া হলো। আর বাটিটা গিয়ে উনার কপালে ঠাস করে লাগলো। উনি না আসলে কারো কিছুই হতো না। কে বলেছিলো আসতে? আমাকে চোর বলা তো? এখুনি আব্বাজানকে বলছি পঞ্চাশ বিঘা জমির একটা কানাকড়িও যেন না ছাড়ে।

আরিয়ান ফুপি দিকে চাইলো। কথাটার সত্যি মিথ্যা যাচাই করা প্রয়োজন তখনই কমোলিনি ছলছল চোখে বলল,

> বাবা আমার এতো বছরের পুঁজি সঞ্চয় সবটা ওই বক্সে রেখেছিলাম। অলংকার নগদ টাকা সব মিলিয়ে কোটি টাকার উপরে সম্পদ ছিল। গতকাল রাতে কি জানি মরার ঘুমে পেয়েছিলো। উঠে দেখি বক্স নেই। আমার কক্ষে বাইরের কেউ আসেনা। কেউ জানেও না ওখানে কি আছে। আমার সব শেষ বাবা। মেয়েটার বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবে অলঙ্কার তৈরী করে রাখছি। শাশুড়ি মায়ের গহনা কিছুই নেই। এই মেয়েটা বাড়িতে পা রাখতেই এসব হলো। ওই দোষী।

কমোলিনি পূণরায় ওর দিকে আঙুল তুললো।।হজাহান প্রতিবাদ করলো,

> আপনি ওর থেকে জেনে নিন সারারাত আমাকে কিভাবে ঝাপটে ধরে ঘুমিয়েছে? এখন আপনি বলছেন আমি চুরি করেছি? আমার নামে মিথ্যা ছড়িয়ে বাড়ি থেকে তাড়াতে চাইছেন? ভুলে যাবেন না আমার বাবা কে? বধূ নির্যাতনের দায়ে আপনাকে আমি জেলে পাঠাবো। প্রমাণ ছাড়া কথাগুলো বলছেন কিভাবে? হবু ব্যারিষ্টার আমি। আইনের কথা বলুন। নয়তো ভালো হবেনা।

আরিয়ান হতাশ হলো। ফুপির জন্য খারাপ লাগছে। জাহানকে চুপ থাকতে বলে ডাক্তারকে ফোন করে আসতে বললো। ততক্ষণে ফিরোজ হামি ছাড়তে ছাড়তে উপস্থিত। বেচারা ভোররাতে বাড়িতে ফিরেছে। পার্টির কাজে বিজি ছিল। ভেবেছিলো দুপুর পযর্ন্ত ঘুমাবে কিন্তু হলোনা। বিরক্ত হয়ে বলল,

> বাড়ি গড়ের মঠ হয়ে উঠেছে। জাহান তুমি মাথা গরম করোনা। এই মহিলার যে লুকানো সিন্দুক আছে জীবনেও জানতাম না। চৌধুরী বাড়ির টাকা পয়সা দিয়ে বাপ ভাই চৌদ্দ গোষ্ঠী চালিয়ে আবার জমিয়ে রেখেছে। যে নিয়েছে উচিত কাজটাই করেছে। আবার যদি চিৎকার চেচামেচি হয়েছে না তারপর দেখো কি করি। ঘুমটাই নষ্ট করে দিলো। জাহান তুমি রুমে গিয়ে ঘুমাও। এসবে কান দিওনা।

ফিরোজ ছোট থেকেই কমোলিনিকে তেমন পছন্দ করেনা। ওর মুখে কিছু আটকাই না। মাথা গরম মানুষ। মনে যা আসে ঝেড়ে দিয়ে চুপচাপ থাকে। আরিয়ান এগিয়ে আসলো ফুপির দিকে। ফুপিমায়ের কান্না দেখে স্থির থাকতে পারলোনা। এগিয়ে গিয়ে বলল,
> আপনার জিনিসপত্র সব ফিরিয়ে আনতে যা যা প্রয়োজন আমি সবটা করবো ফুপিমা। আমি এখুনি পুলিশে ফোন করছি ওরা এসে তদন্ত করলে সব পাওয়া যাবে। চিন্তা করবেন না।

আরিয়ান নাম্বার তুলে কানে ধরতেই কমোলিনি সেটা কেড়ে নিলেন। এতোগুলো টাকা সঙ্গে অলঙ্কার এসবের কখনও ট্যাক্স দেওয়া হয়নি তাছাড়া বাড়িতে পুলিশ আসলে সম্মান নষ্ট হবে। উনি ফোন কেটে বললেন,

> আমি খোঁজ করার ব্যবস্থা করছি। প্রতিটা ঘর তল্লাশি করলে নিশ্চিত সব পাওয়া যাবে। তুমি চিন্তা করোনা। বাড়িতে পুলিশ আসলে সম্মান যাবে। বাইরে কানাঘুসো হবে।

কমোলিনি থামতেই জাহান চিৎকার করলো,

> এই বলুনতো এগুলোর কি কখনও ট্যাক্স দেওয়া হয়েছিলো? নাকি চুরি করে লুকিয়ে রাখছেন? কালো টাকা বলে পুলিশে খবর দিতে ভয় পাচ্ছেন তাইনা? পুলিশ আসুক আমি সব বলবো।

জাহানের কথায় কমোলিনি হতাশ। মুখটা পাংশু করে আরিয়ানকে বলল,

> বাবা তোমার বউকে দয়াকরে কক্ষে নিয়ে যাও। সাত সকালে ম্যানেজারের মাথা ফাটিয়ে শান্তি হয়নি এখন আমার হার্ট এ্যাটাক করানোর ধান্দা করছে। কত আশা নিয়ে মেয়ে দেখলাম। ভেবেছিলাম মাটি না বেটি। বউ আমার মাটির মানুষ হবে। ফুপিমা বলতে পাগল কিন্তু কি নিয়ে আসলাম?

কমোলিনি কপাল চাপড়ে প্রস্থান করলো। তবে হুকুম দিলেন প্রতিটা ঘর তল্লাশি করতে। এতো বড় একটা টিনের বাক্স নিশ্চয়ই যে নিয়েছে নিজের কক্ষেই রেখেছে। ঠিক পাওয়া যাবে। আরিয়ান জাহানের হাত ধরে সোজা কক্ষে এসে দরজা বন্ধ করলো। খানিকটা রেগে গিয়ে বলল,

> এসবের মানে কি? আপনি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন না? বাটিটা যদি ফুপি মায়ের কপালে লাগতো?
জাহান গাল ফুলিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলল,

> ওরা ইচ্ছে করে আমাকে রাগাচ্ছিলো। আপনি জানেন না রাগলে আমি ঠিক থাকতে পারিনা? আপনি কি জানেন আপনার ফুপিমা আরোহীর বিয়ে দিচ্ছেন গোপনে? অষ্ট্রেলিয়া গিয়ে বিয়ে হবে। সন্দেহ হচ্ছে না? সকালে আমার গুপ্তচর ফোন করেছিল। মাথা এমনিতেই আউলে আছে তারপর আবার আমাকে চোর বলেছে। কত সাহস ভাবুন?

হাজান বেশ রেগে আছে। আরিয়ান ঠান্ডা পানির বোতলটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

> খেয়ে নিন তারপর আবার শুরু করবেন। আপনার গুপ্তচরের কি প্রয়োজন আমাকে বললেই হতো। আমি গতকাল শুনেছি। মেজ মামার সঙ্গে কথা বলার সময় উনি বলে ফেলেছেন। হয়তো বলতে চাইনি। উনারা বাড়িতে ফিরছেন আগামী শুক্রবার। আমি টিকিট কনর্ফম করেছি।

জাহান পানি খেয়ে বোতল পাশে রাখলো। প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে। পেট ঠান্ডা না হলে মাথা অনায়াসে গরম হয়ে উঠবে। তাই বলল,

> এই বাড়ির অকর্মা গুলো কাজকর্ম না করে বিদেশে পড়ে আছে। আপনি গাধার মতো খেটেখুটে ওদের টাকা পাঠাচ্ছেন। এতোটা ভালো না হলেও পারতেন। শুনুন এই বাড়ির চৌদ্দ গোষ্ঠীর সেবাযত্ন খুব করেছেন এখন আমার জন্য কিছু করুন। ক্ষুধাকাতর হয়ে যাচ্ছি। পেটে দানাপানি কিছু পড়েছি সেই রাত থেকে। আমি না খেয়ে থাকতে পারিনা।

আরিয়ান ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটা মুখে যা আসে অনায়াসে বলতে পারে। এমন অদ্ভুত বউ জুটেছে কপালে। রাগলে জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি করে। দুদিন পরে হাড়ি পাতিল ছুড়বে। একে রান্নাঘরের ধারেকাছে পাঠানো যাবে না। আরিয়ান ফোন হাতে নিয়ে পাশের রেস্টুরেন্টে ফোন করে খাবার অর্ডার করে একজনকে বলে দিলো বাড়িতে নিয়ে আসতে। কাজ শেষ করে বলল,
> ফ্রেস হয়ে নিন আমি আপনার পোশাকের ব্যবস্থা করছি।
> আব্বাজান ফোন করছিলেন আম্মা কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছে আপনি শুধু আনার ব্যবস্থা করে দিন। কয়েকদিনের ব্যাপার। তাছাড়া আপনার আলমারিতে শাড়ি দেখেছি ওগুলো কি আমার? পরতে পারবো?

> ওগুলো আপনার জন্যই কেনা হয়েছিল।

আরিয়ান অপেক্ষা করলোনা। ওয়াশরুমে চলে গেলো। কারখানায় যেতে হবে। একবার বাড়ি থেকে বের হলে রাত ছাড়া ফিরে আসা কঠিন। কাজের অভাব নেই। সারাদিন ছুটাছুটি করতে হয়। মেয়েটার জন্য চিন্তা হচ্ছে। সারাদিন এই বাড়িতে কিভাবে থাকবে?।
*************
কমোলিনি অস্থির হয়ে আছে। মন মেজাজ খারাপ। বাড়ির বাগানে তালা ভাঙা অবস্থায় বক্স উদ্ধার হয়েছে কিন্তু সেখানে কোনো টাকা পয়সার চিহ্ন নেই। কি করবে বুঝতে পারছে না। তার মধ্যে আরোহী আরেক ঝামেলা শুরু করেছে কিছুতেই সে দেশ ছেড়ে বাইরে যাবেনা। আরিয়ানের সঙ্গে জাহানের ডিভোর্স হলে ও বিয়ে করতে পারবে এই সেই বলে মায়ের মাথা আরও ঘুরিয়ে দিচ্ছে। না পেরে উনি মেয়ের গালে টেনে একটা থা*প্পড় দিয়েছেন। সেই থেকে আরোহী ঘরে দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করছে। দুপুরে যখন এসব নিয়ে উনি হাহাকার করছিলেন ঠিক তখনই খবর আসলো চালের কারখানায় আগুন লেগেছে। কয়েক টন চাল মূহুর্ত্তের মধ্যে পুড়ে কয়লা। যন্ত্রপাতিতে আগুন লেগেছে থামানো যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস এসেছে অবস্থা ভ*য়ংকর। ম্যানেজার খবর দিতে গিয়ে কথায় বলতে পারছে না। কি থেকে কি হচ্ছে সবটা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সারাদিন এভাবেই পরা হলো। সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে জাহানের পোশাক আর খাবার নিয়ে বাড়িতে ফিরলো আরিয়ান। ফুপিমায়ের সামনে যাওয়ার মুখ নেই। নিজের কক্ষে গিয়ে গোসল করে রুমে এসে দেখলো জাহান মুখে হাত লাগিয়ে বসে আছে। আরিয়ান চুলে চিরুনি চালিয়ে বলল,

> কি চিন্তা করছেন?

জাহান চমকে উঠলো। কিছু একটা ভেবে বলল,

> কি হচ্ছে বলুন তো? বাড়িতে চুরি হলো সঙ্গে কারখানায় আগুন লাগলো। কেমন অদ্ভুত লাগছে না? কেউ ইচ্ছে করে এসব করছে আমার মনে হয়। আমি চেয়েছি আইনের মাধ্যমে সকলের সামনে রহস্য উন্মোচন করে সবগুলোকে জেলে পাঠাতে। কিন্তু এভাবে না। চাউল পুড়িয়ে দিলো কতগুলো পরিবারের খাবার নষ্ট হলো বলুন?

আরিয়ান সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

> চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। কপাল ভালো কারো ক্ষতি হয়নি। শ্রমিকরা বাড়িতে ছিল। আগুন লেগেছে খুব সকালে। ভেতরে জ্বলছিলো বাইরে থেকে দেখা যায়নি। অনেক টাকা নষ্ট হলো। প্রচণ্ড ক্লান্ত আমি। ঘুমের প্রয়োজন।

আরিয়ান বিছানায় গিয়ে চোখ বন্ধ করলো। জাহান সেখানেই বসে আছে। মাথার নানারকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কে এসব করছে? তার উদ্দেশ্য কি হতে পারে?

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে