চন্দ্রকিরণ পর্ব-০২

0
719

#চন্দ্রকিরণ
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২

ফাগুনের আগুন ঝরা দিন। সূর্য তির্যকভাবে কিরণ দিচ্ছে। চৌধুরী বাড়িতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কারো মুখে হাসি নেই। আরোহীকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে আপাতত সে গভীর নিদ্রামগ্ন। আরিয়ান চুপচাপ ফুপিমায়ের সামনে বসে আছে। কি বলে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। তবুও মিনমিন করে বলল,
> ফুপিমা ইব্রাহিম খান বিশ্বাস ভেঙেছে। আমার মনে হচ্ছে ভদ্রলোক এক মেয়েকে দেখিয়ে অন্য মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছেন। এখানে গভীর কোনো যড়যন্ত্র চলছে। আপনি কি সত্যি মেয়েকে নিজ চোখে দেখেছেন?

কমোলিনির কপালে ভাজ পড়লো। ইব্রাহিম খানের একটাই মেয়ে। তাছাড়া কন্যা পরিবর্তন করে লোকটার কি এমন লাভ হতে পারে? নিশ্চয়ই আরিয়ানের চোখের ভুল। মেয়ে সুন্দর অসুন্দর নিয়ে কিছু আসে যায় না। বিপুল অর্থ পাওয়া যাবে এই বিবাহের মাধ্যমে তাহলে মেয়ে নিয়ে কিসের অসুবিধা। হোক পরিবর্তন ক্ষতি কি? বিষয়টা ভেবে উনি উত্তর দিলেন,

> বউ কি দেখতে ভালো না? তোমার কি ওকে পছন্দ হচ্ছে না আরিয়ান? দেখো বাবা তোমার থেকে আমি কিছুই লুকিয়ে রাখিনি। আমার বহুদিনের শখ খামার বাড়ি তৈরী করবো সেখানে কাজের লোকদের বসতবাড়ি পযর্ন্ত গড়ে তুলবো।। মোটকথা ছোট একটা গ্রামের মতো। চৌধুরীদের বিপুল সম্পত্তি আছে মানছি কিন্তু সেখানে তোমার ভাগটা থাকতো না। তুমি আমার উপযুক্ত ছেলে,নাম প্রতিপত্তি বেশ আছে কিন্তু চৌধুরী পরিবারের অর্থের উপরে কোনো দখলিস্বত্ব রাখতে পারতে না। আমি চেয়েছি আমার ছেলেটার একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ হোক। মেয়ে যেমনই হোক তবুও মানিয়ে চলতে হবে। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। আরোহীর জন্য আমাকে তুমি ভুল বুঝতে পারো কিন্তু এই পরিবারের অতীত সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে। ওকে আমি বাংলাদেশ রাখতে চাইছি না। চাচার বাড়িতে পাঠিয়ে দিব। এখানে থাকলে মেয়েটা আমার প্রা*ণে বাঁচতে পারবে না। যাইহোক নিজের স্ত্রীর প্রতি কখনও অবহেলা করবে না।তোমার ফিরোজ ভাইজান এই মেয়েকে বিয়ের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছে এবং রেগে আছে।ইব্রাহিম খান রাজি হননি। তোমাকে উপযুক্ত ভেবেছেন বিধায় বিয়েটা হয়েছে।

কমোলিনি দীর্ঘ কথা শেষ করলো। ছেলেকে বোঝাতে হিমশিম অবস্থা। আরিয়ান মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। কথা শেষ হতেই উত্তর দিলো,

> ফুপিমা আপনাকে আমি বিশ্বাস করি কিন্তু ওরা যদি আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা করে আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলবো না। আমার কোনো অর্থ সম্পত্তি লাগবে না। আপনি আজকের মধ্যেই ইব্রাহিম খানকে বলে দিবেন উনার জমির কোনো প্রয়োজন নেই আমার। আমি নিজের দায়িত্ব অস্বীকার করছি না। আপনি জানেন আমি অকর্মা না। বউয়ের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা আমার আছে। প্রয়োজনে কঠোর পরিশ্রম করবো। প্লিজ ফুপিমা আমাকে আর ছোট করবেন না। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমার সম্মানের কথাটা ভাবুন একবার।

আরিয়ান শক্ত ধাচের মানুষ। কখনও চোখ থেকে পানি ঝরে না তবুও কথা বলতে বলতে ঝপ করে চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। মেয়েটার সাহস আর আচরণ দেখে রাগে দুঃখে ভেতরে ভেতরে ফুলে উঠেছে। অপমানজনক সেই আচরণের কথা কাউকে বলার মতো না। কতটা বেয়াদব হলে হবু বরকে ডিএনএ টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া যায়? আরিয়ান ভাবতে পারছে না।কমোলিনি চমকে উঠলো ছেলের মুখের দিকে চেয়ে। অতিরিক্ত কিছু করতে চাইলে হিতের বিপরীত হয়ে যাবে। এই ছেলের কাধে ভর করেই চৌধুরীদের বিশাল সম্পত্তি টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন। নয়তো কবে সব ধুলাবালিতে মিশে যেতো। শশুর শাশুড়ির বয়স হয়েছে। স্বামীর খোঁজ নেই। ভাশুর দেবর সব বিদেশের মাটিতে পড়ে আছে প্রতিমাসে বিপুল অর্থ সেখানে পাঠাতে হয়। এখানে থাকার মধ্যে নিজের যমজ ছেলেমেয়ে শশুর শাশুড়ি আর আরিয়ান। যদিও দেবরের এক ছেলে বছর পাঁচেক আগে দেশে ফিরেছে তার রাজনীতি করার শখ। দেশের ফিরেই জ্বালিয়ে মারছে। এই আ*পদটাকে বিদাই করা বেশ কঠিন। ইতিমধ্যে চৌধুরীদের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতিতে বেশ শক্ত একটা অবস্থান গড়ে ফেলেছে। তাছাড়া আরিয়ান ওকে সাহায্য করে। ছেলেটাকে চেনেনা মফস্বলের এমন লোক নেই। ভোটে দাঁড়িয়ে পড়লে অনায়াসে এমপির পদটা ছিনিয়ে নিয়ে পারবে। মা বাবা ছাড়া এতিম মানুষের মনে মানুষের জন্য ভালোবাসা একটু বেশিই থাকে। ছেলেটাও তেমন। নিজের কথা না ভেবে মানুষের উপকার করতে তার জুড়ি নেই। কমোলিনি মাঝেমাঝে আরিয়ানের উপরে বিরক্ত হয়ে উঠে। কিন্তু সাহস করতে পারেনা। সোনার ডিম পাড়া হাস যদি হাতছাড়া হয়ে যায়? এমন ভুল কেউ করবে না। তাই চুপচাপ থেকে উত্তর দিলেন,

> বাবা আমার, ফুপিমায়ের উপরে রাগ করোনা। তুমি আমার ছেলে তোমার ভবিষ্যতের দায়িত্ব আমার। কতদিন বেঁচে থাকি বলা যায়না। আমি তোমাকে সুখী দেখে ম*রতে চাই। তোমাকে বুঝি আমি। তাইতো বিয়ের পূর্বেই বলেছি সম্পত্তি যা কিছু মেয়ের নামে লিখে দিলেই চলবে। আমার বাবার জন্য তার ফুপিমা আছে। ইব্রাহিম খান নিজের সবটা ওই মেয়ের নামেই লিখেছে এটা নিয়ে ভাবতে হবে না।

আরিয়ান ছলছল চোখে ফুপি মায়ের দিকে চাইলো। বুকের উপর থেকে বিশাল একটা পাথর সরে গেছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো জীবন থাকতে ওই মেয়ের একটা কানাকড়িতেও হাত লাগাবে না। দাম্ভিক মেয়ে নিজেকে কি ভাবে সে? কথাগুলো ভেবে ও উঠে আসতে গিয়ে আবারও বসে পড়লো। কিছু একটা ভেবে ডাইনিং রুমের বিশাল ফটো ফ্রেমটার দিকে আঙুল উঁচু করে বললো,
> ফুপিমা ওই বাড়িতে গতকাল রাতে মেহের আপার মতো হুবহু একজনকে দেখেছি আমি। উম্মে দিলরুবা জামান খান মেয়েটার নাম। আপনি কি দেখেছেন ওকে?

কমোলিনি চমৎকার করে হাসলেন। ছবির দিকে চেয়ে উত্তর দিলেন,
> সব সময় এই ছবিটা চোখের সামনে দেখে তোমাদের চোখ খারাপ হচ্ছে বাবু।সেদিন ফিরোজ বাবা এসেও বলেছে মেহেরকে দেখেছে কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব বলো? কতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। বাদ দাও ।শুনো বিয়ে নিয়ে আর ভাবতে হবে না। নিজের কাজে ফিরে আসো। অষ্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নাও। মাস খানিকটা সময় আছে।।
আরিয়ান মাথা নাড়িয়ে উঠে আসলো। বিষয়টা মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না। রহস্য আছে সবটা ইব্রাহিম খান জানে। উনি নিশ্চয়ই বলতে পারবেন আসলে কাহিনী কি? আরিয়ান চুপচাপ নিজের কক্ষে ফিরে আসলো।
****************
নির্জন রাস্তা, নিজের জিপ নিয়ে বাড়িতে ফিরছে আরিয়ান। চৌধুরীদের বেশ কিছু কারখানা আছে। আরিয়ান কারখানাতে ছিল ইব্রাহিম খান ফোন করে খান বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। উনার কোন এক ফুপি শাশুড়ি নতুন জামাই দেখতে চেয়ে আবদার করেছেন। সেই আবদার রক্ষা করতেই আরিয়ানকে এই রাতে ছুটতে হচ্ছে। যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও রহস্যের সমাধান জানতে হলে যেতে হবে। রাত খুব একটা হয়নি। নয়টার কাছাকাছি। যদিও মফস্বলে রাত নয়টা মানে অনেক। আরিয়ান ব্রিজের কাছাকাছি এসে থমকে গেলো। ব্রিজের রেলিং ধরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গাড়ির লাইটের জন্য অন্ধকার আর নেই বেশ ভালো করে বোঝা যাচ্ছে।মেয়েটা পানির দিকে ঝুঁকে আছে। কোমর অবধি আঁকাবাঁকা চুল বাতাসে উড়ছে। আরিয়ান গাড়ি থামিয়ে উঁকি দিলো। লাইট অন রেখেই বেরিয়ে আসলো। একপা দুপা করে মেয়েটার কাছাকাছি এসে পায়ের দিকে চেয়ে ভ্রু কুচকে ফেলল। সেদিনের সেই দুখানা পা। নুপুর দেখে বুঝতে পারলো। মেয়েটা বুঝতে পেরেছে ওর পেছনে কেউ আছে কিন্তু ভুল করেও পেছনে ফিরছে না। আরিয়ান বেশ অবাক হচ্ছে এই মেয়ের এমন ব্যবহার দেখে। মফস্বলের মেয়েরা রাতের বেলা বাইরে প্রয়োজন ছাড়া চলাফেরা করেনা। এই মেয়ের কি ভয় ডর নেই? আরিয়ান মৃদু কণ্ঠে বলল,

> কে আপনি? এভাবে ভুতের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ভয় ডর নেই?

মেয়েটা উত্তর দিলো না। তবে শাড়ির আচলটা টেনে ঘোমটা দিয়ে নিলো। আরিয়ান চুপচাপ মেয়েটার গতিবিধি লক্ষ করছে।মেয়েটা ঘোমটা দেওয়া শেষে আস্তে করে পা ফেলে পালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলো কিন্তু পারলোনা। আরিয়ান খপ করে মেয়েটার ডান হাতের কব্জি নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে ধমক দিলো,

> পরিচয় বলুন নয়তো যেতে পারবেন না। কে আপনি? ওইদিন কক্ষে আপনি ছিলেন তাইনা? আমাকে বোকা বানাতে চাইছেন? চিনেন আমাকে?
আরিয়ানের ধমকে মেয়েটা চমকে উঠলো। নিজেকে ধাতস্থ করে ঘোমটার আড়াল থেকেই রিনরিনে কণ্ঠে বলল,

> ছেড়ে দিন আমি ব্যাথা পাচ্ছি। আমি বাধ্য না নিজের পরিচয় দিতে। রাতের বেলা অহরহ নর নারী চলাফেরা করে আপনি কি সকলের হাত ধরে তার পরিচয় জিঞ্জাসা করেন?

আরিয়ান হাতের মুঠো আলগা করে দিলো। নিজের উপরেই এখন রাগ হচ্ছে। মেয়েটা কি ওকে চরিত্রহীন মনে করছে? আরিয়ান শাহরিয়ার কি এতোটা সস্তা যে সকলের হাত ধরে পরিচয় জানতে চাইবে? কথাটা ভেবে ও রাগ সামলাতে পারলোনা। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,

> সরি আমারই ভুল। রাতে কোন ধরণের মেয়েরা চলাফেরা করে খানিকটা ভুলে গিয়েছিলাম। গোসলের প্রয়োজন।

আরিয়ান ইচ্ছে করেই বাজে ইঙ্গিত দিলো। অপমান করে পার পাবে?ছেড়ে দেয়ার মানুষ না আরিয়ান শাহরিয়ার। ওর এহেন কথায় মেয়েটা থমকে গেলো। দ্রুত পেছনে ফিরে খানিকটা ঘোমটা উঠিয়ে কোমল ওষ্ঠদ্বয় নাড়িয়ে উত্তর দিলো,
> উত্তর তোল রইলো। কোনো এক চন্দ্র কিরণের রাতে ঠিক এখানে, এই আকাশ নদী আর চন্দ্রকে সাক্ষী রেখে আমি উত্তর দিব। আমি যখন মুখ খুলবে চৌধুরী পরিবারের ধ্বং*স অনিবার্য হয়ে পড়বে। মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।

মেয়েটা কথা শেষ করে অপেক্ষা করলোনা। দৌড়ে গেলো। সামনে একটা জিপ দাঁড়িয়ে আছে এতোক্ষন আরিয়ানের চোখে পড়েনি। মেয়েটা গাড়িতে উঠতেই গাড়ি ছেড়ে দিলো। আরিয়ান এখনো চুপচাপ ঠাই দাড়িয়ে আছে। এই মেয়ের চৌধুরীদের উপরে এতোটা রাগ কেনো বুঝতে পারছে না। কথার কি তেজ। আরিয়ান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে বসলো। শশুর বাড়িতে যাচ্ছে কিন্তু মিষ্টি আনা হয়নি। ফুপি মাকে ফোন করে বলেছিলো ওবাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়ে দিতে।
*****
ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক।খান বাড়ির পেছনে ছোট একটা ফুলের বাগান আছে। সেখানেই ফিসফিস করে আওয়াজ করে কেউ ডেকে উঠলো,

> জান এখানে আছিস?
দুবার থেকে তিনবার ডাকতেই উত্তর আসলো,
> নীরু আপা আমি এখানে।
নিহারিকারকে সকলে নিরু বলেই ডাকে। ইব্রাহিম খানের চাচাতো বোনের মেয়ে সে।ছোট থেকে এই বাড়িতে বড় হওয়া। বাবা নেই মা আছে। নীরু টানপায়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

> জান ঝামেলা হয়েছে। মামু আবারও আরিয়ান সাহেবকে বাড়িতে ডেকেছেন। যদি এখনই সবটা জানাজানি হয়ে যায় কি হবে? খুব টেনশন হচ্ছে। কি প্রয়োজন ছিল এসব করে রহস্য সৃষ্টি করার? আলেয়া তোমার হয়ে সেদিন কতগুলো কটু কথা শুনিয়ে দিলো। তুমিও চুপচাপ শুনলে।

জাহান মৃদু হাসলো। নরম খাসের উপরে শরীর এলিয়ে দিয়ে বলল,
> চিন্তা করোনা আপা। আব্বাজন ঠিক সামলে নিবেন।আমাকে দেখলে বুঝি কলোলিনি ম্যাম নিজের বাড়িতে উঠাতেন? খাল কেটে কুমির আনার মানুষ উনি না।
> কিন্তু আরিয়ান সাহেবকে কেন এমন অন্ধকারে রাখছ বলবে? মানুষটা জানেও না সেদিন কার সঙ্গে উনার কাবিন হয়েছে।
> সময় হলে ঠিক বুঝতে পারবে। এখন বলো ভদ্রলোক কি করছে?
> সকলের সঙ্গে আলাপ করছে হয়তো এখুনি নতুন বউয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। কি করবো বলবে?
> চিন্তা করছো কেনো আমিতো আছি। চলো আলাপ সেরে আসি।
জাহান দ্রুত উঠে আসলো। মুখে দুষ্ট হাসি খেলা করছে। আবারও আরিয়ানকে চমকে দিবে ভেবে পেছনের গেট দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো। চটপট শাড়ি গহনা পরে রেডি হয়ে আতরের কৌটা থেকে আতরের গন্ধ নিয়ে বলল,
> নীরু আপা বাইরে গিয়ে উনাকে পাঠিয়ে দাও।

নীরু চুপচাপ বেরিয়ে আসলো ঠিক তখনই ভেতরে আসলো আলেয়া। মেয়েটার চোখে মুখে রাগ। গলা চড়িয়ে বলল,
> জান বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু। কমোলিনি ম্যাম মেয়ে দেখার দিন নীরু আপাকে দেখে বিয়ে ঠিক করেছেন। সেদিন হলুদে আমি তোর হয়ে আরিয়ানের সামনে গেছি। এসবের মানে কি বলবি? আমার কিন্তু ভালো লাগছে না। ঝামেলা হবে। শোন তোর যাওয়া লাগবে না। তোর হয়ে আমি দেখা করবো।

আলেয়ার ইব্রাহিম খানের স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়ে। মাঝে মাঝে এই বাড়িতে এসে থাকে। জাহানের বয়সি। মেয়েটার কথাবার্তা হয়না। মুখের উপরে অপমান করতে উস্তাদ। এই জন্যই সেদিন আলেয়াকে আরিয়ানের সামনে পাঠানো হয়েছিলো। কথাগুলো ভেবেই জাহান উত্তর দিলো,

> এবার থেকে কাউকে আর প্রয়োজন হবে না। সবটা আমি সামলাতে পারবো। শোন অহেতুক চিন্তা করিস না। তুই এখন যা। উনার আসার সময় হয়েছে।
আলেয়া ধপধপ করে পা ফেলে বেরিয়ে গেলো। জাহাজ ঘোমটা টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো ঠিক তখনই আরিয়ান ভেতরে প্রবেশ করলো। আশেপাশে তাকিয়ে যখন আয়নার দিকে চাইলো আবারও সেই মুখটা চোখে পড়লো। এবার চমকালো না। বরং খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,
> একজন মানুষের সঙ্গে আরেকজন মানুষের মিল থাকতেই পারে। মানছি চেহারার হুবহু মিল সেটাও কাকতলীয় কিন্তু এভাবে লুকোচুরির কি আছে বুঝলাম না? কি ষড়যন্ত্রের খেলাই মেতে উঠেছেন আপনি? আরিয়ান শাহরিয়ার বেঁচে থাকতে চৌধুরী পরিবারের উপরে কোনো আঘাত করতে আপনি পারবেন না। কি চলছে আপনার মনে? এই মুখ এই চেহারা মেহের আপার। সে ছিল ফুলের মতো পবিত্র আর উত্তম চরিত্রের। কিন্তু আপনি?

জাহান এবার সরাসরি পেছনে ফিরে চাইলো। ওষ্ঠে হাসি টেনে বলল,
> ষড়*যন্ত্র কিসের বলুন তো? স্ত্রীর উপরে দেখি আপনার একটুও ভরসা নেই। এতোটা অবি*শ্বাস যে আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? কথায় বলে মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। আপনার তেমনই অবস্থা। যাইহোক আপনার ফুপিমা কিন্তু জব্বর চতুর মহিলা। দেখুন কিভাবে রাজ্যসহ রাজকন্যাকে আপনার হাতে তুলে দিলেন। অবশ্য নিজের কন্যাকেও দিতে পারতেন। কিন্তু দিলেন না। আচ্ছা আরোহী আপা কেমন আছেন? এতোটা যন্ত্র*ণা না দিলেও পারতেন।

আরিয়ান চুপ থাকতে পারলোনা। ফুপি মায়ের সম্পর্কে খারাপ কথা শুনতেই জ্বলে উঠলো। হাত পা কাপছে। ওর এমন অবস্থা দেখে জাহান শব্দ করে হেসে উঠলো। দ্রুত গ্লাস উঠিয়ে এগিয়ে দিয়ে পূণরায় বলল,

> দুঃখিত আপনাকে রাগাতে চাইনি। আমি একটু বেশি কথা বলি। স্ত্রীর কক্ষে এসেছেন খানিকটা বসুন। আমার সম্পর্কে আপনি তো কিছুই জানেন না। হবু ব্যারিষ্টার আমি। আইনের উপরে আমার আবার ভীষণ ঝোঁক। ছুটিতে আছি খুব তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছি। তবে আবারও আসবো। তারপর আর কোথাও যাচ্ছি না। আপনার সঙ্গে চুটিয়ে সংসার করবো।
আরিয়ান চুপচাপ শুনছে। রাগ কিছুটা কমেছে কিন্তু পুরোপুরি না। কিছু বলা উচিত ভেবে বলল,

> এতো লুকোচুরি কেনো? ফুপিমা কি আপনাকে দেখেছেন?
> না। সেদিন নীরু আপাকে দেখে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। আপাকে দেখেই বিয়ের দিন পাকা করছেন।
> এসব করে কি লাভ?
> অনেক লাভ। কতটা লাভ আপনি কল্পনা করতেও পারবেন না। আপনার হাত ধরে আমি চৌধুরী পরিবারে গিয়ে উঠবো। একে একে সবাইকে রাস্তায় নামিয়ে আনবো। কাউকে ছাড়বো না।
জাহানের মুখটা কঠিন হয়ে উঠলো। আরিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,
> আপনার ইচ্ছে কখনও পূরণ হবে হচ্ছে না। আমি হতে দিচ্ছি না। চৌধুরী বাড়ির ছায়াও আপনি কখনও মাড়াতে পারবেন না। যাচ্ছি হয়তো এটাই আমাদের শেষ দেখা। ভালো থাকবেন।

আরিয়ান দ্রুতগতিতে বেরিয়ে আসলো। এই বাড়িতে ভুল করেও আর পা ফেলবেনা। ফুপিমা ছোট থেকে ওকে মাতৃস্নেহে বড় করেছে। বিশাল ঋণের বোঝা আর বৃদ্ধি করতে পারবে না। জীবন দিয়ে সবাইকে রক্ষা করবে। তার জন্য প্রয়োজনে স্ত্রীর থেকে আজীবন দূরে থাকলেও আফসোস করবে না।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে