#চন্দ্রকণার_রাহা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০২
নিত্তিকা ফোন হাতে নিয়ে ইউটিউবে গানটা ছেড়েছে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে শাহিয়ান বলে উঠলো,
“এই মেয়ে এতো রাতে এগুলো কিহ?”
নিত্তিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“কানা নাকি আপনি?দেখতে পারছেন না কি করছি!”
শাহিয়ানের আর বুঝতে বাকি নেই নিত্তিকা ওকে বিরক্ত করার জন্যই এই কাজ করছে। শাহিয়ার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তুমি বন্ধ করবে নাকি বলো!”
নিত্তিকা দৃঢ় কন্ঠে বলল,
“আমি বন্ধ করবো না।”
শাহিয়ান তীক্ষ্ণ চোখে নিত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ঠিক তো!”
নিত্তিকা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“বললামই তো করবো না।”
শাহিয়ান হুট করেই নিত্তিকার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে পাশের সোফায় ছুড়ে দিলো। নিত্তিকা নাক ফুলিয়ে বলল,
“এটা আপনি কি করলেন?”
শাহিয়ান উত্তর দিলো না। যেন কানে কোনো কথাই যায়নি। শাহিয়ানের এমন ভাব দেখে নিত্তিকা ফুস ফুস করতে করতে উঠে বসে বলল,
“আমার ফোন কেন ছুড়লেন এখন এনে দিন।”
শাহিয়ান হুট করেই উঠে নিত্তিকাকে ধাক্কা দিয়ে দুইহাত বালিশে চেপে ধরে বলল,
“এতরাতে বিরক্ত করার শাস্তি না পেয়ে তুমি তো শান্ত হচ্ছোনা দেখি।”
শাহিয়ান কাছাকাছি থাকায় নিত্তিকার সব তেজ যেন উড়ে গেল। কপালে ভাঁজ পরলো। ঘাড় ঘুরিয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ে গেল। আবারো শাহিয়ানের লালচে চোখের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“আমাকে ছেড়ে দিন।”
শাহিয়ান বাঁকা হেসে বলল,
“নাতো সোনাময়না, আমি চেয়েছিলাম তোমাকে আজকের মতো ছেড়ে দিবো। কিন্তু না আজকে সব করে ফেলি কি বলো!”
নিত্তিকা ঢোক গিলে বলল,
“আপনাকে বাপ্পারাজের দিব্বি কেটে বলছি আমি ননীর মতো কাজ করবো না। মানে আপনি ঘুমান আমি আর কিছু করবো না।”
শাহিয়ান কপালে ভাঁজ ফেললো নিত্তিকা আজগুবি কথায়। পরক্ষনেই আবারো বাঁকা হেসে বলল,
“আজ তোমার বাপ্পারাজও তোমাকে বাঁচাতে পারবেনা।”
নিত্তিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আপনি ঘুমান আপনার মতো। এতো বিরক্তবোধ করলে বিয়ে কেন করেছেন আমায়! আমি কি করতে বলেছিলাম আপনাকে!”
শাহিয়ান ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“আমার ঘুম নেই এখন।”
নিত্তিকা ভ্রুকুচকে বলল,
“কেবলি না ঘুম ধরেছে বলে চিল্লাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই ঘুম চলে গেল। বাহ আজব মানুষ তো আপনি। আপনি তো দেখি গিরগিটির থেকেও তাড়াতাড়ি রঙ থুক্কু কথা পাল্টান।”
শাহিয়ান চোখ ছোট ছোট করে নিত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার ঘুম না আসার কারণ যেহেতু তুমি তখন তুমি এর হিসাব দিবে।”
নিত্তিকা মাথা দুলিয়ে বলল,
“এটার হিসাব তো মিলল না আপনার চোখ আপনার ঘুম। কেন চোখ বুজে ঘুম আসছেনা সেটা অবশ্যই আপনার দোষ।”
শাহিয়ান আর কথা না বলে হুট করেই নিত্তিকা ঠোঁটে চুমু খেল। এতে যেন নিত্তিকার চোখ বেড়িয়ে আসার মতো অবস্থা। নিত্তিকার হৃদস্পন্দন যেন থেমে গেছে। হাত পা যেন নাড়াতে ভুলে গেছে। মস্তিস্ক যেন তার কার্মকান্ড থামিয়ে ফেলেছে। কিছুক্ষন আগেই ঠোঁটে পাওয়া আলতো স্পর্শ যেন ঝড় তুলেছে মনে। সেই ঝড়কে থামানো কথা বললেও কি না বললেও কি সে ঝড় আর থামবে না।
নিত্তিকাকে এমন গোলগোল চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাহিয়ান বলল,
“এরপর থেকে আমার সাথে লাগতে আসলে শাস্তি আরো কঠিন হবে বলে দিলাম সুইটহার্ট। আর তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো তুমি আমার তিন কবুল করা বউ। তাই মাত্রা অতিরিক্ত শাস্তি দিলেও কিছু যাবে আসবে না।”
শাহিয়ানের কথায় নিত্তিকার যেন হুশ ফিরলো। সে কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,
“আপনি এটা কি করলেন?”
শাহিয়ান নিজের বালিশে আরাম করে শুয়ে বলল,
“কিছুই করিনি সব তো বাকিই সুইটহার্ট।”
শাহিয়ানের কথায় নিত্তিকার গা জ্বলছে। কিছু বলতে নিবে তার আগেই শাহিয়ান নিত্তিকা টেনে নিজের কাছে আনে। নিত্তিকা প্রথমে থমকালেও পরবর্তীতে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগে। শাহিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“আর একটু নড়াচড়া করলে খবর করে দিবো বলে দিলাম।”
নিত্তিকা চুপ হয়ে গেল। নিত্তিকাকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরেই চোখ বুজলো শাহিয়ান। নিত্তিকা বেশ কিছুক্ষণ যাবত শাহিয়ানের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ঘুমিয়ে গেল। নিত্তিকার ভারী নিশ্বাস অনুভব হতেই মুচকি হাসলো শাহিয়ান।
পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজ মনেই বলল,
“জীবনটা রহস্যে ঘিরে থাকা বাগিচার মতো। রহস্য উদঘাটন করলেই সবটা এলোমেলো হয়ে যায়।”
———————
পান চিবোতে চিবোতে রফিক বলে উঠলো,
“আপনি মাইয়া মানুষ হয়ে এই কাম করতে আসছেন?”
সামনে থাকা মেয়েটা বাইক থেকে নেমে হেলমেট খুলতে খুলতে বলল,
“চাচা আপনি হয়তো মেয়েদের এখনো চিনেননি। মেয়েরা চাইলে সব করতে পারে।”
মেয়েটার কথা শুনে রফিক হেসে বলল,
“মুখের কথায় কেমন বিশ্বাস করি আফা!”
মেয়েটা রহস্যময় হাসি দিয়ে হুট করে জিন্সের পকেট থেকে গান বের করে দূরে গাছে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একব্যক্তিকে না দেখেই সুট করে দিলো। রফিক থমকে গেল।
মেয়েটা হেসে বলল,
“এটুকুতে এই অবস্থা হলে হবে রফিক সাহেব। আর কথা বাড়িয়ে কাজে মন দিন। আর গুপ্তচরের মুখ থেকে কথা বের করুন।”
রফিক মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো। মেয়েটা বাঁকা হেসে সামনে বাসাটায় ঢুকে পড়লো।
—————————-
সকালের রোদ পর্দা ভেদ করে চোখে আসতেই পিটপিট করে চোখ খুললো নিত্তিকা। নিজেকে অন্য এক জায়গায় দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠলো নিত্তিকা। পরক্ষনেই মনে পড়লো কালই তো তার বিয়ে হলো। এপাশ ওপাশ তাকিয়ে শাহিয়ানকে কোথাও পেল না। শাহিয়ানকে দেখতে না পেয়ে সস্থির নিশ্বাস ফেলল নিত্তিকা। বিছানা থেকে উঠে সোফার দিকে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলো। ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজে। নিত্তিকা মাথা চুলকিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো সোফায় শাহিয়ানের বোন সায়রা বসে আছে। নিত্তিকা মুচকি হেসে বলল,
“আরে সায়রা যে কি অবস্থা তোমার!”
সায়রা ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,
“আচ্ছা আপি আমি এটা ভেবে পাচ্ছিনা বিয়ের পরের দিন মানুষ অফিসে গিয়ে কি করে?”
সায়রা কথা বুঝতে না পেরে কপালে ভাঁজ ফেলে নিত্তিকা বলল,
“মানে!”
সায়রা উঠে এসে নিত্তিকার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আরে তোমার বর তো সকাল সকাল অফিসে চলে গেল।”
নিত্তিকা কুচকে যাওয়া কপাল স্বাভাবিক করে বলল,
“ওও তাই বলো। আমি ভাবলাম কি না কি!”
সায়রা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
“আরে আপি তুমি বুঝতে পারছোনা। নিজের বরকে আঁচলে বেঁধে রাখতে। তাছাড়া সে ভেন্টিলেটার দিয়ে পালায়।”
নিত্তিকা চুলমুছে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বলল,
“আরে বাদ দেও তো তোমার ভাইয়ের কথা। আমি দেড়ি করে উঠে ফেলেছি তাই না। কি ভাববে সবাই, এমনিতেই বিয়েটা যেভাবে হলো।”
সায়রা নিত্তিকা কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আরে আপি কিছুই হয়নি আম্মু তো নাস্তা বানানো শুরু করেছে একটু আগে। আর মেহমানও কেউ নেই। চিল আপি।”
#চলবে