চন্দ্রকণার রাহা পর্ব-০১

0
30

#চন্দ্রকণার_রাহা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃসূচনা_পর্ব

বাসর ঘরে ঢুকতেই শাহিয়ানের গলায় ছুরি ধরলো নিত্তিকা। শাহিয়ান থমকে গেল। কি হচ্ছে বুঝতে পারছেনা সে। তার সদ্য বিয়ে করা বউ নিত্তিকা। কিন্তু মেয়েটা এতো লম্বা কি করে হলো। এ কথা ভাবতেই নিত্তিকা বলে উঠলো,
“একদম নড়বেন না। নড়লেই গলা কর্তন করে দিবো বলে দিলাম।”

শাহিয়ান আড়চোখে নিচে তাকিয়ে দেখলো একটা ছোট টুলের উপর ভারী লাল টকটকে জামদানি শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। শাহিয়ানের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো।

মুহুর্তের মধ্যেই নিত্তিকার হাত ঘুরিয়ে ছুরিটা নিত্তিকার গলায় ঠেকিয়ে বলল,
“সমস্যা কি?”

নিত্তিকা চোখ ছোট ছোট করে একবার গলা আর একবার হাতের দিকে তাকিয়ে নাকমুখ কুচকে বলল,
“আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে ধরার!”

শাহিয়ান নিত্তিকার হাতের ছুরি কেড়ে নিয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে ধীর পায়ে ভাবলেশহীন ভাবে এগিয়ে যায়। নিত্তিকা বেশ বিরক্ত হলো শাহিয়ানের আচরণে। ভারী শাড়ি গহনা নিয়ে টুল থেকে নেমে কোমরে হাত রেখে বলল,
“আমি এই বিয়ে মানি না। আর আপনার বউ পালিয়েছে বলে আপনাকে আমার গলায় ঝুলে যেতে হবে। আপু পালিয়েছে তো আপনিও পালিয়ে যেতেন।”

শাহিয়ান বিছানায় বসে কপাল কুচকে নিত্তিকার দিকে তাকাতেই নিত্তিকা আবারো বলে উঠলো,
“আমি না হয় বাবার কথায় রাজি হয়েছি। তাছাড়া উপায় ছিলনা। আর আপনি কি শালি বানাতে গিয়ে বউ বানিয়ে আনলেন। ছেহ।”

শাহিয়ান কটমট করতে করতে বলল,
“চুপ একদম চুপ আর একটা কথা শুনলে..!”

নিত্তিকা শাহিয়ানের কাছে এসে আঙুল তুলে বলল,
“দেখেন আমি এই বিয়ে মানিনা। সো বউয়ের মতো ধমকে আমি চুপ যাবো না। আমি…!”

নিত্তিকা কিছু বলার আগেই শাহিয়ান ওর হাত ধরে একটানে নিত্তিকাকে বিছানায় ফেলে দিলো। নিত্তিকার সেই ছুরি নিত্তিকার গলায় ধরে বলল,
“তিন কবুল বলে বিয়ে করেছি তোকে। কি করার কথা ছিলো কি হয়েছিস সেটা আমার দেখার বিষয় নেই। চুপচাপ থাক তাছাড়া এই ছুরি তোর গলায় বসে দিবো।”

শাহিয়ানের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকালো নিত্তিকা। শাহিয়ানের উষ্ণ নিশ্বাস এসে বারি খাচ্ছে নিত্তিকার চোখমুখে। বাম হাতটা এমন জোরে ধরেছে যে পড়নের চুড়িগুলো মনে হয় ভেঙে গেছে। গলায় একটু চাপ দেওয়ায় ব্যথাও পাচ্ছে মেয়েটা। নিত্তিকার দম বন্ধ হয়ে আছে। ভাঙা গলায় বলল,
“ছাড়ুন আমাকে। লাগছে আমার।”

শাহিয়ান নিত্তিকারকে আরো চেপে ধরে বলল,
“যা হয়েছে আমার ইচ্ছেতে হয়েছে আর যা হবে তা আমার ইচ্ছাতেই হবে।”

বলেই নিত্তিকাকে ঝাড়া দিয়ে ছুরিটা নিয়ে রুম থেকে হনহনিয়ে বেড়িয়ে গেল শাহিয়ান। এদিকে অবাক হয়ে নিত্তিকা তাকিয়ে রইলো শাহিয়ানের যাওয়ার দিকে। লোকটা কি বলে গেল এসব? মাথায় ঢুকলো না নিত্তিকার। বাম হাতটা চোখের সামনে এনে দেখলো হাতটা একদম লাল হয়ে আছে। নিত্তিকা আস্তে আস্তে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের চুড়িগুলো খুলতে লাগলো। নিজ মনেই বিরবির করতে করতে বলল,
“ব্যাটা বদমাস আমার নরম, সুন্দর হাতটার কি অবস্থা করেছে। আমি দেখে নিবো ওই ব্যাটারে। আমার সাথে লাগা তাই না। তোর জীবন যদি আমি আলুর দম না বানাইছি তাহলে আমার নামও নিত্তিকা আহমেদ না।”

গায়ের গহনা গুলো ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে চুল খুলতে লাগলো নিত্তিকা। এপাশে ওপাশে তাকাতেই শাহিয়ানের একটা ছবি চোখে পড়লো নিত্তিকার। নিত্তিকা কি যেন ভেবে হাসলো।

————-

শাহিয়ান নিজের রুম থেকে বের হয়ে সোজা চলে এলো ছাদে। শীতের রাত হওয়ায় চারপাশে নিরবতা বিরাজ করছে। শীতল বাতাস এসে আছড়ে পড়ছে শাহিয়ানের গায়ে। রাগের তোপে গা কাঁপছে এখনো। হনহন পায়ে ছাদের কাণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তাকালো খোলা আকাশের দিকে। পায়জামার পকেট হাতরে সিগারেট আর লাইটার বের করে একটা সিগারেট ধরালো। মনের সুখে সিগারেট টানতে লাগলো।

বেশ কিছুসময় পর রাগে তোপ কমতেই ঠান্ডা লাগতে শুরু করেছে। গায়ে গরম কাপড় না থাকায় ঠান্ডা হয়ে আসছে গা, হাত, পা। তবুও একই রকমভাবে দাঁড়িয়ে রইলো শাহিয়ান। তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে নিজ মনেই বিড়বিড় করতে লাগলো।

তার বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো হারিয়ে যেতে লাগলো অজানা গন্তব্যে।

সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ছুরির দিকে তাকালো। ছুরিটা বেশি একটা ধারালো না। হয় তো একটু চামড়া ছিলে যাবে এর আঘাতে। আর বোকা মেয়েটা নাকি এই ছুরি দিয়ে তার কর্তণ করবে। ভেবেই হাসলো শাহিয়ান। আবারো মুখে রাগী ভাব ফুটে উঠলো মুহূর্তেই। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“আমার সাথে লাগতে আসা মানুষ কখনোই সুখে থাকতে পারেনা। একদিন তো আমার সামনে তোকে পড়তেই হবে। জাস্ট ওয়েট ওয়াচ বেইবি।”

বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো।

———–

নিত্তিকা একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হলো ওয়াশরুম থেকে। চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বাসায় পড়ে থাকার একটা কুর্তি আর প্লাজু পরেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত একটা বিশ। নিত্তিকা একপলক তাকালো ফুলে সাজানো খাটটার দিকে। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আপু আজ এই জায়গায় তোর থাকার কথা ছিলো। এটা তুই কি করে গেলি! আমি কখনোই তোকে ক্ষমা করতে পারবো না। কখনো না।”

নিত্তিকা পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে ফুলগুলো সরিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করতেই হুট করে চোখের সামনে শাহিয়ানের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা ভেসে উঠতেই ধপ করে চোখ খুলল নিত্তিকা। চোখ বড় বড় করে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলল,
“ব্যাটা তো দেখি বহুত বদমাস। চোখ বুজেও তো দেখছি শান্তি নেই।”

নিত্তিকার কথার মাঝেই দরজায় খট করে শব্দ হলো। নিত্তিকা চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। শাহিয়ান রুমের ভিতরে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুমের দরজা লাগাতেই নিত্তিকা দপ করে চোখ খুলে ফেলল। পায়ের কাছে থাকা কম্বল দিয়ে গায়ে জড়িয়ে চোখ বুজে আবারো শুয়ে পড়লো। না এখন তার ঘুমানো দরকার। কাল সকালে এই বদজাত ব্যাটাকে সে দেখে নিবে। তাকে বিয়ে করেছে না। মজা তো বুঝিয়েই ছাড়বে।

———–

শাহিয়ান লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে তোয়ালে পড়েই বের হলো ওয়াশরুম থেকে। এমনভাব করছে যেন সে ব্যতীত এই রুমে আর কেউ নেই। কাবার্ট থেকে সাদা রঙের ফুলহাতা গেঞ্জি আর টাউজার বের করে পড়ে নিলো। ডিম লাইটের আলোতে সবটাই স্পষ্ট শাহিয়ানের কাছে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আড়চোখে তাকালো বিছানায় কম্বল গায়ে জড়িয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা নিত্তিকার দিকে। মুহুর্তেই চোখ সরিয়ে আবারো মন দিলো চুল মোছায়।

শাহিয়ান বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো নিত্তিকা একসাইড করেই শুয়েছে তবে মাঝে একটা কোলবালিশ দেওয়া। শাহিয়ান তীক্ষ্ণচোখ সেদিকে তাকিয়ে থেকে নিজ মনে কি যেন বিড়বিড় করলো। এক্সট্রা একটা কম্বল নিয়ে অন্যপাশ হয়ে শাহিয়ানও শুয়ে পড়লো। বিছানায় শুতেই চোখে বুজে ফেলল শাহিয়ান।

চোখ বুজতেই কানের কাছে ঝাঁ ঝাঁ করে বেজে উঠলো,
~~ছি ছি ছি রে ননী ছি
ছি-ছি ছি রে ননী ছিরে ছিরে ছি,
ছি ছি ছি রে ননী ছি
ছি-ছি ছি রে ননী ছিরে ছিরে ছি।

সরতে দিনর সান হেইবা-কাজে ফজল নেই রেলু
সরতে দিনর সান হেইবা-কাজে গজল নেই রেলু,
বনজারনী মা’র পাখে যাই নিয়ম করি রেলু,
গলাগলা যাক তোর হেলি বলি কেতে কথা কহি রেলু
মুই গাঁ যাই করি আসলা বেলে
কেন্তা পাছরি দেলু রে ননী ছি ছি ছি,
ছি-ছি ছি রে ননী ছি
ছি ছি ছি রে ননী ছিরে ছিরে ছি~~

গান শুনেই চোখ কপালে উঠলো শাহিয়ানের। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে শাহিয়ান পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো

#চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে