চড়ুই নীড়ে বসবাস পর্ব-০৮

0
204

#চড়ুই_নীড়ে_বসবাস
#আলো_রহমান(ফারজানা আলো)
#পর্ব:৮
.
বিন্তু এক কাপ চা হাতে দোতলার বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছে। বহুদিন পরে রুনি বাড়িতে এসেছে বলে বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব ভাব এসেছে। বাড়ির সবাই নিজেদের মতো ছোটাছুটি করতে ব্যস্ত। সকাল থেকে বাড়িতে নানা পদের রান্নাবান্না হচ্ছে। খায়রুল সাহেব সকালবেলা নিজে বাজারে গিয়েছেন। বিশাল সাইজের একটা বোয়াল মাছ এনেছেন। উঠোনে বসে মহা উৎসাহে সেই মাছ কাটছে অমিত। তাকে কিছুতেই বাড়ির বাইরের একজন বলে একপাশে সরিয়ে রাখার উপায় নাই। নিজে নিজেই বাড়ির কিছু কাজের দায়িত্ব সে নিয়ে ফেলেছে। সকালবেলা যখন খায়রুল সাহেব বাজারের উদ্দেশ্যে বেরোচ্ছিলেন, তখন সেও সেজেগুজে সাথে বেরিয়ে পরেছে। বাজার থেকে ফিরে বোয়াল মাছ কাটতে বসে পরেছে। বাড়ির কাজের মেয়েটাকে গম্ভীর স্বরে বলেছে, রান্নাবান্নায় মন দাও। মাছ কাটা আমি সামলে নিচ্ছি। বিন্তু অবাক হয়ে সব দেখছে। কেমন নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছে মানুষটা! অথচ তার এখন বিষম চিন্তায় থাকার কথা। খায়রুল সাহেব তাকে এক মাস সময় দিয়েছে। এই এক মাসের মধ্যেই তাকে একটা রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই সে শিরিনকে বিয়ে করতে পারবে। তবে কাজ খোঁজা নিয়ে অমিতের কোনো উদ্যোগ এখনো কারোর চোখে পরে নি। একটু আগে বিন্তু অমিতকে জিজ্ঞেস করেছে,
“অমিত ভাই, আপনার কি দুশ্চিন্তা হচ্ছে না?”
অমিত অমায়িক হেসে উত্তর দিয়েছে,
“দুশ্চিন্তা করে জীবনে কখনো কারোর লাভ হয় নি, বিন্তু। হেসেখেলে দিন কাটানোই জীবনের নিয়ম। এই যে তুমি সবসময় মনমরা হয়ে ঘুরে বেড়াও, এতে তোমার ছাড়া আর কারোর ক্ষতি হচ্ছে না। দুঃখ কিন্তু তোমার চেয়ে আমার বেশি। মা বাবা নেই, মাথার উপরে ছাদ নেই, কাল কি করবো তাও জানি না। তোমার কিন্তু এই সবকিছুই আছে। জীবনে মেনে নেওয়া হলো ভালো থাকার উপায়।”
বিন্তু হকচকিয়ে গিয়েছে। অমিত ভুল বলে নি। অমিতের কথা শোনার পরে সে আজ বহুদিন নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়েছে। চোখে কাজল পরেছে। এক কাপ চা বানিয়েছে। মামার কাছে গিয়ে নতুন চশমা চেয়েছে। সে আবিষ্কার করেছে, কাজগুলো যত কঠিন বলে মনে হতো ততটা আসলে নয়।
অন্তু দৌড়ে দোতলায় এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“আপা, দুলাভাই এসেছে।”
বিন্তু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেন?”
“আমি তো জানি না, আপা। একটু পরে নাকি দুলাভাইয়ের বাড়ির লোকও আসবে।”
“আমাকে কেউ কিছু জানায় নি কেন?”
অন্তু ঠোঁট উল্টে বলল,
“বাড়ির কেউই জানতো না। উনারা নাকি একটু আগেই হুট করে ফোন করে বলেছেন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে আসবেন। সামনে সপ্তাহেই তোমার বিয়ে, আপা।”
বিন্তু কথা বলল না। অমিতের কথা শুনে সে ঠিক করেছে সে মানিয়ে নেওয়ার একটা চেষ্টা করে দেখবে। অন্তু তার হাত ঝাঁকিয়ে বলল,
“ও আপা! ছাদে যাও। দুলাভাই তোমার জন্য ওখানেই অপেক্ষা করছে।”
বিন্তু ধমক দিয়ে বলল,
“দুলাভাই দুলাভাই করবি না তো। বিরক্ত লাগে।”
বলেই ছাদের দিকে চলে গেল সে। যাওয়ার আগে চায়ের কাপটা অন্তুর হাতে ধরিয়ে দিলো। অন্তু মুখভার করে দাঁড়িয়ে রইলো। কেন যে ও ধমক খেলো, সেটা বুঝতে পারছে না।
হাবিব ছাদের এক পাশের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বিন্তু ধীরে ধীরে সেদিকে এগিয়ে গেল। ছাদে বেশ রোদ। আজ বৃষ্টি পরছে না। ছাদের একপাশে একটা ছাউনির মতো আছে। হাবিব সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। বিন্তু তাকে ঝাপসা দেখছে। একগুচ্ছ রঙ ছাড়া আর কিছুই সে দেখতে পাচ্ছে না। সে এগিয়ে গিয়ে নিচু গলায় বলল,
“আপনি হঠাৎ?”
হাবিব ঘুরে তাকালো না। দৃষ্টি আকাশের দিকে রেখে উত্তর দিলো,
“কেন? নিষেধ নাকি এখানে আসা?”
“আমি তেমনটা বলি নি।”
“তুমি বড় বেশি বাড়াবাড়ি করো। তাই তোমাকে বেঁধে ফেলতে এসেছি।”
বিন্তু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আপনি সবসময় এভাবে কেন কথা বলেন? আপনার কথার মধ্যে সবসময় অসম্মান লুকিয়ে থাকে। ব্যাপারটা আমার পছন্দ নয়।”
হাবিব হেসে উঠে বলল,
“সম্মান অসম্মান নিয়ে তুমি কথা বলছো? তোমার কোনো ধারণা আছে এসব নিয়ে? তুমি সেদিন যেভাবে চলে গেলে, সেটা কি আমাকে অপমান করা নয়? তোমার কি মনে হয় না যে তুমি ভুল করেছ?”
বিন্তু বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিলো,
“দেখুন, আমি তর্কে জড়াতে চাই না। আমাকে ছাদে কেন ডেকেছেন বলুন।”
হাবিব কোনোরকম সংকোচ ছাড়াই বলে ফেললো,
“একটু পরে আমার বাড়ির লোকেরা আসবে। তুমি তাদের সামনে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে।”
বিন্তু থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না সে। তার মনে হচ্ছে সে ক্রমশ একটা খাঁচায় জড়িয়ে পরছে। বিষয়টা নিয়ে কি কারোর সাথে কথা বলা দরকার? কিন্তু কার সাথে? অমিত ভাই? শিরিন আপা? রুনি আপা? নাকি পল্লব? বিন্তু ভেবে পেলো না। পল্লবের কথা মাথায় আসতেই বিন্তুর মনে হলো তাকে নিজের সব গল্প বলতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো।
উত্তর না পেয়ে হাবিব ঘুরে তাকালো। ঘুরে তাকিয়েই শব্দ করে হেসে উঠলো সে। বিন্তু ভ্রু কুঁচকে হাবিবের মুখ স্পষ্ট করতে চেষ্টা করলো। হাবিব বিন্তুর দিকে তাকিয়েই হাসছে। বিন্তু অস্ফুটে বলল,
“কি হয়েছে?”
হাবিব হাসি থামাতে পারলো না। বিন্তু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হাবিব কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল,
“তোমার চশমা কোথায়? চশমা পরো নি কেন?”
বিন্তু প্রায় অস্পষ্ট গলায় বলল,
“ভেঙে গেছে।”
হাবিব আরেক দফা হেসে উঠে বলল,
“হেসে ফেলার জন্য সরি। কিছু মনে করো না। কিন্তু চশমা ছাড়া তোমাকে একেবারে ভূতের মতো লাগছে।”
বিন্তুর হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এলো। ভীষণ রাগে তার চোখ ছলছল করে উঠলো। হাবিব এখনো হাসছে। বিন্তু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হাবিবের হাসি দেখলো সে। তারপর হিসহিসিয়ে বলল,
“আমাকে বিয়ে করলে এই ভূতের মতো চেহারা আপনাকে দেখতে হবে, মিস্টার। বউকে তো সবসময় আপনি চশমা পরিয়ে রাখতে পারবেন না।”
কথাটা বলেই বিন্তু দ্রুত পায়ে নিচে নেমে গেল। প্রায় ছুটে গিয়ে সে ঢুকলো তার মায়ের ঘরে।
.
সায়লা ঘরে বসে ফল কাটছেন। একটু পরেই মেয়ের হবু শ্বশুর বাড়ির লোক আসবে। অনেককিছু গোছাতে হবে তাকে। দোতলায় গিয়ে শর্মিলির রান্নাঘর থেকে কয়েকটা জিনিস পাঠাতে হবে। অন্তু উনার কাছে বসে ঘ্যানঘ্যান করছে। আজ তার এক বান্ধবীর জন্মদিন। বিকালে সেখানে দাওয়াত। রাতে খেয়ে তারপর বাসায় ফিরবে। সায়লা অন্তুর কথা কানেই তুলছেন না। এতটুকু মেয়েকে রাতের দাওয়াতে যেতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠছে না। উনি মনোযোগ দিয়ে কাঁচের পিরিচে ফল সাজাচ্ছেন। অন্তু মেঝেতে তার মায়ের পায়ের কাছে বসে আছে। সে আবদারের সুরে বলে উঠলো,
“ও মা! যাই, মা? এইতো কাছেই ওদের বাসা। যেতে দাও না, মা!”
সায়লা ধমক দিয়ে বললেন,
“আহ অন্তু! কাজ করতে দিবি না? কেন যন্ত্রণা করছিস?”
অন্তুর মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। সে মাথা নিচু করে বিরবির করে বলল,
“একদিনই তো যেতে চেয়েছি!”
এই সময় হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো বিন্তু। হনহন করে এসে অন্তুর পাশে বসে পরলো সে। নাক টানতে টানতে চোখ মুছছে সে। তার চোখমুখ লাল হয়ে আছে। সায়লা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালেন। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“তোদের দুই বোনের হয়েছেটা কি? জ্বালিয়ে মারলি আমাকে।”
বিন্তু কথা বলল না। সে বুঝতে পারছে যে তার কথা শোনার মতো সময় মায়ের নেই। অন্তু ফিসফিস করে বলল,
“আপা, কি হয়েছে? দুলাভাই তোমাকে বকেছে?”
বিন্তু এবারও কথা বলল না। নতুন একটা চশমা হাতে রুনি এলো। দরজা থেকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“বিন্তু, তোর নতুন চশমা এনেছি। বাবাকে বলে অমিতকে দিয়ে আনিয়েছি সকালেই। তোকে দেওয়া হয় নি তখন। নে, পরে নে।”
বিন্তু হাত বাড়িয়ে চশমা নিলো। রুনি পাশে বসে বলল,
“এরকম বোকামি কেউ করে? বাড়তি একটা চশমা বাড়িতে রাখতে হয় তো।”
বিন্তু উত্তর দিলো না। নড়লোও না। রুনি বিন্তুর থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি হয়েছে, বিন্তু? আমাকে বল।”
বিন্তু এবার কেঁদে উঠলো। রুনির হাত চেপে ধরে বলল,
“বড় আপা, আমি এই বিয়েটা করবো না। ওই লোকটা…”
বিন্তুর কথা শেষ হলো না। তার আগেই সায়লা চেঁচিয়ে উঠে বললেন,
“বিন্তু! এই সময় এসে এসব কি বলছিস তুই?”
রুনি বলে উঠলো,
“আহা! ফুপু, চিৎকার করো না। ওর কিছু বলার আছে। বলতে দাও।”
সে বিন্তুর মাথায় হাত রাখলো। বিন্তু নিচু গলায় বলল,
“ওই লোকটা সবসময় আমাকে অপমান করে, আপা। এই বিয়েটা করলে আমি মরেই যাব!”
বিন্তু কাঁদছে। রুনি জড়িয়ে ধরলো বিন্তুকে। কোমল গলায় বলল,
“আমি আছি, বিন্তু। কাঁদিস না। আমি দেখছি।”
সায়লা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। অন্তু পাশে বসে উশখুশ করছে। সবকিছুর ভিড়ে তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথাটাই শুধু চাপা পড়ে গেল।
____________________________________
হাবিবের বাড়ির লোকজন এসেছে। বাড়ির সকলে মিলেই তাদের আপ্যায়ন করছে। শুধু শর্মিলি এই ঘরে নেই। মাথাব্যথার অজুহাতে তিনি নিজের ঘরে শুয়ে আছেন। রুনি ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে হাবিবকে দেখছে। সে মাথা নিচু করে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে তার মতো সুশীল পুরুষ আর হয় না। হাবিবের বড় চাচী পান খাচ্ছেন। উনার হাতে একটা টিনের বাক্স। সেখান থেকেই কিছুক্ষণ পর পর পান বের করছেন উনি। হাবিবের বড় চাচা বললেন,
“খায়রুল সাহেব, আপনাদের বংশ দেখেই আমরা রাজি হয়েছিলাম। মেয়ে যে বংশেরই হোক। বড় তো হয়েছে আপনার ঘরে। সেই ভরসাতেই আমরা বিয়েটা দিচ্ছি।”
হাবিবের বড় চাচী সুর মেলালেন। পান চিবাতে চিবাতে বললেন,
“একদম তাই। কিন্তু বংশের ধরা বড় ব্যাপার। পরপর দুই দিন মেয়ে যা কেলেঙ্কারি করলো! আমাদের বাড়ির কোনো মেয়ে এরকমটা ভাবতে পর্যন্ত পারে না। আপনার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। কিন্তু ওই যে, রক্তের ধারা।”
সায়লা অপমানে মাথা নিচু করলেন। হাবিবের ফুপু বলে উঠলেন,
“আমরা বড় মনের মানুষ। শুধু আমরা বলেই এতকিছুর পরেও বিয়েটা দিচ্ছি৷ অন্যকেউ হলে কবেই বিয়েটা ভেঙে দিতো!”
খায়রুল সাহেব কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। তার আগেই রুনি কঠিন গলায় বলে উঠলো,
“মাফ করবেন! কিন্তু আপনারা বড় মনের মানুষ বলে এই বিয়েটা দিচ্ছেন না।”
সকলে হকচকিয়ে রুনির দিকে তাকালো। হাবিবের বড় চাচা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে খায়রুল সাহেবের দিকে তাকালেন। খায়রুল সাহেব হাসার চেষ্টা করে বললেন,
“ও আমার বড় মেয়ে।”
পাত্রের বড় চাচা মৃদু হেসে বললেন,
“তা মা, কেন আমরা দিচ্ছি এখানে বিয়ে?”
রুনি হেসে উত্তর দিলো,
“দেখুন, আমি সোজা কথা বলতে পছন্দ করি। সোজাসুজিই বলছি। এই বিয়ে দিচ্ছেন কারণ বিন্তুর বাবা নেই। মামাবাড়িতে বড় হয়েছে। নিজের কথা নিজে মুখ ফুটে বলতে শিখে নি কখনোই। শ্বশুর বাড়ি গিয়েও বিন্তু সেভাবে কোনো মতামত দিতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। আপনারা এরকম কাউকেই বউ হিসেবে চাইছেন। আর তাছাড়া, আপনাদের ছেলেকে দেখে যথেষ্ট বয়স হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এতদিনেও তার বিয়ে দিতে পারেন নি। হয়তো কোনো মেয়েই ওকে এতদিন পছন্দ করে নি। এতদিন পরে বিন্তুর সাথে বিয়ের কথাবার্তা এগিয়েছে। কারণ বিন্তুর নিজের পছন্দ বলার সুযোগ নেই। শেষমেশ একটা মেয়ে পেয়েছেন বলে আপনারা এই বিয়েটা ভাঙতে চাইছেন না, সে যতই বিন্তুর কিছু কাজকর্ম আপনাদের অপছন্দ হোক না কেন। ঠিক বলেছি?”
সকলে বজ্রাহতের ন্যায় তাকিয়ে রইলো। কেউ কোনো কথা বলল না। শুধু পাত্রের ফুপু বিরবির করে বললেন,
“আপনার বাড়ির সব মেয়েরাই কি এমন অদ্ভুত গোছের?”
__________________________________
সন্ধ্যা হয়েছে। বিন্তু নিজের ঘরে শুয়ে আছে। বিছানার আরেকপাশে বসে আছে শিরিন আর রুনি। শিরিন রুনির চুলে তেল মাখিয়ে দিচ্ছে। রুনি চোখ বন্ধ করে রেখেছে। বিন্তুর মন ভালো নেই। সামনে সপ্তাহে তার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। এখন ছোটখাটো ঘরোয়া অনুষ্ঠান করে বিয়েটা হবে। সামনের শীতে বড় করে অনুষ্ঠান হবে।
শিরিন বোনের মাথায় তেল ঘষতে ঘষতে হতাশ গলায় বলল,
“তোমার এতগুলো কথা শোনার পরেও ওরা বিয়ের দিন ঠিক করে ফেললো! কী আশ্চর্য!”
রুনি ক্লান্ত গলায় বলল,
“বাদ দে, শিরিন। ওদের কথা এখন ভালো লাগছে না। আমি পরে দেখছি।”
শিরিন অন্য কথা পাড়লো। হাসিমুখে বলল,
“আপা, তোমার একটা মেয়ে হয়েছে শুনেছিলাম। ওকে আনলে না কেন?”
রুনি নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিলো,
“প্রতিজ্ঞা করেছি মা বাবাকে ওর মুখ দেখাবো না।”
বিন্তু উঠে বসলো। মলিন গলায় বলল,
“এত রাগ! তুমি কি করে পারো, আপা? বাচ্চাটার বুঝি নানা নানির আদর দরকার নেই?”
“না, নেই।”
বিন্তু দমে গেল। শিরিন ভয়ে ভয়ে বলল,
“এভাবে রাগ করে থেকো না, আপা। সব ঠিকঠাক করে নাও।”
রুনি কথা বলল না। অন্তু এই সময় হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো। শিরিন সেদিকে তাকিয়ে বলল,
“কিরে? ছোটাছুটি কিসের?”
অন্তু এগিয়ে এলো। রুনির সামনে বসে বলল,
“বড় আপা, আমার একটা সমস্যার সমাধান করে দিতেই হবে। দাও না, বড় আপা!”
রুনি চোখ খুললো। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তুই একটা পুঁচকে মেয়ে। তোরও সমস্যা হচ্ছে বুঝি?”
অন্তু মলিন গলায় বলল,
“বড় সমস্যা, আপা। আমার বান্ধবীর জন্মদিন। একটু পরেই কেক কাটা হবে। এইতো একটুখানি দূরে। মা যেতে দিচ্ছে না।”
রুনি হেসে বলল,
“ফুপুকে রাজি করাতে হবে?”
অন্তু উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হু।”
রুনি বিছানা থেকে নামলো। বিন্তুর হাত ধরে বলল,
“ঠিক আছে। তুই রেডি হয়ে নে। বিন্তু তোকে নিয়ে যাবে। ফুপুকে আমি সামলাচ্ছি।”
.
#চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে