চড়ুই নীড়ে বসবাস পর্ব-০৬

0
64

#চড়ুই_নীড়ে_বসবাস
#আলো_রহমান(ফারজানা আলো)
#পর্ব:৬
.
হাইস্কুলের পাশ থেকে বিন্তু রিকশা নিয়েছে। রিকশা যাচ্ছে পুরানো রাজবাড়ির দিকে। রিকশা চলছে ভীষণ এলোমেলো গতিতে। প্রচন্ড বাতাসে সে ভালো করে চোখ খুলতে পারছে না। তার চুল উড়ে চোখেমুখে পরছে। রিকশাওয়ালা ক্রমাগত কিছু বলে চলেছে। বিন্তু কিছুই ভালো করে শুনতে পাচ্ছে না। সে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“হয় রিকশা ধীরে চালান, আর নয়তো মুখ বন্ধ রাখুন।”
রিকশা হুট করে থেমে গেল। প্রচন্ড গতিতে চলমান রিকশা হুট করে ব্রেক কষায় রিকশা প্রায় উল্টে যাচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত রিকশা না উল্টালেও, রিকশা থেকে পরে গেল বিন্তু। রাস্তার ধারে রাখা বালির স্তুপে পরায় গুরুতর জখম হলো না। কিন্তু চশমা ছিটকে গিয়ে পরলো রাস্তার ঠিক মাঝে। চুরমার হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে গেল চশমার কাঁচ। বিন্তু অস্ফুটে বলল,
“আমার চশমা!”
রিকশাওয়ালা মাঝবয়সী লোক। চেহারায় উন্মাদ একটা ভাব, চাল চলনে দারুণ অসভ্য। সে বলে উঠলো,
“গরিবরা কথা কইলেই চুপ করতে কন ক্যান?”
বিন্তু শান্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো। শাড়ি থেকে বালি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ব্যাগটা কুড়িয়ে নিলো। তার পায়ের জুতা জোড়া পরেছে রাস্তার আরেকদিকে। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে জুতা পরলো। খেয়াল করলো তার পায়ের চামড়া হালকাভাবে ছিলেছে, সেখানে রক্ত জমে আছে। বিন্তু ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,
“আপনি একজন অত্যন্ত অসভ্য এবং বাচাল লোক।”
কথা শেষ করে বিন্তু সামনে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। সে এখন আছে রাজবাড়ির পেছনের পুকুরের পাশে। আরেকটু এগিয়ে গেলেই সে তার কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে যাবে। রিকশাওয়ালা চিৎকার করে উঠলো,
“আমার ভাড়া না দিয়া কই যান?”
বিন্তু সেই কথা কানেও তুললো না। তার ঝাপসা দৃষ্টিতেই সে এগিয়ে চলল সামনের দিকে।
রাজবাড়ির আধভাঙা দালানের চারপাশে ঝাঁ চকচকে অনেক নতুন দালান। সেখান থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলেই রাজবাড়ির সাথে নদীর বাঁধানো ঘাট। বিন্তু সেখানে গিয়ে বসলো। সে চাইলে কফি শপ থেকে বেরিয়ে নদীর বাঁধ ধরে হেঁটে সোজা এখানে এসে বসতে পারতো। কিন্তু এতটাই রাগ হচ্ছিলো তার যে ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারছিল না কোথায় যাবে। ফলস্বরূপ হাইস্কুলের সামনে দিয়ে ঘুরে আসতে হলো। বিন্তু দীর্ঘশ্বাস ফেলে নদীর দিকে তাকালো। নদীর জল শান্ত। দূরে কোথায় যেন নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ। বিন্তু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সে কিছুই ভালো দেখতে পাচ্ছে না। এমনটাও হতে পারে যে নৌকাটা তার থেকে অল্পই দূরে, সে বুঝতে পারছে না। সে চিন্তায় পরলো। নতুন আরেকটা চশমা কিনতে হবে ভাবতেই অস্থির লাগছে। তার এভাবে চলে আসার খবর নিশ্চয়ই বাড়ি অব্দি পৌঁছাবে। এরপর কি আর তার চশমা নিয়ে ভাবার সময় থাকবে কারোর?
“আমি কি এখানে বসতে পারি?”
পুরুষালি কন্ঠে বিন্তু পিছনে ফিরে তাকালো। লম্বামতো একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। বিন্তু তার মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। সে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কে আপনি?”
উত্তর এলো,
“আমাকে চিনতে পারছেন না? সেদিন বৃষ্টির মধ্যে আপনার সাথে দেখা হয়েছিল। আপনার সাথে ডাকবাংলোর পাশের চায়ের দোকানে চা খেয়েছিলাম।”
বিন্তু চোখ বন্ধ করলো। তার চোখ ব্যথা করছে। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
“ওহ্! আপনিই সে ব্যক্তি যে প্রথম দেখায় আমার জীবন গল্প শুনতে চেয়েছিলেন।”
হাসির আওয়াজ এলো। হাসতে হাসতেই ভদ্রলোক বিন্তুর পাশে বসলেন। বিন্তু বিরক্তি নিয়ে বলল,
“হাসছেন কেন?”
“লজ্জিত হয়ে হেসেছি। মানুষ যখন লজ্জায় পরে, তখন সে বিব্রত ভঙ্গি আড়াল করতে হাসে।”
“জেনে উপকৃত হলাম। আমার কাছে কি চান?”
ভদ্রলোক ইতস্তত করে বললেন,
“আপনি বোধহয় রাগ করছেন। আপনার কাছে আমি কিছু চাই না। আমি এখানে কিছুক্ষণ বসবো বলে এসেছিলাম। আমার মন খারাপ থাকলে আমি এখানে আসি। আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল তাই কথা বললাম।”
বিন্তু চোখ মেললো। লোকটার দিকে তাকিয়ে তার মুখ দেখার চেষ্টা করলো। উনি বসেছেন বিন্তুর থেকে কম করে হলেও তিন হাত দূরে। বিন্তু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। ভদ্রলোক বললেন,
“সেদিন আপনি আমার উপরে বিরক্ত হয়েছিলেন। আমার ওভাবে আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাটা হয়তো ঠিক হয় নি। আমি ক্ষমা চাইছি।”
বিন্তু হেসে ফেলে বলল,
“আপনি যদি ভেবে থাকেন আজ আমি আপনাকে বলবো তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আমি এখনো পর্যন্ত আপনার চেহারাও দেখি নি।”
ভদ্রলোক এবার হতভম্ব গলায় বললেন,
“আপনি তো বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন!”
বিন্তু শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসির ধাক্কায় কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলো না। দেখতে না পেলেও বিন্তু বুঝতে পারছে ভদ্রলোক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছেন। বিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“জ্বি, তাকিয়ে থেকে দেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু তবুও দেখতে পাচ্ছি না।”
ভদ্রলোক ইতস্তত করলেন। আমতা আমতা করে বললেন,
“ইয়ে….কিছু মনে করবেন না। আপনি কি…আপনি কি অন্ধ?”
বিন্তু আবার হেসে উঠলো। এবারে সে হাসতেই হাসতেই বলল,
“না, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি অন্ধ নই। কিন্তু অর্ধ অন্ধ।”
“মানে?”
“মানে আমার চোখ জোড়া খারাপ। মোটা চশমা ছাড়া আমি দেখতে পাই না।”
ভদ্রলোক হঠাৎ মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললেন,
“ওহ্ হ্যাঁ! প্রথমদিন আপনার চোখে চশমা দেখেছিলাম। সেজন্যই আজ আপনাকে একটু অন্যরকম লাগছে। সেদিন কি ঝাপসা চশমার কারণে দেখতে পান নি?”
“জ্বি।”
“আজ চশমা পরেন নি যে?”
বিন্তু উদাসভাবে উত্তর দিলো,
“পরে গিয়েছিলাম। ভেঙে গেছে।”
“ও আচ্ছা।”
ভদ্রলোক চুপ করে গেলেন। বিন্তুও কথা বলল না। দুজনের দৃষ্টিই নদীর জলে। ইঞ্জিন নৌকার চলার শব্দ ক্ষীণভাবে এখনো শোনা যাচ্ছে। হঠাৎই আকাশ চিড়ে বিদ্যুৎ চমকালো। মেঘ গুড় গুড় করার আওয়াজে নীরবতা চটের বস্তার মতো চিড়ে গেল। বিন্তু দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো। ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনি ভয় পাচ্ছেন?”
বিন্তু মাথা নাড়িয়ে ছোট্ট করে বলল,
“উঁহু।”
“আপনি আবার আনমনা হয়ে পরেছেন। একটু আগে যখন হাসছিলেন, তখন আপনাকে ভালো দেখাচ্ছিল।”
বিন্তু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সত্যিই তো! কতদিন পরে সে এভাবে হাসলো! শেষ কবে প্রাণ খুলে হেসেছিল ভুলেই গেছে সে। মুচকি হেসে বলল,
“ধন্যবাদ। আপনি এখানে না এলে আমি হয়তো হাসতাম না।”
ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বললেন,
“স্বাগতম।”
বিন্তু স্বাভাবিক গলায় বলল,
“জানেন? আজ আমার ভীষণ মেজাজ খারাপ। মনও খারাপ। এক রিকশাওয়ালার অসভ্যতায় আমার চশমা ভেঙেছে। উনি এত বাজেভাবে চালাচ্ছিলেন যে আমি রিকশা থেকে পরে গেলাম। আর তারপর আমি উনাকে ভাড়া না দিয়েই চলে এসেছি। ভাড়া দিই নি বলে এখন খারাপ লাগছে। দেওয়া উচিত ছিল।”
“খারাপ লাগার কিছু নেই। সে আপনার ক্ষতি করেছে, আপনি তার ক্ষতি করেছেন। সমান সমান।”
বিন্তু বিস্মিত হলো। কত সহজে কথাটা বলে দিলো লোকটা! বিন্তু প্রশ্ন করলো,
“জীবনকে এত সহজভাবে নেওয়া যায়?”
ভদ্রলোক হেসে উত্তর দিলেন,
“উঁহু, সবসময় যায় না। কিন্তু কখনো কখনো নিতে হয়। নইলে জীবন কাটাবেন কি করে?”
বিন্তু উত্তর দিলো না। পাশের থামে হেলান দিয়ে ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বলল,
“আপনি কি কষ্ট থেকে মুক্তির উপায় জানেন?”
“না, জানি না। তবে কিছুক্ষণ আপনি অন্যের জীবনের গল শুনতে পারেন। মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকবে।”
“আপনি তো লেখক। অনেক গল্প জানেন। একটা শোনান না আমায়!”
“আপনি শুনতে চাইলে শুনাতে পারি।”
“শুনতে চাইছি।”
ভদ্রলোক কোনোরকম ভূমিকা না করেই বলতে শুরু করলেন,
“একটা ছেলে। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় এক ভয়াবহ সুন্দরীর প্রেমে পরলো। খুব ছেলেমানুষি প্রেম। বইয়ের ভেতর লুকিয়ে চিরকুট দেওয়া, ক্লাসে বসে চোখাচোখি করা। কলেজে পড়ার সময় বাড়ি থেকে মেয়েটার বিয়ে ঠিক হলো। মেয়েটা বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে গেল ছেলেটির বাড়িতে। ছেলের মা বাবা ভীষণ রেগে মেয়েকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে চাইলো। ছেলেটা বিদ্রোহ করলো। ঘোষণা করলো, এই মেয়ের অন্য কোথাও বিয়ে হলে সে বাড়ি ছাড়বে। শেষে তাই ছাড়লো। কিন্তু একা নয়, মেয়েটিকে নিয়েই। তারা সংসার পাতলো। ছেলেটা টুকটাক লেখালেখি করছিল। তাই করতে লাগলো। আর মেয়েটা বাচ্চাদের পড়াতে লাগলো। এভাবে খারাপ চলছিল না। বিয়ের দুই বছর পরে মেয়েটি সন্তানসম্ভবা হলো। খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা এলো। দুই বছর পরে তারা বিয়েটা মেনে নিলো। তার বড়লোক বাবা ছেলেটিকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে চাইলো। ছেলেটা প্রত্যাখ্যান করলো। খান বংশের ছেলে সে। শ্বশুরের তদবিরে চাকরি সে কখনো নিতে পারে? সে লেখালেখিতেই মনোযোগ দিলো। দিন নেই রাত নেই, শুধু লিখতে লাগলো। লিখতে লিখতে স্ত্রী সন্তানের খোঁজ নিতেও ভুলে গেল। একদিন তাদের পুত্র সন্তান এই পৃথিবীতে এলো। সন্তানের জন্ম হলো এক দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে। চিকিৎসার দরকার পরলো। ছেলেটির শ্বশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাইলেন। ছেলেটি ভীষণ অহংকারে তা ফিরিয়ে দিলো। ছেলেটির স্ত্রী তার পায়ে পরে গেল। কিন্তু তবুও ছেলেটি রাজি হলো না। বাচ্চাটির মৃত্যু হলো।”
ভদ্রলোক থামলেন। বিন্তু থমথমে গলায় জানতে চাইলো,
“তারপর?”
ভদ্রলোক একটু সময় নিলেন। চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে রইলেন। নিচু গলায় বললেন,
“সন্তানের মৃত্যুর জন্য ছেলেটিকে দায়ী করলো তার স্ত্রী। কঠিন গলায় বলল, তোমার অহংকারে আমার সন্তান মারা গেছে। তোমার মতো স্বার্থপর একজনকে বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি। তোমাকে আমি ঘৃণা করি। তারপর মেয়েটি চলে গেল। ছেলেটিকে ছেড়ে ফিরে গেল তার বাবার কাছে। সেদিন না বুঝলেও, আজ ছেলেটি ঠিকই নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে। কিন্তু সময় চলে গেছে। এখন আর সাধন হবে না।”
বিন্তু মলিন গলায় বলল,
“ছেলেটির নাম কি?”
“পল্লব। ছেলেটির নাম পল্লব।”
“আপনিই কি সেই পল্লব?”
ভদ্রলোক হাসলেন। বিন্তুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আপনি বুদ্ধিমতী।”
বিন্তুর মন আরও খারাপ হলো। সে পরিবেশটা হালকা করার উদ্দেশ্যে বলল,
“আপনি কেমন লিখতে পারেন জানি না। কিন্তু গল্প বলাতে আপনি খুবই খারাপ।”
পল্লব হাসলেন। বিন্তু প্রশ্ন করলো,
“আপনার স্ত্রী এখন….?”
পল্লব ভেতরের দীর্ঘশ্বাস চেপে উত্তর দিলেন
“ভালো আছে। কয়েক বছর হলো আবার বিয়ে করেছে। খোঁজ নিয়েছি। সুখে আছে।”
“আর আপনি?”
পল্লব হেসে উঠে উত্তর দিলো,
“আমি এক গরিব পুরুষ। বাবার ব্যবসায় হাত দিয়েছিলাম। তারপর তাতে ধ্বস নেমেছে। ব্যবসায় মন্দা। আমার ছোট ভাই ব্যবসাটা আবার দাঁড় করাতে হিমশিম খাচ্ছে। আর আমি নিজের হাতখরচ চালাতে একটা পত্রিকায় বাচ্চাদের ছড়া লিখছি। তাও আমার এক বন্ধু দয়া করে সুযোগ দিয়েছিল বলে। প্রতি সপ্তাহে দশটা ছড়া জমা দিতে হয়। ওরা বেছে বেছে একটা ছাপায়। কাল ছড়া জমা দেওয়ার দিন। আমি এখনো একটা ছড়াও লিখি নি।”
বিন্তু দুঃখিত হলো। ইতস্তত করে বলল,
“উনার বিয়ে করা নিয়ে আপনার কোনো অভিযোগ নেই?”
“অভিযোগ থাকবে কেন? মানুষ অল্প বয়সে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তাই বলে কি পরবর্তীতে আর জীবনকে সাজিয়ে নেবে না?”
বিন্তু মৃদু হেসে বলল,
“আপনি ভীষণ ভালো।”
“ছিলাম না। এখন হওয়ার চেষ্টা করছি।”
বিন্তু কথা বলল না। সে সামনে তাকালো। যে মানুষ নিজেই দুখী, সে আরেকজনকে সান্ত্বনা দিতে পারে না। বিন্তুও পারলো না। মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। নদীর জলে ঝমঝম করে বৃষ্টি পরছে। বৃষ্টি কি আনন্দদায়ক নাকি কষ্টকর?
___________________________________________
অন্তু মুখ ভোঁতা করে অংক করছে। এই বৃষ্টির মধ্যেও বর্ণিল তাকে পড়াতে এসেছে। সে ভেবেছিল আজ আরাম করে শুয়ে টিভি দেখবে। কিন্তু তা হতে পারলো না। বর্ণিল বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ উশখুশ করছে। বিন্তুর খবর জানার জন্য সে ছটফট করছে। কিভাবে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছে না। বেশ অনেকটা সময় ইতস্তত করার পরে বর্ণিল মুখ খুললো। হালকা কেশে বলল,
“অন্তু, তোমার মাকে বলে দিয়ো আজ নাস্তা লাগবে না।”
অন্তু অনাগ্রহের সাথে উত্তর দিলো,
“এমনিতেও কেউ আজ আপনাকে নাস্তা দেবে না। বাড়ির অবস্থা ভালো না।”
বর্ণিল ভ্রু কুঁচকে বলল,
“বাড়িতে কি হয়েছে? তোমার আপার বিয়ে নিয়ে কিছু?”
“না। শিরিন আপার বিয়ে নিয়ে।”
“শিরিনের বিয়ে নাকি? কবে?”
“না, বিয়ে নয়। শিরিন আপার প্রেমিক এখানে এসেছে আপাকে বিয়ে করতে।”
বর্ণিল হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্ময় নিয়ে বলল,
“বলো কি?”
“ঠিকই বলছি। কাল রাতে ছেলেটা এই বাড়িতে এসে উঠেছে।”
বর্ণিল অবাক হলো। সত্যিই কি ছেলেটা শিরিনকে বিয়ে করবে বলে এসেছে? এত সাহসী প্রেমিকও হয়? শুধু সেইই বুঝি সাহস করে উঠতে পারে নি। বিন্তু ঠিকই বলেছিল। সে একজন অযোগ্য প্রেমিক। প্রেমকে আগলে রাখার যোগ্যতা তার ছিল না। বর্ণিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ছেলেটা যে শিরিনের প্রেমিক সেটা তোমাকে কে বলেছে?”
“বলতে হবে কেন? আমি সব বুঝতে পারি।”
বর্ণিল হেসে ফেলে বলল,
“তাই নাকি? আর কি কি বুঝতে পারো তুমি?”
অন্তু হাত থেকে কলম রাখলো। খাতা থেকে চোখ সরিয়ে বর্ণিলের দিকে তাকালো। মুখে হাসি টেনে বলল,
“এখন আমি বুঝতে পারছি যে আপনি আপার খোঁজ জানতে চাইছেন। আপা তার হবু বরের সাথে বাইরে গেছে।”
বর্ণিল হকচকিয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
“আ…আমি তোমার আপার খোঁজ কেন চাইবো?”
অন্তু কোনোরকম সংকোচ না করে বলল,
“কারণ আপনি আপাকে পছন্দ করেন।”
বর্ণিল আচ্ছন্নের মতো বলল,
“আমি তোমার আপাকে পছন্দ করি?”
“হ্যাঁ। শুধু পছন্দ না, আপনি আপাকে ভালোবাসেন।”
বর্ণিল কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো,
“আর….তোমার আপা?”
অন্তু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“আপা আপনাকে ঘৃণা করে।”
বর্ণিল কাঠের মূর্তির মতো বসে রইলো। সামনে বসে থাকা কিশোরীটিকে তার মনে হলো এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম মানুষ।
.
#চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে