#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫২
১৪৩.
আম্মু তোমার মনে আছে।ছোট্ট বেলায় আমার যখন জ্বর আসতো।তখন তুমি আমার মাথায় পানি দিয়ে দিতে।পলিথিন, বালতি,মগ সবকিছু খাটের ওপর নিয়ে আসতে আমার কাছে ওগুলো খুব ইন্টারেস্টিং লাগত।এরপর স্লো ফ্লোতে পানির মধ্যে দিয়ে আমার মাথায় চুলের মধ্যে আঙুল চালিয়ে বিলি কাঁ*টার ব্যাপারটা ভীষণ ভালো লাগত।একটু পর পর কাঁথা টেনে একদম ঠোঁট পযন্ত ঢেকে দেওয়া অদ্ভুত আরাম লাগত।আজ-ও জ্বর আসুক।আর তুমি আমার মাথায় ওইভাবে হাত বুলিয়ে দিতেই আমি ঘুমে তলিয়ে যাই।
এই শরীরটা কা*টাছেঁড়া।সব জায়গায় বেন্ডেজ।মাথাটা যন্ত্রণা করছে।কিছু ভালো লাগছে না আম্মু।
তারজন্য জ্বর আসতে হবে না।তুই সুয়ে চোখ বুঝে থাক।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।দেখবি সব খারাপ লাগাটা সরে গেছে।অর্পণ চোখ বুঝতেই রাবেয়া ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
অর্পন ঘুমিয়ে গেছে।রাবেয়া ছেলের মাথায় চুমু বসিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।আজ তার আদরের সন্তানের এই অবস্থার জন্য দায়ী তার ভাই শাফাকাত খান।বোনের সন্তানকে মেরেছে।একটিবার তার কলিজা কাপে নিই।সে কতটা নিষ্ঠুর,আর বর্বর।
পুতুল রুমে আসতেই রাবেয়া নিজের চোখের পানি তারাতাড়ি মুছে নিলো।পুতুল আম্মু এইদিকে আসো।পুতুল আসতেই ওর হাত দুটো একসাথে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
আমার অর্পন তোমায় খুব ভালোবাসে।জীবনে যা কিছু হয়ে যাক না কেন?কেউ কারো সঙ্গ কখনো ছাড়বে না।তোমাদের সুখ দেখে অনেকেই হিংসা করবে।তোমাদের সুখের পথে অনেকেই আসবে কা*টাঁ বিছাতে।তোমরা যদি নিজেদের কে শক্তভাবে একে অপরের ওপর বিশ্বাস,ভরসা,আস্থা রেখে চলতে পার।জীবনটা সুখময় হবে।আমি দোয়া করি তোমরা সুখে থাকো।ভালো থাকো।রাবেয়া,পুতুলকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।পুতুল চুপচাপ তার বুকের মধ্যে মাথা রেখে চোখ বুঝে নেয়।সেই পুরনো অতীতে মায়ের সঙ্গে মিশলেই যেমন আরামদায়ক এবং শান্তি লাগত।ঠিক তেমনই এখন লাগছে।
অর্পনের ঘুম ভাঙ্গতেই নিজের বউকে দেখতে পায়।উঠে বসতেই তাকে ধরে বসায়।হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করে।
এখন কেমন লাগছে?
অর্পণ আস্তে করে বলল,
ভালো।
পুতুল,আম্মু কোথায়?
হাতের ইশারা বলল,
চলে গেছে।ইমারজেন্সিতে রোগী এসেছে।
ওহ।
রাবেয়া খান বাড়িতে এসেছে।ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই তুই এই বাড়িতে কেন?কি গল্প শুনাতে এসেছিস?তুই আর তোর ছেলের নাটকের তো শেষ নেই।মা,ছেলের যতসব ঢং।
মুখ সামলে কথা বলো ভাইজান।এত বড় অন্যায় করে আবার জোড় গলায় কথা বলছো।তুমি কোন সাহসে আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছো?তুমি কি মানুষ?এতদিন অনেক অন্যায় করেছো!মুখ বুঝে সয়ে গেছি।কিন্তু এখন তুমি সব সীমা পার করে ফেলেছো।আমার সন্তানের গায়ে আঘাত করে।আমার মানিকের গায়ে হাত তুলে তুমি নিজেকে পাপের ভাগীদার করে নিয়েছো।আগেরকার মুরব্বিদের মুখে শুনতাম।মামা,ভাগ্নে যেখানে বিপদ নেই সেখানে।মামা তার ভাগ্নের গায়ে একটা আচর কাটতে দেয় না।কিন্তু তুমি আমার সন্তানের ওপর আঘাত করলে।তুমি এক মায়ের কলিজায় আঘাত করলে।তোমার লজ্জা করে না।বিন্দু মাত্র লজ্জা নেই।আমার সন্তানের গায়ে দ্বিতীয়বার আঘাত করলে আমি ভুলে যাব সম্পর্কে তুমি আমার ভাই হও।কোনো ক্ষমা তুমি পাবে না।এক মায়ের অভিশাপ নিও না।এক মায়ের অভিশাপ নিয়ে তোমার ধ্বংস ডেকে এনো না।রাবেয়া চোখের পানি নিয়ে বের হতে নিলেই রাবেয়া মা,মেয়েকে ডাকেন।রাবেয়া চোখের পানি মুছে বলল,
আমায় পিছু ডেকো না মা।তোমার ডাক ফেলে দেওয়া আমার সাধ্যের বাহিরে।তুমি যেমন তোমার সন্তানের ক্ষতি হলে হাহাকার করে মর।ঠিক তেমনই আমি মরছি ক্ষনে ক্ষনে।আমার সন্তানের ক্ষতি হচ্ছে। তাও আমার আপনজনদের দ্বারা।আমি মেনে নিতে পারছি না।তুমি মা হয়ে তোমার সন্তানের কথা ভাবছো।আর আমি আমার সন্তানের কথা ভাবছি।
রাবেয়া খান বাড়ি থেকে সোজা বেরিয়ে আসে।স্বাধীনদের বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই,অসীম তালুকদারের সামনে পড়েন।স্বামী গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।তার ওই চোখের ভাষা বুঝতে পেরে চোখে চোখ মিলাতে পারেনি।
তুমি কখন এলে?
কোথায় ছিলে?তুমি আজ কোনো রোগী দেখতে যা-ও নিই।মিথ্যে বলেছো।বাড়িতে আসতেই শুনতে পেলাম আমার সন্তানের সাথে এতবড় ঘটনা ঘটে গেছে।আর আমাকে জানানোর প্রয়োজনটুকু করোনি।কি চলছে তোমাদের সাথে।আমার কি জানার কোনো অধিকার নেই?আমার ছেলের এত বড় ক্ষতি হলো।আর তুমি একটিবার খবর দিলে না।কি হয়েছে রাবেয়া?তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
কি লুকিয়ে যাচ্ছো আমার থেকে?আমাকে বলা যায় না।দেখ রাবেয়া আমার কাছ থেকে লুকিয়ে লাভ নেই।আমি কোনোভাবে ঠিকই জেনে যাব।সেটা আজ কিংবা কাল।সেটা সময়ের ব্যাপার।তুমি বলো আমায়?কি হচ্ছে? আর আমার অর্পনের এই হাল কে করেছে।বলো আমায়।চুপ থেকো না।রাবেয়া স্বামীর বুকে মাথা রেখে ফুফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সব বলতে লাগল।অসীম তালুকদার সবটা শুনে বউয়ের থেকে সরে দাঁড়ালেন।তার চোখে ক্রধের আগুন।
এসব আমায় আরো আগে কেন ব’লে না? আমার ছেলের সাথে এতকিছু হয়েছে আর আমি আজ জানতে পারলাম।আমার ছোট শালা আমার ছেলে কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।আমি কি এতটাই অর্দম যে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পারবনা?তোমার ভাই নিজেকে কিভাবে?তার মাথার ওপর তার মন্ত্রী সাহেব বাবা থাকলেও,আমিও আছি আমার ছেলের পাশে।আমার ছেলের কিছুও হতে দিবনা।অর্পনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ করো।আমি ওকে এই দেশের মাটিতেই রাখব না।বউ নিয়ে দেশের বাহিরে থাকবে।আমি সব ব্যবস্থা করছি।
একমাস পর….
অর্পন এখন পুরোপুরি সুস্থ।এবং আজ পুতুলকে নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছছে।পুতুল জিজ্ঞেস করছে কথায় যাচ্ছি?কিন্তু অর্পন তার কথার উত্তর দেয়নি।এয়ারপোর্টে সব কাগজপত্র চেকিং করিয়ে প্লেনে উঠে বসে।
পুতুল এই প্রথম নিজের গ্রাম,এবং নিজের দেশ ছেড়ে দূরে অচেনা দেশে পা রাখতে চলেছে।নিজের অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।অর্পনের হাতটা শক্ত করে ধরেছে।প্লেন উপরে তোলার আগেই সিট বেল বেঁধে নিয়েছে।
পুতুল ভয় পেও না।আমি আছি।চোখ বুঝে না থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো।দেখবে ভয় নেই।অর্পনের কথা পুতুলের কানে ঢুকলেই মস্তিষ্কে যাচ্ছে না।ভয়টা তাঁকে কাবু করেছে।পুতুলের ভয় কাটাতে অর্পন দুষ্টমী করে কানের সামনে গিয়ে বলল,
তুমি তখন জিজ্ঞেস করছিলে না।আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আমরা হানিমুনে যাচ্ছি।এবং দুই থেকে তিনজন হয়েই দেশে ফিরব।অর্পনের কথায় পুতুল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়।পুতুলের এমন অদ্ভুত রিয়াকশন দেখে অর্পন শব্দ করে হেঁসে উঠে।
কি দুই জন থেকে তিনজন হতে আপত্তি আছে মিসেস?অর্পনের এমন কথায় পুতুলের গাল দু’টো লজ্জায় লাল হলো।মুখটা দুই হাতের সাহায্যে ডেকে ফেলো।অর্পন,পুতুলকে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল।মনে মনে বলল,
আই এম সরি পুতুল।তোমাকে পুরোপুরি সত্যিটা বলতে পারলাম না।তোমার চিকিৎসা শেষ হলেই আমি দেশে ব্যাক করব।তুমি পড়ার জন্য ওই দেশের মাটিতে পড়ে থাকবে।তোমার নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে যাব।আমি তোমায় নিয়ে রিক্স নিতে পারব না।ব’লেই অচেনা দেশে রেখে যাচ্ছি।দেশের এই রাজনীতির মাঠের খেলা এবং আমার মামাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া জন্যই নিজ দেশের মাটিতে ফিরে যাব।ততদিনে তোমার ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে।তারপরে তুমি আর আমি মিলে আমাদের স্বপ্নের ঘর সাজাবো।
রাবেয়া এবং অসীম তালুকদার নিশ্চিত মনে বাড়িতে পা রাখলেন।কারণ ছেলে এবং ছেলের বউকে দেশের বাহিরে পাঠিয়েছেন।কিন্তু তাদের ধারণা পাল্টে দিচ্ছে তাদের ছেলে অর্পন তালুকদার।তার মাথায় অন্য প্ল্যান চলছে।কি করতে চাইছে?সেটা দেশে আসলেই জানা যাবে।
তোমাকে ভালোবাসা ছিলো আমার জন্য অভিশাপ।না তোমাকে ভালোবাসতাম।আর না তোমাকে নিজের করে নিতাম।তুমি আমার লাইফটাকে হেল করে রেখেছো।
আমি তোমার লাইফটাকে হেল করেছি।না তুমি করেছো?প্রেম করার সময় মনে ছিল না।এখন আমার দিকে আঙুল তুলছো।আর এই যে আমার গর্ভে যে বেড়ে ওঠেছে।তার কথা তোমার ভাবার সময় আছে।নিজেকে কি ভাব তুমি?আমার সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব তোমার।কারণ তুমি তার পিতা অন্তর।
এই শোনো আমি তোমার এবং তোমার এই বাচ্চার দায়িত্ব আর নিতে পারব না।ওকে এর্বোশন করাতে চেয়েছি দেও নিই।এখন তুমি বুঝো।আর সর আমার সামনে থেকে।অন্তর নিজের শার্টের কলারের থেকে তন্নী হাত সরিয়ে হালকা ধাক্কা দিতেই তন্নী সোফায় উল্টে পড়ে যায়।পেটে আঘাত লাগতে মা ব’লে চিৎকার করে উঠে।ওয়াটার ব্রেক যেতেই অন্তর চমকে উঠে।
হায় আল্লাহ এটা কি করলাম?
তন্নী এই তন্নী।তন্নীর লেবার পেইন উঠেছে।যন্ত্রণা ছটপট করছে।এরমধ্যেই জেনিফা এবং তার হাসবেন্ড পার্টি থেকে ফিরে আসতেই এসব দেখে চমকে যান।ইমারজেন্সিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
চলবে…
#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৩
১৪৫.
ইমারজেন্সিতে তন্নীকে নেওয়া হয়েছে।অপারেশন রুম থেকে তন্নীর চিতকার ভেসে আসছে।দিহান সাহেব অন্তরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
এসব কি করে হলো?অন্তর চুপ থাকায় দিহান সাহেব ছেলের গালে ঠাসস করে থাপ্পড় লাগিয়ে বসেন।জেনিফার এগিয়ে আসতে নিলেই চোখ রাঙিয়ে ইশারায় সরে দাড়াতে বলেন।
কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেনো?যার দুই দিন পরে বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল।আজ তার এই অবস্থা কে করলো?তোমার মা,আর আমি দরকারি কাজে বাহিরে গিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি বাড়িতে থাকা অবস্থায় মেয়েটার সাথে এসব হলো কি করে?অন্তর চুপ করে থেকো না।জবাব দাও।আমি না হয় আমার পছন্দের মেয়েকেই তোমার ঘরের ঘরণী করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তাতে তোমার আপত্তি ছিল মেনে নিয়েছি।নিজের পচ্ছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেও সুখে রাখতে পারলে না?তাহলে সারাজীবন কি করবে তুমি?এতদিন ভাবতাম ছেলেটা আর যাই হোক।ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে জানে।সেই ধারণা তুমি আজ পাল্টে দিলে।তুমি একজন সঠিক মানুষ হওনি।তুমি তোমার মায়ের মতোই নির্দয় এবং কুৎসিত মনের মানুষ হয়েছো।যার মনে ভালোবাসা তোও দূরের কথা।সামান্য মনুষ্যত্বটুকু নেই।তোমার এই মায়ের মন পেতে আমাকে দিন রাত পরিশ্রম করতে হয়েছে।কারণ তার মুখে একটাই শব্দ ছিল।আর সেটা হলো টাকা।সে টাকা ছাড়া কিছু বুঝতে চাইতো না।তাকে অন্ধের মতো ভালোবাসতাম ব’লেই সব সময় তার আবদার,বায়না মিটিয়ে এসেছি।তবুও মন গলেনি।ভেবেছিলাম একটা সন্তান গর্ভে আসলে নারী পূর্ণ হয়।মা হওয়ার মাঝে তার পরিবর্তন আসবে।সে-ও একই কাজ করে।তোমার মতোই এর্বোশন সিদ্ধান্ত নেয়।এবং তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চায়নি।কিন্তু আমি যখন জানতে পারি।তখন তার হাতে পায়ে ধরে অনেক কেঁদেছি।সে যেন আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি না করে।তার এই সন্তানের কোনো দায়িত্ব নিতে হবেনা।সব আমি নিজ হাতে করব।সে মেনেছিল।তার বিনিময়ে জার্মান শহরে একটা ফ্ল্যাট করে দিতে হবে।যেটার মালিক সে থাকবে।তখন আমিও টাকা উর্পাজনের ধান্দায় থাকতাম।কত রাত নিঘুম কে*টেছে তা একমাত্ত আমি এবং আমার আল্লাহ ভালো জানে।
তার শর্ত মতাবেগ পালন করেছি।বিনিময়ে সে আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে।এরপর তার কোনো দায়িত্ব সে পালন করেনি।সে নিজের পার্টি আর বন্ধুদের সাথে মেতে ছিল।এই যে তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।জিজ্ঞেস কর তাকে।যখন তোমার বয়স দেড় বছর।তুমি ফ্লোরে বসার চেষ্টা কর।গড়িয়ে খেলা কর।আমি ছিলাম তোমার বাবা।তোমার ছোট বেলার খেলার সাথী।আমাকে বাবা শব্দ বলার চেষ্টা,আমাকে আলতো হাতে আদর করে খিলখিল করে হাসি দিয়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখা।এসব দেখতে দেখতে তার মাঝে মায়া কাজ করে।মমতা জেগে ওঠে।তোমার প্রতি তার টান দেখেই আমি ওপর ওই আসমানে যে বসে আছে। তার দিকে তাকিয়ে দুই চোখের পানি ফেলেছি।সময় চলতে চলতে তুমি বাবাকে একজন কঠোর পুরুষ হিসেবে দেখে এসেছো।তোমার দুনিয়ায় তখন তোমার মা’ই সব।কিন্তু আজ সেই একই জিনিস তুমি পুনরাবৃত্তি করে ছাড়লে।লোভ তোমাদের সব কিছু শেষ করছে।তোমাদের চাহিদা মতো সব
পেতে পেতে লোভ বেড়ে গেছে।যত পা-ও ততই চাও।তোমাদের চাওয়া শেষ নেই।একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো।ভালো ছেলে এবং ভালো স্বামী তুমি কখনোই হতে পারো নিই।ভালো বাবা হবে কি না।তাতেও সন্দেহ রয়েছে।আর তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।তোমার সম্পত্তি আমি সব তোমার সন্তানের নামে করে দিবো।তাও তোমাকে এক কানা করি দিব না।যে সম্পর্কে মূল্য বুঝতে পারে না।তাকে আর বুঝাতেও চাই না।দিহান সাহেব কথা শেষ হতেই বেবি কান্না ভেসে আসে।দিহান সাহেব আলহামদুলিল্লাহ বলে এগিয়ে যান অপারেশন রুমে দরজা সামনে।ডাক্তার বেবিকে তোয়ালে করে নিয়ে আসেন।দিহান সাহেবের কোলে দিয়ে বলেন।
ছেলে হয়েছে।দিহান সাহেব নাতির মুখে চুমু দিয়ে বলেন,
-;আলহামদুলিল্লাহ।আমার অন্ধকার রাজ্যের আসল রাজা এসেছে।এবার আমার কোনো চিন্তা নাই।দাদু ভাই তুমি কেমন আছো?ছোট্ট নাদুসনুদুস বাবুটা গোল গোল চোখে চেয়ে আছে।তার দুই চোখের ভ্রু দ্বয়ের সামনে অল্প কুঁচকে,কেমন ডেবডেব করে তাকিয়ে।ভাবছে।সে কই আসলো?মায়ের পেটের ভিতর ভালো ছিল।এমন অদ্ভুত জায়গায় বের করে আনার মানে কি?
নার্স বেবি নিয়ে যাওয়ার সময় বললো,
মা এবং বেবি দুইজনই সুস্থ আছে।
১৪৬.
অর্পন,পুতুলকে ডাক্তার কাছে নিয়ে এসেছে।
ডাক্তার পুতুলকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে করতে কাগজে লিখতে থাকেন।কিছু সময় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর পুতুলকে তার জায়গায় বসতে বলেন।
মিষ্টার অর্পণ।আমি আপনার স্ত্রী’র সমস্যা বুঝতে কিছু টেস্ট করেছি।রির্পোট আসলেই বুঝতে পারব।এবং আপনাকে জানানো হবে।
জি।ডক্টর।ধন্যবাদ।আবার কবে আসতে হবে?
দুইদিন পর আসলেই ভালো হয়।আমার আপনার ওয়াইফের রির্পোট নিয়ে বাকি ডাক্তার সাথে একটা আলোচনা করব।তাই দুইদিন পর আসবেন।
ওকে।
পুতুলকে নিয়ে বেরিয়ে আসতেই একটা পরিচিত কল আসতেই রিসিভ করে।
আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?
শেষ পর্যন্ত আমার ভয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে পারি জমালি।কিন্তু পালিয়ে কতদূর। ওখানে পৌঁছাতে আমার সময় লাগবে না।
অর্পন নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলল,
ওকে আই এম ওয়েটিং।তাড়াতাড়ি আসলে খুশি হব।বাংলাদেশে বাপের জন্য থাকতে পারলাম না।বউ নিয়ে হানিমুন করতে ঠিক পাঠিয়ে দিয়েছে।সেখানে মামা যদি নিজে থেকে ফোন দিয়ে আসার জন্য এতটা কৌতুহল দেখায় তাহলে আসতেই পার।আমি আরো ভাবছিলাম তাড়াতাড়ি ঢাকায় ব্যাক করব।ইনফেক্ট দুইদিন পরই আমরা ব্যাক করছি।তুমি এখানে আসতে আসতে আমি দেশের মাটিতে থাকব।সো গুড বায়।অর্পন ফোন কেটে চিন্তায় পরে গেলো।তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরতে হবে।পুতুলকে এখানে দূর দেশে রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই।পুতুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে যাব।
চাচী এত রাতের বেলা নারকেল কুড়াও কেন?
আর বলিস না।তোর চাচার রাতের বেলা সেমাই খাওয়ার নেশা উঠছে।এত রাতে আমার শান্তি নাই।তাই করতাছি।
ওহ।তা চাচি সামনে তোও রোজা।তুমি আর চাচা কয়টা রোজা রাখবা।
দেখি আল্লাহ যদি তৌফিক দেন।তাইলে সবগুলো রাখার ইচ্ছা আছে।রিফাত তুই বাড়িত যাইস না।বস। সেমাই খাইয়া যাইস।
আইচ্ছা।
দুইদিন পর।মাহে রমজানের চাঁদ উঠেছে।আকাশের চাঁদ দেখে মিলন,সাজু লাফিয়ে উঠে।
ওই আম্মা আকাশে চাঁদ উঠেছে।আজ রাতে ভাত খাইয়া কাল থেকে রোজা শুরু।
রেনু রাতের বেলা হারিকেনের সাহায্যে রান্না শেষ করতে ব্যাস্ত।ভোরে আবার উঠতে হবে।এখনো এশার নামাজটুকুও পড়তেই পারেনি।গরমের জন্য কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা।
ভোর রাতের জন্য দুই মুইখা মাটির চুলায় রান্না বসিয়েছে।ভাত,তেলাপিয়া মাছ ভুনা আর ডাল গনো করে রান্না করছে।তাতে লাল দুইটা গাছ থেকে পাকাঁ টমেটো আরো আগেই পেরে নিয়েছিল।টমেটো টুকরোগুলো তাতে ছেড়ে দিয়েছে।হালকা ঝাল করতে কতগুলো কাঁচা মরিচ ফালি করে ছড়িয়ে দিল।তার একটু পড়ে ধনেপাতা কুচি ছেড়ে নেড়ে নামিয়ে নিয়েছে।সবশেষে দুধ গরম করে নিলো।তিনজনের শেষ পাতে দুধ মাখা ভাত খাবে।তা ওহ আবার বেশি করে চিনি দিয়ে।এটা ছাড়া তাদের চলে না।
রান্না শেষ করে রেনু এশারের নামাজ পড়ে নিলো।মেয়েটার কথা মনে পড়ছে।কি খাচ্ছে? কি করছে?কে জানে?একটু কথা বলতে পারলে শান্তি লাগতো।এই প্রথম আমাদের ছাড়া একা একা রোজা পালন করছে।যদিও জামাই আছে।তারপরেও মনটা মানে না।কথা বলার জন্য মনটা আনচান করে।দেখি উনি আসুক একটু কথা বলার একটা ব্যাবস্থা করা যায় কি না?
পুতুলের এই প্রথম রোজা তা-ও আবার দুর দেশে হয়েছে।ফজরের নামাজ পড়ে পুতুল বেলকনিতে বসেই বাহিরে পরিবেশ দেখতে থাকে।এমন সময় ভেতর থেকে সুন্দর কোরআন তিলাওয়াত ভেসে আসছে।পুতুল রুমে প্রবেশ করতে দেখে তার স্বামী মসজিদ থেকে ফিরেছে।আর এত সুন্দর করে কোরআন তিলাওয়াত সেই করছে।প্রতিদিন ভাইয়েদেরটা শুনেই অভস্ত্য।নিজে এমন করে তিলাওয়াত করতে পারেনা ব’লে আফসোস লাগে।আজ স্বামীর কন্ঠে কোরআন তিলাওয়াত তার কাছে মধুর লাগছে।পুতুল চুপচাপ স্বামীর পাশে বসে।তার ডান কাঁধে মাথা রাখল।অর্পন,একপলক বউকে দেখে আবার কোরআন তিলাওয়াতেই ব্যাস্ত রইল।
অর্পন দুই পাড়া পরে শেষ করতেই দেখে পুতুল ঘুমিয়ে গেছে।পুতুলকে ঠিক করে বিছানা ঘুম পাড়িয়ে মাথা হালকা ফু দিয়ে দিল।
চলবে…..
#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৪
১৪৭.
ছেলেকে মায়ের কাছে একই রুমে আলাদা বেডে শোয়াতেই তন্নীর জ্ঞান ফিরে।সে চোখ মেলে নিজের পেটে হাতটা রেখে চমকে উঠে।অন্তর তার স্বামী তাকে ধাক্কা মেরেছিল।আর তখনই প্রসব বেদনা উঠে।ব্যাথা সয্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তারপর কি হয়েছিল?পেটে হাত বুলিয়ে বিরবির করে বলল,
আ..মা..র বাচ্চা।আমার সন্তান কোথায়?শেষের কথাটা চিতকার করে ব’লে।হঠাৎ চিতকার শুনে বেবির ঘুমটা ভেঙে যায়।সেও চিতকার করে কান্না জুড়ে দেয়।বেবির কান্না শুনে তন্নী আরো ছটপট করে।বেড থেকে নামতে চেষ্টা করে।এরমধ্যেই দিহান সাহেব তন্নীর চিতকার শুনে রুমে ঢুকেন।দিহান সাহেবকে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
বাবা,আমার বেবি।সন্তানের জন্য এক মায়ের আকুলতা বুঝতে পারেন।নার্সকে ডেকে বেবি কে কোলে তুলে দিতে বলেন।ছোট বাচ্চাটা তখনও কান্না করছে।তন্নী ছেলেকে দুই হাতে তুলে নিয়ে পাগলের মতো সন্তানের গালে,কপালে চুমু বসিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।
আমার সোনামানিক।আমার বাবা।মা খুব পঁচা না,তাই তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।আমাকে মাফ করে দেও।তোমাকে কষ্ট আর দিব না।আর কখনো না।ছেলে,মায়ের স্পর্শ পেয়ে কান্না বন্ধ করে চেয়ে থাকে।মায়ের আদর পেতেই সেও চুপ।ছোট ছোট হাতের সাহায্যে কয়েকটা চুল টেনে ধরেছে।তন্নী ওর হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে,নিজের সন্তানকে বুকে নিয়ে বিছানায় পিঠটা লাগিয়ে বসে পড়ে।
দিহান সাহেব আর কিছু না ব’লে বাহিরে চলে যান।
এতখন থাই গ্লাসের ওইপাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু অন্তর দেখছিল।স্বচ্ছ কাচের দেয়ালের ওই পাশে এক মায়ের ভালোবাসা অবিরাম অন্তহীন হতে দেখেছে।তার সন্তান কি সুন্দর ফুটফুটে হয়েছে?অথচ একেই বারবার এর্বোশন করাতে চেয়েছে।চেয়েছে একটি ভ্রুণ পৃথিবীতে না আসুক।সে সত্যিই পাপী।তার স্ত্রী যোগ্য স্বামী নয়।নার্সের ডাকে কল্পনার জগত ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসে।নিজেকে স্বাভাবিক করে তন্নীকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে প্রবেশ করে।অন্তর আসতেই তন্নী মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
দুইদিন পরই আমাদের ডির্ভোস।এতদিন সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে পৃথিবীতে আনার জন্য।তোমার সকল অন্যায় সাথে লড়াই করেছি।
কিন্তু আজ থেকে তুমি মুক্ত।আমি মুক্ত হয়ে তোমাকে মুক্তি দিয়ে খেলাম।সন্তান তুমি কখনোই চাও নিই।আমার জন্যই তার আগমন হয়েছে।তাই তার সকল দায়িত্ব আমার।তাকে নিয়ে তোমার কোনো চিন্তা নেই।ডিভোর্স পেপারে সইটা করে দিলেই আমি চলে যাব নিজ দেশের মাটিতে।আর তুমি তোমার পছন্দ মতো।যাকে তোমার পারফেক্ট লাগে তাকে বিয়ে কর।আমি তোমার যোগ্য ছিলাম।কিন্তু তার কদর করো নিই।সব সময় ব’লে এসেছো।আমার জন্য তোমার লাইফটা নাকি হেল হয়ে গেছে।এখন তুমি মুক্ত মিষ্টার অন্তর।
তন্নীর কথায় অন্তর চমকে উঠে।চোখ দু’টোতে বিস্ময়।যে মেয়েকে হাজার কটুক্তি করার পরেও দূরে সরে যায় নিই।আজ তার সন্তানের আগমনে তাকে মুক্তি দিয়ে দিলো।এই মুক্তি সে তো চাই নিই।সে তো সব ভুলে আগাতে চাইছিল।তবে তন্নী তাকে এ কোন মুক্তি দিয়ে গেলো।যেখানে পাপ,আপসোস ক্ষমা মিশে আছে।সব ভুলে কি আরেকটিবার সুযোগ দেওয়া যায় না।না যায় না।তন্নী একবারও তার দিকে ফিরে তাকায় নিই।নিজের সন্তানের ভাবনা হয়তো বিভোর।অন্তর এক পা,দুই পা করে পিছনে বাড়িয়ে নিতে চাইলে,তন্নী এবার তার দিকে ফিরে তাকায়।তার চোখে চোখ রেখে বলল,
কি ভেবেছিলে?তোমায় মুক্তি দিচ্ছি!হুহ,সেগুরে বালি।তোমায় মুক্তি দিব এত সহজেই!তুমি কি ভেবেছিলে?এত সহজেই তোমার পিছু ছাড়বো।মৃত্যু আগ পর্যন্ত তোমায় ছাড়ছি না।আর না আমার সন্তানের হোক নষ্ট করব।মা হিসেবে আমি সবটুকুই ভালোবেসেই করব।কিন্তু তার বাবা বিহীন সে পৃথিবীতে বড় হোক আমি তা চায় না।তার হোক তাকে আমি পাইয়ে দিব।এতে যদি তোমার সাথে আমাকে হাজারবার লড়তে হয়।তবে লড়বো।প্রয়োজন পড়লে তোমার নামে মামলা করব।আমার ছেলের প্রাপ্ত হোক থেকে বঞ্চিত করলে।তোমার নাম,দাম এক নিমিষেই বরবাদ করে দিব।তুমি আমার ছেলের সুখ কেঁড়ে নিয়ে ভালো থাকবে।তা আমি মেনে নিবো না।একজন মা হিসেবে তো কখনোই নয়।আমার সাথে করা অন্যায় ছাড় তুমি পাবে না।তার শাস্তি ভোগ করবে।একই ছাদের নিচে দুইজন থাকব ঠিকই কিন্তু তা আলাদা কক্ষে।আলাদা বেড রুমে।আমরা নামেই আর কাগজ কলমে স্বামী,স্ত্রী থাকব।কোনো মনের আদান-প্রদান থাকবে না।তোমার সামনেই তোমার বউ,বাচ্চা থাকবে।কিন্তু তুমি চাইলেও নিজ থেকে তাদের ছুয়ে দিতে পারবে না।তোমাকে আমি যখন অনুমতি দিব।তখনই সন্তানের কাছে আসতে পারবে।কিন্তু আমায় ছোঁয়া চেষ্টা করলে, কিংবা স্বামী অধিকার দেখানোর চেষ্টা করলে তোমার খবর আমি করে ছাড়ব।কথাটা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নেও।তন্নী কথায় অন্তর বেকুব হয়ে গেছে।তার মুখে কোনো কথা নেই।তন্নী নিজের কথা শেষ করে আবার উল্টো দিকে ঘুরে বাচ্চাকে নিয়ে বসে রইলো।
১৪৮.
এশারের আজান পড়তেই পুতুল নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।অর্পন বউকে ফ্ল্যাটে রেখে বিল্ডিং বাহিরে আসতেই বিদ্যুৎ বেগে একটা গুলি ছুটে আসে।অল্প জন্য নিশানা ভুল জায়গায় পড়লো।অর্পন সর্তক হয়ে যায়।চোখ দু’টো চারদিকে বুলিয়ে আবার কয়েক কদম ফেলতেই তার পায়ে দিকে শুট করে।যা দেখে অর্পন সাথে সাথে সরে যায়।নিজের সামনে,পিছনে এত সন্দেহ জনক মানুষ দেখে তার কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে।নিজেকে বাঁচাতে কি করবে তা ঠান্ডা মাথায় ভেবে উল্টো দিকে ঘুরে ইউটান নিতেই ভেসে উঠে গম্ভীর কন্ঠ।কার কন্ঠ তা দেখতে পিছনে ঘুরতেই চোখের সামনে পরে একজন লম্বা চওড়া একজন পুরুষ।যার চোখের ছাওনি প্রচন্ড দূর্গর।বাম হাতে সুন্দর দামী ঘড়ি,সেই হাতের দুই আঙুলের ফাঁকে দামী ব্রান্ডের সিগেরেট।অন্য হাতে রয়েছে এম আর আই গান।গায়ে বড় লেদার কালো জ্যাকেট।পায়ে কালো ব্রুট জুতা।চেয়ার সাথে কার যেন মিল রয়েছে।হ্যা এই তোও সেই মাফিয়া কিং মিষ্টার আরাভ আব্রহাম খান।
চারদিকে তার লোকেরা এসে দাড়িয়ে আছে।মাঝেই সে আর মাফিয়াটা দাঁড়িয়ে আছে।অর্পন কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই মাথায় গানটা পয়েন্টের ওপর রাখে।তার এই কাজে
অর্পনের মাথাটা গরম হয়ে যায়।মাথার ওপর গানটা সরিয়ে বলল,
আমার অপরাধ কি?
তোকে শেষ করার সুপারিশ এসেছে।তুই এখন আমার হাতে মরবি।আরাভ গুলিটা করতে নিলেই পুতুল সামনে এসে দাড়ায়।স্বামীকে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মাথা নাড়িয়ে বারবার বলতে লাগল।
আমার স্বামীকে মারবেন না।তার কথাটা মুখ দিয়ে বের হয়না।নিজের কথাটা না বলাটা পাপ।আজ পুতুল নিজের ওপর অসন্তুষ্ট।আল্লাহকে কাছে অভিযোগ তার।কেনো তাঁকে এতোটাই অসহায় বানিয়েছে।তার গলায় কথা বলার সুর টুকু কেনো পেলো না?অতিরিক্ত ভয়ে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পুতুল অজ্ঞান হয়ে যেতেই অর্পন চমকে উঠে।ডাক্তার বারবার ব’লেছিল।তাঁকে কোনো খারাপ পরিবেশের উপস্থিত না করানো হয়।কারণ ছোট বেলার যে ট্রমাগুলো সে দেখেছে।এবং দেখে যাচ্ছিলো।এতে তার অবস্থা খারাপ হয়েছে।তার মনে বিশাল ক্ষত রয়েছে।
পুতুলের এমন অবস্থায় অর্পন বসে পড়ে।তুমি যেখানে আসতে বলবে আমি আসব।কিন্তু এখন আমার বউয়ের পাশে থাকাটা জরুরি।মেন্টালি শোক পেয়েছে।যা এই মুহূর্তে ক্ষতি কারক।প্লিজ আমাকে যেতে দিন।আমি কথা দিচ্ছি।আগামীকাল সূর্য উঠার আগেই আপনার সামনে আত্মসম্মপণ করব।আপনার যদি তাতে সন্দেহ হয়।আপনি আমার সাথে আপনার বডিগার্ড কিংবা আপনি নিজে থাকতে পারেন।আমার তাতে কিছু বলার নেই।আরাভ খান অর্পনকে যেতে দেয়নি উল্টো তার গাড়িতে করে রওনা হয় হাসপাতালে।
অর্পণ,পুতুলকে কোলে তুলে নেয়।হাজার ডাকলেও সারা দেয়নি।অর্পন কোনো দিশা পায়না।পাগলের মতোও বউকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যায়।ডাক্তার পুতুলের কন্ডিশন বুঝতে পারছে না।এমন হলো কি করে?অর্পন পুরোটা খুলে বলতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
রুমের বাহিরে অর্পন টেনশন করছে।তার পায়চারি পরক্ষ করছে আরাভ।একটা মেয়ে এবং তার ওপর সে অর্পন তালুকদারের বিয়ে করা বউ।বউয়ের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে নিয়ে টেনশনে পায়চারি করছে।সবগুলো দেখে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সে বউ পাগল ছেলে।এমন হ্যাংলামী আদোও তার জীবনেও সম্ভব নয়।কারণ সে নারী জাতিকে প্রচন্ড ঘৃনা করে।এসব নারীদের জন্য তার মনে কোনো ফিলিংস আসে না।এরা ছলনাময়ী হয়।এদের মায়ার ফাঁদে আরাভ খান কোনোদিনই পা দিবে না।আরাভ মুখটা গম্ভীর শক্ত করে অন্য দিকে ঘুরিয়ে তাকায়।এসব মেলোড্রামা তার দেখতে একটুও ভালো লাগছে না।সে হাটতে হাঁটতে বলল,
সময় মতো তার কাছে আত্মসমর্পন করতে।না হলে কথার খেলাফ করার জন্য কোনো অর্পসণ সে রাখবে না।নিজ গার্ডকে ইশারা কিছু ব’লে নিজের দামী বি এম ডাবলিও গাড়িতে বসে পড়ে।একটানে ছুটে চলে নিজ অজানা গন্তব্যে।
চলবে….