চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-১৭+১৮+১৯

0
371

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১৭
৫২.
পুতুলের স্কুল শুরু হয়ে গেছে৷সে এখন পড়াশোনা করছে।আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার ম্যাম,স্যারেরা তাকে কত ভালোবাসত।কিন্তু হাইস্কুল পিন্সিপাল ম্যাম থেকে শুরু করে অনেকেই তাঁকে পছন্দ করে না।তাদের একটা কথাই কানে আসে।পুতুল এখানে বড্ড বেমানান।তাদের সাথে তার মিল নেই।সবাই কথা ব’লে মনের ভাব প্রকাশ করে।একে অপরের সঙ্গে কত কথা ব’লে।কিন্তু সেখানে পুতুল কথা শুনতে পারলেও বলতে পারেন না।এই কথা বলার ত্রুটি সবাই কেন ধরে বসে থাকে।সবাই কেন তাদের একজন ভাবতে পারে না?কেন এত অবহেলা করে।তার যে কষ্ট হয়।কেন কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না?পুতুল টিফিন পিরিয়ডে ক্লাস রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে চোখের কোনে পানিটুকু মুছে নিলো।
নিজেকে স্বাভাবিক করে বেঞ্চে বসে কোনো রকম একটু খাবার পানি দিয়ে গিলে নিলো।বাসা থেকে টিফিন পিরিয়ডে জন্য খাবার দেওয়া হয়।সে যদি খাবারটা না খায়।মামা ঠিক বুঝে যাবে।তাই নিজে যতটুকু গিলতে ফেরেছে।ততটুকু শেষ করে বাকিটা ব্যাগে রেখে দিল।

কদম গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে পুতুল।প্রচন্ড গরম লাগছে।ভাইদের স্কুল ছুটি হতেই বাড়ি পথে পা বাড়ায়।পুতুল ক্লাস সাড়ে সাতটা থেকে বারোটা পর্যন্ত হয়।আর সাজুদের ক্লাস দশটা থেকে বারোটা।সকালে পুতুল এবং তার দুই ভাই আলাদা আসলেও যাওয়াটা একসাথে হয়।বাসায় পৌঁছে তিনজনই স্কুল ড্রেস পাল্টে বিশ্রাম নিলো।যোহর আজান পড়তেই দুই ভাইকে গোসল করিয়ে,নিজেও গোসল করে নামাজ আদায় করলো।মামী শরীরটা এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়।সিজারের বাচ্চা হওয়া তার হাঁটাচলা কম করে।বেশি হাঁটলে সেলাইতে টান লাগে।তাই বেশি হাঁটাহাটি বারণ।বেবিকে বেশিখন কোলে রাখতে পারে না।শুধু খাবার খাওয়া সময় বেবি কোলে নেওয়া হয়।আর বাচ্চা হয়তো মায়ের কষ্ট বুঝতে পারে।তাই দিনের বেশিভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়।ঘুম ভাঙ্গলে চোখ খুলে খেলতে থাকে।যদি পেটে খিদে পায়।তাহলে কান্না করে।এছাড়া সে একদম শান্ত সৃষ্ট বাচ্চা।বাকি দুই ভাইয়ের মতো নয় সে।বাচ্চার নাম মায়ের নামের প্রথম অক্ষর “র” দিয়ে রাখা হয়েছে।মোঃরিফাত।আজ সাজু,মিলন টিভি দেখতে গঞ্জে যাবে।গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে কয়েকদিন হলো।সাদা কালো ছোট টিভিতে হানিফ সংকেত ইত্যাদি অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যার পর।পুতুলের ওমন ছোট বাক্স টিভি দেখতে ইচ্ছে করে।কিন্তু সে মেয়ে মানুষ।গঞ্জে টিভি দেখতে গেলে গ্রামের মানুষ ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখবে না।তাই নিজের ছোট চাওয়া প্রশয় দিলো না।আর দিলেও কিছু হতো না।

৫৩.
এশার আজান দিয়েছে অনেকখন।পুতুল হাতের কাজগুলো দ্রুত শেষ করে।অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাজ করে আলনায় রাখতেই,মিলন,সাজু স্বাধীনের হাত ধরে নাচতে নাচতে বাড়িতে চলে আসছে।তিন জনকে একসাথে দেখে পুতুল হাতের ইশারা সালাম দিলো।

আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

মিলন,সাজু,স্বাধীন তিনজন একসাথে জবাব নিলো।

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

স্বাধীন বারান্দার মোড়ায় বসতেই পুতুল এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয়।স্বাধীন মুচকি হেসে পানিটুকু প্রান করে।

রেনু খাবার খেয়েছে আম্মা।পুতুল মাথা নাড়িয়ে বল হ্যা খেয়েছে।

স্বাধীন খাবারের জন্য ঘরে চলে যেতেই।সাজু,মিলন একসাথে পুতুল কাছে গঞ্জের আলাপ নিয়ে বসে।তাদের আলাপ শেষ করে খাবার জন্য ঘরে যায়।মাটিতে পাটি বিছিয়ে নেয়।ভাত,তরকারি পেয়ালাগুলো বোনের দেখাদেখি নিজেরাও এগিয়ে নিয়ে আসে।স্বাধীন হাতমুখ ধুয়ে আসতেই খাবার বিসমিল্লাহ ব’লে মুখে তুলে।পুতুল সবার জন্য খাবার বেড়ে নিজেও খাবার মুখে তুলতে নিলেই হঠাৎ কারো চিতকারে হাত ফসকে ভাতগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যায়।ততক্ষণে স্বাধীন,সাজু,মিলনের খাবার বন্ধ হয়ে গেছে।স্বাধীন দৌড়ে ছুটতেই,পুতুল হাতটা ধুয়ে দৌড়ে বের হয়।পাশের বাড়িতে কি হয়েছে দেখার জন্য?

সুমনা নামের মেয়েটি গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দিয়েছে।মুখ দিয়ে কিসব পড়ছে।জিহবা বের হয়ে আছে।বাবার মতেই বিয়ে করেছিল।বিয়ে গন্ধ যার শরীরে এখনোও।হাতে রাঙা মেহেদী।সেই মেয়েটি ফ্যানের সাথে ঝুলছে।
পুতুল চারদিকে তাকায়।মেয়েটি মা জ্ঞান হারিয়েছে।বাবা কপাল চাপড়াচ্ছে।ঋণ করে ধুমধামে মেয়েকে বিয়ে দিলো।অথচ ঋণ পরিশোধ করা হলো না।মেয়ে তার লাশের পরিনত ঠিকই হলো।পুতুল আরো কিছু ভাবার আগেই স্বাধীন তার হাত টেনে বাড়িতে নিয়ে যায়।

আম্মা আপনি বাড়িতে থাকেন।ঘর ছেড়ে বের হবেন না।আমি দেখে আসছি।কি হয়েছে? পুতুল কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল আচ্ছা।কিন্তু চোখের সামনে ওমন ভয়ংকর কিছু দেখে পুতুলের বাসায় বসে থাকতে মন সায় দিচ্ছে না। সাজু,মিলনকে খাবার খাইয়ে ঘুমাতে দিয়ে চুপিচুপি ঘর থেকে বের হয়ে যায়।সুমনাদের বাড়ির মেইন গেটের দরজাটা হালকা খুলতেই দেখতে পায়।বাড়িতে পুলিশ এসেছে।মেয়েটি লাশ ততক্ষণে ঘর থেকে বাহিরে নামিয়ে মাটিতে পাটি বিছিয়ে শুয়ানো হয়েছে।পুলিশ কথা শুনে মনে হচ্ছে পোস্ট মর্ডেম জন্য হাসপাতালে নিবে।কাটাছিড়া পর নাকি মেয়েটির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।কারো প্রতি কোনো সন্দেহ থাকলে পুলিশের কাছে জানাতে বলল।সুমনা শ্বশুর বাড়ি লোকদের ওহ খবর দেওয়া হয়েছে।তারা প্রায় চলে এলো ব’লে।

৫৪.
ঘরে যার নব সুন্দরী বধূ।সে বাহিরে পর নারীতে আসক্ত হয় কি করে জানা নেই পুতুলের।সুমনা মারা যা-ওয়ার সাত দিন পার হয়ে গেছে।সুমনা বর আগে থেকেই পরকীয়া করতো।সেই মেয়ে না-কি তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা।সেটা কোনোভাবে সুমনা জানতে পারে।ভালোবেসে যে স্বামীকে নিয়ে ঘর বাঁধলো।দিন শেষে সে ধোঁকা দিল।সুমনা মানতে পারেনি।বাবার বাড়িতে নায়ের হয়ে এসেছিল।কিন্তু বের হলো লাশ হয়ে।
পুতুল খারাপ লাগছে।মেয়েটি,মা,বাবার দিকে ফিরে তাকানো যায় না।সন্তান ছাড়া তারা কতটা অসহায়।সুমনা বড় ভাই কাজের সূত্রে ঢাকা পরেছিল।বোনের মৃত্যু খবর পেয়ে ছুটে আসে।সুমনা স্বামীকে জেলে নেওয়া হয়েছিল।কিন্তু তারা ক্ষমতাশালী হওয়া ছেড়ে দিলো।দশ লাখ টাকা বিনিময়ে সুমনা,শ্বশুর ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।সুমনা শ্বশুর সেখানকার পুলিশ অফিসার ছিলেন।এখন রির্ডাড।সরকার থেকে বসে বসে টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাসায়ন পান।তিনি প্রচুর সম্পত্তির মালিক।সুমনা বাবা হাজার চেষ্টা করে ওহ পারে নিই।মেয়েকে ন্যায় পাইয়ে দিতে।সে ব্যর্থ।

সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে।অসময়ে বৃষ্টি আগমনে কিঞ্চিত বিরক্ত পুতুল।জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে কৃষকের ফসলের ধান নষ্ট হচ্ছে।এই বৃষ্টি না আসলেই ভালো হতো।কত মানুষের ক্ষতি হচ্ছে।মিলন,সাজু আবদারে হাঁড়িতে খিচুড়ি চড়িয়ে দেয়।চাল,তিন পদের ডাল,মিষ্টি কুমড়ো ও আলু ছোট ছোট টুকরো দিয়ে আজকে এই খিচুড়ি।কিছুখন পর ঢাকনা সরাতেই খিচুড়ি গন্ধ আসছে।ভালোই হবে মনে হচ্ছে।গরম তেলে বেগুন ছেড়ে ভাজতে লাগল।ঘরে যা ছিল সবকিছু দিয়ে মোটামুটি খাবার আয়োজন হলো।মামী জলপাই আচার করেছিল।জলপাই শেষ হলেও তেল রয়ে গেছে।পিয়াজ কুচিকুচি করে কেটে নিলো।লবণ দিয়ে হালকা ঢলে তাতে জলপাই তেল ঢেলে একটা মজাদার খাবার করে নিলো।

মিলন,সাজু মজা পেয়ে খাবার বেশি খেয়ে ফেলেছে।মিলন পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে।সাজু, মিলন কে খ্যাপাতে বলল,

থাকতুম থাকতুম বাজায়।মিলন মিয়া ঢোল।

মিলন ঠোঁট উল্টে বলল,

-;আমার পেটে বাচ্চা।মিলন মিয়ার বাচ্চা।মিলন মিয়ার বাচ্চা।

মিলন কথাটা বলতে বলতে বিছানায় শুয়ে কেঁদে ওঠে।

ওরে বাপরে খুদা বেশি লাগছিল।তাই শখ করে আরেকটু খেতে গিয়েছিলাম।এখন আমার এটা কি হলো?পেটে আমার বাচ্চা।লোভে পরে পাপ করে ফেলছি।ওরে মা,পেট আমার পেটের জায়গায় থাকতে চায় না কেন?কেন বাপ কেন?আমার পেট ফেটে গেলো রে।ওরে তোরা কেউ আমারে ধররেএ।

মিলন কাজে সাজু বসে শব্দ করে হাসছে।পুতুল চোখ বড় বড় করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কি সবর্নাশা কথা ব’লছে?এসব কি কথা ছিঁড়ি?পুতুল ভাইকে বলল,বাড়ি বারান্দায় হাঁটতে।হাটাহাটি আস্তে আস্তে করলে ঠিক হয়ে যাবে।পুতুল কথায় মিলন পেটটা ধরে বাড়ির বারান্দায় আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগে।সাজু,মিলন মতো করে পেটে হাত দিয়ে হেঁটে হেঁটে বলল,

আসছে গোপাল,যাচ্ছে গোপাল।

মিলন গাল ফুলিয়ে বলল,আপু,সাজুকে কিছু বলো।ওহ আমায় ক্ষ্যাপায় কেন?আমি কিন্তু ওকে খুব মারবো।পঁচা ছেলে ভাগ।

-;তুই ভাগ।গোপাল ভাড় একটা।আগে আগে পেট চলছে।পেটুক একটা।আর বেশি খাবি।

পুতুল,সাজুর কান টেনে ধরে হাতের ইশারা বলল।মারব কিন্তু।

-;আপু লাগছে আমার।ছাড়।আচ্ছা আর বলবো না।ছাড় আপু।পুতুল কান ছেড়ে দিতেই সাজু দৌড়ে ঘরে চলে যায়।পুতুল হাঁটু গেড়ে ভাইয়ের ফুলো পেটে হালকা করে চিমটি কাটে।মিলন চিতকার করে বলল,

ওরে মা,পেট আমার ফেটে গেলো।
তুমিও খুব পচাঁ আপু।রাগ করে মিলন বারান্দায় ছেড়ে ঘরে চলে যায়।পুতুল মিটমিটে হাসে।

চলবে…..

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১৮
৫৫.
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে,
ধান দেব মেপে।
ধানের ভিতর পোকা,
জামাই বাবু বোকা।

গ্রামে মেলা বসেছে।সেখানে চড়কি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলনা হাট দেখা যাচ্ছে।মিলন খেলনা পুতুল হাতে তুলে নিয়েছে।যেখানে এক মেয়ে কনে সাজে তার বরের পাশে বসে আছে।খেলনা পুতুল হাতে নিয়ে নড়াচড়া করতে করতে উপরোক্ত কথাগুলো ব’লে খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ে।পুতুল কপাল কুঁচকে হাতের ইশারা বলল,

কি হয়েছে তোর?

দেখ আপু পুতুলটা তোমার মতো করে বউ সেজেছে।পুতুল মিলনের মাথায় আস্তে থাপ্পড় মেরে ইশারায় বলল,

চুপ থাক ফাজিল।টিভিতে ওইসব ছবি দেখে দেখে এসব বলছিস।

মিলন মাথা কষে বলল।

তুমি মারলে কেন?এই পুতুলের মতো করে তোমারও বর আসবে দেখে নিও।মিলন কথা পাত্তা দিলো না।নিজের মাপের আকাশী চুরি হাতে পড়ে মিষ্টি করে হাসলো।স্বাধীন এসে দেখে পুতুলের হাতে রেশমী চুরি।

-;আম্মা পচ্ছন্দ হয়েছে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।স্বাধীন পাঞ্জাবি পকেটে হাত দিয়ে দেখে মাত্র বিশ টাকা পড়ে আছে।মন খারাপ করে পুতুল দিকে তাকাতেই,পুতুল বুঝতে পারে।মামা কাছে কোনো টাকা নেই।তাই মন খারাপ করলোনা।মিষ্টি হেসে আস্তে করে একের পর এক চুরিগুলো খুলে রেখে দিল।মামা হাতের বিশ টাকা নিয়ে মামার পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে রেখে দেয়।আরেকটু আগেই স্বাধীন মেলার ভিতর থেকে দুই পদের নিমকি আদা কেজির মতো নিয়েছে।সেটা নিয়ে সবাই বাড়িতে ফিরে গেলো।কিন্তু মিলন বারবার পিছনে ঘুরে রেশমি চুরিগুলো দিকে তাকায়।বাড়িতে ঢুকেই চুপচাপ গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগল।কিছু মনে পড়তেই সাজু দিকে তাকিয়ে চোখ,মুখ উজ্জল হয়ে ওঠে।মিলন দৌড়ে রুমে ছুটে।সাজু পিছুপিছু চলে আসে।পুতুল ঘরে নেই।সেই সুযোগে ছোট মাটির ব্যাংক ভেঙে ফেলে।দুই টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ টাকা কয়েন পেলো।সবগুলো হাতে তুলে দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে স্বাধীনের রুমে ছুটে।স্বাধীনকে গুনে দিতে ব’লে।কত টাকা জমা হয়েছে।স্বাধীন গুনে দেখে।সত্তর টাকা হয়েছে।মিলন ভীষণ আনন্দ হয়ে টাকাগুলো নিয়ে মেলার দিকে ছুটে যায়।সাজু ও তার পিছু নেয়।হাতের সত্তুর টাকা দিয়ে কাচের রেশমি চুরি দিতে বলে।দোকানদার বলল,

-;এক মুঠো কাচের চুরি চল্লিশ টাকা।

দোকানদারের তখনকার কথা মনে পড়তেই হাসি মুখে দুই মুঠো চুরি সত্তুর টাকায় দিয়ে দেন।মিলন হাসিমুখে দৌড়ে ছুটে চলে যায়।সাজুও রওনা হয়।পুতুল রুমে এসে ব্যাংক ভাঙ্গা দেখে।এটা মিলনের কাজ বুঝতে পারে।নিশ্চয় মেলায় কিছু পচ্ছন্দ হয়েছে।যা মামা কিনে দিতে পারেনি।তাই এখন কিনতে ছুটেছে।পুতুল ভাঙ্গা টুকরোগুলো উঠিয়ে সব পরিষ্কার করে নেয়।নিজের পড়ার টেবিলে বসতেই মিলন রুমে প্রবেশ করে।ভাইয়ের ছোট দুই হাতে রেশমী চুরি দেখে পড়ার টেবিল ছেড়ে পুতুল দাড়িয়ে যায়।বোনের সামনেই দুই মুঠো কাচের চুরি রাখে।পুতুলের আর কিছু বুঝতে বাকি নেই।তার ভাই তার জন্য কাচের চুরি আনতে গিয়েছিল।খুশিতে দুই চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে।কাঁপাকাপা দুই হাতে ভাইয়ের দুই গাল ধরে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দেয়।আজ এতটা খুশি লাগছে পুতুল কোন ভাষায় প্রকাশ করবে বুঝতে পারছে না।তার ঈদের দিনের মতো আনন্দ লাগছে।ভাইয়ের জমানো টাকায় তার জন্য প্রথম উপহার।সে গ্রহণ না করে কিভাবে থাকবে?

-;আপু পড়বে না।

পুতুল মাথা নাড়িয়ে দিল।যার মানে সে পড়বে।মিলনকে সামনেই বসিয়ে দুই হাতে রেশমী চুরি পড়ে নিলো।সুন্দর দুই হাতে রেশমী চুরি কেমন সুন্দর মানিয়েছে?মিলন ভীষণ খুশি হয়েছে।সুখের মূহুর্তগুলো একটু বেশিই সুন্দর হয়।

৫৬.

স্বাধীন ভাই কোথায় যাচ্ছেন?
এই তো ভাই মেয়ে,আর ছেলেদের আনতে এগিয়ে যাচ্ছি।

ওহ।তাদের ওই পাশের গ্রামে পড়তে দিয়েছেন।ওই পাড়ের চেয়ারম্যান সাহেব বাড়ি চিনেন।

হ্যা চিনি।অসিম তালুকদার।তাদের বেশ নামডাক।

সেই ছেলে বছরখানিক আগে ঢাকায় পড়তে গিয়েছিল।এখন আবার গ্রামে আসছে।সঙ্গে তার দুই চাচাতো ভাই।এরজন্যই এলাকার মানুষ ভয়ে থাকত।ছেলে একটা গুন্ডা।

মানে।কার কথা বলছেন?

আরে চেয়ারম্যান ছেলে অর্পণ কথা বলছি।এই ছেলে না-কি ঢাকায় রাজনীতি করে।

ওহ।কিন্তু যারা পড়াশোনা করতে ঢাকায় যায়।তারা কি গুন্ডা হয়?

আরে সবাই না হলে কি হবে?এই ছেলে ছোট বেলা থেকে গুন্ডা।বাপ এলাকার চেয়ারম্যান।তার চাচা সাফিন তালুকদার খুলনা জেলার পুলিশ অফিসার।চাচী পাচঁ বছর ধরে হাইস্কুলে মাস্টারগিরি করে।লোকটার কথা শুনে স্বাধীন চিন্তা পরে গেলো।পুতুল,এবং দুইছেলেকে নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না তো।

ঢাকা থেকে চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে আসছে।পাঁচ বছর আগে ছেলেকে ঢাকায় অনেক কষ্টে পড়তে পাঠিয়ে ছিল।আজ ছেলে গ্রামে আসছে।রাবেয়া ছেলে আসার খবর শুনে নিজ হাতে রান্না বসিয়ে দিলো।বাবা,ছেলে এই লড়াই তার ভালো লাগে না।তবুও ছেলের ভালো জন্য চুপচাপ স্বামীর সাথে রাগ করে।বাবার বাড়িতে কিছুদিন পরে ছিল।কিন্তু বেশিদিন স্বামীর সাথে রাগ করে রাবেয়া থাকতে পারেনি।ছেলে ঢাকায় যাওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় তালুকদার বাড়িতে চলে আসে।অসীম তালুকদার বউয়ের সব দেখে ওহ কিছু ব’লে নিই।পরিবেশ সময়ের সাথে ঠান্ডা হয়েছে।

বাইক নিয়ে তিন ভাই এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে।গ্রামের সাথে তাদের পুরনো কত দূষ্টুপণা সৃতি জড়িয়ে আছে।

নিজের পুরনো হাইস্কুলে প্রাঙ্গনে পা রাখে অর্পণ।হারুন মাস্টার খবর নিতেই জানতে পারে।সে ফেনীতে টান্সফার হয়েছে।বাকি শিক্ষকদের সাথে কথা ব’লে স্কুলটা ঘুরে দেখতে থাকে।দ্বিতীয় তলায় ষষ্ঠ শ্রেনীর “ক” শাখা পার হয়ে “খ” শাখা সামনে দিয়ে যেতে নিলেই জানালার পাশে পুতুলকে দেখতে পায়।কোথায় দেখেছে ঠিক মনে করতে পারছে না।হাই স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যাম অর্পণকে দেখে এগিয়ে আসে।অর্পণ তুমি বাসায় যা ও নিই।ভাইজান কিন্তু তোমার ওপর খুব রাগ করবে আব্বু।বাসায় যাও।তোমার আম্মিজান বাসায় অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।অর্পণ আঙুল তুলে ইশারায় পুতুল দিকে তাক করে বলল,

-;চাচী এই মেয়েটি কে?

অর্পণ হাত বরাবর তাকিয়ে মাসুদা তালুকদার কপাল কুঁচকে যায়।এক প্রকার বিরক্ত হয়ে বলল,

-;তুমি ওকে চিনবে না আব্বু।ওহ রোহিতপুর থেকে এখানে পড়তে আসে।নাম পুতুল।

-;রো..হি..ত..পুর। নামটা শুনতেই অর্পণের কিছু মনে পড়ে যায়।শয়তানি হাসি দিয়ে চোখে স্নানগ্লাস পরে বের হয়ে যায়।মাসুদা তালুকদার পুতুল দিকে আরেকবার তাকিয়ে চলে যায়।এতখন ধরে তাঁকে নিয়ে কথা হয়েছে।সেই দিকে পুতুলের কোনো খেয়াল নেই।সে মনযোগ দিয়ে খাতায় অঙ্ক করতে ব্যাস্ত।একটা অঙ্গ বারবার করেও হচ্ছে না।এক পর্যায় উত্তর মিলে যেতেই বিজয় হাসি ঠোঁটে ফুটে ওঠে।স্যারকে খাতা দেখিয়ে ব্যাগ গোছাতেই ছুটির ঘন্টা পরে যায়।

৫৭.?
কারো একদিন হবো
কারো এক রাত হবো
এর বেশি কারো রুচি হবে না
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না,,

জিহান গান বন্ধ করতে একটা ইটের টুকরো ঢিল মারতেই জিহান মাথার পিছন সাইটে লাগে।
আ.বে কোন হালায় রে।
তোর বাপ হালায়।যা সর।বসতে দে।
কি মামা?এত খুশি কেন?খবর কি?
অর্পণ,জিহান হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে সব মাথায় ঠেলে দিলো।
জিহান,রিহান বাইককে বসা ছিল।অর্পন কাজে জিহান,রিহান দাঁড়িয়ে যায়।
পুরনো শত্রুকে এতদিন পরে পেয়েছি।এত সহজে পাবো আশা রাখিনি ইয়ার।জিহান কিছু বলতে নিবে।তখনই পুতুল কদম গাছের নিচে এসে দাড়াতেই,সাজু,মিলন চলে আসে।দুই ভাইকে নিয়ে সামনে এগোতে কয়েক পা ফেলে।ঠিক সে সময় পিছন থেকে ডেকে ওঠে।

ওই লিলিপুট।পুতুল এমন অদ্ভুত নাম শুনে পাত্তা দিলো না।হেঁটে চলে যেতে নিলে আবার একই ডাক।মিলন পিছনে তাকিয়ে দেখে লম্বা তিনটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।

-;আপু,লম্বুগুলো মনে হয় নির্মা ওয়াশিন পাউডার খেয়েছে।তাই দিন দুপুরে এমন করছে।তুমি এখানে সাজু সাথে দাঁড়াও আমি আসছি।বাম হাতের সাহায্যে মাথার ছোট চুলগুলো পিছনে ঠেলে পেন্টের পকেটে দুই হাত দিয়ে বড় ছেলেদের মতো ভাব নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল,

-;কি ভাই?কি সমস্যা?দিন দুপুরের আমাদের স্কুল মাঠে কি?স্যারের কাছে বিচার দিলে না।পাছা পিঠিয়ে লাল করে দিবে।

-;ওলে বাবু সোনা ব’লে কি?আমাদের পাছা পিটিয়ে লাল করবে!তার আগে তুমি ভাবতে থাকোও সোনা।এখন তিন জন একসাথে তোমাকে ধরলে তুমি পালিয়ে বাঁচতে পারবে।
এবার একটু মিলন নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে রইল।এরা তিনজন একসাথে তাকে ধরলে সে বাঁচবে কি করে?আর বোনকে সেফ করবে কি করে?দূর থেকে স্বাধীন কে আসতে দেখে মিলনের ভাবনা চলে যায়।এখান থেকে চলে যাওয়ার আগেই পেট মোচড় মারে।কিছু চিন্তা করেই হাসি চলে আসে।পিছনে ঘুরে চলে যাওয়ার আগেই বায়ু দূষণ করে দৌড় মারে।তিন ভাই দূগর্ন্ধে মুখে হাত দেয়।তাদের পেট মোচড় মেরে বমি আসতে চায়।ওয়াক্ক ওয়াক্ক করতেই তিন ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১৯
৫৮.
আব্বু জলতি চলো।পিছনে তিন পাগলা কুত্তা আসছে।আমাকে দেখলেই কামড়ে দিবে।স্বাধীনের হাত টেনে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে যায়।পুতুল,সাজু নীরব দর্শক।কি হলো ব্যাপারটা তাদের মাথায় ঢুকে নিই?

ভাই এটা কি ছিল?গ্রামে আসতে না আসতেই একটা পিচ্চি ছেলে আমাদের তিন ভাইকে ঘোল খাওয়ালো।ছি,ওয়াক্ক পেট মোচড়ে বমি পাচ্ছে।আল্লাহ আমার ইজ্জত শেষ।

অর্পণ রাগে ফুঁসতে লাগল।একজন লিলিপুট জুতা মারে।আরেকজন বায়ুদূষণ করে।এদের ভাই,বোনের কি করা যায় ভাবছে অর্পণ?পিচ্চি কান্ড মনে পড়তেই,মুখ চেপে বোতলের বাকি পানিটুকু নিজ মাথায় ঢেলে বাড়ির দিকে রওনা হয়!আজ কি বাজে অভিজ্ঞতা হলো ছি।

বাসায় পা রাখতে খিলখিল করে হাসিতে ফেটে পড়ে মিলন।স্বাধীন হা হয়ে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা এইভাবে হাসছে কেন?পাগল হলো না কি?

আব্বা কি হয়েছে আপনার?এইভাবে হাসেন কেন?

কিছু না আব্বু।এমনই হাসতে মন চাইলো আরকি?কথাটা শেষ করে ঘরে যায়।স্বাধীন নিজের কাজে জন্য বেরিয়ে পরে।পুতুল মিলনের পাগলামির কথা আর জিজ্ঞেস করলো না।এই পাঁজি ছেলে মাঝে মধ্যে এমন অদ্ভুত কান্ড করে বসে থাকে।সাজু,মিলনকে চেপে ধরতেই।গড়গড় করে কাহিনি ব’লে দিল।সাজু,মিলন সাথে হেঁসে উঠে।

-;বেশ করেছিস।আমাদের বোনকে লিলিপুট বলবে কেন?কোন এঙ্গেল থেকে তাকে লিলিপুট লাগে।লম্বু বেটা কোথাকার?

তালুকদার ভবনে পা রেখেই কারো সাথে কোনো কথা অর্পণ বললো না।নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেছে এক ঘন্টা হলো।এখনো ওয়াশরুম থেকে বের হয়নি।
রাবেয়া তালুকদার ছেলেকে এসে কয়েকবার ডেকে গেছে।সে কোনো রেসপন্স করেনি।বেলা যখন দুপুর দু’টো কাঁটার বেশি,তখনই
নিজেকে শান্ত করে রুমে ছেড়ে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে।রাবেয়া ছেলে কে খাবার দিতে দিতে আড়চোখে তাকায়।আজকে বাবা,ছেলের দেখাই হয়নি।তাহলে রাগ করলো কার সাথে?রাবেয়া বুঝতে পারছে না।
অর্পণ চুপচাপ খাবার মুখে তুলে খেতে লাগলো।

৫৯.
স্বাধীন মিয়া কি খবর?কেমন আছো?তুমি শিক্ষিত মানুষ হয়ে কেন যে গ্রামে পড়ে আছো?ঢাকায় চল।শহরের বাতাস তোমার গায়ে লাগলে বুঝতে পারবা।টাকায় সুখ,টাকাই ধর্ম।ঢাকা শহরের লাল,নীল বাতি দেইখা চোখ জুড়াইয়া যাইবো।বড় দালানে এসির নিচে বসে আরামে দিন কাটবো।

টাকায় যদি সুখ পাওয়া যেতো।তাহলে গ্রামের মানুষ এই গ্রামে থেকে চাষবাস করে খেতো না।সবাই টাকার জন্য গ্রামে ছুটতো।যেমন আপনি এবং আপনার ছেলে ছুটেছেন ঢাকায়।আপনার মতো মানুষদের জন্য ঢাকা শহরের এত জ্যাম লাগছে।ঢাকা শহরের এত কোলাহল।অতিরিক্ত লোকসংখ্যা বাড়ছে।ঢাকা শহরে হয়তো টাকার মেশিন আছে।কিন্তু এই মাটি,বায়ু,শান্ত পরিবেশ নেই।নদী,খাল বিলের পানিতে যে মাছ রয়েছে তার
স্বাদে আমি কাবু।ঢাকার চাষ করা মাছে আমার রুহ শান্তি পাবে না ভাই।এই গ্রামে আমার জম্ম।এই গ্রামে আমার শৈশব,কৈশোর কেটেছে।আমি এতেই খুশি।আমার ঢাকা পছন্দ নয়।শুধু শুধু ঢাকায় গিয়ে ঢাকার লোকজনের বিরক্ত কারণ হতে চাই না।আমি যাওয়া মানে আমার জন্য আরেকটু অতিরিক্ত জ্যাম হবে।জমিল চৌকিদার স্বাধীনকে কাবু করতে আরেকটু কিছু বলল।কিন্তু যুতসই না হওয়া চলে গেলেন।

স্বাধীন বাশঁ কেটে চারদিকে বেড়িবাঁধ দিয়ে দিলো।কলাগাছে কলা এসেছে।এখন ছোট ছোট।কিন্তু ইদানীং কলা চুরি হওয়া,বাধ্য হয়ে বাঁশ কেটে এনে চারদিকে আটকে দিলো।

কি জমিল?কাজ হলো।

না,মেম্বার সাহেব।টাকা লোভ দেখিয়ে কাজ হয়নি।

লেগে থাকো।আমার এই জমিটা চাই।স্বাধীন সরে পড়লে নিশ্চয় জমিটা পাবো।

আর যদি কাজ না হয় মেম্বার!তাহলে।

যদি আপোসসে না হয়।তাহলে ছিনিয়ে নিবো।
প্রয়োজনে স্বাধীনের লাশ পড়বে এই জমিতে।ওর রক্তে মাটি লাল হোক।আমি তাই চাই।পুরোনো কথাগুলো কিছুই ভুলিনি।আজকের মতো লেগে থাকো।এক,দুইবার কথায় কাজ না হলে শেষ করে দিবো।একদম জানে মেরে ফেলবো শূ**য়োরে বাচ্চাকে।

রেনু বসে বসে কাঁথায় নকশা করছে।শরীরটা এখন ভালো হয়েছে।সব কাজই করতে পারে।

পুতুল আম্মু কোথায় তুমি?

পুতুল ওড়নায় ভিজে হাতটা মুছতে মুছতে রেনু ঘরে ঢুকে।মামীর এক ডাকে সে হাজির।

আম্মু তোমার মামা সেই যে তোমাদের স্কুল থেকে বাসায় দিয়ে গেলো।এখনো এলোনা কেন?রাত অনেক হয়েছে।

পুতুল ইশারায় বলল চলে আসবে মামী।চিন্তা করো না।

ওই আপুরে তুই কই?তাড়াতাড়ি আয়।আমি ফাটা বাঁশে আটকে গেছি।

এটা মিলনের গলা না,বাদরটা আবার কি করলো?পুতুল দেখে আসো।আবার কি করেছে?

পুতুল উঠোনে আসতেই দেখতে পায়।তার বাঁদর ভাই প্যান্ট ধরে লাফাচ্ছে।কিন্তু কেন?সামনে যেতেই মিলন বলল,

আপু বাচাঁও।
পুতুল কিছু বলার আগেই স্বাধীন বাসায় ঢুকে।পুতুলকে চলে যেতে বলল।মিলনের প্যান্টের চেইন টান দিতেই সে বাথরুমে দৌড়।

এই ছেলের সবকিছুতেই তাড়াহুড়ো।আস্তে ধীরে কাজ কি করা যায় না?সব কিছু নিয়ে বাঁদরামী।কলপাড়ে হাত মুখ ধৌত করতে করতে বলল,

পুতুল আম্মা ভাত বাড়ো।খুব খুদা লাগছে।স্বাধীন কলপাড় থেকে চলে যেতে নিবে।সে সময়ই মিলন বাথরুম থেকে বের হয়।

আহা কি শান্তি?পেটে হাত ভুলাতে ভুলাতে বাথরুম থেকে বের হতে হতে কথাটা বলে হাসি দিলো।স্বাধীন মিলনের কান টেনে ধরে।

এই যে আব্বা আপনি ভালো হবেন না।বড় হচ্ছেন।জ্ঞান,বুদ্ধি একটু মাথায় রাখুন।

আমি আবার কি করলাম?আমার হিসু পেয়েছে।আমি হিসু করবো না।

না।আপনি কিছু করে নিই।যত দোষ,নন্দ ঘোষ এই স্বাধীনের।

৬০.
তালুকদার বাড়িতে আসর বসেছে।অসীম তালুকদার,রাবেয়া,অর্পণ,জিহান,
রিহান,মাসুদা,সাফিনকে পেয়েই আড্ডা জমেছে।তিন ছেলে আসবে শুনেই সাফিন আগেই রওনা দিয়েছিল।তাই সময় মতো বাড়িতে আসতে পেরেছে।

অর্নাস প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা সামনেই শুরু।এরপর কি করবে চিন্তা করেছো?

-;জি,চাচ্চু।অর্নাস শেষ হলেই,মাস্টার্স করার পাশাপাশি কিছু করতে চাই।

সেই কিছুটা কি অর্পণ?রাজনীতি।বাবার প্রশ্নে তাকায় অর্পণ।মাথা উঁচু করে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

হুম।

রাজনীতি তুমি বুঝো কতটুকু।আমি যতটুকু জানি এবং পূর্বের অভিজ্ঞতায় থেকে বলতে পারি।তুমি এখনো উপযুক্ত নও।পড়াশোনা করছো।তাতেই ফোকাস করো।দেশের জন্য কিছু করার সময় এখনো অনেক পড়ে আছে।আর তাছাড়া তোমার বয়স কত।একুশ বছর পূর্ণ হবে কাল বাদে পরশু।সেইজন্য বাসায় পার্টি রাখা হয়েছে।অর্নাস চার বছর ব’লে কিন্তু চার বছরে শেষ হয় না।অর্নাস শেষ করতে কিন্তু ছয় থেকে সাত বছর লেগে যায়।তারপরে মাস্টার্স করবে।তাই বাবা হিসেবে একটা রিকুয়েষ্ট করছি।এই মূহুর্তে রাজনীতি থেকে সরে আসো।অসীম তালুকদার ছেলের থেকে কোনো উত্তর পেলেন না।ছেলের সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন।অর্পণ চুপচাপ বসে রইলো।সাফিন,অর্পণ ভাতিজা এবং দুই ছেলের সাথে কথা বলায় মশগুল হলো।চাচার সাথে তার সম্পর্কটা অন্য রকম।একজন ফ্রেন্ডের মতো তার সাথে মিশতে পারলেও বাবা ছেলের সম্পর্ক দা,বটি মতো।রাবেয়া স্বামীর পিছনে ছুটে ধরতে পারলেন না।বাসায় ফিরলে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন ব’লে মন স্থির করলেন।এখন ছেলেকে সময় দেওয়া দরকার।সামনে ছেলের পরীক্ষা।ছেলেটা আবার চলে যাবে।কবে আসবে ঠিক নেই?এখন কোনোমতেই টেনশন দেওয়া যাবে না।

সবাই যার যার ঘরে চলে যেতেই অর্পণ সোফায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে।রাবেয়া ছেলের মাথাটা কোলে নিয়ে নিলেন।মাথা হাত বুলিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।

৬১.

শীতের সকালে কুয়াশা ঘেরা।শীতের সকাল দিগন্তের পার বেয়ে গাছপালার উপরে কুয়াশা পড়েছে।দূর্বলা ঘাসের ওপর শিশির জমে আছে।পাখির কিচিরমিচির শব্দ হচ্ছে।এত কুয়াশা ভেদ করে যেখানে কিছু দেখা যাচ্ছে না।একটু এগিয়ে দেখে সেখানে একটি মেয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে
ঘাসের শিশির মাড়িয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।লম্বা কালো কেশীনি চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে।পায়ে তার একজোড়া নূপুর।সেখান রিমিঝিম শব্দ শুনা যাচ্ছে।অর্পণ একটু একটু করে সামনে এগিয়ে রমনীকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতেই সে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।দূর জঙ্গল থেকে কাজল কালো চোখ দুটো মেলে তাকিয়ে তার প্রাণে।মেয়েটি মিষ্টি হাসির শব্দ সাথে তার মিষ্টি কন্ঠ সুর তুলে।কানে বাজে মিষ্টি গলার আওয়াজ।

কোন এক শীতের সকালে আমি তোমায় নিয়ে হারাবো গ্রামগঞ্জের শিশির ভেজা পথে।
তুমি প্রাণ সখা হয়ে হাতে হাতটি রেখো মোর।
জায়গায় দিও তোমার বাহুডোরে।

অর্পণ এক পা সামনে এগোতেই মেয়েটি গায়েব হয়ে গেছে।অর্পণ পাগলের মতো ছুটে।কিন্তু তার নাগাল নেই।কোথায় হারালো কেশিনী?

ফজরের আজানের শব্দে অর্পণের ঘুম ভেঙে যায়।বিছানায় উঠে বসতেই দেখতে পায়।সাড়ে পাঁচটা বাজে।তারমানে এতক্ষণ
স্বপ্ন দেখছিলাম।শিট।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে