চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-১১+১২+১৩

0
360

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১১
৩৪.
মামা গাছের কাঁচা তেঁতুল পেরে দিয়েছে।মামী সেই কাঁচা তেঁতুল মাটির চুলায় পুরিয়েছে।সরিষার তেল আর লবণ দিয়ে মাখিয়ে দিতেই পুতুল মুখে পুরে নিচ্ছে।তার টক অনেক পছন্দ।একদম মায়ের মতো।মা যেমন কদবেল খেতে পছন্দ করতো।সে ওহ পচ্ছন্দ করে।রেণুও তেঁতুল খাচ্ছে।সে একটু খেয়ে দাঁত ধরে গেছে।আর এই পিচ্চি মেয়ে টক খেয়েই যাচ্ছে।রেণু পুতুলের হাতে একটু তেঁতুল তুলে দিয়ে বাকিটা ঘরে নিয়ে খেল।এত টক খাওয়া ভালো না ব’লে।এইদিকে পুতুল মামীর কাজে অভিমাণ হলো।হাতের বাকি তেঁতুলটুকু শেষ করে।ঘরে দিকে ছুটে। মামী কাছে আবার গেলো।যদি কোনোরকম বুঝিয়ে আবার একটু পায় সেই আশায়।

মিলন ঘুমিয়ে আছে।আর সাজু বিছানায় খেলছে।রেনু আড়চোখে তাকাতেই দেখলো পুতুল চুপিচুপি ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে।রেণু দেখতে পেয়ে ওহ চুপ রয়েছে।রেণু ছেলের কাপড় ভাজ করে আলনায় রাখছে।পুতুল তার দেখাদেখি কাপড় ভাজ করে আলনায় রাখে।রেণু তাকে কিছু না বলায় তার উপস্থিতি বুঝাতে কাশি দেওয়ার মতো শব্দ করল।

-;কি রে পুতুল ঠান্ডা লেগেছে বুঝি।তুলসীপাতা রস দিব।তুলসীপাতা রস আদা দিয়ে খেলে একদম ঠান্ডা কেন?ঠান্ডার বাপও চলে যাবে।পুতুল গাল ফুলিয়ে মাথা দুলিয়ে না বলল।

-;ঠান্ডা লাগেনি বেশ।রেনু আবার চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগল।পুতুল,মামীর কাজে বিরক্ত হয়ে কাপড় হাত থেকে রেখে দিল।রেনু একটা হাম দিয়ে আবার শুয়ে পড়তে নিলেই পুতুল পা মেলে গালে হাত দিয়ে বসে রইল।যার মানে সে তাকে ঘুমাতে দিবে না।মামীর আঁচল এক হাত দিয়ে টেনে ধরে অপর হাত দিয়ে ইশারা বলল,তেঁতুল দিতে।সে খাবে।কিন্তু রেণু বুঝতে পেরে ওহ না বুঝার নাটক করতে লাগল।

-;আমার ঘুম পাচ্ছে।তুই সাজু সাথে খেল।আর না হয়,আমার সাথে ঘুমিয়ে থাক। দুপুরের ভাত ঘুমটা দেওয়া প্রয়োজন বুঝলি।এতে আরাম পাওয়া যায়।রেণু পুতুলের পা সরিয়ে সুয়ে পড়তেই।পুতুল,রেনু চোখ দুই হাত দিয়ে টেনে মেলে দিচ্ছে।যার মানে তোমার ঘুম বন্ধ।আগে আমার তেঁতুল খাওয়া।তারপর তোমার ঘুম।রেনু জোর করে চোখ বন্ধ করতে নিলে পারেনা।রেনু হেসে উঠে।আর পুতুলের পেটে কাতুকুতু দিতেই সে ওহ খিলখিল করে হেসে দেয়।

-;পাঁজি মেয়ে।আমার ঘুম নষ্ট করেছো।যাও তোমার সব তেঁতুল আমার।

পুতুল মাথা নাড়িয়ে না বল।যার মানে পুতুলের সব।মামী তেঁতুলের পেয়ালাটা বের করতে দেড়ি।পুতুল খেয়ে শেষ করতে সময় নিলো না।কেমন শব্দ করে খাচ্ছে?তার খাওয়া দেখে রেনু খেতে আবার ইচ্ছে করছিল।কিন্ত ততখনে পেয়ালা দিকে তাকিয়ে দেখে সবটা শেষ করে ফেলেছে।

৩৫.
পুতুলের কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে।তার সহপাঠীরা তাঁকে ব্যথা দিয়েছে।আজ একটুও তাড়াতাড়ি আসায় সামনে বসে পড়ে।কিন্তু কে জানতোও তারা তাঁকে আঘাত করে বসবে।পুতুল ব্যথা পেয়ে এক হাত দিয়ে কপাল ধরে কাঁদছে।মামা কাল নতুন একটা জামা কিনে দিয়েছিল।আজ সেই নতুন জামাটায় ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ।ইয়াসমিন ম্যাম আজ আসেনি।স্কুলের কাজের জন্য শিক্ষক ট্রেনিং দিতে উপজেলা গেছেন।হেড স্যার কে দপ্তরি মহিলা খবর দিয়ে আনেন।হেড স্যার পুতুলের এই অবস্থা দেখে পকেট থেকে রুমাল বের করেন।রক্ত পড়া বন্ধ করতে কপালে রুমাল চেপে ধরে।তখনো পুতুল কাঁদছে।পিন্সিপাল স্যার সব সময় শান্ত স্বভাবের মানুষ।তিনি বাচ্চাদের সাথে রাগারাগি,চেঁচামেচি পচ্ছন্দ করেন না।কিন্তু পুতুলের এই কাহিনিতে তিনি রেগে যান।সেটা মুখে প্রকাশ করেন না।শান্ত স্বরে বলল,এই ক্লাসের প্রত্যেকটা বাচ্চাদেরকে তার অফিস রুমে যেতে।পুতুলের কপালের রক্ত বন্ধ করতে তুলোতে মেডিসিন লাগিয়ে স্পর্শ করতে ব্যথা কুকিয়ে উঠে।

-;খুব ব্যথা করছে।একটু সয্য কর।আমি ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছি।ব্যথা কমে যাবে।পুতুলের মাথায় ব্যান্ডেজ করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।পুতুল চুপচাপ বসে আছে।

-;এবার বলল,তোমার পুতুলের সাথে এটা কেন করছো?আমার কথার উওর দেও।একটা কথা মিথ্যে ব’লে খবর আছে তোমাদের।

-;স্যার আমরা কেউ ইচ্ছে করে ওকে ধাক্কা দেয়নি।

-;ধাক্কা দেও নিই।ওহ এমনই ব্যথা পেয়েছে?

-;কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?

স্যার প্রতিদিন এসে আমরা আগে বেঞ্চে বসি।আজ একটু দেড়ি হয়েছে।এসে দেখি এই মেয়েটা আমাদের জায়গায় বসে আছে।তাই আমরা ওকে সরতে বলি।কিন্তু কথা না শুনায় আমার এক বন্ধু ধাক্কা দিয়েছে।আর তখনই,

-;তাই আঘাত করবে।এই শিক্ষা দেওয়া হয় তোমাদের।আর বেঞ্চের সিট কি তোমাদের নামে রেজিষ্ট্রেশন করা?তোমরা বসতে পারবে।অন্য কেউ বসতে পারবেনা।ওর নাম পুতুল।বারবার মেয়েটি মেয়েটি করবে না।আজকে যে কাজটা করেছো তা অন্যায়।দ্বিতীয় বার এমন কাজ করলে স্কুল থেকে বের করে দিবো।যাও যার যার ক্লাসে।আমি অন্য শিক্ষক পাঠাচ্ছি।সবাই চলে যেতেই পুতুল উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। তখনই মান্নান স্যার ব’লে।তুমি বস।আমি নিয়ে যাব তোমায়।ফোন করে,অফিস রুম থেকে অন্য শিক্ষক পাঠান।আর তিনি নিজে পুতুল কে ক্লাস রুমে নিয়ে যায়।

৩৬.
হেড স্যারকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে সালাম জানায়।কিন্তু স্যার প্রথম বেঞ্চের সব কয়টাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে।আর বাকিদের বসতে ব’লে।পুতুলকে সরি বলার পরে ওই পাঁচ জনকে বসতে দেওয়া হয়।
মান্নান স্যার পুতুলকে সামনে বেঞ্চে বসিয়ে দিলেন।এবং যাওয়ার আগেই বলে যান।এখন থেকে সব সময় পুতুল এই বেঞ্চে বসবে।যার আপত্তি আছে সে পিছনে দ্বিতীয়,তৃতীয় বেঞ্চ বসতে পারে।পুতুল মন খারাপ করে ক্লাস করতে থাকে।তার জন্য বাকি পাঁচ জন বকা খেলো।ওদের দিকে একবার মাথা ঘুড়িয়ে তাকাতেই সব কয়টা একসাথে মুখ বাকাঁয়।পুতুল ভয়ে সামনে তাকিয়ে ক্লাস মনযোগ দেয়।

ছুটির ঘন্টা পড়তে সবাই বেরিয়ে যায়।পুতুল সবার আগে বের হয়ে আসে।ওই পাঁচ জন যদি আবার কিছু করে।সেই ভয়টা মনের মধ্যে বাসা বাঁধে।কদম গাছটি নিচে বেশিখন দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নিই।মামা চলে আসছে।

পুতুলের মাথায় বেন্ডেজ দেখে স্বাধীন হাটু গেড়ে বসে।

-;আম্মা আপনি ব্যথা পাইলেন কি করে? এসব কেমনে হইলো?

পুতুল ইতস্তত বোধ করছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না?তবুও একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে।পুতুল মামাকে শান্ত করতে কিছু বলবে।তার আগেই স্কুলের দপ্তরি আরাফাতের আম্মু,স্কুলে আজকে হও প্রত্যেকটা ঘটনা ব’লে দেন।

স্বাধীনের মুখ কালো হয়ে যায়।পুতুলকে পড়তে দিয়েছে।কিন্তু এমন রোজ রোজ এসব হলে সমস্যা কমবে না।উল্টো বাড়তে থাকবে।
স্বাধীন মুখ কালো করেই বলল,

-;ওরা খুব বেশি ব্যথা দিছে আপনারে।আপনি কি খুব কষ্ট পাইছেন?কষ্ট পাইয়েন না আম্মা।আপনি আজ কষ্ট পাচ্ছেন।একদিন দেখবেন তারাই আপনার সাথে বন্ধুত্ব করে নিবে।আপনার গল্পটা এখন থেকে শুরু হয়ে গেছে।আমার আম্মা।আমার পুতুল আম্মার লড়াই।
এক রাজকন্যা লড়াই।এক মা।এক নারী রাজিয়া।যার জীবন কষ্টে গেছে।দুনিয়ায় ছাড়ছে।কিন্তু সন্তান ছাড়ে নাই।সেই মায়ের সন্তান আপনি।যার চক্ষে তৃষ্ণা।যার হাতে জাদু।তার জাদুর ছোয়া সব একদিন বদলে যাবে।আপনার কষ্টের দিন শেষ হবে একদিন।
মামা কথায় কি মায়া আছে পুতুল জানে না?কিন্তু মামা যখন স্যারদের মতো বড় বড় ভাষণ দেয়।তার শুনতে ভালো লাগে।সে সব কথা মন দিয়ে শুনে।এই কথাগুলো শুনতেই তার মনটা কেমন যেন হয়ে যায়।ভেতর থেকে শব্দ বের হতে চায়।চিতকার করে বলতে মনে চায়।

আমি পারব মামা।তুমি দেখে নিও।আমি পারব।

পুতুলকে নিয়ে বাসায় পৌঁছানোর পথেই ডাক্তার দেখিয়ে আনে স্বাধীন।ক্ষতটা গভীর নয়।তাড়াতাড়ি সেড়ে যাবে।

মোস্তফা সরোয়ার এবং তার মা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।পাচঁ বছর পর মুক্তি পেয়ে মা,ছেলে খোলা আকাশের নিচে নিশ্বাস নিচ্ছে।কতদিন হয়ে যায়,তারা জেলে বন্দী ছিল।আলতাফ হোসেন এবং স্বাধীন পুলিশ হাতে তুলে না দিলে বোধহয় ভালোই থাকত।এবার যখন ছাড়া পেয়েছে।ভাই,বোন দু’জনকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার প্ল্যান করে নিয়েছে।রাজিয়াকে আরো কঠিন শাস্তি দেওয়ার কথা ভেবেই শয়তানি হাসি দিলো।তার দ্বিতীয় সন্তান দুনিয়ায় এসে গেছে এতদিনে নিশ্চয়।এই বাহানায় রাজিয়া বাপের বাড়ি পা রাখবে।মোস্তফা মাকে বাসায় পাঠিয়ে,রাজিয়া বাড়িতে পথে হাঁটা ধরে।এখন তার উদ্দেশ্য রাজিয়া ক্ষতি করা।রাজিয়া ক্ষতি মানে স্বাধীনের ওপর পুরনো রাগটা মিটিয়ে নেওয়া।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১২
৩৭.
ফজরের আজান হয়ে গেছে।হেমন্ত রানী দূয়ারে কড়া নাড়ছে।শীতের অবস্থান হেমন্তের পর বসন্তের আগে।হেমন্তের ফসল ভরা মাঠ যখন শূন্য ও রিক্ত হয়ে পড়ে,তখনই বােঝা যায়,ঘন কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীত আসছে।উত্তরের হিমেল হাওয়ায় ভর করে হাড়ে কাপন লাগিয়ে সে আসে তার নিজস্ব রূপ নিয়ে।প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয় এক ভিন্ন সৌন্দর্য।এ সৌন্দর্য পূর্ণতা পায় শীত সকালে।
পুতুল ফজরের আজান শেষ হতেই কাঁথা ছেড়ে মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিলো।বিছানা ছেড়ে পায়ে স্যান্ডেল পরে কলপাড়ে আসে।ওযু করে নামাজে দাঁড়ানো আগেই মিলন,সাজুকে টেনে উঠালো।ফজরের নামাজের জন্য মামা ওঠে গেছে।তাদের দুইজনকে ডাকতে এই এলো ব’লে।পুতুল এত ডাকছে এদের কোনো নড়চড় নেই।পুতুল বুদ্ধি করে মাটির কলস থেকে ঠান্ডা পানি গ্লাসে উঠিয়ে নিলো।ওদের মুখে ওপর পানি ফেলতেই,

-;ওরে সাজুর বাচ্চারে।তুই আবার হিসু আমার মুখের ওপর করেছিস।শালা তোর কপালে বউ নাই।সর তুই।মিলন কথা শেষ করেই সাজুকে লাথি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিল।সাজু মুখ কালো করে বলল।

-;মিথ্যে কথা।আমি হিসু করিনি।তুই প্রত্যেকবার হিসু করে আমার নাম দিস।তুই এত পঁচা কেন?

-;আমি পঁচা না-কি তুই পঁচা?তুই সব সময় এমন করিস বেয়াদব।মিলন বাকি কথা শেষ করার আগেই পুতুল ঠাসস করে ভাইয়ের পিঠে থাপ্পড় মেরে বসে।রাগী চোখে তাকাতেই দুটোই চুপচাপ উঠে পড়ে।স্বাধীন ডাক দিতেই গরম কাপড় আর মাথায় টুপি পড়িয়ে দুই ভাইয়ের কপালে চুমু একে দেয়।তারা চলে যেতেই পুতুল নামাজ দাঁড়িয়ে পড়ে।মাথায় ওড়না হিজাবের মতো করে পড়তেই মেয়েটিকে শুভ্রময় লাগছে।

৩৮.
সকালে সূর্যমামা যখন উকি দেয় গাছ ও ঘাসের উপর তখন রাতের ঝরা শিশির সােনার মতাে জ্বল জ্বল করতে থাকে।শীতের সকালের এক অসাধারণ আকর্ষণ সরষে ফুলের হলুদ মাঠ।সকালের সূর্যালােক যেন তার নিপুণ হাতে প্রতিটি সরষে গাছকে নবরূপে ঢেলে সাজায়।পশু-পাখি সূর্যের আলাে দেখে আনন্দিত হয়।কৃষকরা গরু ও লাঙল নিয়ে মাঠে যায়।তাদের হাতে শােভা পায় তুঙ্কা।ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সূর্যের মুখ দেখার জন্য বারবার জানালার ফাঁকে উঁকি মারে।কোথাও বা ছেলেমেয়েরা খড় সংগ্রহ করে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করে,আর হাসি-তামাশায় মেতে উঠে।বৃদ্ধ লােকেরা রোদ পােহায়।কিছু লােক খেজুরের রস বিক্রি করতে বের হয়।অনেকেই ঘরে তৈরি পিঠা ও খেজুরের রস খেতে পছন্দ করে।বেলা বেশি হওয়ার সাথে সাথে শীতের সকালের দৃশ্য ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।বেলা বেড়ে চলে, কুয়াশা দূরীভূত হয় এবং লােকেরা তাদের নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।স্বাধীন দুই বাদরকে নিয়ে নামাজ পড়ে বাড়িতে পা রাখতেই ভাপা পিঠার গন্ধ পাওয়া যায়।পুতুল,রেণু মিলে ভাপা পিঠা তৈরি করছে।মাএ তিন চারটা পিঠে হয়েছে।বাকি পিঠাগুলো তৈরি করতে একটু সময় লাগবে।কিন্তু মিলন,সাজুর ধৈয্য নেই।হাঁড়ি থেকে পিঠা নিয়ে তাতে কামড় বসিয়ে দিয়েছে।পিঠা খেতে খেতে বলল।

-;হুম,পিঠা মজা।

পুতুল মিষ্টি হাসি দিলো।মামীকে দিয়ে মামার জন্য তিনটা পিঠা পাঠিয়ে বাকিগুলো শেষ করে নিলো।এগারো বছরের ছোট মেয়েটি আজ সংসারে কাজে পারদর্শী।পড়াশোনা চলছে এখনো।সামনে সমাপনী পরীক্ষা।

রেনু সাত মাসের উঁচু পেট নিয়ে স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে পিঠা এগিয়ে দেয়।স্বাধীন বউকে ধরে আস্তে করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।রেনু’র পা ফুলে গেছে।শরীরে পানি এসেছে।দ্বিতীয়বার মা হচ্ছে রেনু।চেহারা কেমন গুল মুল হয়ে গেছে।বেশি কাজ করতে পারে না।অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠে।পুতুল বাসায় যতখন থাকে সব কাজই করে রাখে।সে প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজ পড়েই বাড়ি,ঘর,উঠোন ঝাড়ু দেয়।থালাবাসন ধুয়ে রাখে।সকালে হাড়িতে করে রান্না চড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে,দুই ভাইয়ের পড়াশোনা থেকে সবই খেয়াল রাখে।তার কোনো অভিযোগ নেই।মেয়েটি এতটা ভালো কেন?জানা নেই রেনুর।

-;বউ তোমার কি বেশি খারাপ লাগে?আমার থেকে কিন্তু কিছু লুকিয়ে রাখবা না।

-;উত্তেজিত হচ্ছ কেন?আমি ঠিক আছি।খারাপ লাগলে জানাবো।তুমি আছো তোও।

-;আমি থেকেও তো আমার বোনকে সেই দিন বাঁচাতে পারিনি।কতটা কষ্ট নিয়ে দুনিয়ায় মায়া ত্যাগ করেছে।ভাই হয়ে রক্ষা কোথায় করলাম?

-;ওইসব পুরনো কথা কেন মনে রাখ?ভুলে যা-ও না।

-;সব কথা চাইলে কি ভুলে যাও যায়?আমার সামনেই সন্তান দুটো মা বিহীন কষ্ট পায়।আমি বুঝতে পারি।

রেনু,স্বাধীনের মন ভালো করতে কথা ঘুরিয়ে বলল,

-;পুতুল কিন্তু প্রাইমারি স্কুল শেষ হয়ে আসছে।নতুন স্কুলে ভর্তি করানোর কথা কিছু ভাবলেন।

-;হ্যা,তালেপুর হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবো।

-;এই যা,শুধু কথা বলছি।আপনার জন্য ভাপা পিঠা এনেছিলাম।সেটা দিতে ভুলে গেছি।খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে?আজকের পিঠা পুতুল তৈরি করেছে।আমি শুধু হ্যাল্প করেছি।কিভাবে,কতটুকু দিয়ে করতে হবে।স্বাধীন হালকা গরম পিঠা মুখে দিয়ে বলল।

-;আম্মার হাতের রান্না দারুণ হয়েছে।

৩৯.
পুতুল পড়তে বসেছে।সামনে পরীক্ষা।মামা মান,সম্মানের কথা চিন্তা করেই এত মনোযোগ দিচ্ছে।কোনোমতে মামাকে তার রেজাল্ট নিয়ে নিরাশ করতে চায় না।এত কষ্ট সব কি এমনই এমনই বৃথা যেতে দিবে?কখনোই না।সে দেখিয়ে ছাড়বে।পড়াশোনা তার জন্য বেস্ট অপশন ছিল।আর এখনো আছে।এই পড়াশোনা জন্য তাকে মানুষেরা কম কথা শুনাতে ছাড়ে নিই।সবার সকল অত্যাচার সব মুখ বুঝে সয্য করেছে।প্রতিদিন ক্লাসে মনযোগী হতে হয়েছে।ওই পাঁচজন তাকে শান্তি মতো পড়তে দেয় নিই।কখনো বই,খাতা ছিঁড়ে ফেলছে।কখন তাকে কটুকথা শুনিয়েছে।তার দোষ একটাই ছিল।সে কেন তাদের সাথে শত্রুতা করলো।অথচ পুতুল নিজে থেকে কিছুই করে নিই।তবুও কথা শুনতেই হতো।পাঁচ বছর হয়ে এলো তার স্কুল জীবনের সমাপ্তি হতে চলেছে।আবার নতুন স্কুল,নতুন পরিবেশ হবে।সেখানে কি অপেক্ষা করছে তার জন্য?জানা নেই।তবুও সে পড়বে।তার স্বপ্ন পূরণ সে করবে।সব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ায় মনযোগ দিলো।

রাজিয়া,আরে এই রাজিয়া বাহিরে আসো।দেখে যাও তোমার স্বামী আইছে।

উঠোন থেকে কারো গলার শব্দ পেয়ে পুতুল বই বন্ধ করে দিলো।মাথায় ওড়না দিয়ে ঘর থেকে বের হতেই চমকে উঠে।মোস্তফা সরোয়ার তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মুখে হাসি,হাতে মিষ্টির প্যাকেট।এই লোকটা এতদিন বাদে এই বাড়িতে কেন এসেছে?পুতুল জানতে চায় না।এই লোকটার মুখ সে কোনোদিন দেখতে চায় নিই।আজ সেই লোকটা তার সামনেই মিথ্যে হাসি নিয়ে দিব্যি দাঁড়িয়ে।রাগে শরীর কাপছে।চোখ দিয়ে পানি আসছে।পুরনো অতীত মনে হতেই।মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে। এই লোকটা দায়ী।তার মায়ের খু*নি।এরজন্য আজ তাদের মাঝে মা নেই।তাদের মা,ছেলের জন্য দিন,রাত তার মা কষ্ট পেয়েছে।কেঁদেছে।তার মায়ের কান্না স্বাক্ষী সে নিজে হয়েছে।আজ তাদের জন্য সে এবং তার ভাই এতিম।তার মা’কে কেঁড়ে নিয়ে।আজ আবার কেন এসেছে?চিতকার করে বলতে ইচ্ছে করছে।

কেন এসেছেন?মাঝ নদীতে ফেলে দিয়ে এতদিন পরে দেখতে এসেছেন।বেঁচে আছি না-কি মরে গেছি।আমি আপনার এই মুখ দেখতে চাই না।আপনি একজন প্রতারক।মিথ্যেবাদী।একজন জুলুম কারী।পুতুলের গলা দিয়ে একটা কথা বলতে পারলোনা।আজ খুব করে আপসোস হচ্ছে!আল্লাহ কেন তার গলায় স্বর দিলেন না।গলার আওয়াজ থাকলে কথা তুলে ধরতো বাবা নামের অমানুষটার সামনে।এমন লোককে অপমান করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতো।কিন্তু পুতুল মুখ দিয়ে চেষ্টা করে ওহ একটা শব্দ বের করতে পারেনি।

পুতুল রাগে দুঃখে মামাকে ডাকতে ক্ষেতে দিকে গেলো।সবুজ ধানের সীমানা পেরিয়ে আলু ক্ষেতের সামনে দাঁড়িয়ে মামাকে হাত দিয়ে ডাকতে লাগল।কিন্তু তার ইশার বা কোনো শব্দ স্বাধীনের কানে যায় নিই।সে নিচু হয়ে ক্ষেতের মাঝে উল্টো দিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।পুতুল ডাক মামার কানে পৌঁছায় না।পুতুল আলুর ক্ষেতে নেমে গেলো।কাদামাটিতে তার পা,গায়ের থ্রী পিছ নষ্ট হচ্ছে।সেই দিকে মনযোগ নেই।সে মামাকে তার উপস্থিতি বুঝাতে ব্যাস্ত।হাতের বাহুতে ছোট একটি নরম হাত পড়তেই স্বাধীন ঘুরে তাকিয়ে চমকে যায়।পুতুলের চেহারা লাল হয়ে আছে।অতিরিক্ত কান্না ফলে কোনো কিছু বলার মতো অবস্থা নেই।স্বাধীন ভয় পেয়ে গেলো।বাড়িতে কিছু হলো কি?

-;আম্মা কি হয়েছে?আপনি কান্না করছেন কেন?বাড়িতে সব ঠিক আছে তো।রেণু কিছু হয়েছে?আপনি কান্না বন্ধ করুন।আমায় খুলে বলুন।পুতুলের কান্না বন্ধ হয়না।স্বাধীনের টেনশন বেড়ে যায়।ক্ষেতের কাজ ফেলে বাড়ির দিকে দৌড় লাগায়।পুতুল তার পিছনে ছুটে চলে।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১৩
৪০.
বারান্দায় বসে পায়ের ওপর পা তুলে আপন মনে পা নাচিয়ে যাচ্ছে মোস্তফা সরোয়ার।রেণু দিকে আড়চোখে তাকিয়ে পুরো শরীরে চোখ বুলিয়ে শয়তানি হাসি দিলো।তার এমন কাজে রেনু অস্তিত্বটা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।গায়ের কাপড় দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে মুড়িয়ে নিয়ে পুতুল আর স্বামী অপেক্ষা করতে লাগল।লোকটাকে তার সুবিধার লাগছে না।আসার পর থেকেই উল্টা পাল্টা কথা বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে সীল নোরা দিয়ে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।অসভ্য কোথাকার!

স্বাধীনের ভয়ে বুক কাপছিল।বাড়িতে পা রেখেই বউকে খোঁজ করে।বউকে ঠিকঠাক দেখে দম ছাড়ে।কিন্তু মোস্তফা সরোয়ার কে চোখের সামনে দেখে মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে।

-;তুই।তুই এখানে আমরা বাড়িতে কোন সাহসে আসছিস?আমার বাড়িতে আসার সাহস পেলি কি করে?বের হ আমার বাড়ি থেকে।তোকে আমি পুলিশ কাছে দিবো।তোর মতো অমানুষ আমার বাড়িতে পা দিয়ে জায়গাটা নষ্ট করে ফেলেছিস।আমার বাড়িতে তোর জায়গায় হবে না।

-;আরে ভাইজান রাগ করেন কেন?আমি থাকতে আসি নাই।চইলা যামু।আমার জিনিস আমাকে বুঝিয়ে দিন।

-;তোর জিনিস মানে?

-;এই যে আপনার সামনে আমার মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমার বউ,বাচ্চা সবইতো আপনার বাড়িতে।তাদের কে আমার হাতে তুলে দিন।আমি চলে যাই।পুতুল মা বাবার কাছে আসো। মোস্তফা,পুতুলের দিকে হাত বাড়াতে,পুতুল ভয় পেয়ে কয়েক কদম পিছনে চলে যায়।স্বাধীন চিতকার করে উঠে।

-;কে তুই?আর কিসের বউ,বাচ্চা?

-;আরে আপনি ভুইলা গেছেন।কিন্তু আপনার বোন ভালো করেই জানে আমি কে?তারে ডাক দেন।সেই বলব আমি কে?

-;তালাক দেওয়ার পর কিসের বউ?রাজিয়া এখানে নেই।এখন তুই বিদায় হ।

-;রাজিয়া কই গেছে?

-;সেটা তোকে বলার প্রয়োজনবোধ করছি না।

-;ওহ,বুঝতে পারছি।আমি তালাক দিছি দেইখা তোর বোন অন্য আরেকজনের সঙ্গে ভাগছে না-কি।শালী আমারে দিয়া হ….মোস্তফা কথা শুনে স্বাধীন নাক বরাবর ঘুসি মেরে বসে।স্বাধীন করা হঠাৎ আঘাতে মোস্তফা সরোয়ার বসে পড়ে।রেণু,স্বামী রাগ দেখে ভয় পেয়ে মুখে হাত দেয়।পুতুল একটু দূরে মোমের পুতুল মতো দাঁড়িয়ে আছে।মোস্তফা উঠে দাঁড়ানোর আগেই আবার একটা ঘুসি লাগিয়ে শার্টের কলার ধরে বাড়ির উঠোনে বাহিরে ছুড়ে মারে।

-;তোর মতো কুকুর রাস্তায় মানায়।ঘরে শোভা পায় না।আমার বোনকে নিয়ে আরেকটা কথা ব’লে তোর জিহ্বা আমি কে*টে নিবো।

-;আজকে যাচ্ছি।কিন্তু কাল আমি আবার আসব।আমার বউ,বাচ্চা চাই।তাদের না নিয়ে আমি যাবো না।

-;আমি স্বাধীন বেঁচে থাকতে তোর হাতে ওদের কোনোদিন তুলে দেব না।তোর যা করার করে নে।আমি ভয় পাই না।

মোস্তফা সরোয়ার নাকের আর ঠোঁটের রক্ত মুছতে মুছতে চলে যায়।এইদিকে পুতুল ঘরে ঢুকেই কান্না ভেঙে পড়ে।এই লোকটা জন্য তার মা বেঁচে নেই।আজ আবার এসেছে।নিশ্চয় তাকে জোর করে নিয়ে যাবে।পুতুল মনে ভয় ঢুকেছে।সে নিজেকে শান্ত করতে পারছেনা।লোকটা কোনোভাবে তার ভাইয়ের খোঁজ পেলেই নিয়ে যাবে।তার কাছ থেকে ভাইকে কেড়ে নিবে।পুতুল দৌড়ে মামা কাছে যায়।মামা পায়ে হাত দিয়ে বারবার ইশারা করছে।তার ভাইয়ের পরিচয় জেনো ওই লোকটা জানতে না পারে।একবার জানতে পারলেই ওরা নিয়ে যাবে তার কাছ থেকে।পুতুল ইশারা বুঝতে পেরে স্বাধীন শান্ত হতে বলল।কিন্তু মেয়েটা শান্ত হচ্ছে না।ফুফিয়ে কান্না করছে।

৪১.
সাজু আর মিলন বাসায় ছিলো না।খেলাধুলা করে এসে দেখে আপু কান্না করছে।আপুকে কান্না করতে দেখে দৌড়ে দুই ভাই আসে।

-;আব্বু,আপু কান্না করছে কেন?আম্মু,আপু কান্না করে কেন?

-;আপু কি ব্যাথা পেয়েছে?

মিলন,আর সাজুকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেনু।বলল,

-;আপু সামনে পরীক্ষা তাই চিন্তায় কান্না করছে।রেজাল্ট যদি খারাপ হয়।

মিলন,রেণু গাল ধরে বলল,

-;আম্মু,আপুর রেজাল্ট একটুও খারাপ হবেনা তুমি দেখে নিও।আপু ভালো করবে।মিলন, সাজু দুই দিক থেকে বোনকে জড়িয়ে ধরে।

একটু দূর থেকে স্বাধীন,রেণু সবটাই দেখে।রাজিয়া মারা যাওয়ার পর পুতুল তার ভাইকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে।কিন্তু মিলন বড় হতেই স্বাধীনকে আব্বু এবং রেনুকে আম্মু ডাকতে শুরু করে।এই পাঁচ বছরের ছেলেটি জানতেই পারেনি।তার মা তাকে দুনিয়ার আলো দেখাতে গিয়ে নিজের মায়া ত্যাগ করেছে।স্বাধীন পরবর্তী বলতে চাইলে পুতুল বলতে নিষেধ করে।এতটুকু বয়সে যখন জানবে তার মা নেই।সেই ধাক্কাটা সামলাতে পারবে না।তাই পুতুল জন্য রেনু,স্বাধীন কখনোই আর কিছুই ব’লে নিই।গ্রামের সবাই এক সময় রাজিয়া ব্যাপারটা জানলেও গুরুত্ব দেয় না।সবাইকে স্বাধীন ব’লেছে।তার দুই ছেলে এক মেয়ে।পুতুল জানে সে তার মায়ের এক মেয়ে।তার কোনো ভাই নেই।তার মায়ের সাথে সাথে তার ভাই মারা গেছে।এটাই এতদিন মেনে এসেছে।সরোয়ার পরিবার কেউ জানুক তার ভাই বেঁচে আছে।এটা সে চায় না।আর চায় না ব’লে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখে।মিলন জানে রাজিয়া তার ফুপু ছিল।এটা তার ফুপুর মেয়ে।সে তাদের দুই ভাইয়ের আপু।আর কারো নয়।সাজু যেমন একটু শান্ত সৃষ্ট।তেমনই মিলন চঞ্চল চটপটে ছেলে।

৪২.
মোস্তফা মার খেয়ে বাড়িতে পা রাখতেই নাসিমা দৌড়ে আসে।ছেলে এমন আঘাত কেমতে পেলো জানে না?কিছু বলতে নিলেই মোস্তফা রাগে কটমট করতে থাকে।

পাঁচ বছর পর জেল থেকে বের হয়ে সেলুন থেকে চুল,দাঁড়ি কাটিয়ে গেলাম।আর আমাকে কি-না অপমান করে বের করে দিলো।খুব দেমাগ দেখায়।ওদের দেমাগ আমি ভাইঙ্গা যদি গুড়া না করছি তোও।আমার নাম মোস্তফা সরোয়ার না।মা,ছেলে দেখা শুরু করেন।পুতুলকে আমি বিয়া দিমু।

-;কি কস তুই?স্বাধীন শুনলে খবর আছে।

-;কি করব আমার?আমার বা*ল করতে ও পারব না।আইন মতে আমি ওর বাপ।তাই আমি যা কমু তাই হইবো।মা’ইয়া বোবা।অল্প বয়সী সুন্দরী আছে।চালচুলোহীন ছেলে দেখ।পঙ্গু পোলা হইলেও হইবো।বিয়া ওর এই বছর দিমু।

-;শুনছি।তোর মাইয়া পড়ে।তার কি হইবো?

-;মাইয়া মানুষ এত পইড়া কি করব?দিন শেষে পরে বাড়িতে গিয়া চুলা গুতাইবো।ওর পড়া লাগব না।সব বাদ।বিয়া দিমু।পরে বাড়িতে যাইয়া ঘর সংসার করব।

-;আইচ্ছা তুই শান্ত হ।বিয়া দিমুনি।তয় আমার একটা কথা বলার ছিল।পুতুল আর কোনো ভাই,বোন নাই।এই সুযোগে পুতুল হাত করতে হইবো।আঠারোতে পা দিলেই আমাদের নামে বাড়ির সম্পত্তি লেইখা নিতে হইবো।সম্পত্তি না পাইলে দুইদিন পর রাস্তায় নামতে হইবো।ফকির হইতে চাস।

-;কেন ফকির কেন?পুতুলকে রাজি করাও।যেভাবেই হোক।সম্পত্তি আমাদের হলেই হলো।এরপর ওহ মরলো না বাঁচলো।তাতে আমার কি?

সারাদিন চলে গেলো পুতুল ঘরে ঢুকার পর আর ঘর থেকে বের হয়নি।খাবার মুখে তুলে নিই।রাতে খাবার রেনু বেড়ে দিতেই মিলন,সাজু আপু কাছে খাবার নিয়ে যায়।

-;আপু,আপু উঠ।তোমার জন্য খাবার আনছি।তাড়াতাড়ি খাও।

পুতুল মাথা নাড়িয়ে না করে দিল।সে খাবার খাবে না।কিন্তু মিলন,সাজু পুতুল কথা শুনতে রাজি নয়।দুইজন ঘরে আসার আগেই সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে আসছে।ভাত সাথে লাউ শাক মাখিয়ে বোনের মুখে তুলে দিল।যার মানে হা কর।পুতুল দুইবার মাথা নাড়িয়ে না করে।কিন্তু মিলন হাতে খাবার তুলে বলল।

-;ওরে আল্লাহ আমার হাত ব্যাথা হইয়া গেল। তাড়াতাড়ি মুখে নেও।আমার এতটুকু হাত।তোমার জন্য কতক্ষণ ধরে রাখব বাপ।

মিলন কথা শুনে পুতুল চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।সাজু পাশে বসে হাসছে।পুতুল বুঝতে পারছে।তাকে না খাইয়ে এ থামবে না।তাই চুপচাপ খাবারটা মুখে পুরে নিলো।

একবার মিলন খাবার খাওয়াচ্ছে।আরেকবার সাজু খাবার মুখে তুলে দিচ্ছে।এভাবেই এক প্লেট ভাত শেষ হয়েছে।রাতের খাবারের সাদা ভাত,লাউ শাক ভাজি,আর মুসুরি ডাল ছিল।
তবুও এই খাবারটাতে শান্তি রয়েছে।এটা কষ্টের টাকায় কেনা।হালাল খাবার অল্পতেই পেট ভরে যায়।আর হারাম টাকায় যতই খাবার খাওয়া হয় না কেন?তবুও অভাব অপূর্ণ থাকে।মনে হয় পেট ভরে নিই।আরও খাবার প্রয়োজন ছিল।

দুই ভাইকে ঘুম পারিয়ে পশ্চিম দিকের জানালা খুলে পুতুল দাঁড়িয়ে রয়।আজ তার দুই চোখে ঘুম নেই।শীত শীত করছে তবুও জানালা খুলে দাড়িয়ে আছে।আকাশে বিশাল আকৃতির চাঁদ উঠেছে।তার চারপাশে তারা জ্বলজ্বল করছে।সেই চাঁদ দিকে তাকিয়ে থাকতেই দেখতে পায়।মায়ের হাসিমুখখানা।পুতুল মায়ের মুখটা মনে করেই হাসে,আবার কাঁদে।সামনে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে জানে না?পাঁচ বছর সবকিছু ভালোই চলছিল।তাহলে আবার পাঁচ বছর পর কেন এলো?তার বাবা নামক লোকটা জন্য ঘৃনা ছাড়া কিছুই নেই।সেই লোকটা তার জন্য তার ভাইয়ের জন্য সুবিধাজনক নয়।কে জানে সামনে তার সাথে কি হতে চলেছে?

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে