চক্রব্যূহ পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
40

#ধারাবাহিক গল্প
#চক্রব্যূহ
শেষ পর্ব
মাহবুবা বিথী

পড়শী বাংলাদেশ বিমানের টিকিট কেটে দেশের পথে রওয়ানা দেয়। শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানো মাত্রই ওর মোবাইলটা বেজে উঠে। তাকিয়ে দেখে সায়েম ফোন দিয়েছে। পড়শীও ফোনটা রিসিভ করে।
—-হ্যালো,
—-শুনলাম মহারানির ডিভোর্স হয়ে গেছে?
—-হুম,
—আপনি নাকি দেশে আসছেন?
পড়শী বুঝেছে সায়েম ওর হাসব্যান্ডের কাছ থেকে সব জেনে নিয়েছে। পড়শীকে চুপ থাকতে দেখে সায়েম বলে,
—-এখন তো আর কোনো বাঁধা নাই। তুমি টাকা না দিতে পারলে সমস্যাও নাই। তুমি শুধু আমার হয়ে থাকো। বিশ্বাস করো, তোমার মতো সুখ এই পৃথিবীতে আমাকে কোনো নারী দিতে পারেনি। বিয়েও করেছিলাম। কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারিনি।
পড়শী এই মুহুর্তে ওর প্লান বদলে ফেলে। তাই সহজ স্বাভাবিক ছন্দে বলে,
—আমাকে কোথায় আসতে হবে?
—-সত্যি তুমি আসবে?
—-কেন নয়?
—-তাহলে গাজীপুরে বাংলোবাড়িটায় আসো। যেখানে আমাদের প্রথম মিলন ঘটেছিলো। আর একটা কথা।
—-বলো,
—-দুবোতল হুইস্কি কিনে এনো।
—-ওকে।
পড়শী ওর প্লানমাফিক সব কিছু কিনে নিয়ে উবারে করে গাজীপুরের দিকে রওয়ানা হয়। বিকাল পাঁচটায় ও গাজীপুরে পৌঁছায়। ওখানে আগে থেকেই সায়েম ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো। সায়েম ওকে দেখার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-কেমন আছো মেরি জান?
—বাংলোর কর্মচারীরা পড়শীর দিকে যেন কেমন করে তাকিয়ে থাকে। সেদিকে তাকিয়ে পড়শী ঘরে এসে ভুবনমোহিনী হাসি দিয়ে সায়েমকে বলে,
—-,আজ আমরা প্রেমাতাল হবো। কিন্তু একটা সমস্যা আছে।
—-কি সমস্যা?
—-তোমার বাড়ির এতো কর্মচারীর সামনে সেটাতো সম্ভব নয়।
—-ওকে আমি ওদের সবাইকে আজ ছুটি দিয়ে দিচ্ছি।
সায়েম ডিনারের পর ওদের সবাই চলে যেতে বলে। ওরাও চলে যায়। পুরো বাড়ি নির্জনায় ঢেকে রয়। পড়শী ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে একটা লাল রংয়ের শর্ট নাইটি পড়ে আসে। সায়েম ওকে দেখে পাগল হয়ে যায়। পড়শীর ফর্সা রঙের পা, গলার অংশটা বড় হওয়ায় স্তন বিভাজিকা দেখে লালসার আগুনে সায়েম পুড়তে লাগলো। সেদিকে লক্ষ্য করে পড়শী মনে মনে গালি দিয়ে বলে,”কুত্তার সামনে মাংস ঝুলিয়ে দিলে যে অবস্থায় হয় শয়তান তোর অবস্থাও এখন তেমন। এরপর ও খিলখিল করে হেসে বলে,
—-এতো তাড়া কিসের? আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না। আমেরিকার হুইস্কি খাবে না।
—-তুমি সত্যি আমার জন্য নিয়ে এসেছো?
—-তুমি বলেছো আর আমি আনবো না, তা কি করে হয়?
পড়শী হুইস্কির বোতল বের করে গ্লাসে ঢেলে দেয়। কামনার আগুনে পুড়তে থাকা সায়েম পড়শীকে পাওয়ার তাড়নায় ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।এরপর ও ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো। পড়শীও আর একমুহুর্ত অপেক্ষা না করে প্রথমে ওকে বালিশ চাপা দিয়ে মারলো। তারপর সাথে করে আনা ছুড়ি দিয়ে ওর বুক বরাবর কেটে ফেললো। ফিনকি দিয়ে রক্ত এসে পড়শীকে ভিজিয়ে দিলো। সেদিকে তাকিয়ে পড়শী পাগলের মতো কতক্ষণ হাসলো। তারপর সায়েমের চোখটাকে ছুড়ি দিয়ে গুতো দিয়ে বললো,
“তোমার ঐ চোখে আমি ধরা পড়েছিলাম। আর আমার সরলতার সুযোগে তুমি আমাকে পাপের অতলে তলিয়ে দিলে। আমি আবার উঠে দাঁড়ালাম। কিন্তু তুমি আমাকে আবারও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে। তাই তোমা হতে আমার পাপের শুরুটা হয়েছিলো। সে কারনেই তোমাতেই বিনাশ করলাম।”
এরপর পড়শী ড্রেস চেইঞ্জ করে জিন্স আর একটা ফতুয়া পরে নিলো। একটা ওড়না দিয়ে মাথাটা ঢেকে নিলো। এরপর সকাল হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলো। হঠাৎ ভোর চারটায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। পড়শী সেই দখিনা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবলো,
—-ও কতো স্বপ্ন নিয়ে জীবনটা শুরু করেছিলো। অনেক বড় হওয়ার তাড়নায় ঢাকা ভার্সিটি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে ভর্তি হলো। এই মানুষটা ওর সব স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিয়েছে। তবে ঐ পাপিষ্টাকে ও শাস্তি দিতে পেরেছে এই সান্তনাটুকু নিয়ে ও বাকি জীবন দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারবে। সায়েম যখন ওকে ফোন দিয়েছিলো সেই মুহুর্তে ওর মনে হলো এই নোংরা মানুষটার জন্য ও কেন মরতে যাবে? তখনই এই প্লানটা ও মাথায় এঁটে নিলো। এজন্য এয়ার পোর্টে নেমেই বাংলাদেশ বিমানে অনেক দামে ফিরতি টিকিট কেটে নিয়েছিলো।
সকাল ছ,টায় বৃষ্টি থেমে গেল। পড়শী একটা উবার ডেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। দুপুর আড়াইটার সময় ও বাংলাদেশ বিমানে করে কানাডায় পাড়ি জমালো। ওদিকে বাংলো বাড়িতে কর্মচারীরা এসে সায়েমকে এ অবস্থায় দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে পড়শীকে হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলো। পড়শী কানাডায় পৌঁছে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে। বিচারের অপেক্ষায় পড়শীকে এখন সেইফ হোমে রাখা হয়েছে। আজ আর পড়শীর কোনো পিছুটান নেই।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে