চক্রব্যূহ পর্ব-০৪

0
35

#ধারাবাহিক গল্প
#চক্রব্যূহ
পর্ব-চার
মাহবুবা বিথী

পড়শীর বারবার মনে হতে লাগলো এভাবে ওর হাসব্যান্ডকে ঠকানো ঠিক হলো না। এ অন্যায়। ওকে হয়তো একদিন এই অন্যায়ের শাস্তি পেতে হবে। ওদিকে সায়েম পড়শীকে বিছানায় না পেয়ে চোখ খুলে খুঁজতে থাকে। রাত্রির আবছায়ায় পড়শীকে তখন ও জানালার ধারে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে। ও উঠে এসে পড়শীকে পিছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—কি ভাবছো?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পড়শী বলে,
—-এভাবে আমার হাসব্যান্ডকে ঠকানো ঠিক হলো না।
—-কে তােমার হাসব্যান্ড? ঐ বয়স্ক লোকটাকে আমি তোমার হাসব্যান্ড হিসাবে মানি না।
—-তুমি নাই মানতে পারো। কিন্তু আমি তো উনাকে আল্লাহপাকের কালাম স্বাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি। সেজন্য ঐ মানুষটার প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে।
—-কিন্তু ঐ মানুষটার আগে আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। তুমি উনার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। এখন থেকে তুমি শুধুই আমার।

ভোর হওয়ার সাথে সাথে ওরা দু,জন ঢাকার পথে রওয়ানা দেয়। রাস্তায় জ্যাম না থাকার কারনে পড়শী খুব দ্রুত হোস্টেলে ফিরে যায়। এতো সকালে জয়নব পড়শীকে ফিরতে দেখে কোনো ভনিতা না করেই জিজ্ঞাসা করে,
—-কাল সারা রাত তুমি কোথায় ছিলে? তোমার ফোন বন্ধ পেয়ে তোমার আব্বা আমার মোবাইলে ফোন দিয়েছিলো।
—-আপু তুমি কি বলেছো?
—-তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো এ কথা বলেছি।
—-তুমি তো বললে না কাল রাতে কোথায় ছিলে?
—-সায়েমের সাথে ছিলাম।
—-তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো? তুমি যে পাপের অতলে তলিয়ে যাচ্ছো পড়শি। আমি তোমার কাজ থেকে এরকম কাজ আশা করিনি।
—আপু এখানে পাপের কিছুই নাই। আমি আমার হাসব্যান্ডকে ডিভোর্স দিয়ে সায়েমকে বিয়ে করবো।
—-সায়েম কি তোমাকে বিয়ে করবে?
—-ও বলেছে করবে।
—-,করলে তো ভালোই আর না করলে এই পাপের বোঝা তুমি কিভাবে বইবে?
জয়নবের কথা শুনতে পড়শীর আর ভালো লাগছে না। তাই গলার স্বরে কাঠিন্য ভাব এনে পড়শী বললো,
—-আমি তোমার সাথে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাইছি না।
জয়নবও বুঝতে পারলো পড়শীর কাছে আজ আর ওর কোনো গুরুত্ব নাই। তাই ও আর কথা বাড়ালো না।

এরপর থেকে সায়েম আর পড়শী গাজীপুরের ঐ বাংলো বাড়িতে প্রায় সময় কাটাতে যায়। এদিকে ওদেরকে নিয়ে ভার্সিটিতে বেশ কানাঘুষা চলতে থাকে। এমনকি কারা যেন পড়শী আর সায়েমের বিষয়টা ওর হাসব্যান্ডকে জানিয়ে দেয়। যেখানে রাশেদের ছ,মাস পর আসার কথা সেখানে মাস তিনেকের মধ্যে ও পড়শীদের বাসায় সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে আসে। রাশেদ ওর কাছে সায়েমের বিষয় জানতে চাইলে পড়শী সব ঘটনা ওর কাছে খুলে বলে। পড়শী রাশেদকে ডিভোর্স দিতে বলে। একথা শুনে রাশেদ পড়শীকে বলে,
—-তুমি আগে দেখো সায়েম তোমাকে বিয়ে করতে চায় কিনা? সে যদি তোমাকে বিয়ে করে তাহলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
কিন্তু সায়েম পড়শীকে বিয়ে করতে চায় না। বিয়ের কথা বললে নানা টালবাহানা শুরু করে। পড়শী এর মাঝে ভার্সিটিতে সায়েমের বিষয়ে নানা নেগেটিভ কথা শুনতে পায়। ও নাকি এভাবেই মেয়েদের ব্যবহার করে। পড়শীর তখন মনে হয় জয়নব নিশ্চয় সায়েমের বিষয়ে কিছু জানে। তাই জয়নবকে জিজ্ঞাসা করলে ও বলে,”ওর অফিসের একটা মেয়ের সাথে সায়েম একই কাজ করেছে। মেয়েটা সায়েমের সাথেই ভার্সিটিতে পড়তো।”
এসব কথা জানার পর ও ওর হাসব্যান্ডের কাছে ফিরে যেতে চায়। রাশেদও ওর সব অপরাধ ক্ষমা করে দিয়ে কানাডায় নিয়ে যায়।

চারবছর রাশেদের সাথে ও সুখে সংসার করে। রাশেদের ব্যবসা ভালোই চলে। পড়শীও পার্টটাইম জব করে। ওর দুটো সন্তান হয়। এর মাঝে একদিন ওর ম্যাসেঞ্জারে একটা ভিডিও কে যেন পাঠিয়ে দেয়। ভিডিও লিংক ওপেন করে দেখে এখানে সায়েম আর ওর শারীরিক মিলনের ভিডিও চিত্র। ওর সুখে পৃথিবীটা মুহুর্তে দুলে উঠে। ও সায়েমকে ফোন দিয়ে বলে,
—-এটা তুমি কেন করলে?
—-বুঝতে পারছো না কেন করেছি? তোমার প্রিয়তম স্বামীকে সব জানিয়ে দিবো। আর তোমার সুখের সংসারটা তছনচ করে ভেঙ্গে পড়বে।
একথা বলে অট্টহাসিতে সায়েম ফেটে পড়ে। পড়শী সেই মুহুর্তে খুব মুষড়ে পড়ে। ওর বাচ্চা দুটোর চেহারা বারবার ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে। ও তখন সায়েমকে বলে —–তুমি এই ডিডিও ক্লিপ আমাকে দিয়ে দাও। বিনিময়ে যা চাইবে তাই দিবো।
সায়েম ওর কাছে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। পড়শীও রাজি হয়। পড়শী দিনরাত এককরে টাকা উপার্জন করে সায়েমের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে। এভাবে আরো ছ,বছর সময় পার হয়। এখন ওর মেয়েটার বয়স দশ বছর আর ছেলেটার বয়স আট বছর। সায়েম ওর চাহিদা আরো বাড়িয়ে দেয়। যেটা পড়শীর পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এবার প্রতিবাদ করে বলে,
—-আমি তোমাকে আর একটা টাকাও দিবো না। তুমি যা পারো করো।
এবার সায়েম পড়শীর হাসব্যান্ডের কাছে আরো একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে অনেক টাকা দাবি করে। টাকার হিসাবে প্রায় দশকোটি টাকা। রাশেদ মনে মনে পড়শীর উপর খুব অসন্তষ্ট হয়। যদিও টাকাটা দিতে রাশেদ রাজি হয়েছিলো। কিন্তু পড়শী রাশেদকে বলে,
—-তুমি ওকে একটা কানাকড়ি দিবে না।
এতে রাশেদ তেতে উঠে বলে,
—-এতে যে তোমার গুনকীর্তন ফাঁস হবে। আর আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মেটাবে।
তখন পড়শী ওকে বলে,
—-তুমি আমাকে ভিভোর্স দিয়ে দাও। তাহলে সবকুল রক্ষা হবে। বাচ্চারা এখন বড় হয়ে গিয়েছে। তুমি ভালে মেয়ে দেখে আবার বিয়ে করে সংসার শুরু করো। আমার মতো পাপিষ্টার ছায়া তোমার জীবন থেকে চিরজনমের মতো মুছে ফেলো।
অবশেষে রাশেদ পড়শীকে ডিভোর্স দেয়। পড়শীও মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় দেশে এসে ও আত্মহত্যা করবে। এ জীবনটাকে ও আর বাঁচিয়ে রাখবে না। কার জন্য বাঁচিয়ে রাখবে। কেউ তো ওকে ওর মতো করে বোঝার চেষ্টা করেনি। বাবাকে বলেছিলো ও পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু বাবা সাত সকালে বিয়ে দিলো। সায়েমের কাছে ভালোবাসা চেয়েছিলো। বিনিময়ে প্রতারিত হলো। এখন স্বামীও ওর মতো পাপিষ্টার হাত থেকে বাঁচতে চাইছে। তাই ডিভোর্স চাওয়া মাত্রই দিয়ে দিলো।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে