চক্রবূহ্য পর্ব-০২

0
32

#ধারাবাহিক গল্প
#চক্রবূহ্য
পর্ব- দুই
মাহবুবা বিথী

লাঞ্চের পর ভার্সিটিতে এসে সায়েম সবটা শুনে পড়শীকে দেখার জন্য ছটফট করতে লাগলো। তাই আর অপেক্ষা না করে খুব সুন্দর একটা মেসেজ লিখে পড়শীকে সেন্ড করলো। রাজনীতি করার কারনে অফিসরুমের মামাদের কাছ থেকে পড়শীর মোবাইল নাম্বার যোগাড় করতে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি। পড়শী তখন কেবল ভার্সিটি থেকে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে লেকচার সিটগুলো দেখছিলো। এমনসময় মোবাইলটা টুং করে বেজে উঠলো। ওপেন করে দেখে একটা অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।
“তোমাকে দেখিনি। তবে তোমার সাহসিকার পরিচয়ে মনের আঙ্গিনায় তোমার একটা অবয়ব গড়ে নিয়েছি। আমি সায়েম। ছাত্র সংসদের আমি একজন নেতা। তবে নেতা হয়ে নয় আমি আমার সহপাঠি বন্ধু ও ছোটোভাইবোনদের একজন সেবক হতে চাই। কাল লাইব্রেরীতে বিকাল চারটায় আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। ওখানে যে কাউকে আমার কথা বললে তোমাকে চিনিয়ে দিবে।”
পরদিন ক্লাস শেষ করে পড়শী লাইব্রেরীতে গিয়ে একটা ছেলেকে সায়েমের নাম বলতেই ও কোনার টেবিলটা দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। পড়শী টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বেশ সুদর্শন দেখতে একটা ছেলে আপনমনে বই পড়ছে। পড়শী একটু ইতস্তত করে বললো,
—-হ্যালো, আপনি তো সায়েম?
—-হুম,
—-আমি পড়শী। আপনি চারটার সময়ে আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। আমার সাথে কি আপনার কোনো দরকার আছে?
—-হুম, মনে আছে। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি। আমার দলের ছেলেদের সাথে আজঅবদি কেউ চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনি। আর আপনিতো সোজা থাপ্পড় মেরে দিলেন। আপনার সাহস আছে বলতে হবে।
পড়শী খুব মনোযোগ দিয়ে সায়েমের কথাগুলো শুনে গম্ভীর হয়ে গলায় কাঠিন্য ভাব এনে বললো,
—দেখুন, ওরা কিন্তু আমাকে অসম্মানিত করেছে। ওভাবে আমার হাত ধরে টানাটানি না করলে আমি ওদের গায়ে ফুলের টোকাও দিতাম না।
—অবশ্যই ওরা তোমার সাথে অন্যায় করেছে। আমি ওদের হয়ে তোমার কাছে মাফ চাইছি। আর ওদেরকেও আপনার কাছে মাফ চেয়ে নিতে বলবো।
—-তার আর দরকার হবে না। আমি ওদের সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। আমাকে এখুনি বাস ধরতে হবে।
—আমার সাথে গাড়ি আছে। তোমাকে লিফট দিতে পারি।
—-আমি বাসে যেতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। অফার করার জন্য ধন্যবাদ।
—-রাতে মেসেজ বা কল করতে পারি?
পড়শী মুচকি হেসে চলে গেল। সায়েম ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলো।

রাতে ডিনার করে সবে পড়শী বই নিয়ে পড়তে বসেছে। এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখে সায়েম ফোন দিয়েছে। সায়েমের ফোনটা পেয়ে পড়শীর ঠোঁটের কোনে হাসির আভা দেখা দিলো। পড়শী ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো
—হ্যালো, তোমাকে ডিস্টার্ব করলাম নাতো?
—না,না আমি কেবলই রাতের খাওয়া শেষ করে বই নিয়ে পড়তে বসেছি। কাল একটা টিউটোরিয়াল আছে।
—-তাহলে তুমি পড়াশোনা করো। তবে বেশী রাত জেগো না। চোখের নীচে ডার্ক সারকেল পড়লে এতো সুন্দর চেহারাটা বড্ড মলিন দেখাবে। তোমাকে তুমি করে বলছি বলে কিছু মনে করো না। আমি আবার জুনিয়রদের আপনি বলতে পারি না।
—-ঠিক আছে,সমস্যা নাই।
—-ফোন রাখছি। গুড নাইট।
এরাতের পর থেকে প্রায় প্রতি রাতেই সায়েম পড়শীকে ফোন দিয়েছে। ভার্সিটির ক্যান্টিনে কিংবা লাইব্রেরীতে ওদের দু,জনকে অনেকে আড্ডা দিতে দেখেছে। যে ছেলেগুলোর সাথে পড়শীর দ্বন্দ হয়েছিলো ওরা সায়েমের বন্ধু হওয়াতে পড়শী ওদের সাথে বিবাদ মিটিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। এবং ওদের সাথে পড়শীর সখ্যতা গড়ে উঠে। এরমাঝে সায়েমের বাইকে চড়ে পড়শী নানান জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছে। কখনও বা বসুন্ধরা সিনোপ্লেক্সে মুভি দেখেছে। কখনও বা পুরান ঢাকায় গিয়ে কাচ্চি খেয়েছে।

ভার্সিটিতে দু,মাস পার হয়ে গেল। আর একমাস পর ফাস্ট ইয়ারের টিউটোরিয়াল গুলো শুরু হবে। পড়শীরও পড়ার চাপ বাড়তে লাগলো। এখন এই শহরটাকে পড়শীর বেশ ভালো লাগে। তবে ভালো লাগার কারনটা যে সায়েম পড়শী সেটা ভালোই অনুভব করছে।

ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে হোস্টেলে ফেরার সাথে সাথে জয়নবের মুখোমুখি হতেই পড়শী অবাক হয়ে বললো,
—-এসময় তুমি হোস্টেলে, শরীর ঠিক আছে তো?
—মাথাটা একটু ব্যথা করছে। তাই ছুটি নিয়ে চলে আসলাম। তবে তোমার দেখা তো আজকাল পাওয়াই যায় না। ভার্সিটি থেকে আসার পর তোমাকে তো ফোনেই ব্যস্ত থাকতে দেখি। কি ব্যাপার কারো প্রেমে পড়েছো নাকি? আমার কথা তুমি মনে হয় ভুলে গিয়েছো?
পড়শী জয়নবকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-তোমাকে ভুলে গেলে আমি তো নিজেকেই ভুলে যাবো। সামনে পরীক্ষা তো। তাই পড়াশোনার চাপটা বেড়েছে।
—-কিন্তু তুমি সারাক্ষণ ফোনে যেভাবে কথা বলো তাতে মনে হচ্ছে তুমি অন্য খেলায় মেতেছো।
জয়নবের কথায় পড়শী ভীষণ লজ্জা পেলো। ওকে ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসে বইয়ের পাতা উল্টানোর সময় বললো,
—-তুমি যা ভাবছো বিষয়টা আসলে তেমন নয়। ও শুধুই আমার বন্ধু। ওর নাম সায়েম।
—- কি নাম বললে সায়েম? নামটা খুব চেনা মনে হচ্ছে।

এদিকে ইনান সায়েমকে পড়শীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে দেখে মেজাজ খারাপ করে সায়েমকে বললো,
—তুই শেষ পর্যন্ত ঐ গেঁয়ো ভুতটার কাছে হার মানলি? তুই তো পোশাক বদলানোর মতো করে নারী পাল্টাস। তাহলে এই মেয়েকে তুই এতোদিন কি কারনে ধরে রেখেছিস? আমার মাথায় তো কিছু ঢুকছে না। যে মেয়ের তোর পায়ের নখের সমান যোগ্যতা নেই তার প্রেমেতে তুই এতো মজেছিস? এটা তো তোর সাথে যায় না।
ইনানের কথা শুনে সায়েমের পুরেনো অভ্যাস মাথা চাড়া দিলো। ধিকি ধিকি করে জ্বলা প্রতিশোধের আগুনে মনে হয় ঘি ঢেলে দেওয়া হলো। ওখানে ইনান আর সায়েম ছাড়াও আরো দু,জন উপস্থিত ছিলো। সায়েম আসলেই পড়শীর উপর একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। মেয়েটা যতই ওর সাথে মিশুক না কেন নিজেকে শামুকের মতো শক্ত মোড়কে ঢেকে রাখে। যেটা ভেদ করে সায়েমের ওর ঘৃন্য উদ্দেশ্যেটা হাসিল করতে পারে না। তবে বন্ধুদের কথায় ও ওর চিরাচরিত স্বভাবে ফিরে আসলো। গম্ভীর স্বরে সায়েম বললো,
—-আমাকে আর দুটো দিন সময় দে তোরা। তারপর দেখ ওর আমি কি হাল করি?
একথা বলেই সায়েম ওখান থেকে বের হয়ে গেল। ইনানের ঘনিষ্ট সহযোগী পলক এগিয়ে এসে বললো,
—-সায়েম ভাই মনে হয় মেয়েটার উপর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। উনি আমাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারবেনা।
ইনান একটা ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,
—-আজকে যে ওষুধ দিয়েছি তাতে ঠিক কাজ হবে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে