ঘরে ফেরার গান পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
614

#ঘরে_ফেরার_গান (৪)

সবুজের সাথে কথা বলে তানভীর। সবটা শুনে সবুজ জানায় সে সাহায্য করবে তানভীরকে। অবশেষে তানভীর পৌঁছে লাবিবার নীড়ে। দুতলায় ছোট্ট একটা রুম ভাড়া করে সে আর তার রুমমেট থাকে। তানভীরকে ভেতরে যেতে বললে তানভীর সবুজকে বলে,
‘ ভেতরে যাবো না মেয়ে মানুষ আছেন আরেকজন। আমি এখানেই বসছি।ডাকো তোমার বোনকে। ‘
নিচ তলার বারান্দায় তানভীর বেঞ্চে বসে।

সবুজ লাবিবাকে ডেকে নিয়ে আসে। লাবিবা জিজ্ঞেস করে, ‘ নীচ তলায় যেতে বলছো কেনো? তুমি বসো আমার রুমে।’
‘ তোমার পরিচিত একজন দেখা করতে এসেছে।’
‘ কে? কেউ নেই তো এমন যে আমার সাথে দেখা করতে আসবে।’

তানভীরকে দেখে লাবিবা দাঁড়িয়ে যায়। কি হচ্ছে বুঝতে পেরে সিড়ির দিকে দৌড় দেয়। তানভীর সাথে সাথে সবুজ কে বলে, ‘ আটকাও ওকে। ‘
লাবিবা বলে, ‘ সবুজ ভাই এটা তুমি ঠিক করলে না। ‘
তানভীর সবুজের হাত থেকে লাবিবার হাতখানা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয় নিজের দিকে টেনে আনে। ব্যাথা পেয়ে লাবিবা মৃদু চিৎকার করে। তানভীর হাতের চাপ কমিয়ে দেয়। আলতো ভাবে ধরে কিন্তু হাত ছাড়ে না। তানভীর বলে,
‘ প্রথম স্পর্শ ঠিক প্রথম পরিচয়ের মতোই বেদনা দায়ক। কিন্তু আস্তে আস্তে সব কোমল হয়ে এসেছে। সম্পর্কটাকেও কোমলতার চাদরে মুড়িয়ে নিতে চাই। আমার সাথে চলো। প্লিজ। ‘
‘ আপনার সাথে কেনো যাবো?’
‘ স্বামীর ঘরে যেতে হবে না? আর কতো লুকোচুরি খেলবে?’
‘ আপনি আমার স্বামী না। ঐটা কোনো বিয়েই না। মতের বিরুদ্ধে বিয়ে হয় না। না আপনার মত ছিলো না আমি বুঝে উঠতে পেরেছিলাম। কোনো ডকুমেন্টস নেই। সেই সময়টা আমার জন্য একটা দুঃস্বপ্ন।’
‘ আম্মুকে ডাকো। আমি আম্মুর সাথে কথা বলবো।’
‘নেই। বাবার কাছে চলে গেছে। ‘
তানভীর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে । লাবিবার চোখের কোনায় পানি চিকচিক করছে। অবাধ্য জল গুলো এই যেনো টুপ টুপ করে পরবে পরবে। সুনসান নীরবতায় ভরে যায় চারিপাশ। ততোক্ষনে বারান্দায় দু একজন উঁকি দিচ্ছে। সবার মনে কৌতুহল লাবিবার হাত ধরে লোকটা কে? বেশ কিছুক্ষন পর তানভীর বলে,
‘ তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে আমার। তোমাকে সব শুনতেই হবে লাবিবা।’
‘ আমার কিছু শুনার নেই। ছোটবেলার সেই এক্সিডেন্টটার কথা আমি ভুলে গেছি। আপনিও ভুলে যান। আপনার ভাই আমাকে অপহরণ করেছিলো একটুকুই সত্য। বাকি সব মিথ্যে। ‘
‘ তিন কবুল কখনো মিথ্যে হতে পারে না।’
‘ স্মৃতি থেকে মুছে দিলেই শেষ।’
‘ শেষ নয়। ইউনিয়নের শতাধিক মানুষকে সাক্ষী রেখে আল্লাহর কালাম পড়ে বিয়ে করেছি আমরা।’
‘ সাক্ষী সাক্ষীর জায়গায় আর আমি আজ আমার জায়গায়। ফিরে যান আপনি। ‘
‘ আমার সাথে চলো। প্লিজ। ‘
লাবিবা হাত ছাড়িয়ে নিতেই তানভীর আবার ধরে ফেলে। লাবিবা জোরে শ্বাস ফেলে বলে,
‘ জোর খাটাবেন না। আপনাদের বাড়ির সকলেই জোর খাটায়। আমি দুর্বল। দুর্বলের সাথে জোর খাটাতে নেই।’
তানভীর হাত ছেড়ে দেয়। লাবিবা ধীরে ধীরে দুতলায় উঠে যায়। সবুজকে বলে,
‘ সবুজ ভাই উনাকে নিয়ে চলে যান। উনাকে বলে দিবেন যেনো আমার কাছে না আসে আর। ‘

পরেরদিন রাতে একটা কল আসে। লাবিবা রিসিভ করে জানতে চায়, ‘ কে?’
‘ ভাবি আমি ইকবাল। ‘
‘ আমি কোনো ইকবালকে চিনি না। ‘
‘ ভাবি শুনুন আমার কথা। ‘
লাবিবা ফোন কেটে দেয়। আসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে মাথায়। স্লিপিং পিল নিয়ে ঘুমাতে হয় তাকে। সে অনুভব করেছিলো একদিন টুপ করে মরে পরে থাকবে। কেউ জানতেও পারবে না। সেজন্য একজন রুমমেট রেখেছে সাথে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পাওয়া যায় তাকে। লাবিবা ডাকে,
‘ রিনি?’
‘ জি আপু?’
‘ পড়া শেষ করে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরিস। আমি ঘুমালাম। ‘
‘ আচ্ছা আপু। ‘
ঘুমের মাঝে লাবিবা ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখে। যেনো তার বাবা মা দুজনেই তার মাথায় বার বার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গুনগুন করে কাঁদছে। এই ধরনের স্বপ্ন কেনো দেখলো সে? বাবা মাকে স্বপ্ন দেখে কিন্তু কখনো একসাথে দেখে না। তারা কাঁদছে কেনো? তাহলে কি তারা ভালো নেই? ছোট্ট মনটা ভয়ার্ত হয় লাবিবার। জুম্মাবারে ফজরের পর বড় মসজিদে আসে। ইমামের সাথে কথা বলে ফেরার পথে ইকবাল এসে পথ আটকায়। ভাবি ভাবি বলে সামনে এসে দাঁড়ায়। লাবিবা দেখেও না দেখার ভান করে এগিয়ে যায়। ইকবাল আবার পথ আটকায়। লাবিবা দাঁড়িয়ে যায়। লাবিবা এবার রিয়েক্ট করতে গিয়েও ধৈর্য্য নিয়ে বলে,
‘কি বলবেন?’
‘ আপনাকে অনেক কিছুই বলবো ভাবি যা আপনি জানেন না। ‘
‘ কি জানি না?’
‘ সাইডে এসে দাঁড়ান। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ানো ঠিক না। ‘
দুজনে একটা মিষ্টির দোকানে এসে বসে। ইকবাল লাবিবার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সবটা লাবিবাকে খুলে বলে। তারপর হাত জোড় করে বলে,
‘ ভাইকে গ্ৰহণ করেন ভাবি। ভাই দ্বিতীয় বার বিয়ে করে নি। আপনার জন্য অপেক্ষা করেছে এতোগুলো বছর।’
‘ সেজন্য আপনার ভাইকে ধন্যবাদ। এতোবড় ত্যাগ সত্যি কেউ কখনও করতে পারেনা। আপনার ভাই করে দেখিয়েছে। ‘
‘ ভাবি একবার বোঝার চেষ্টা করেন।’
‘ আমার সামনে আসবেন না ইকবাল ভাই। আপনি যতবার আমার সামনে এসেছেন ততোবার আমার জীবনের অকারেন্স ঘটেছে। আবার কোনো অকারেন্সের মুখোমুখি হতে পারবো না আমি। আমার সেই ক্ষমতা নেই। ‘
‘ ক্ষমা করবেন আমাকে ভাবি। আসলে বয়সটাই ঐরকম ছিলো যে __’
লাবিবা একবার ইকবালকে ভালো করে দেখে নেয়। সত্যিই চেঞ্জ! সময়ের সাথে সাথে আমাদের চেঞ্জ যেনো আবশ্যক। শুধু বদলাতে পারলো না লাবিবা। কেনো শক্ত হতে পারে না সে? কেনো কষ্ট সহ্য করতে পারে না? মা বাবার কথা মনে পড়লেই তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে। ক্লাস নাইনের সেই অপহরণ, গ্ৰাম পঞ্চায়েত, বিয়ে সবকিছু সে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে চেয়েও পারে না। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে সেই চড়ের দৃশ্য। কিভাবে অপমানিত হয়েছে সে আর তার বাবা মা! আর তানভীর? সে হচ্ছে সব থেকে বড় অপরাধী। তাকে লাবিবা কিভাবে ক্ষমা করবে সে জানে না। ঐ লোকটা ঠিক কতোটা পরিমাণ দোষী সেটাও লাবিবা পরিমাপ করতে পারে না। ইকবালের কথা গুলো যদি সত্যি হয় তাহলে তারা দুজনেই পরিস্থিতির শিকার। ভাগ্য খেলা করছে তাদের নিয়ে। লাবিবার হাস ফাস লাগে। এই বিষাক্ত অনুভুতি থেকে বেরোতে চায়। শহর ছেড়ে সে ছুটে চলে অন্য শহরে। নতুন জায়গায় নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। একটা হোস্টেলে উঠেই কাজের সন্ধান করে। স্যালসম্যানের কাজ পায় একটা শো রুমে। সেভাবেই তার দিন যাচ্ছে। কিন্তু হোস্টেলের রুমমেট দের সাথে বনিবনা হচ্ছে না। মেয়ে গুলো বেশ উগ্ৰ। অনান্যরাও একেকজন একেকরকম। সেই থেকে সে সাবলেটে একটা বাসা খুঁজছে। এই খবর শোনার পরে শো রুমের ম্যানেজার লাবিবাকে অফার করে,
‘ আমাদের শো রুমের ওনার যে তার একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে। স্যার খুব একটা থাকেন না বললেই চলে। তাই এমন একজনকে প্রয়োজন যে সেই বাড়িতে থাকবে এবং বাড়ির খেয়াল রাখবে। মানে কেয়ার টেকার আর কি। ‘
‘ দারোয়ান নেই?’
‘ সব সুবিধাই আছে। এতে তোমার কাজের টাকাও পেলে আবার এখানকার টাকাও পেলে। ডাবল বেতন। তুমি চাইলে পরিচিত কাউকে পরে নিজের কাছে রেখেও দিতে পারো। সুযোগটা হাত ছাড়া করলে সত্যিই প্রস্তাবে। ‘
লাবিবাও ভেবে দেখলো তার হাতে সত্যিই ভালো সুযোগ এটি। এরকম সুযোগ সে কখনোই পাবে না। তার উপর সে যেখানে কাজ করছে সেই ব্যান্ড কোম্পানির মালিকের ই বাসা। ফেভার ও পাবে। অবশেষে সে হ্যা বলে দেয়। নিজের লাগেজ নিয়ে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে আসে শো রুমে। ম্যানেজার মুচকি হেসে আবারো বলে, ‘ আপনি কি শিউর যে নতুন কাজটি নিচ্ছেন?’
‘ জি স্যার।’
‘ পরে মত পাল্টাবেন না তো?’
‘ না স্যার। তবে শর্ত একটাই আমাকে দুই জায়গাতেই কাজ করতে দিতে হবে। শুধু টাকার জন্য না। আমি যদি লোকালয়ে না আসতে পারি তাহলে আমার মাঝে ডিপ্রেশন কাজ করে। ‘
‘ সে আমরা জানি মিসেস। তবে কনফার্ম করছেন।’
‘ অবশ্যই। ‘
‘ দুপুর দিকে স্যারের অফিসে যাবো আপনাকে নিয়ে। স্মার্টলি ড্রেসাপে যাবেন। স্যার স্মার্ট কাউকে খুঁজছেন যিনি বাড়ি এবং বাহির সমানভাবে সামলে নিতে পারবেন। ‘
‘ আমি চেষ্টা করবো। ‘

অফিসে এসে লাবিবার শরীর মৃদু কেঁপে উঠে। এই সে কোথায় চলে এসেছে? সে ভেবেছিলো শহর ছেড়ে সে তানভীরের আওতার বাহিরে চলে এসেছে। কিন্তু না আরো আরো বেশি জড়িয়ে গেছে। তানভীরের চাচী দৌড়ে এসে লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে চোঁখের পানি ছেড়ে দেয়।
‘ ওরে মা কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই? তোর শোকে আমার ছেলেটা একেবারে ছন্নছাড়া। কোথায় কোথায় না খুঁজেছে তোকে। এতোটা মান মনে পুষে রাখতে হয় মা? স্বামীর জন্য কলিজায় টান পড়ে না?ভালো আছিস তো?হ্যা?’
লাবিবার অবাক হবার পালা এখনো শেষ হয়নি। ইকবাল, ইকবালের বউ, বাচ্চা, উকিল, সেই বড় মসজিদের ইমাম, সবুজ, রিনি সবাই উপস্থিত। সবার পেছনে চোখ পড়ে তানভীরের উপর। লাবিবা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। চাচীর বাহু ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নেয়। চাচী খপ করে হাত ধরে ফেলে তাকে। লাবিবা চিৎকার করে বলে,
‘ ছাড়ুন আমাকে । মিথ্যা বলে আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। চলে যাবো আমি এখান থেকে।’
‘ কোথায় যাবি মা? আমরা ছাড়া তোর আপন বলতে কে আছে? আমাদের সাথে চল। তোর আসল ঠিকানাতে।’
‘ যে বাড়ি থেকে একবার অপমানিত হয়ে আমাকে আমার বাবা মাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিলো বার বার চেষ্টা করেও সেই বাড়িতে গ্ৰহণ করা হয়নি সেই বাড়িতে আমি যাবো না। আমার কেউ নেই। আপনারা আমার কেউ নন। আমার আপন বলতে শুধুই আমি। ‘
তানভীর এই মুহূর্তে কথা বলে,
‘ চাচী ওকে বলে দাও যেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছিলো আমি সেই বাড়ির কোনো অস্তিত্বই রাখিনি। যে তাকে বের করে দিয়েছিলো সে এখন কবরে আল্লাহর নিকট হিসাব দিতে ব্যস্ত। আর আমি ক্ষমা প্রার্থী। ও যেনো আমাকে অস্বীকার না করে বরং আমাদের সম্পর্ক যেনো অটুট রাখে। ‘
‘ যে সম্পর্ক তৈরীই হয়নি সেই সম্পর্ক অটুট রাখার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? ‘
‘ সব হবে। সব।’
ম্যানেজার বলে,
‘ ম্যাম আপনি কিন্তু সিউর হয়েই এসেছেন। বলেছেন পরে মত পাল্টাবেন না। ‘
লাবিবা এমন ভাবে তাকায় যে ম্যানেজার ভয়ে আমতা আমতা শুরু করে।
‘ এতো বড় বড় চোখে এমন করে তাকাবেন না ম্যাম। শো রুমেও আপনি কাজ করবেন পাশাপাশি বাড়ি দেখাশুনার কাজ নিতে গেলেও এগ্ৰিমেন্টে সাইন দিয়ে তো নিতে হবে। উকিল সাহেব এখানেই আছেন পেপার্স গুলো দেখান তবে।’
‘ আমাকে বন্দি করার চেষ্টা করা হচ্ছে আর আপনি এখনো শোরুম, বাড়ি বলে ডপ দিয়ে যাচ্ছেন?’
রিনি ফিক করে হেসে দিলে উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গ মুখ টিপে হাসে। তানভীরও আড়ালে মুখ করে অল্প হাসে। লাবিবাকে চাচী সোফায় এনে বসায়। লাবিবা কাঁদছে। তার মনে হচ্ছে সে বড্ড অসহায়। চাচী বলে,
‘ আয় হায়! কাঁদছিস কেনো? এই দেখবি ইকবালটার কতো সুন্দর মেয়ে হয়েছে? আমি তো চেয়েছিলাম তোর মতো বড় বড় চোখ হোক। কিন্তু তুই তো ছিলি না সেজন্য ছোটবউ তুতুলকে পেটে নিয়ে তোকে দেখতেও পারতো না। রোজ সকালে উঠে তোর মুখ দেখলে তোর মতোই মুখখানা পেতো বল।’
লাবিবার কান্না আরো বেড়ে যায়। তুতুল এসে কোলে চাপে। তার হাতে চিপস। সে আআআআ করে লাবিবাকে খাওয়াতে চায়। লাবিবা মুখ সরিয়ে নেয়। ইকবাল বলে, ‘ উকিল সাহেব আপনাদের কাজ শুরু করুন। ‘
তারা সায় দেয়। তানভীর কিছু মুহূর্ত লাবিবার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
‘ চাচী আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি। ততোক্ষনে ওকে বোঝাও, কান্না বন্ধ করাও। ও স্বাভাবিক হবার পরেই বিয়েটা হবে। ‘
ইকবালের বউ লাবিবাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। ইকবাল ও রিকুয়েস্ট করে। চাচী বলে,
‘ আমিই আজ থেকে তোর মা। ‘
তানভীর ফিরে প্রায় পঁচিশ মিনিট লাগিয়ে। একটা ব্যাগ ভাইয়ের বউয়ের হাতে দিয়ে বলে,
‘ তোমার ঝা কে রেডি করিয়ে দাও আমরিন। ‘
চাচীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তানভীরকে পাশে ডেকে বলে, ‘ কি কি এনেছিস?’
‘ একটা শাড়ি আর একটা ব্রাইডাল সেট, জুতা আর যা যা লাগে। ‘
‘ দেখে শুনে সোনা নিয়েছো তো? আমারই ভুল বাবা। একদমই মনে ছিলো না নতুন বউয়ের কেনাকাটার কথা।’
‘ ইটস ওকে। সমস্যা নেই। তুমি যেটুকু করছো সেটুকু তো আমার মা ও আমার জন্য করেনি। ছোট বেলা থেকেই তোমার কাছেই বড় হয়েছি। তোমাকেই দ্বিতীয় মা বলে জেনেছি। আমি তাড়াহুড়োতে পরশ জুয়েলার্স থেকে যা পছন্দ হয়েছে তাই নিয়ে এসেছি আপাতত । পরেরটা তুমি দেখে নিও । ‘
‘ ঠিক আছে। আমি কাল বউমার যা যা লাগে সব নিয়ে আসবো। ‘

লম্বা ঘোমটা মাথায় লাবিবাকে নিয়ে আসে আমরিন। দ্বিতীয় বার বসে বিয়েতে। প্রথমবার অবুঝ অবস্থায় দ্বিতীয়বার মনের বিরুদ্ধে। দুটোই পরিস্থিতির চাপে। লাবিবার ইচ্ছে করছে দৌড়ে এই ভিড় থেকে পালিয়ে যেতে। যেখানে গেলে সে একটু স্বস্তি পাবে। ঠিক তখনই হাতের উপর হাত রাখে তানভীর। একদিন স্কুল ড্রেসে বিয়েতে বসতে হয়েছিলো তাকে। আজ তানভীর শাড়ি গহনায় বউ সাজিয়ে বসিয়েছে তাকে। ধর্ম এবং আইনমতে বাঁধা পড়ে দুজনে। ইকবাল মিষ্টি বিতরণ করে সবার মাঝে। লাবিবা এবং তানভীরের মাঝামাঝি এসে বলে,
‘ শোনো দুজনকেই বলছি, বুড়ো বয়সে বিয়ে করলে। তাড়াতাড়ি চাচ্চু ডাক শোনাবে আমাকে। ‘
লাবিবা ঘাড় ফিরিয়ে ইকবালের দিকে তাকায় খেয়ে ফেলবো দৃষ্টিতে। ইকবাল ঝটপট সেখান থেকে সরে যায়।

সাদা রঙের ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় তাঁদের গাড়ি। ইকবালরা থাকে অন্য বাড়িতে। আগামীকাল আসবে বলে তানভীর লাবিবাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। তানভীর গাড়ির দরজা খুলে দেয়। লাবিবা একপলক সুন্দর বাড়িটা দেখে নিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। তানভীর বলে, ‘ নেমে আসো। ‘
‘ আপনারা শুধু জোর জবরদস্তিই করতে পারেন। আমি নিষেধ করেছিলাম আপনাকে। তানভীর আমাকে যেতে দিন আমার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না আপনাকে।’
‘ আমি বুড়ো বলে?’
লাবিবা মাথা তুলে তাকায় তানভীরের দিকে। তানভীর গাড়ির ভেতরে মাথাটা ঢুকিয়ে দিয়ে লাবিবার মুখোমুখি হয়। আলতো হেসে বলে,
‘ সকল চিন্তা দূরে সরিয়ে ঠান্ডা মাথায় একটা ব্যাপার ক্যালকুলেট করে দেখো মনের বিরুদ্ধে কাউকে মেনে নিতে ঠিক কেমন ফিলিংস হয়। ঠিক এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমিও গিয়েছি একটা সময়, যখন আমি প্রায় এসটাবলিশড একজন ছেলে আর তুমি স্কুল পড়ুয়া একটা বাচ্চা মেয়ে। অচেনা অজানা একটা মেয়ে। যতদিনে তুমি প্রাপ্তবয়স্ক হলে আমি তোমাকে গ্ৰহণ করতে চাইলাম আর তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে। যখন তোমাকে খুঁজে পেলাম তুমি আবার হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে। ‘
তানভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
‘ নেমে আসো।’
লাবিবা তখনো ঠায় বসে আছে। তানভীর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে লাবিবাকে কোলে তুলে নেয়। লাবিবা আচমকা ভয় পেয়ে তানভীরের গলা জড়িয়ে ধরে। তাকে এনে নামায় সদর দরজার সামনে। পকেট থেকে চাবিটা বের করে দরজা খুলে দেয়।
‘ ভেতরে যাও। এই বাড়িটা আমি বানিয়েছি তোমার জন্যে। আসার সময় খেয়াল করো নি। গেইটের পাশে লেখা আছে “লাবিবা কটেজ” । পরে দেখে নিবে।
লাবিবা এগিয়ে যেতেই তানভীর বলে,
‘ ডান পা রাখবে প্রথমে। ‘
লাবিবা বা পা তুলেছিলো। সেই পা নামিয়ে ডান পা রেখে প্রবেশ করে তার নতুন ঘরে। সুইচ টিপতেই আলোকিত হয়ে উঠে। সপ্নের মতো একটা ঘর। লাবিবা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় ভেতর দিকে। তার পাশেই হাঁটছে তানভীর। হুট করেই লাবিবার আঁচলে টান পরে। ফিরে তাকালে দেখে তানভীর অনেক গুলো চাবির একটা গোছা বেঁধে দিচ্ছে লাবিবার বেনারসীর আঁচলে। লাবিবাকে তাকাতে দেখে তানভীর বলে,
‘ আমাকে এখন মেনে নিতেই হবে তার কোনো জোর নেই। আস্তে ধীরে সব হবে। ঘরটা তোমার, স্বযত্নে রেখো আগলে। আমার শুধু এতোটুকুই চাওয়া কাজ শেষে ঘরে ফেরার টান যেনো জন্মে। মন যেনো তাড়া দেয় আমার অপেক্ষায় ঘরে অপেক্ষায় আছে একটা চাঁদ,এই বলে। ‘

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে