#গোলকধাঁধা
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৭
প্রত্যয় ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,
‘দু-ফোঁটা চোখের জলও তো ফেললে না। বাকি সবাই আমার জন্য চিন্তিত, কান্নাকাটি, হুলস্থুল করেছে। এদিকে আমার বউ হয়ে তুমি কি করলে? শুধু এন্টিসেপটিক আর তুলো দিয়ে সেবা? আমার মনের সেবা কে করবে?’
সিরাত বাক্যহারা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো!
বিস্ময় ভাব কাটিয়ে হালকা কেশে অস্ফুটস্বরে
জিজ্ঞেস করল,
‘আপনার মনের সেবা? সেটা কীভাবে করতে পারি? অবশ্য আমাকে হেনস্তা করলেই তো আপনার শান্তি অনুভব হয়। তো আজ কীভাবে হেনস্তা করবেন বলে ভেবেছেন?’
‘মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। যাও গিয়ে আমার জন্য কফি করে নিয়ে আসো। তারপর মাথাটা টিপে দাও।’
প্রত্যয় মাথা ধরার ভান করে বললো। সিরাত সেটা বুঝতে পেরে বলল, ‘এই অসময়ে আমি আপনার জন্য কফি করবো? মাথা খারাপ? ঘুমে আমার চোখ বুজে আসছে। পারবো না এসব করতে।’
প্রত্যয় রুক্ষ স্বরে বলল, ‘তাহলে এ বাড়ি থেকে
বেরুনো বন্ধ।’
সিরাত রাগে গজগজ করতে করতে কফি করে নিয়ে এলো। ডিভানে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে কফির মগে চুমুক বসাতে বসাতে মাথা টিপে দিতে ইশারা করলো। ভীষণ রাগে গা জ্বলছে সিরাতের। ইচ্ছে করলো চুল ছিঁড়ে ফেলতে। করলোও তাই। আচমকা চুলে টান পড়ায় গমগমে স্বরে প্রত্যয় বলল, ‘চুল ছিঁড়ে
ফেলবে নাকি?’
সিরাত কিছু না জানার ভান করে বলল, ‘দুঃখিত জনাব।’
‘অসহ্যকর মেয়ে। সরো।’
বলে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সিরাতও হাফ ছেড়ে বাঁচলো। নিজেও গিয়ে শুয়ে পড়লো। মুহূর্তেই ক্লান্ত-শ্রান্ত চোখ দুটিতে জেঁকে বসলো ঘুম। পরদিন ঘুম থেকে ওঠে প্রত্যয়কে দেখতে পেলো না সিরাত। নিচে গিয়ে জানলো প্রত্যয় বেরিয়ে গেছে। আজ ওদের দলের সমাবেশ। সেখানে অনেক কাজ। তাই বাবা-মায়ের বারণ স্বত্তেও সে ওখানে গেছে। সেইজন্য মুশফিকা চৌধুরী কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাবার জোগাড়। রাগ করে আমির সাহেবও না খেয়ে অফিসে চলে গেছেন। সিরাত থমথমে পরিস্থিতি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই লোক এমন ঘাড়ত্যাড়া হলো কেন? মা-বাবার কথারও কোনো দাম নেই? বেয়াদব লোক!
প্রত্যাশা এসে ওকে বললো খেয়ে নিতে। কিন্তু সিরাত খেলো না। ঘরে এসে ফোন করলো প্রত্যয়কে। প্রথমবারেই রিসিভ হলো, ‘বলো।’
‘আপনি এত খারাপ কেন?’
‘আবার কি করলাম? আজ তো ভালোই ঘুম দিয়েছো, আমি তো ডির্স্টার্বও করি নি। তো?’
সিরাত রেগে বলল, মা-বাবা’কে চিন্তায় রেখে
কি পান? একটা কথাও শোনেন না তাদের। বাজে লোক।’
প্রত্যয়ের বিরক্তি টের পাওয়া গেলো,
‘তুমি কি আমাকে এসব বলার জন্য ফোন করেছো?’
‘ফিরুন এখুনি। ওসব সমাবেশের চেয়ে পরিবার বেশি ইম্পোর্টেন্ট।’
সিরাত কটমট করে বললো। প্রত্যয় ব্যস্ত স্বরে বলল,
‘আমি সমাবেশে আছি। অনেক ঝামেলা। এখুনি আমাকে ভাষণ দেওয়ার জন্য যেতে হবে। তুমি ফোন রাখো।’
‘অসভ্য, নির্দয় লোক।’
প্রত্যয় এসব শুনে বলল,
‘তোমার কি চিন্তা হচ্ছে আমার জন্য? বলো, বলে ফেলো।’
‘কচু হচ্ছে।’
বলে মুখের ওপর ফোন কেটে দিলো। এরপর
মনে মনে বংশ উদ্ধার করলো প্রত্যয়ের। খাবার খাওয়ার কোনো ইচ্ছেই হলো না। কিছুক্ষণ ফোন
স্ক্রল করলো, বাড়িতে কথা বললো, সোহাকে ভিডিও কলে দেখলো। কিন্তু বিরক্তি যেন কাটছেই না। প্রত্যাশার ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে এলো।
কিন্তু মেয়েটার ক’দিন পরই ফাইনাল এক্সাম শুরু
হবে, সিরাত তাই বেশি বিরক্ত করলো না৷ ওকে।
এভাবেই সারাদিন আর সন্ধ্যা কেটে গেলো।
রাতে এক অভাবনীয় কান্ড হলো। সমাবেশের রেশ ধরেই প্রতিপক্ষের লোকেদের সাথে আজও বিরাট গন্ডগোল, সংঘর্ষ বেঁধেছে। দু-পক্ষের লোকেরাই
আহত হয়েছে বেশ। গন্ডগোলে মারামারি করতে গিয়ে প্রত্যয়েরও আঘাত লেগেছে। সেজন্য ও এখন হসপিটালে ভর্তি। সবাই স্তব্ধ। অন্তুর কাছ থেকে এ খবর শুনে তড়িঘড়ি করে সকলে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো। ডাক্তার জানালো এখন ঠিক আছে, তবে হাতে চোট পেয়েছে, পা ভেঙ্গে গেছে। ঠিক হতে বেশ সময় লাগবে। তিন সপ্তাহের বেড রেস্ট দিয়েছে। সবাই প্রত্যয়ের সাথে দেখা করে আসার পর সিরাত কেবিনে গেলো। গিয়ে শক্ত গলায় বলল, ‘এখন কেমন লাগছে?’
প্রত্যয় গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো, ‘ভালো না।
আমার পা ভেঙ্গে গেছে।’
‘ওই প্রবাদটা জানেন তো! পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। বাবা-মায়ের কথা তো একদম শুনেন না।’
সিরাত রেগে বললো। প্রত্যয় ভ্রু কুঁচকে ওকে দেখে বলল, ‘তোমার খুব আনন্দ হচ্ছে বুঝি?’
‘অবশ্যই।’
‘কাঁদছিলে নাকি?’
প্রত্যয়ের ভ্রু কুঁচকে কথাটা বলতেই তা শুনে
হকচকিয়ে গেলো সিরাত।
থতমত খেয়ে বলল, ‘চোখটাও গেছে আপনার।’
বলে সেখান থেকে একপ্রকার পালিয়েই এলো।
ধুর! কান্নাকাটির বিষয়টাও এ গুন্ডাটা বুঝে ফেলেছে।
কখন আর কেন যে কান্না এসে গেছিলো তখন!
সিরাতের মা-বাবা এসেছে মেয়ে জামাইয়ের এ
অবস্থার কথা শুনে। সোহাকে কোলে নিয়ে সিরাত চুপচাপ বসে রইলো। তিনদিন পর খানিকটা স্টেবল হওয়ার পর প্রত্যয়কে বাড়ি নিয়ে আসা হলো।
হাঁটাচলা বারণ। মুশফিকা চৌধুরী ছেলের চিন্তায় বিপি লো করে ফেললেন। সিরাতই প্রত্যয়ের দেখাশোনা করতে লাগলো দিনরাত এক করে। তবে ফোন নিয়ে ড্রয়ারে তালা মেরে রেখে দিলো মুশফিকা চৌধুরীর নির্দেশে। কোনোভাবেই যাতে আবার ঝামেলায় জড়িয়ে না পড়ে। সেজন্য প্রত্যয়ও প্রতিশোধ নিচ্ছে ওর উপর। এই বাহানা, সেই বাহানা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ও। এই সিরাত কফি দাও, চা দাও, পানি দাও, ঔষধ নেবো না, এটা খাবো না, ওটা খাবো, বিরিয়ানি করে নিয়ে এসো, মলম লাগিয়ে দাও, গা ধুয়ে দাও, চুল আঠা হয়ে গেছে শ্যাম্পু করে দাও! ঘুমাতে গেলেও শান্তি নেই। মাথা ব্যথা, গা ব্যথা, চুল টেনে দাও! এসব করে করে জ্বালিয়ে মারছে এতদিন। সিরাতের মনে হচ্ছে প্রত্যয়ের অত্যাচারে আর বেশিদিন বাঁচবে না ও। গুন্ডাটা সব প্রতিশোধ বুঝি এভাবেই নেবে। না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওর চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে এই ক’দিনেই। তবুও
প্রত্যয়ের সেবা করে যাচ্ছে ওর জ্বালাযন্ত্রণা সহ্য
করে। না ভালো না খারাপ। করতে কি চায় গুন্ডাটা
ওর সাথে? গোলকধাঁধায় পড়ে গেছে মনে হচ্ছে ওর!
রাত সাড়ে এগারোটা। প্রত্যয় টিভিতে খবর দেখছে। নিজের সব কাজ গুছিয়ে গোসল সেরেছে সবেমাত্র ঘরে এসেছে সিরাত। প্রত্যয় টিভি না দেখে আড়চোখে ওকে দেখতে লাগলো একমনে। তোয়ালেতে চুল মুছতে মুছতে প্রত্যয়কে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার কিছু প্রয়োজন? রাতে ওঠে প্লিজ আমাকে জ্বালাতন করবেন না। আপনার যন্ত্রণায় মনে হচ্ছে বেশিদিন আর বাঁচবো না। কি খাবেন বলুন?’
প্রত্যয় উত্তর না দিয়ে বলল,
‘এদিকে এসো।’
সিরাত সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। গেলো না। পরক্ষনেই ওকে ধমকে ওঠলো প্রত্যয়। সিরাত চোখমুখ কালো করে এগুলো ওর দিকে। দূরত্ব বজায় রেখে জিজ্ঞেস করল,
‘কী?’
প্রত্যয় একটানে ওকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। এরপর ওর মুখের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে
আকস্মিক কাছে টেনে কপালে চুমু খেলো,
গালেও। সিরাত বাকহারা হয়ে গেলো। অনেক কষ্টে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ঠোঁট দখল করে নিলো প্রত্যয়। বেশ কিছু মুহূর্ত পর ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘জ্বালাবো না।’
সিরাতের এলোমেলো মস্তিষ্ক। ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল, ‘ক কি করলেন এটা?’
‘ঘুমাও। প্রশ্ন করবে না একদম।’
সময় নিয়ে বাক্য সাজালো সিরাত। তেজ নিয়ে বলল,
‘আ আপনি খুব খারাপ লোক।’
‘জানি বউ। ঘুমাও।’
‘না। আপনি আগে বলুন কেন এমন করলেন?’
সিরাত কঠোর গলায় জিজ্ঞেস করলো। প্রত্যয় এবার বিরক্ত হলো, ‘বেশি কথা বললে বেশিকিছু করে ফেলবো।’
কথা শেষ হতে দেরি সিরাতের লাপাত্তা হতে দেরি নেই। একছুটে পালিয়ে গেলো ঘর থেকে। প্রত্যয় সেদিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে কাঠের স্বরে বললো, ‘সহ্য হচ্ছিলো না তোমায়। জ্বলেপুড়ে যাচ্ছিলো যে!’
এদিকে সিরাত প্রত্যাশার ঘরে গিয়ে বসে রইলো। অনেক রাত পর্যন্ত বসে রইলো সেখানে। প্রত্যাশা কিছু হয়েছে কি-না জিজ্ঞেস করলে শুধু বলেছে ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছে ওদের। এমনি করেই অনেক সময় কেটে যাওয়ার পর ধীরপায়ে ঘরে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো প্রত্যয়কে ঘুমন্ত দেখে। এমনিতেই প্রত্যয়ের কান্ড ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন না যে ও কিছু বুঝতে পারে নি। আবার গুন্ডাটার ধূর্ত, কুটিল স্বভাবের কথা ও জানে। ও আসলে কি চায়? কিন্তু প্রত্যয় যদি সত্যি সত্যি ওর কাছে আসে তাহলে ও কি করবে? সিরাত ভয়ভয় চোখে প্রত্যয়কে দেখে বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে পড়তে তড়িঘড়ি করে ওযু করতে চলে গেলো। ফজরের আযান পড়ে গেছে ততক্ষণে!
পরদিন বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো প্রত্যয়ের।
সূর্যের আলো মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। চোখ ডলে ওঠে বসতেই ‘আহ’ শব্দে ছোট্ট করে চেঁচালো। জ্বলছে কাঁটাছেড়া জায়গাগুলো। সিরাতকে ঘরে দেখতে পেলো না ও। বিরক্তি ভঙ্গিতে খানিকক্ষণ সময় নিয়ে বিছানা থেকে নেমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে ওয়াশরুমে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসেই হাঁকডাক ছেড়ে সিরাতকে না দেখতে পেয়ে ডাকতে লাগলো। রান্নাঘরে মুশফিকা চৌধুরী দুপুরের রান্না বসিয়েছেন। সিরাত হাতে হাতে তাকে সাহায্য করছে। ও জানে শ্বাশুড়ি এখনো মনে মনে তাকে অপছন্দ করে।
কিন্তু তাতে ওর কিছু আসে যায় না। ও নিজে থেকেই দায়িত্বগুলো পালন করে। পাছে শ্বাশুড়ি নিন্দে করুক ও কোনোমতেই সেই সু্যোগ দেবে না। সেদ্ধ আলুর খোসা ছাড়াচ্ছিলো মনোযোগ দিয়ে। ওপর থেকে আসা প্রত্যয়ের হাঁকডাক কানে পৌঁছালো না ওর৷ মুশফিকা চৌধুরী লক্ষ্য করলেন ব্যাপারটা। বিরক্তি নিয়ে ওর কাছে এসে ডাকলেন, ‘এই মেয়ে!’
সিরাত হকচকিয়ে ওঠলো, ‘জি?’
‘শুনতে পাচ্ছো না আমার ছেলে ডাকছে? ও অসুস্থ! তোমার কি একটুও খেয়াল নেই ওর প্রতি? যাও এক্ষুনি। দেখো গিয়ে ওর কি প্রয়োজন। কেন ডাকছে! আমার ছেলের প্রতি কোনো মনোযোগ নেই!’
মুশফিকা চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে কথা শোনালেন ওকে।
সিরাত হতবাক হয়ে গেলো। সুযোগ পেলে কথা শোনাতে ভুলেন না এই মহিলা।
ও ছোট্ট করে বলল, ‘যাচ্ছি।
বলে হাত ধুয়ে দ্রুত পায়ে ঘরে এলো। প্রত্যয় খালি
গায়ে বসে আছে। ওকে দেখে বলল, ‘এই
মেয়ে, এতক্ষণে আসার সময় হয়েছে?’
‘কেন?’
‘অসুস্থ স্বামীকে ফেলে কোথায় ছিলে এতক্ষণ?
আমার ডাক তোমার কানে যায় না? বেয়াদব মেয়ে।’
সিরাতের কাল রাতের কথা মনে পড়লো। লজ্জা লাগছে কেন জানি! তবু্ও অকপটে উত্তর দিলো, ‘শুনতে পাইনি। কি প্রয়োজন বলুন।’
প্রত্যয় তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, ‘তোমাকে।’
সিরাত সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো। প্রত্যয় ওর বোকা চাহনি দেখে মনে মনে হেসে খু’ন। কিন্তু ওপরে নিজের গাম্ভীর্যতা ধরে রেখে বলল,
‘মলম নিয়ে এসো।’
সিরাত হাফ ছাড়লো। তড়িঘড়ি থেকে ড্রয়ার থেকে মলম নিয়ে এলো। ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে প্রত্যয়ের সামনে দাঁড়ালো। প্রত্যয়ের তীক্ষ্ণ চাহনিতে ভেতরটা অস্বস্তিতে মিইয়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে কি শুরু করবে বুঝতে পারছে না। এতদিন মলম লাগানোর সময় ওর এতকিছু মনে হয়নি। কিন্তু এখন অস্বস্তি হচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে। প্রত্যয় ধমক দিয়ে বলল, ‘স্বামীর চেহারা দেখে মন ভরে গেলে এবার একটু মানবসেবা করুন। জ্বলে যাচ্ছে সবকিছু।’
সিরাত দম আটকে বলল, ‘না মানে কোথা থেকে শুরু করবো?’
প্রত্যয়ের ধৈর্যের বাঁধ ফুরিয়ে আসছে, ‘মাথা থেকে।’
সিরাত ওর কঠোর স্বর শুনে সব জড়তা কাটিয়ে মলম লাগাতে শুরু করলো বুকে-পিঠে, হাতে, কপালে। ওর নরম হাতের আলতো ছোঁয়ায় প্রত্যয়ের কেমন অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচিত হলো। কেমন! সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছিলো না। তবে ভীষণ অদ্ভুত! ভীষণ ভালো! সিরাত বেশি সময় নিলো না। মলম মেখে, ঔষধ দিয়ে প্রত্যয়কে জিজ্ঞেস করলো, ‘খাবার আনবো?’
‘হুঁ।’
‘কষা মাংস আর পোলাও রান্না হয়েছে। আপনার
নাকি খুব পছন্দ?’
প্রত্যয় বিস্মিত হবার ভান করে হো হো করে হাসলো,
‘এতকিছুতে নজর! বাহ! বেশ ভালো।’
সিরাত কটমট করে বলল, ‘আনবো কি-না বলুন।
আমি শুধু আপনার সেবা করছি। অন্যকিছু না।’
প্রত্যয় শক্ত গলায় বলল,
‘আমি তো সেবাই ভাবছি অন্যকিছু কেন ভাবতে
যাবো বউ?’
ওর চোখেমুখে কুটিল হাসি। সিরাতের
ভেতরটা কেমন কেঁপে ওঠলো। এই লোকের মতলব ওর কাছে একদম ভালো ঠেকছে না।
’
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#চলবে…