#গোলকধাঁধা
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৪
প্রত্যয় ওকে একপলক লক্ষ্য করে শয়’তানি হাসি
দিয়ে বলল, ‘শাড়িতে তো ভালোই মানায়।’
সিরাত ভস্ম করা দৃষ্টি উপহার দিয়ে বলল, ‘নজর খারাপ তা তো জানতাম না।’
‘আস্তে-ধীরে সবই জানবে। এখন মনোযোগ দিয়ে পা টেপো।’
সিরাতের ইচ্ছে করলো পা দুটো ভেঙ্গে দিতে। বহু
কষ্টে নিজের ইচ্ছেকে সংবরণ করলো সে।
সকালে নাস্তার টেবিলে আমির চৌধুরী সিরাতকে অনেক কিছুই বুঝালেন। বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে সেহেতু সংসারে মনোনিবেশ করা উচিৎ ওর। মন দিয়ে সংসার করতে। কোনো অসুবিধা বা সমস্যা হলে তাকে জানাতে। মানুষটাকে প্রথমে অহংকারী মনে হলেও সিরাত বুঝলো খানিকটা মনুষ্যত্ব আছে৷ এদিকে মুশফিকা চৌধুরী বরাবরের মতোই মুখ ফুলিয়ে বসে রইলেন। সিরাত সেটা কেয়ার না করে আমির সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল, ‘আমি একটা কথা বলতে চাই আংকেল।’
‘বলো।’
‘আসলে একটু বাড়ি যেতে চাচ্ছিলাম। বাবা-মা
আমাকে দেখতে চাইছেন। তাছাড়া মেয়ের শরীরটাও ভালো না, ওকে একটু দেখতে ইচ্ছে করছিলো।’
আমির সাহেব চা খাচ্ছিলেন। আচমকা এমন একটা কথা শুনে চমকে ওঠলেন। ফলে গায়ে খানিকটা চা ছলকে পড়লো। ছেলে মিডেল ক্লাস মেয়ে বিয়ে করতে চেয়েছে, তাতে তিনি আপত্তি করেন নি। কিন্তু মেয়ে যে বিবাহিত এবং তার বাচ্চাও আছে সেই খবর তো তিনি পান নি৷ এই অধপতন তো তিনি কিছুতেই মেনে নেবেন না। গরম চোখে একবার প্রত্যয়ের দিকে তারপর
আবার সিরাতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে
জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মেয়ে? মানে কি? তুমি
কি বিবাহিত ছিলে নাকি?’
সিরাত বুঝলো এভাবে বলাটা উচিৎ হয়নি। খানিকটা ইতস্তত করে বলল, ‘ও আসলে আমার বড় আপার
মেয়ে। আপার মৃত্যুর পর ওকে আমি আর মা মিলেই বড় করছি। আমাকেই মা বলে জানে ও!’
আমির সাহেব শীতল চোখে তাকালেন, ‘ওর বাবা কোথায়?’
সিরাত অকপটে বলল, ‘ওনি দ্বিতীয় বিয়ে করে
সংসার করছেন। আমরাই সোহাকে সেখানে পাঠাইনি।’
‘বয়স কত?’
‘দেড় বছর।’
আমির সাহেব দুঃখ পেলেন। তিনিও জন্মের সময় মা হারা হয়েছিলেন। যদিও বাবার টাকাপয়সার অভাব ছিলো না তবুও মায়ের আদর ছাড়া বড় হতে অনেক কষ্টই হয়েছে তার। বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠলো ক্ষণিকের জন্য। ক্ষীণ স্বরে বললেন, ‘যেও।
মাঝেমধ্যে নিয়ে এসো বাচ্চাটাকে।’
সিরাত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। মুশফিকা চৌধুরী বিরক্ত হয়ে স্বামীর দিকে তাকাতেই তিনি চোখ রাঙালেন। অগত্যা তার আর কিছুই বলার রইলো না। প্রত্যয় এতক্ষণ বসে বাবার কান্ড দেখছিলো।
আলাপের শেষপর্যায়ে ফুঁসে ওঠে দাঁড়ালো, ‘কোথাও যাওয়া চলবে না।’
‘তুমি বেয়াদবি করো না প্রত্যয়। আর এখানে
সমস্যাটা কোথায়?’
প্রত্যয় রেগে বলল, ‘তুমি ওকে চেনো না বাবা। ও অতি ধুরন্ধর মেয়ে। আবারও কিছু মতলব আঁটছে নিশ্চয়ই!’
আমির সাহেব পুত্রের উদ্দেশ্য বললেন, ‘এখানে রাগারাগির প্রয়োজন দেখছি না। শান্ত হও।’
প্রত্যয় সিরাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বাবা তোমাকে অনুমতি দিলেও আমি দেবো না। দেখি স্বামীর অনুমতি ছাড়া তুমি কীভাবে যাও।’
বলে গটগটিয়ে হেঁটে চলে গেলো। সিরাত হুমকি শুনে থমকে রইলো। মেজাজ খারাপ হলো প্রচুর। আমির সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ছেলেটাকে বেশি আদরে বাঁদর বানালাম। বাপের কথা শুনতেই চায় না।’
সিরাত শুনলো তা। এ লোকটাকে হাড়েমজ্জায় চেনা হয়েছে ওর। কত খারাপ তা ওর চেয়ে ভালো আর কে জানে? প্রত্যাশা মিটিমিটি করে হেসে বিড়বিড় করে সিরাতকে বলল, ‘আব্বু ই ভাইয়াকে মাথায় ওঠিয়েছে। এখন আব্বুর কথাই শোনে না। আর মা তো কখনো শাসনই করেনি। সবসময় আহ্লাদ দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে। এ কারণেই ভাইয়ার আজ এ অবস্থা। বুঝলে?’
বলে নিজের নাস্তাটুকু শেষ করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো প্রত্যাশা। সিরাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে
তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার পানে। কি যে করবে
ও কিছুই বুঝতে পারছে না।
ঘরে এসে দেখলো প্রত্যয় ভার্সিটিতে যাওয়ার
উদ্দেশ্যে তৈরি হচ্ছে। সিরাতকে দেখে শক্ত গলায় বলল, ‘তোমার সবকিছুর অনুমতি আমার থেকে নেবে, বাবার থেকে নয়।’
‘নিজের ফ্যামিলিকে কেয়ার করেন না। বাবা-মা’কেও আপনি সম্মান করেন না? আপনি তো খারাপের চূড়ান্ত লেভেলে পৌঁছে গেছেন।’
সিরাতের কথা শুনে প্রত্যয় এসে ওর গাল চেপে ধরে
বলল, ‘আমার ফ্যামিলির জন্য কি করবো না করবো, কার কথা শুনে চলবো এসবে মাথা নষ্ট না করলেই ভালো। আর কে বলেছে আমি সম্মান করি না? আমি ওদের জন্য সব করতে পারি।’
সিরাত গালে ব্যথা পাচ্ছে। প্রত্যয় ওকে ছেড়ে
দিতেই ও তাচ্ছিল্যভরে হাসলো, ‘নিচে তার নমুনা দেখতেই পেলাম।’
প্রত্যয় ভাষাহীন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল, ‘ভার্সিটি যেতে চাইলে তৈরি হও। পাঁচ মিনিট টাইম দিলাম। আমি গাড়িতে ওয়েট
করছি।’
সিরাত বলল, ‘আমি আপনার গাড়িতে করে যাবো না।’
প্রত্যয় তাতে পাত্তা না দিয়ে হাতঘড়ি চেক করে
বেরিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘মাইন্ড ইট, অনলি ফাইভ মিনিটস।’
অগত্যা তড়িঘড়ি করে তৈরি হলো সিরাত। লাইট পিংক কালারের সালোয়ার-কামিজ পরে, কোনোমতে চুলটা আঁচড়ে প্রত্যয়ের সাথেই ভার্সিটিতে যেতে বাধ্য হলো সিরাত! মন ভীষণ খারাপ হলো ওর। বন্ধুবান্ধবরাও ওকে দেখে অবাক। তিনদিন যাবৎ ওকে কল, টেক্সট করে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই ক্লাসে ঢুকতেই সবাই ওকে দেখে হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে এলো। নানান প্রশ্নে জর্জরিত করলো। সিরাত একটু সময় নিয়ে মনমরা
হয়ে সবকিছু খুলে বলতেই নিশা অবাক হয়ে বলল, ‘তার মানে প্রত্যয় চৌধুরী এখন তোর বর? আর আমাদের দুলাভাই?’
পাশ থেকে অনল ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলল, ‘তা নয়তো কি গাধী? আমাদের সিরাতের বড় শত্রুই এখন ওর বর। কি যে হলো এটা!’
রাহী গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘খুব খারাপ হলো। সিরাত যে কিভাবে সহ্য করবে লোকটাকে! আমার তো ভাবতেই কেমন লাগছে। নিশ্চয়ই ওকে একফোঁটা শান্তিও দেয়নি।’
বন্ধুদের কথা শুনে সিরাত কেঁদে ফেললো। সবাই ওকে সান্ত্বনা দিলো। অনল চিন্তিত হয়ে বলল, ‘ডিভোর্স নিয়ে নে সিরাত।’
সিরাত ব্যহত গলায় বলল, ‘তুই চিনিস না লোকটাকে? নিজে থেকে ছাড়তে না চাইলে কোনোভাবেই সম্ভব না।’
রাহী অনলকে ধমকে ওঠলো, ‘ডিভোর্স যদি দিতেই হতো, তাহলে বিয়ে করতো না রে। ওকে শাস্তি দেবে বলেই বিয়ে করেছে।’
নিশা বলল, ‘কেন যে ওনার বিরুদ্ধে মানববন্ধনটা করতে গেলাম আমরা!’
সিরাত চোখ রাঙালো, ‘এখানে তো আমাদের কোনো ভুল নেই। লোকটার চেলা প্যালা কতটা ক্ষমতা দেখায় জানিস না? ওদের জন্য কেউ ভার্সিটিতে শান্তি পায় কিছু করতে?’
রাহী চিন্তিত হয়ে বলল, ‘তা তো ঠিক। কিন্তু তুই
কীভাবে থাকবি ওনার সাথে?’
সিরাত চোখমুখ মুছে বলল, ‘চিন্তা করিস না। বিয়েই তো করেছে, মেরে তো ফেলেনি। যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ ওনার অন্যায়গুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যাবো।’
সবাই ওর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ক্লাসগুলো মনোযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করলো সিরাত। নোটস কালেক্ট করে নিলো। এমন সময় হৈ হৈ রব শুনে করিডোরে গিয়ে দেখলো সবাই বলাবলি করছে
ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে প্রত্যয় চৌধুরীর চেলা মাহিন ডেকে নিয়ে গেছে। শুনেই সিরাত ছুটে গেলো ভার্সিটি ক্যান্টিনে। পেছন পেছন অনল, নিশা আর রাহীও ছুটে গেলো। ওরা গিয়ে দেখলো পুরো ক্যান্টিন খালি। কেউ নেই৷ এদিকওদিক খোঁজ নিয়ে
একপর্যায়ে লেকের পাড়ে এসে দেখলো সেখানেই ছেলেটাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। ছেলেটা অনুনয় করে বলছে আর কখনোই সে সিগারেট খাবে না। কিন্তু প্রত্যয়ের চেলারা তা শুনছে না৷ হাতে-পায়ে আঘাত করছে ডাল দিয়ে। প্রত্যয় সামনে বসে তা দেখছে। ছেলেটার আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে সিরাত
গিয়ে ওর সামনে দাঁড়াতেই মাহিন থেমে গেলো।
সিরাত কটমট করে বলল, ‘আর একবারও আঘাত করবে না, ভালো হবে না।’
ইতোমধ্যে প্রত্যয়ের সাঙ্গপাঙ্গরা জেনে গেছে সিরাত ওদের ভাবী। সেজন্য মাহিন প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে জোরে বলল, ‘ভাবী মারতে মানা করে ভাই। কি করুম?’
প্রত্যয় শ্লেষাত্মক হেসে সিরাতকে বলল, ‘আমাকে
ছেড়ে থাকতেই পারো না দেখছি! ক্যান্টিন থেকে এখানে এলাম। অথচ আমার গন্ধ ঠিকই খুঁজে পেয়ে গেলে।’
সিরাত রেগে বলল, ‘বাজে বকা বন্ধ করুন। ওকে
যেতে দিন। বলেছে তো আর কখনো ধূমপান করবে না।’
‘তুমি নিজের কাজে যাও। অন্যের জন্য মাথা না
ঘামিয়ে নিজের কাজ করো।’
‘আগে আপনি ওকে যেতে দিন।’
সিরাত ভালোভাবেই বললো। প্রত্যয় রেগে গেল,
‘ওর শাস্তি মাত্র শুরু, এখনো শেষ হয়নি।’
সিরাত জানে ছেলেটাকে এমনি এমনি ছাড়বে না প্রত্যয়। ভীষণ জেদী সে। আর সিরাত ব্যাপারটাতে ইন্টারফেয়ার করায় আরও ক্ষেপে গেছে ও! প্রত্যয় ছেলেটাকে লেকের পানিতে ততক্ষণ পর্যন্ত ডুব দেওয়ার আদেশ দিলো যতক্ষণ না ওকে থামতে বলবে! তাহলেই শাস্তি মওকুফ করা হবে। অনল, নিশি, রাহী হতভম্ব হয়ে আৎকে ওঠলো। প্রত্যয়ের চেলারা মজা নিলো। সিরাত কঠোর গলায় বলল, ‘পাগল হয়েছেন? এসব কি বলছেন আপনি? এটা ভার্সিটি, কোনো বিনোদন
কেন্দ্র বা আপনার গড়া প্রতিষ্ঠান না যে শিক্ষার্থীরা আপনার কথায় পুতুলের মতো নাচবে।’
প্রত্যয় ভীষণ বিরক্ত হলো। রাগে চোখ জ্বলতে লাগলো ধিকধিক। ইচ্ছে করছে এক থাপ্পড়ে সেদিনের মতো অজ্ঞান করে দিতে। এতকিছু করলো সিরাতকে ভয় দেখানোর জন্য, বিয়ে পর্যন্ত! এরপরও মেয়েটা দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। একটুও ভয় পাচ্ছে না। ভাবতেই রাগে আগুন জ্বলতে লাগলো বুকে। মুহূর্তেই কুটিল বুদ্ধি খেলে গেলো মাথায়। মুচকি হেসে শান্ত স্বরে
বলল, ‘এক শর্তে ছাড়বো একে।’
ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেটা ভয়ে কাঁপছে তখন। সিরাতের বেশ মায়া লাগলো। দৃঢ় স্বরে বলল, ‘কি শর্ত?’
‘ওর বদলে তোমাকে টাস্ক পূরণ করতে হবে। এতই যখন দরদ হচ্ছে তোমার। মমতার মাতা যে! তাহলেই ওর মুক্তি।’
প্রত্যয়ের কথা শুনে অনল, নিশা, রাহী প্রতিবাদ করলো। প্রত্যয় একটি বাক্যও ব্যয় করলো না। সিরাতও অনুনয় করলো না। মেনে নিলো ওর শর্ত। ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেটা অবাক হয়ে সিরাতের কাছে এসে বলল, ‘থ্যাংকস আপু। কিন্তু আমার জন্য
অহেতুক কষ্ট করবেন না। না হয় শাস্তি ভোগ করবো।’
সিরাত মলিন হেসে বলল, ‘তুমি নিজেকে একদম দোষ দেবে না। শর্তটা আমিই পূরণ করবো। তুমি এই কাজ করবে না। তাহলে আমি হেরে যাবো। আমি কিছুতেই ওনার কাছে হারতে চাই না।’
এরপরও ছেলেটা মানতে নারাজ। সিরাতও নিজ সিদ্ধান্তে অটল দেখে সে বাক্যহীন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানালেও ভীষণ খারাপ লাগলো ওর। সামান্য সিগারেট খেলে যে এতকিছু হয়ে যাবে জানলে সে কখনোই এ কাজ করতো না। মনে মনে তওবা করলো। এ জীবনে কোনোদিন সিগারেট খাবে না সে। মাহিন প্রত্যয়ের কাছে এসে বলল, ‘শত হইলেও ভাবী লাগে অহন আমাদের। এইটা কি ঠিক?’
প্রত্যয় চোখ রাঙালো, ‘এত দরদ?’
‘না মানে…!’
‘সর সামনে থেকে।’
প্রত্যয়ের ধমক খেয়ে সরে এলো মাহিন। নিজের জিনিসপত্র সব রাহীর কাছে রেখে লেকের সিঁড়ি বেয়ে হাঁটু জল অবধি নামতেই ভয় লাগলো সিরাতের। এত বড় লেক, সাঁতারেও পারদর্শী না তেমন। ভেবেছিলো যতই হোক, বউ বলে খানিকটা মায়া দেখাবে প্রত্যয়, কিন্তু না। পশুটা নিজের সিদ্ধান্তেই অটল। সিরাতেরও জেদ হলো ভীষণ। প্রত্যয় হাতের ইশারা করতেই সূরা পড়তে পড়তে ডুব দিলো সিরাত। এক, দুই, তিন থামলো না। সিরাত দাঁতে দাঁত চেপে
একের পর এক ডুব দিতেই থাকলো। কানে নিলো না প্রত্যয়ের ডাক, রাহী-ইশার চেঁচামেচি। এদিকে চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে প্রত্যয়ের। আশেপাশের সব সাঙ্গপাঙ্গদের বিকট ধমকে বিদায় করলো সে। তারা নতমুখে, লজ্জায় প্রস্থান করলো। ফার্স্ট
ইয়ারের ছেলেটাকেও ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিলো। এরপর নিজেই লেকের পানিতে নেমে জোর করে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে এলো সিরাতকে। ওর কিল-ঘুষি গ্রাহ্যই করলো না প্রত্যয়। চিবিয়ে চিবিয়ে
বলল, ‘শরীর প্রদর্শন করতে ভালোই মজা
লাগে তাইনা?’
সিরাত কেঁদে বলল, ‘বউকে সকলের সামনে অসম্মান করতে বুক কাঁপেনি আপনার? অমানুষ, নির্দয়, জানো’য়ার!’
প্রত্যয় ধমকে ওঠলো। গাড়ি করে বাড়ি ফিরলো সিরাতকে নিয়ে। ও পুরো রাস্তা ভেজা জামাকাপড় নিয়েই বসে রইলো চুপটি করে। বাড়ি ফিরে সিরাত অবাক হয়ে দেখলো ওর বাবা-মা এসেছে। ও খুশিতে দৌড়ে গিয়ে সোহাকে কোলে নিয়ে চোখেমুখে চুমু খেলো। সোহাও আধো আধো স্বরে ওকে মাম্মা বলে ডেকে ওঠলো। মুশফিকা চৌধুরী ওকে ভেজা অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে বললেন, ‘তোমার এ অবস্থা কেন?’
সবাই-ই প্রশ্নের উত্তর জানতে ওর দিকে তাকালো।
‘আপনার ছেলে আমাকে শাস্তি দিয়েছে।’
বলেই সোহাকে মায়ের কোলে দিয়ে সিরাত রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই প্রত্যয় কটমট করে বলল, ‘আমার নামে নালিশ করলে
কেন? শাস্তি তো তুমি মাথা পেতে নিয়েছো।’
সিরাত বলল, ‘আমি তো নালিশ দিইনি, সত্যটাই বলেছি।’
’
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
চলবে…