গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
110

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ০৮(অন্তিম পর্ব)

আলিফের সঙ্গে পুষ্পের বিয়েটা ঠিক করে ফেলেছেন পুষ্পের বাবা। পুষ্প বেশ অবাক হয়েছিল পাত্র হিসেবে আলিফকে দেখে। আলিফ বেশ খুশি তার ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে। সে তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাবে। পূর্ণতা পাবে তাদের ভালোবাসা। আর কি চাই।

—————————-

শুভ্রতাকে রাদ একটা পোড়া বাড়িতে নিয়ে এসেছে। শুভ্রতা ভয়ে কুকরে আছে। রাদ তো বলেছিলো তাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। ঘুরতে নিয়ে যাবে বলে এমন জায়গায় কেন নিয়ে এলো বুজতে পারছেনা সে।

বিকেলে আকাশের আলো থাকা সত্ত্বেও জায়গাটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। ভয়ংকর জায়গাটা দেখে শুভ্রতা রাদের হাত খামছে ধরে। রাদ শুভ্রতার হাতে হাত রেখে ওকে শান্ত করলো।

শুভ্রতা আর রাদ ভিতরে যেতেই কিছু ছেলে এসে রাদের সামনে দাঁড়ালো। রাদ গম্ভীর কন্ঠে বলল
“ওদের নিয়ে এসো এখানে।”

ছেলেগুলো চলে গেল। শুভ্রতা চোখ ঘুড়িয়ে দেখছে শুধু। কিছুই বুঝতে পারছেনা না। কি হচ্ছে এখানে।

ছেলেগুলো আফজাল সাহেবকে টেনে নিয়ে এলো। শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“বাবা, ওনাকে আপনারা এমন করে বেঁধে রেখেছেন কেন! রাদ ওদের ছেড়ে দিতে বলুন না বাবাকে।”

শুভ্রতার দু বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
“ওনাকে আমিই বেঁধে রেখেছি শুভি।”

রাদের কথা শুনে ছিটকে গেল শুভ্রতা। রাদ এগুলো কি বলছে। ওর বাবাকে…কিছু ভাবতে পারছেনা শুভ্রতা।

রাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“আমিই কে.এম। আমিই প্রতিরাতে তোমার কাছে যেতাম। আর তোমার বাবার আসল নাম আফজাল চৌধুরী। উনি তোমার মাকে শুধুমাত্র টাকার জন‍্য বিয়ে করেছে। উনি তোমার নানাকে খুন করে তোমার আম্মুকে বিয়ে করে সব সম্পত্তি নিজের দখলে নেয়। শুধু তাই নয় আমার পুরো পরিবারকে উনি খুন করেছেন শুধুমাত্র আমার বাবা ওনার অপরাধ জেনে গিয়েছিল বলে। উনি নারী ব‍্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর আমি এমন মানুষকে খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি দেই। তুমি কি মনে করো এর পরেও ওনাকে ছেড়ে দিবো।”

শুভ্রতা ফোঁপাচ্ছে। ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো আপনার কথায়!”

রাদ মুচকি হাসলো। সঙ্গে সঙ্গে একটা ছেলেকে ইশারায় সবকিছু নিয়ে আসতে বলল। ছেলেটি কিছু কাগজ নিয়ে এলো। যা দেখে শুভ্রতা ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো।

কান্না করছে শুভ্রতা। তার বাবা এগুলো করেছে! ভাবতেও পারছেনা সে। আফজাল সাহেব মাথা নিচু করে আছেন।

রাদ শুভ্রতাকে মাটি থেকে তুলে বলল
“শক্ত হও শুভ্রতা। ভুলে যেও না তুমি এখন কে.এম এর বউ। তোমার ভেঙে পড়া মানায় না।”

শুভ্রতা লাল চোখ নিয়ে তাকায় রাদ দিকে। রাদ আলতো হাতে শুভ্রতার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ওর হাতে একটা বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে বলল
“তোমার হাতে আমি আজ বন্দুক তুলে দিলাম। তুমি কি করবে অন‍্যায়ের প্রতিবাদ করবে নাকি নিজের বাবা বলে ছেড়ে দিবে।”

শুভ্রতা একপলক তাকালো রাদের মুখের দিকে। রাদ স্বাভাবিকভাবেই তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা চোখ বুজে পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বন্দুকটা শক্ত করে ধরে বলল
“কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়েনা। আমি কিভাবে ওনাকে ছেড়ে দেই বলুন।”

আফজাল সাহেব করুণ দৃষ্টিতে শুভ্রতার দিকে তাকালো। রাদ আফজাল সাহেবের মুখটা খুলে দিতে বলল। আফজাল সাহেবের মুখ খুলে দিতেই উনি শুভ্রতাকে বললেন
“আমি তোর বাবা হই শুভি।”

শুভ্রতা কাঁদছে, তার চোখ ফেটে পানি আসছে।

“আপনি কীভাবে এমন কাজ করতে পারলেন, বাবা? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না…”

শুভ্রতা ভেঙে পড়ছে। তার হাতে বন্দুক থাকা সত্ত্বেও সে দ্বিধান্বিত। নিজের বাবার মুখোমুখি হতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।

রাদ শান্তভাবে বলল
“শুভি, সব সত্য আজ তোমার সামনে। তুমি জানো কী করতে হবে।”

শুভ্রতা বন্দুকটি নিচু করে ফেলল। তার হৃদয়ে দ্বন্দ্ব চলতে থাকল—সে কীভাবে নিজের বাবাকে শাস্তি দেবে, অথচ জানে, বাবা যা করেছে তার জন্য কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু শেষমেশ, সে শক্ত হলো। নিজের সমস্ত সাহস সঞ্চয় করে, ধীরে ধীরে বলল
“পাপের ফল তাকে ভোগ করতেই হবে, বাবা। আর আমি কোনো অন্যায়কে ছাড় দিতে পারি না।”

রাদের দিকে একবার তাকিয়ে, সে বুঝল, তার ভালোবাসার মানুষটি তার পাশে আছে।

শুভ্রতা চোখ বুজে পরপর দুটো গুলি চালিয়ে দিলো। মুহূর্তেই মাটিতে শুয়ে পড়লেন আফজাল সাহেব। শুভ্রতা হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। রাদ ওকে বুকে আগলে নিলো। ঠোঁটে তার তৃপ্তির হাসি। সে ভুল মানুষকে নির্বাচন করেনি। রাদ ইশারায় আফজাল সাহেবকে নিয়ে যেতে বলল।

শুভ্রতাকে কিছুটা শান্ত করে রাদ ওর দুই গালে হাত রেখে বলল
“অনেক ভালোবাসি তোমায় জান। শুধু বিশ্বাস রেখ আমার উপর আমি সব করতে পারবো তোমার জন্য।”

শুভ্রতা কান্নাভেজা চোখে রাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
“আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি রাদ।”

রাদ মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতাকে।

———————–

আফজাল সাহেবের মৃত্যু সংবাদ পরিবারের কাছে আসে যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সংবাদপত্র এবং সংবাদমাধ্যমে এই তথ্য প্রচারিত হয়। পরিবার শোকাহত হলেও, তারা বিশ্বাস করে যে আফজাল সাহেব মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করেছেন।

রাদ ওনাদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও শুভ্রতা নিশ্চুপ।

—————————

শুভ্রতা আর রাদ বেশ কিছুদিন ধরে একসঙ্গে থাকার পর সম্পর্কটা অনেক গভীর হয়ে গেছে। দুজনেই জীবনের কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলা করেছে, এবং এই অভিজ্ঞতাগুলো তাদের আরও কাছাকাছি এনেছে।

একদিন সন্ধ্যায়, রাদ শুভ্রতাকে নিয়ে ছাদের উপরে বসে আছে। আকাশে লাল-সোনালি সূর্যাস্তের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। শুভ্রতা হালকা শাড়ি পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রাদ ওর দিকে একবার তাকিয়ে হালকা করে মুচকি হেসে বলল
“এই আকাশটাও আমাদের মতো, শুভি। মাঝে মাঝে মেঘে ঢাকা পড়ে যায়, কিন্তু সূর্য সবসময় উঠে আসে।”

শুভ্রতা ওর কাঁধে মাথা রেখে মৃদু স্বরে বলল “হয়তো…কিন্তু কখনো কখনো সেই মেঘের ভারটা অনেক বেশি হয়ে যায়, রাদ।”

রাদ তার হাত ধরে বলল
“তুমি শুধু আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখো। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

শুভ্রতা গভীরভাবে রাদের দিকে তাকালো। সেই মুহূর্তে সে বুঝল, রাদের প্রতি তার বিশ্বাস কতটা দৃঢ়। রাদ তাকে সবকিছুর পরও ভালোবেসে পাশে থেকেছে।

হঠাৎ রাদ একটু মজার ছলে বলল,
“তোমার মতো এত জেদি মেয়ে আগে কখনো দেখিনি!”

শুভ্রতা একটু হেসে বলল
“আর তুমি! তুমি তো ভয় দেখানোর মাস্টার!”

দুজনেই হেসে উঠলো। তাদের এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোতেই যেন জীবনের সবকিছু ধরা আছে।

পরিশেষে ভালো থাকুক ভালোবাসা। আর একটা কথা সবসময় মনে রাখা উচিত পাপ বাপকেও ছাড়ে না।

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে