গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৭

0
119

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৭

শুভ্রতা ঘুমের মাঝেই রাদের একটা হাত শক্ত করে ধরে আছে। রাদ হাটু গেড়ে বিছানার পাশে বসলো। হাত সরালো না এই ভয়ে যে যদি শুভ্রতার ঘুম ভেঙে যায়। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার ঘুমন্ত মুখটার দিকে।

রাদ শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু হাসলো। তার চোখে মমতা আর ভালোবাসা জমে আছে, যেন পৃথিবীর সবকিছুই এই মুহূর্তে থেমে গেছে। শুভ্রতার মুখের প্রতিটি ভাঁজ, নিঃশ্বাসের ওঠানামা, সবকিছু যেন রাদের জন্য এক অসীম প্রশান্তির উৎস হয়ে উঠেছে। শুভ্রতা তার হাত শক্ত করে ধরেই ঘুমিয়ে আছে, যেন রাদকে সে কোনোভাবেই হারাতে চায় না। রাদ শুভ্রতার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলো, কোনো শব্দ ছাড়াই, যেন সেই ভালোবাসা তার ঘুমে স্বপ্ন হয়ে মিশে যায়।

রাদ আরও কিছুক্ষণ শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মনে হলো, এই মুহূর্তগুলোই তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, তারা হয়তো সারাজীবন একসঙ্গে এই রকম শান্তি আর ভালোবাসায় কাটাতে পারবে। রাদের হৃদয়ে অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়লো, সে ভাবলো, শুভ্রতা যেন তার জীবনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। তার এই মৃদু ঘুম আর মায়াভরা মুখ যেন রাদের জীবনের সব ঝড় থামিয়ে দিয়েছে।রাদ নিঃশব্দে বলল
“তুমি আমার জীবন, শুভ্রতা।”

রাদ শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে সে টেরই পায়নি।

———————-

হিমেল বসে আসে পুষ্পের বাবা সামনে। হিমেল নিজেকে ধাতস্ত করে বলল
“আঙ্কেল ছেলে হিসেবে আপনার কাছে আরজি জানাবো।”

পু‍ষ্পের বাবা হেসে বললেন
“কেন নয় বাবা দ্বিধা ছাড়া বলো।”

হিমেল সামনে থাকা টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে বলল
“আঙ্কেল আমি আপনার মেয়েকে চিনি অনেক আগে থেকে। আমরা দুই ভাই। আমার বড় ভাই আমার চেয়ে একবছরের চেয়ে বড়। ছোটবেলায় ‍বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইয়াই আমাদের পরিবারটাকে দেখেছে। ভাইয়ার কাছে আমি পুষ্পের ছবি দেখেছি। আমার ভাইয়া পুষ্পকে ভালোবাসে। আপনি যদি চান আমরা কি পারিনা এই সম্পর্কটিকে বিয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।”

পুষ্পের বাবা কিছুসময় ভাবলেন। তারপর ‍বললেন
“তোমার ভাইয়াকে আমার অফিসে এসে দেখা করতে বলো হিমেল।”

হিমেল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ফোন দিলো আলিফকে।

কিছুসময় পর তাড়াহুড়া করে আলিফ চলে আসে। আলিফকে দেখেই ভ্রুকুচকে আসে পুষ্পের বাবার। পরক্ষণেই তিনি হেসে বললেন
“আরে আলিফ তুমি!”

আলিফও বেশ অবাক হয়। পুষ্পের বাবা হাসি মুখে বললেন
“আমার ভাইয়ের পিএ আলিফ। ভাইয়ের কাছ থেকে আমি তোমার অনেক প্রশংসা শুনেছি। আমি তো আগে থেকেই আলিফকে পছন্দ করে রেখেছি।”

আলিফ শুধু গোল গোল চোখে একবার হিমেলের দিকে তাকাচ্ছে। আর একবার পুষ্পের বাবার দিকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।

অন‍্যদিকে হিমেল মিটমিটিয়ে হাসছে।

আলিফ প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“স‍্যার আপনি কি বলছেন এগুলো! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

হিমেল মুচকি হেসে আলিফের দিকে এগিয়ে গিয়ে ধীর কন্ঠে বলল
“উনি পুষ্পের বাবা। আমি তোর আর ভাবি বিয়ের কথা আঙ্কেলকে বলেছি।”

আলিফ থমকালো। পুষ্পের বাবাও বুঝতে পারলেন হিমেল তার ভাইকে কিছু না জানিয়েই কাজটা করেছে।

——————–

সকালের তীব্র আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রতা। চোখ পিটপিট করে তাকাতেই রাদের ঘুমন্ত মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। শুভ্রতা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। রাদ নিচে বসে ঘুমাচ্ছে কেন! মাথায় ঢুকলোনা বিষয়টা। শুভ্রতা সরু চোখে তাকিয়ে রইলো রাদের দিকে। রাদের ঘুমন্ত মুখটা বেশ ভালো লাগছে শুভ্রতার কাছে। রাদের অবাধ‍্য চুলগুলো পড়ে আছে তার কপাল জুড়ে এলোমেলো ভাবে। ফর্সা মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো বেশ আর্কষনীয়। রাদের ঠোঁটের দিকে চোখ পড়তেই ভ্রুকুচকে এলো শুভ্রতার। সে নিজ মনে বিরবিরালো
“বেডায় বিড়ি খায় নাকি!”

মুহুর্তেই নাকমুখ কুচকে এলো শুভ্রতার। রাদের কাধে ধাক্কা দিয়ে ওকে ডাকতে লাগল। রাদ একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো
“সকাল সকাল কেন বিরক্ত করছো! ঘুমাও তো শান্তিমতো। সারারাত ঠিকমতো ঘুম হয়নি এমনি তোমার জন‍্য।”

শুভ্রতা অবাক হলো। তার জন‍্য মানে। সে আবার কি করলো! শুভ্রতা কপাল কুচকে আবার বলে উঠলো
“ওই মিয়া আমি আবার কি করলাম! উঠুন বলছি।”

রাদ হুট করে চোখ বুজেই বেডে উঠে শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকে মিশিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়লো।

শুভ্রতার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। যেন এখনি কোটর থেকে বের হয়ে আসবে। শুভ্রতা ব‍্যপারটা বুঝতে পেরে ছাড়া পাওয়ার জন‍্য ছটফট করতে লাগল। রাদ এবার শুভ্রতাকে ছেড়ে উঠে বসে বিরক্তি নিয়ে বলল
“কি হয়েছে এমন করছো কেন!”

শুভ্রতা কোমরে হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে রাদ দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনি সিগারেট খান!”

রাদ ভ্রুযুগল কুচকে বলল
“এ‍টা শোনার জন‍্য ডাকছিলে। খাই তো কি হয়েছে!”

“যেতেহু আপনি আমার স্বামী সেহেতু আপনি আর সিগারেট খেতে পারবেন না। বলে দিলাম।”

“তোমার স্বামী হওয়ার সাথে সিগারেট খাওয়ার সম্পর্ক কি?”

শুভ্রতা মুখ বাঁকিয়ে বলল
“আমি পছন্দ করিনা। তাই খাবেন না বুঝলেন।”

রাদ কি যেন ভেবে বাঁকা হেসে শুভ্রতার কাছে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বলল
“যদি তোমার বারণ না শুনি আমি তখন।”

রাদকে এমন কাছে আসতে দেখে শুভ্রতা পিছাতে পিছাতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
“এমন করে আগাচ্ছেন কেন!”

রাদ দুষ্টু হেসে আরো এগিয়ে আসতে লাগল। শুভ্রতার গলা শুকিয়ে গেল রাদ এমন এগোতে দেখে।

পিছাতে পিছাতে বেডের সঙ্গে লেগে গেল শুভ্রতা। চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলল সে।

শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে থাকতেই রাদ ধীরে ধীরে তার মুখের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল
“কেন ভয় পাচ্ছো? তোমার কিছু করবো না।”

শুভ্রতা তবুও চোখ খোলেনি, যেন সে কিছুটা নার্ভাস। রাদ হালকা হাসি দিয়ে আবার বলল
“তুমি যদি আমার ভালোবাসার কাছে হার মানতে চাও, তবে এখনই চোখ খুলে বলো, তোমার যা ইচ্ছে আমি সেটাই করবো।”

শুভ্রতার গলার স্বর ঠান্ডা হয়ে আসলো, সে ধীরে ধীরে চোখ খুললো। রাদকে এত কাছে দেখে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। রাদের চোখে তার জন‍্য অনুভূতিতে ভরপুর। শুভ্রতা ধীর কন্ঠে বলল
“আপনিই প্রতি রাতে আমার কাছে আসতেন তাইনা।”

রাদ নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো
“যদি বলি হ‍্যাঁ!”

“আপনার মাঝে এতো রহস্য কেন রাদ!”

রাদ মুচকি হেসে বলল
“তুমি তো এই রহস্যময় মানুষটিকেই ভালোবেসে ফেলেছো জান।”

শুভ্রতা কেঁপে উঠলো রাদের কথায়। সে কি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে এই রহস্যময় মানুষটাকে! উত্তর খুঁজে পায় না শুভ্রতা।

রাদ মুচকি হেসে শুভ্রতার কপালে এক দীর্ঘ গভীর চুমু খেয়ে সরে এলো। শুভ্রতা চোখ ‍বুজেই রইলো।

রাদ মাথা বালিশে ঠেকিয়ে চোখ বুজে বলল
“প্লীজ আমাকে ঘুমাতে দেও জান। তুমি নিচে যাও আমেনা আন্টি আছে। উনি নাস্তা দিবেনি তোমায়।”

শুভ্রতা চোখ খুলে রাদের বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকালো।

শুভ্রতা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রাদের দিকে। তার মনের গভীরে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলো, কিন্তু রাদ তাকে নিজের মাঝে জড়িয়ে রেখেছে এমনভাবে যে, সে আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছিল না। শুভ্রতার মনে হলো, হয়তো এই রহস্যময় মানুষটাকেই সে ভালোবেসে ফেলেছে, এমনকি রাদের সিগারেট খাওয়া কিংবা তার ধীর অথচ দুষ্টু হাসি—সবকিছুই তাকে প্রতিনিয়ত আরও কাছে টানছে।

শুভ্রতা ধীরে ধীরে উঠে নিচে গেলো। আমেনা আন্টি তাকে দেখে হাসিমুখে নাস্তার দিকে ইঙ্গিত করলেন। কিন্তু শুভ্রতার মন যেন অন্য কোথাও ছিল। নাস্তা করতে করতে সে ভাবছিল, রাদের প্রতি তার এই টান কেন এত গভীর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে যেন কোনো উত্তর খুঁজে পেল না।

অন‍্যদিকে, রাদ ঘুমিয়ে রইলো। তবে তার মুখে এক মৃদু হাসি লেগে ছিল, যেন শুভ্রতার অজান্তেই সে সবকিছু জানে—তার সব ভয়, অনিশ্চয়তা, এবং ভালোবাসার সবকিছু।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে