গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৫

0
14

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৫

মিস নীলা অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমে প্রবেশ করে বেশ অবাক হলেন। তার বেডের মাঝে বসে আসে এক যুবক। যার সারা শরীর কালো রঙের আবৃত। শুধু চোখ জোড়া দেখা যাচ্ছে। ধূসর রঙের চোখে এক অদ্ভুত দৃষ্টির অধিকারী ছেলেটাকে দেখে মিস নীলার বুক কেঁপে উঠলো। চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেটি হাসছে। মিস নীলা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো
“কে আপনি? আর এখানে কি করছেন!”

যুবকটি একরাশ হেসে বলল
“আরে এতটুকুতেই এতো কাঁপা কাঁপা করলে চলবে মিস নীলা অফ থুক্কু মিসেস আফজাল।”

নীলা আতকে উঠলো। এই বিষয়ে তো কারো জানার কথা না। তাহলে এই ছেলেটা কিভাবে জানলো। নীলার ভয় যেন আরও বেড়ে গেল। বার কয়েক তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
“কি চাই আপনার!”

ছেলেটি হাসলো। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“যদি বলি তোমার প্রিয় স্বামীর জান!”

নীলার বুক কেঁপে উঠলো। অস্থির কন্ঠে বলল
“কি বলছেন এসব আজেবাজে কথা! মাথা ঠিক আছে আপনার!”

ছেলেটি বেড থেকে নেমে নীলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলার দিকে একটু ঝুঁকে এক অদ্ভুত গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“কে.এম আমি। এরপর নিশ্চয়ই আর কিছু বলতে হবেনা আশা করছি।”

ছেলেটির সেই অদ্ভুত গম্ভীর কন্ঠে বলা কথাগুলো নীলার কর্ণকূহরে পৌঁছাতেই নীলা ঘামতে লাগল। সে আবারও ধীর কন্ঠে বলল
“কি চাই আপনার!”

কে.এম মুচকি হাসলো যা তার চোখ দেখেই বোঝা গেল। কে.এম নীলার থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বলল
“আফজালের সকল তথ্য আমার চাই। এই মুহূর্তেই বলবে তুমি।”

নীলা নিজের জামা শক্ত মুঠি করে মাথা নাড়িয়ে বলল
“না আমি তা কখনোই পারবোনা। প্লীজ আপনি চলে যান। আমি অনুরোধ করছি আপনাকে চলে যান এখান থেকে।”

কে.এম এবার রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকালো নীলার দিকে। নীলার জানের পানি যেন শুকিয়ে গেল সেই তাকানিতে।

নীলা একে একে সব বলছে আর কে.এম চুপচাপ শুনছে। কিন্তু আফজাল সাহেবের আরেকটা নাম শুনে বেশ থমকালো সে। তবুও চুপ করে রইলো।

নীলার থেকে সব কথা শুনে কে.এম বেড়িয়ে এলো সেখান থেকে।

——————–

শুভ্রতা আর রুহি রুমে বসে ছিলো। তখনই রুমে শুভ্রতার ইসমাইল সাহেব আসলেন। রুহি খানিকটা গুটিয়ে গেল। শুভ্রতা মাথা নিচু করে বলল
“বাবা কিছু বলবে!”

ইসমাইল সাহেব সবসময়ের মতো গম্ভীর কন্ঠে বললেন
“কাল বিকেলে রেডি হয়ে থেকো। আমার বিজনেস পার্টনার আসবে। কালই উনি বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করতে চান।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“মানে”

“মানে কিছুই না। আমি কথা দিয়েছি ওনার সঙ্গে আমি তোমার বিয়ে দিবো। আর তুমি তো জানোই আমি কেমন!”

বলেই উনি রুম থেকে চলে গেলেন পিছনে রয়ে গেল শুভ্রতার হতভম্ব হয়ে যাওয়া মুখটা।

এই নিয়ে অভ্র আর ইসমাইল সাহেবের মাঝে বেশ তর্কাতর্কি ও হলো। শুভ্রতা হতভম্ব হয়ে বসে আছে শুধু। সে জানে ইসমাইল সাহেব কেমন। উনি যা বলেছেন তা করবেনই। স‍বাই থম মেরে বসে আছে। অভ্র রাগ করে দরজা লাগিয়ে বসে আছে।

কথামতো পরেরদিন ইসমাইল সাহেবের কথামতো পাত্রপক্ষ দেখতে এলো। শুভ্রতা কাঠপুতুলের মতো বসে আছে। সবাই বাধ‍্য হয়েই বসার রুমে বসেছে।

পাত্র কম বয়সি অভ্রের চেয়ে ছোট। ছেলেটাকে দেখে অভ্রের খারাপ লাগল না। বেশ নম্র ভদ্র ছেলেটা। ছেলেটা বাবা মা বোন রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে অনেক আগেই। শুনে শুভ্রতার একটু মায়া হলো। সে চোখ তুলে তাকাতেই ভড়কে গেল। এতো সেই ধাক্কা দেওয়া ছেলেটা। ছেলেটা মুচকি হাসি দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

ছেলেটা শুভ্রতার সঙ্গে আলাদা কথা বলতে চাইলে শুভ্রতাকে ওর বাবা ছেলেটিকে নিয়ে নিজের রুমে যেতে বলে।

শুভ্রতা গটগট পায়ে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। ছেলেটাও পিছু পিছু যায় ওর। শুভ্রতা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। ছেলেটা ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল
“আমার নাম রাদ মাহাতাব। আমি তোমার ব‍্যাপারে সবটাই জানি। বুঝতে পারছি তোমার বয়সটা অনেকটাই কম। কিন্তু করার কিছুই নেই। আজকেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি কি বলো!”

শুভ্রতা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো
“নিজের ইচ্ছাগুলো চাপিয়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত শুনতে চাওয়া বোকামি বলে আমি মনে করি।”

রাদ এক রহস্যময় হাসলো। ধীর কন্ঠে বলল
“কাজি সাহেব আসবেন একটু পর। বিয়ে করে তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো। তুমি ভালো থাকবে।”

শুভ্রতা কিছু বলল না। রাদ বারান্দা থেকে বের হতে নিবে তখনই দেখে রুহি মিনিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কপাল কুচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে সে।

রাদ মুচকি হেসে হাটু গেড়ে রুহির সামনে বসে পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে রুহির দিকে এগিয়ে দিলো। রুহির কপাল যেন আরো কুচকে এলো। সে কাঠকাঠ গলায় বলল
“আমি অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু নেই না।”

রাদ রুহির গাল টেনে বলল
“আমি অপরিচিত কেউ না। আমি তোমার একজন কাছের মানুষের মনের মানুষ হতে এসেছি।”

রাদের জটিল কথা রুহি বুঝতে না পেরে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো রাদের দিকে। রাদ এবার চকলেটটা রুহির হাতে গুজে দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।

রাদ যেতেই রুহি শুভ্রতার কাছে। শুভ্রতা চুপ করে বাহিরে তাকিয়ে ছিলো। রুহি শুভ্রতা আঁচল ধরে বলল
“ফুপি এই আঙ্কেলটা কে!”

শুভ্রতা নিজের মনেই বলল
“হবু বর”

রুহির কানে যেতেই রুহি মুচকি হেসে বলল
“ফুপি তোমারও কি লালটুকটুকে বর হবে। যার লালটুকটুকে বউ তুমি হবে।”

রাদ রুহির কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। সে চলে যেতে নিয়ে শুভ্রতাকে চকলেট দেওয়ার জন‍্য ফিরে এসেছিলো। রুহির কথা শুনে তার হাসি বের হয়ে গেছে।

শুভ্রতা আর রুহি দুইজনই কপাল কুচকে তাকালো ওর দিকে। রাদ হাসি চেপে গিয়ে কোনোমতে চকলেটটা শুভ্রতাকে দিয়ে চলে গেল। শুভ্রতা কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো রাদের যাওয়ার দিকে। চোখ নামিয়ে চকলেটের দিকে চোখ ফেরাতেই অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো শুভ্রতার ঠোঁটে।

—————–

ফুলে সজ্জিত বিছানায় লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে শুভ্রতা। তার বিয়ে হয়ে গেছে রাদের সঙ্গে। এই কথাটা যেন এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা তার কাছে। বাড়িতে কেউ নেই রাদ ছাড়া। ভয়ও করছে তার।

খট করে দরজায় শব্দ হতেই কেঁপে উঠলো শুভ্রতা। রাদ এসেছে রুমে। শুভ্রতা গুটিসুটি মেরে বসে রইলো। রাদ ধীর পায়ে এগিয়ে এলো বেডে কাছে। আস্তে করে শুভ্রতার ঘোমটা তুলে বলল
“মাশাল্লাহ”

রাদের ধীর কন্ঠে বলা কথায় শুভ্রতা আরো কুকরে গেল। রাদ মুচকি হাসলো হাসলো। শুভ্রতা ভাঙা ভাঙা গলায় বলল
“আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই!”

বলেই শুভ্রতা রাদের মুখপানে তাকালো। রাদ চুপ করে আছে। শুভ্রতা আবারও মাথা নামিয়ে বলে উঠলো
“আপনার আগেও আমাকে একজন…,”

শুভ্রতাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রাদ শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে এনে ওর ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।

শুভ্রতা থমকে গেল। রাদ যে হুট করে এমন কাজ করবে সে কল্পণাও করেনি সে। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হলো এই স্পর্শ তার চেনা। খুব চেনা। শুভ্রতা আরেক দফা থমকালো। তাহলে কি রাদই প্রতিরাতে আসা সেই ছেলে। শুভ্রতা সেটা জানার জন‍্য রাদকে ধাক্কাতে লাগল। কিন্তু রাদ তো তার প্রিয়তমা ঠোঁটে মত্ত।

বেশকিছুক্ষণ পর রাদ শুভ্রতাকে ছেড়ে দিলো। দুইজনই হাঁপাচ্ছে। শুভ্রতা কটমট দৃষ্টি রাদের দিকে তাকালো। রাদ বাঁকা হাসলো।

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে রাদের দিকে তাকিয়ে সন্দিহান কন্ঠে বলল
“আপনি প্রতিরাতে আমার রুমে আসতে চুপিচুপি তাই না।”

রাদ তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে। রাদকে কিছু বলতে না দেখে শুভ্রতা অস্থির হয়ে পড়লো। রাদে একটু কাছে গিয়ে আঙুল উঁচুিয়ে বলল
“ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম। কিছু বলছেন না কেন?”

রাদ হুট করে শুভ্রতার কোমর পেঁচিয়ে ধরে। শুভ্রতা কেঁপে উঠে রাদের স্পর্শে। রাদ শুভ্রতা ঘাড়ে কপাল ঠেকায়। রাদের তপ্ত শ্বাস শুভ্রতার গায়ে বাড়ি খাচ্ছে। শুভ্রতা যেন একদম পাথর হয়ে গেছে। সে নড়াচড়া করতে ভুলে গেছে। রাদ এমন করছে কেন বুঝে পাচ্ছে না শুভ্রতা। মাথা ভনভন করে ঘুরছে তার।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে