#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৪
শুভ্রতা আকাশ দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছে খেয়াল নেই তার। ঘুমের মাঝেই ঠোঁট কারো আলতো স্পর্শে কেঁপে উঠলো সে। কিন্তু গভীর ঘুমের জন্য চোখ খুলতে বেগ পেতে হচ্ছে তার। আস্তে আস্তে স্পর্শ যেন গাঢ় হচ্ছে। হুট করে শুভ্রতার চোখ জোড়া খুলে গেল। ঠোঁটে চিনচিন ব্যথা করছে। এমন মনে হচ্ছে যে কেউ কামড়ে ধরে রেখেছিলো। কিন্তু এখানে তো কেউ নেই।
মিনিকে তার জায়গামতো রেখে শুভ্রতা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো সে। ঠোঁটের কোণায় কাল শিটে জখম হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিভাবে। মিনি কি কিছু করলো। কিন্তু না সে তো ঘুমিয়ে আছে। শুভ্রতার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। তবে কি কেউ এসেছিলো। কিন্তু কিভাবে! কেমনে কি !
শুভ্রতা খানিকক্ষণ ভাবলো। কিন্তু কিছু খুঁজে পেল না। শুভ্রতার আর সে রাতে ঘুমাতে পারলো না সেই টেনশনে।
ভোরে তার চোখ লেগে এলো। আজ আর কলেজ গেল না সে। বেশ বেলা করেই ঘুমালো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেল সকালের নাস্তা খেতে।
শুভ্রতা খাচ্ছিলো। এমন সময় রুমা বেগম ভ্রুকুচকে বলে উঠলেন
“কিরে তোর ঠোঁটে কি হয়েছে! এমন ফুলে আছে কেন? আর আজকে কলেজে গেলিনা কেন!”
শুভ্রতা ভড়কে গেল খানিকটা। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল
“আসলে আম্মু খাটের সঙ্গে উষ্টা খেয়ে পড়ে গেছিলাম তখনই ঠোঁটে ব্যাথা পেয়েছি। আর শরীরটা ভালো লাগছিলো না তাই আর কলেজ গেলাম না। আবার সামনে পরীক্ষা কিছু পড়া জমে গেছে সেগুলো কভার করতে হবে।”
রুমা বেগম তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন
“ওও তাই বল। তাহলে নাস্তা খেয়ে পড়তে বস। বিকালে রুহিরা আসবে বলল।”
রুহির কথা শুনতেই মুচকি হাসলো শুভ্রতা। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে খাবার টুকু শেষ করলো সে।
শুভ্রতা রুমে গিয়ে পুনরায় আয়নার সামনে দাঁড়ালো। তখনই তার ফোনের মেসেজ টুনটা বেজে উঠলো। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ দেখে থমকে গেল। মেসেজ ছিলো ঠিক এমন
“ছোট মাথায় এতো চাপ নিও না। পরে সমস্যা হবে কিন্তু। আর সাবধান আমার চোখ তোমার উপর পড়েছে। তুমি এখন শুধু আমার। কোনো ছেলের আশেপাশে যেন তোমাকে না দেখি। তাহলে ওখানেই তোমার খেল খতম করে দিবো বলে দিলাম। আল্লাহ হাফেজ জান।”
মেসেজে লেখার পর দুটো চুমুর ইমুজি দেখে মাথা ঘুরছে শুভ্রতার। এমন হুমকি কে দিলো তাকে। রাতে তাহলে একটা ছেলে তাকে..না না শুভ্রতা আর ভাবতে পারছেনা। ফোনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টালো সে। কান্না পাচ্ছে তার। কত শখ ছিলো তার জামাই ছাড়া কারো সংস্পর্শে সে যাবে না। শুভ্রতার সব শখে পানি ঢেলে দিলো এই কালা রাতের হুমকি ম্যান।
শুভ্রতা ঠোঁট উল্টে পুষ্পকে কল করলো। পুষ্প কল ধরে ভাঙা গলায় বলল
“হুম শুভি বল।”
শুভ্রতার কপাল কুচকে এলো পুষ্পের এমন গলা শুনে। শুভ্রতা তার কথা বাদ দিয়ে খানিকটা চিন্তিত কন্ঠে বলল
“তোর কি হয়েছে রে! গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন! সব ঠিক আছে তো!”
পুষ্প একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
“শুভি আম্মু কাল এক্সিডেন্ট করেছে। কাল কলেজ থেকে আসার পথে এক আন্টি বলে। তখন আব্বুকে কল করি। তারপর খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যাই। একটা ভাইয়া আম্মুকে হাসপাতালে ঠিক সময় নিয়ে এসেছিলো। তাছাড়া…”
বলেই ফুপিয়ে উঠলো পুষ্প। শুভ্রতার মনটা খারাপ হয়ে গেল। জিঙ্গাসু কন্ঠে বলল
“আন্টি এখন কেমন আছেন? আর তুই এখন কোথায়!”
পুষ্প একটু দম নিয়ে ধীরে ধীরে বলল
“আম্মু এখন আগের থেকে অনেকটাই ভালো আছে। বাবা ওখানে আছে। আমি থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু থাকতে দেইনি বাসায় দিয়ে গেছে।”
“ওও আমি কি যাবো তোর কাছে!”
“না থাক আসতে হবেনা আমি সামলে নিতে পারবো।”
তখনই শুভ্রতার থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে রুমা বেগম ধমকে বলে উঠলেন
“আমাদের আগে জানাবেনা পাগলি মেয়ে। আমি সবটাই শুনেছি। আমি দুপুরের রান্না করে শুভ্রতাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ভাইকে খাইয়ে দিও। আর ভাবিকে তোমার টেনশন করতে না করো। আমি বিকালে দেখা করতে যাবোনি।”
“না আন্টি এতো কষ্ট করতে হবেনা।”
“কোনো না শুনবোনা আমি। আমি যা বলেছি তাই শুনবে। নেও এখন তোমার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলো।”
বলেই ফোনটা শুভ্রতা হাতে দিয়ে উনি চলে গেলেন। শুভ্রতা কানে নিয়ে বলল
“আচ্ছা তাহলে থাক দেখা হচ্ছে।”
“হুম”
পুষ্প কল কাটতেই আবারও তার ফোন বাজতে লাগল। পুষ্প অপরিচিত নাম্বার দেখে কপাল কুচকে রিসিভ করে কানে ধরে সালাম দিলো। কিন্তু অপরপাশ থেকে কারো কথা না শুনে বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে এলো পুষ্পের।
পুষ্প কয়েকবার “হ্যালো” বলে অপেক্ষা করলো, কিন্তু ফোনের অপরপাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ পেল না। ধীরে ধীরে তার বিরক্তি বাড়তে থাকল। ফোনটি কেটে দেয়ার জন্য বাটনে চাপ দিতে যাচ্ছিল, তখনই হালকা শ্বাসের শব্দ শুনতে পেল। সে কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে আবার বলল, “হ্যালো? কে বলছেন?”
কোনো উত্তর না পেয়ে পুষ্প ধীরে ধীরে অস্বস্তি অনুভব করতে লাগল। কে হতে পারে? এমন সময় হঠাৎ করে ফোনের লাইনটি কেটে গেল। পুষ্প ফোনটা হাতে ধরে একটু সময় চুপ করে রইল।
আলিফ কল কেটে পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে সবটাই জানতে পেরেছে। কিন্তু পুষ্পকে কি বলবে তা খুঁজে পাচ্ছিলো না সে। আলিফ একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো সামনের দেয়ালে। সে পাগলের মতো ভালোবাসে পুষ্পকে। আর মেয়েটা বুঝতেই চায় না। আলিফ কিছু একটা করতেই হবে। পুষ্পকে তার চাই মানে চাই।
———————–
রাদ একটা অন্ধকার রুমে একা বসে আছে একটা ছবি নিয়ে। ছবিতে একটা লোক একটা মহিলা আর সঙ্গে দুটো ছেলেমেয়ে। রাদ রুমের মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আছে ছবিটা বুকে জড়িয়ে। চোখ গুলো রক্ত লাল হয়ে আছে তার।
ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই। তাই বলে কি তাদের কান্না অপরাধ। মোটেও না ছেলেরাও কান্না করে। যে কান্নায় থাকেনা কোনো ছলনা। অধিক কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছেলেরা কাঁদে।
রাদ ছবিটা আরও শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে চোখ বুজলো। চোখের কাণিশ বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় নোনাজল গাল বেয়ে নামতে লাগল। যা ভিজিয়ে দিতে লাগল রাদের স্নিগ্ধ গাল ও গালে থাকা খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলোকে। রাদ বিরবিরিয়ে বলতে লাগল
“এমনটা তো না হলেও পারতো আমার সঙ্গে। কেন একা ছেড়ে চলে গেলে আমাকে। নিঃসঙ্গতা যে আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিটাদিন প্রতিটাক্ষণ।”
নিরব পরিবেশে রাদের সেই কথাগুলো প্রতিধ্বনিতে রূপান্তরিত হচ্ছে বারংবার। তার অসহায়ত্ত্বের কথা হয় তো বন্ধ থাকবে এই চার দেয়ালে মাঝে। কেউ জানবেনা সেই অসহায়ত্ত্ব, নিঃসঙ্গতার গল্প।
—————————–
কেটে গেছে বেশকিছুদিন.., শুভ্রতার সঙ্গে প্রায় রাতেই কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। তার মনে হয় কেউ রাতে এসে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আলতো হাতে স্পর্শ করে তার গাল। চুমু দেয় কপালে। ওইদিনের পর ঠোঁটে কিছু করেনি সে। কিন্তু শুভ্রতা যখন চোখ খুলে তখন আর কাউকেই দেখতে পায়না সে। এই চিন্তায় পাগল প্রায় সে। প্রতিদিন কোনো না কোনো হুমকি আসে তার কাছে। পুষ্পের বেশ ধকল গেল কয়েকটা দিন। ওকেই কিছু বলতে পারছেনা। শুভ্রতা যেন ক্রমেই অস্থির হয়ে পড়ছে এসব ভাবনায়।
সে সব ভাবনা এক সাইডে রেখে শুভ্রতা কলেজে যাওয়ার জন্য রওনা হলো। রাস্তায় হুট করেই কারো সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল শুভ্রতা। শুভ্রতা বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেলল। চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“কেরে খাম্বা মার্কা আমারে ফেলে দিলি। কত জোরে লাগল মাগো।”
বলেই চোখ তুলে উপরে তাকাতেই শুভ্রতার চোখ আটকে যায় ধাক্কা খাওয়া সেই অপরিচিত ছেলেটির দিকে। ছেলেটি কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। ছেলেটি একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল
“এতো ঢং তোমরা মেয়েরা কিভাবে করতে পারো বলো তো। উঠে দাঁড়াও ঢং বাদ দিয়ে।”
শুভ্রতা ঝট করে উঁঠে দাঁড়ালো। এক আঙুল উঁচিয়ে বলে উঠলো
“এই যে মিস্টার একে তো আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। আর অন্যদিকে আপনি নিজে ফুটানি দেখিয়ে আবার মেয়েদের ঢং নিয়ে কথা বলেন। সাহস তো কম না আপনার।”
ছেলেটা এক আঙুল দিয়ে শুভ্রতার আঙুল নামিয়ে দিয়ে বলল
“পিচ্চি মানুষের বেশি ফটরফটর করা ভালো না। তর্ক না করে যেখানে যাচ্ছিলে সেখানে যাও। আর চোখ কান খুলে রাস্তায় চলাফেরা করো কেমন। তাছাড়া আমার মতো ছেলে না হলে এতক্ষণে মারামারি লেগে যেতো।”
শুভ্রতা ভ্রুকুচকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ছেলেটা ওর পাশ কাটিয়ে চলে গেল। শুভ্রতা অবাক চোখে খালি তাকিয়ে রইলো ছেলেটার যাওয়ার দিকে। রাগে সে ফুসতে থাকলো। একে তো তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে তারপর তাকে কথা শুনিয়ে চলে গেল। ছেলেটার গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে শুভ্রতা এগোতে লাগল।
#চলবে