#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৩
পুষ্প চোখ গোল গোল করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“শুভি কি বলছিস তুই এগুলো!”
শুভ্রতা পুষ্পকে পাত্তা না দিয়ে একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পরলো। শুভ্রতা মুচকি হেসে আলিফকে বলল
“অল দা বেস্ট ভাইয়া।”
আলিফও মুচকি হেসে বিদায় দিলো শুভ্রতাকে।
অন্যদিকে পুষ্প শুধু অবাক চোখে ওদের কান্ড দেখলো। শুভ্রতার উপর বেশ অভিমান জমলো তার। সে কিভাবে পারলো তাকে এমন করে ছেড়ে যেতে।
আলিফ পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বলল
“আইসক্রিম খাবে?”
পুষ্প রিনরিনে কন্ঠে বলল
“না আমি বাসায় যাবো।”
আলিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“পাশেই বাইক রেখেছি। আসো তোমাকে বাসায় রেখে আসি।”
“না আমি একাই যেতে পারবো।”
“দেখ পুষ্প আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না। আমি যা বলছি তাই শুনবে তুমি।”
পুষ্প এবার আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“অধিকার খাটাচ্ছেন!”
“তুমি যদি মনে করো তাহলে তাই।”
“কিসের অধিকার বলতে পারেন! আপনি প্রোপজাল দিয়েছেন। আমি কি রাজি হয়েছি? না আমি রাজি হইনি তাহলে এমন করার মানে কি?”
আলিফ লাল চোখে তাকালো পুষ্পের দিকে। পুষ্পের হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল
“বেশি কথা বলার সাহস আমি তোমাকে দেইনি।”
পুষ্প ঝাড়া দিয়ে নিজের হাত আলিফের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
“না আপনি আমি স্বামী। না আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। আপনার কথা শোনা প্রশ্নই উঠে না।”
বলেই একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়লো পুষ্প।
আলিফ শুধু চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে পুষ্পের যাওয়ার দিকে।
———————–
রাদ বসে আছে হাসপাতালের একটি ব্রেঞ্চে। চোখ স্থির তার মেঝেতে। হাসপাতাল তার বেশ অপছন্দের একটা জায়গা। মনে যে ছোটবেলার ভয় এখনো রয়ে গিয়েছে। কখন না জানি খারাপ খবর ভেসে আসে। সে যে সহ্য করতে পারেনা খারাপ খবরগুলো। পরিস্থিতি তাকে পাথর করে দিলেও মন তো তারও আছে।
রাদের ভাবনার মাঝেই একটা নার্স ছুটে এলো রাদের সামনে। রাদ চোখ তুলে তাকাতেই নার্সটি বলে উঠলো
“রক্ত লাগবে”
রাদ ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল
“আমি আন্টিটাকে চিনি না। রাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছিলেন তাই নিয়ে এসেছি। রক্তের গ্রুপ জানিনা।”
নার্সটি চট করেই বলল
“এ পজেটিভ”
রাদ ধীর কন্ঠে বলল
“আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি রক্তের।”
নার্সটি চলে গেল। রাদ দেড়ি না করে ওর বন্ধু হিমেলকে কল দিয়ে রক্তের কথা বলল। হিমেলও রাজি হয়ে গেল।
রাদ একটু সস্থি পেলো হিমেলের রাজি হওয়াতে। রাদ ফোন রেখে চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো।
খানিকবাদেই হিমেল এলো। হিমেল আসতেই রাদ আজকের ঘটনা খুলে বলল।
আজ সকালে যখন রাদ অফিসের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলো তখনই রাস্তায় একটা মহিলার এক্সিডেন্ট হয়। মহিলার মাথা ফেঁটে রক্ত ঝড়ছিলো। সেখান থেকেই রাদ মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
হিমেলও রক্ত দেওয়া শেষে রাদের সঙ্গে অপেক্ষা করলো মহিলাটার জ্ঞান ফেরার।
ডাক্তার বের হয়ে বললেন
“ওনার জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।”
রাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হিমেলকে বলল
“তোর কি কোনো কাজ আছে হিমেল!”
হিমেল খানিকটা ভেবে বলল
“না রে আমার তেমন কাজ নেই। আর তুই তো জানিসই আমি বেকার।”
রাদ ধীর কন্ঠে বলল
“তাহলে তুই কি পারবি এই দিকটা দেখে রাখতে! আমার অফিস যেতে হবে। কাজ আছে আমার।”
হিমেল মুচকি হেসে বলল
“যা আমি আছি এখানে।”
রাদও মুচকি হেসে প্রস্থান করলো সেখান থেকে।
হিমেল একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বসে পরলো ব্রেঞ্চে।
তখনই একটা কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়ে ছুটে এলো হাসপাতালে। পিছু পিছু একটা আধ বয়স্ক লোকও আছেন। ওনাদের এমন অস্থিরতা দেখে কপাল কুচকে এলো হিমেলের। হিমেল এগিয়ে গেল লোকটার দিকে। বিনয়ের সূরে বলল
“আঙ্কেল কি হয়েছে!”
লোকটা অস্থির কন্ঠে বলে উঠলেন
“আমার স্ত্রী এক্সিডেন্ট করেছে বাসার সামনের রাস্তায়। ওকেই খুঁজছি আমি।”
হিমেল কি যেন ভেবে বলল
“আপনার বাসাটা কোথায়!”
লোকটা বাসার ঠিকানা শুনতেই হিমেল বুঝতে পারলো রাদ যেই মহিলাটাকে নিয়ে এসেছে সেই মহিলা এই লোকটারই বউ। হিমেল বলতেই দৌড়ে গেল লোকটা। লোকটার পিছু পিছু মেয়েটাও গেল।
হিমেল তাকিয়ে রইলো সেদিকে। হিমেলের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মেয়েটা ওই লোকটারই মেয়ে। হিমেলও পিছু পিছু যেতে লাগল।
লোকটির কাছে গিয়ে হিমেল বিনয়ের সঙ্গে বলল
“আঙ্কেল আমি তাহলে যাই। কোনো দরকার হলে বলতে দ্বিধা করবেন না একদম।”
লোকটা হিমেলের দুহাত ধরে বললেন
“ধন্যবাদ বাবা তুমি আমার স্ত্রীকে বাঁচিয়েইছো। কিভাবে যে তোমার ঋণ শোধ করবো আমি জানিনা বাবা।”
“না না আঙ্কেল আমি তেমন কিছুই করি জাস্ট রাদের কথায় রক্ত দিতে এসেছি। আমার বন্ধু রাদই আন্টিকে হাসপাতালে এনেছে।”
লোকটা তার অফিসের কার্ড দিয়ে বললেন
“বাবা তুমি তোমার বন্ধুকে নিয়ে একদিন আমার অফিসে এসে দেখা করো। কিছু খেয়েছো!”
“জি আঙ্কেল খেয়েছি। তাহলে আজ আমি যাই। ভালো থাকবেন।”
“তুমিও ভালো থেকো বাবা।”
————————–
আজও রাত দুইটায় কে.এম একই রকম ভাবে নিজের আস্তানায় এলো।
নিজের চেয়ার পায়ের উপর পা তুলে বসে টেবিলের উপরে থাকা পেপারমেট ঘুড়াতে ঘুড়াতে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“এজি গ্রুপের মিস্টার আফজাল সাহেবের কোনো খবর পেয়েছো!”
সামনে থাকা ছেলেগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকাতাকি করতে লাগল। আবার কে.এম হুংকার দিয়ে বলে উঠলো
“কি হলো একটা প্রশ্ন করেছি তোমাদের! একজন আরেকজনের দিকে তাকাতাকি করতে বলিনি।”
ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে বলে উঠলো
“স্যার আফজাল সাহেব অনেক চালাক। আমরা অনেক চেষ্টা করার পরেও তার কোনো খবর বের করতে পারিনি।”
মুহূর্তেই কে.এম এর শান্ত চোখদ্বয় রক্তবর্ণ ধারণ করলো। চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“কি করো কি তোমরা! সামান্য একটা লোকের সম্পর্কে খোঁজ লাগাতে তোমাদের এত সময় লাগে। জানো না আমার সময়ের কাজ সময়ে না করলে মাথা গরম হয়ে যায়।”
ছেলেগুলো ভয়ে গুটিসুটি মেরে রইলো। কে.এম পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“আফজাল সাহেবের পিএ মিস.নীলাকে হাত করো। সব খবর সহজেই পেয়ে যাবে।”
“কিন্তু স্যার সে যদি রাজি না হয়।”
কে.এম ছেলেটার কথা এক বিকট শব্দে হাসলো। যা নিস্তব্ধ পরিবেশে ঝংকার তুলল চরমভাবে। হাসি থামিয়ে সে বলল
“আমি দেখে নিচ্ছি ব্যাপারটা। তোমরা আফজাল সাহেবের পরিবারের দিকে নজর রাখো। আর আমি শুনেছি সে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে। সব নাম আমার চাই।”
“ওকে স্যার”
.
বলেই ছেলেগুলো চলে গেল। কে.এম চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো। কি যেন ভেবে তার ঠোঁট রহস্যময় এক হাসি ফুটে উঠলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। মাথায় ঘুড়ছে বেশ কিছু প্লান। যেগুলো ফুলফিল না করলে তার শান্তি হবে না।
——————–
শুভ্রতা বারান্দার চেয়ারে বসে আছে মিনিকে কোলে নিয়ে। রুহির নানু অসুস্থ হয়ে পড়ায় রুহি দিয়া আর অভ্র রুহির নানু বাসায় গেছে।
শুভ্রতা মিনির গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে আকাশ পানে চোখ রাখলো। আকাশে তারাগুলো মিটমিট করছে। ইদানিং বেশ গরম পড়েছে। আকাশে তারার ঝলকানি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কালও কড়া রোদ উঠবে।
#চলবে