গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০২

0
111

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ০২

রুহিকে বুকে আকড়ে বারান্দায় ঘুমিয়ে গিয়েছে শুভ্রতা। রুহিও বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে শুভ্রতার কোলেই ঘুমিয়ে আছে।

অভ্র অফিস থেকে এসে শুভ্রতা আর রুহিকে খুঁজতে খুঁজতে বারান্দায় ওদের এভাবে দেখে মুচকি হাসলো সে। প‍কেট থেকে চকলেট বের করে টেবিলে রেখে শুভ্রতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে ওকে ডাকতে লাগল।

শুভ্রতা পিটপিট করে তাকাতেই অভ্র নরম কন্ঠে বলল
“বিছানায় গিয়ে ঘুমা।”

শুভ্রতা হা হু না করে চোখ বুজেই রুহিকে নিয়ে ধপ করে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অভ্র মুচকি হেসে দুইজনের কপালেই আলতো করে চুমু খেয়ে রুমের লাইট অফ করে চলে গেল।

দিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছিলো। অভ্রকে ক্লান্তিমাখা হাসতে দেখে দিয়া অভ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওড়না দিয়ে ওর গায়ের ঘাম মুছিয়ে দিতে দিতে বলল
“ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার গরম করছি আমি।”

বলেই চলে যেতে নিবে তখনই অভ্র দিয়ার কোমর পেচিয়ে ধরে বলল
“আর একটু পর”

দিয়া মুচকি হেসে অভ্রের গলা জড়িয়ে বলল
“এই যে মিস্টার রাত কয়টা বাজে খেয়াল আছে!”

অভ্র দিয়ার কপালে চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল
“তুমি শুধু আমার থেকে পালাই পালাই করো। এতক্ষণ বাদে আসলাম কোথায় আমার সঙ্গে থাকবে তা না এখানে ওখানে যাওয়ার জন‍্য ছটফট করো।”

দিয়ার বেশ হাসি পেলো অভ্রের এমন অভিমানী কথা শুনে। অভ্রের গাল টেনে দিয়া বলল
“ফ্রেশ হয়ে আসো। খেয়ে নেও। তারপর সারারাত তো তোমার সঙ্গেই থাকবো।”

অভ্র ভাব নিয়ে বলল
“যেতে পারি কিন্তু একটা সত্ত্বে।”

দিয়া কপাল কুচকে বলল
“কি সত্ত্ব শুনি তো একটু!”

অভ্র দুষ্টু হেসে বলল
“চুমু লাগবে আমার।”

দিয়া একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে অভ্রের গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। অভ্র অন‍্য গাল পেতে দিতেই দিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলল
“আগে আমার কথা শুনতে হবে তারপর। এখন তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে আমি আজ রাতে কিন্তু শুভ্রতার রুমে গিয়ে ঘুমাবো।”

অভ্র রাগি দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে তাকালো। দিয়া পাত্তাই দিলো না। অভ্র কিছু না বলে হনহন পায়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। দিয়া হেসে দিলো।

অভ্র মুখ ফুলিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো দিয়া খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। অভ্র বের হতেই দিয়া অভ্রকে টেনে সোফায় বসিয়ে খাইয়ে দিতে লাগল। অভ্র দুই লোকমা খেয়ে বলল
“তুমি খেয়েছো?”

দিয়া কিছু বলার আগেই অভ্র ওর হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে প্লেট থেকে ভাত নিয়ে দিয়াকে খাইয়ে দিলো। দুইজন একসঙ্গে খেয়ে নিলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে দিয়া প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। অভ্র বেডে শুয়ে পরলো ধপ করে বেশ ক্লান্ত লাগছে তার। মাথাটাও ধরেছে বেশ।

দিয়া সবকিছু গুছিয়ে রুমে এসে লাইট অফ করে অভ্রের পাশে শুয়ে পড়লো। দিয়া শুতেই অভ্র ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। দিয়াও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো অভ্র। দিয়া এক হাত উঁচিয়ে অভ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। প্রশান্তিতে অভ্রের চোখ বুজে এলো। দিয়াও চোখ বুজলো।

——————-

রাদ বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রাতের ঘুটঘুটে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে একমনে। রাতের আকাশে অসংখ্য তারা জ্বলছে মিটমিট করে। নিস্তব্ধ রাতে কিছুক্ষণ পরপর কুকুরের ডাক ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। রাদ পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মনেই বলতে লাগল
“মানুষ বড়ই অদ্ভুত। অল্প কষ্টে কান্নাকাটি করে সমুদ্র বানায়। আবার অধিক কষ্টে পাথরের ন‍্যায় হয়ে যায়। যে পাথরকে যতই নরম করার চেষ্টা করা হয় সেই পাথর যেন আরো শক্ত হয়ে যায়। ব‍্যস্ত শহরে কেউ কারো না। সবাই সবাইকে নিয়ে ব‍্যস্ত। তবুও কোনো কিছুতে ব‍্যর্থ হলে কথা শোনানোর মানুষের অভাব হয়।”

রাদ কথাগুলো নিজ মনে বিরবিরিয়ে একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে রুমে চলে এলো। ধপ করে বেডে শুয়ে পরলো। একটু বিশ্রাম প্রয়োজন তার। বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতে সে ক্লান্ত। চোখ বুজতেই ঘুম এসে ভর করলো রাদের দু চোখ জুড়ে।

——————-

শুভ্রতা কলেজে যাওয়ার জন‍্য রেডি হচ্ছিলো। আর রুহি গাল ফুলিয়ে ড্রেসিংটেবিলের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। শুভ্রতা সেদিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলল
“কিরে রুহি এমন গাল ফুলিয়ে আছিস কেন!”

রুহি মন খারাপ করে বলল
“ফুপি আমাকে নিয়ে যাও না।”

শুভ্রতা হিজাব বাধা বাদ রেখে রুহির গালে হাত রেখে বলল
“তোর মন খারাপ হচ্ছে!”

রুহি ঠোঁট উল্টে বলল
“ফুপি তুমি কলেজে চলে গেল আমার একদম ভালো লাগে না। তোমাকে আমি অনেক মিস করি ফুপি।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে রুহির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
“তুই মিনির সঙ্গে এতটা সময় খেল। দেখবি ভালো লাগবে। ততক্ষণে আমি চলে আসবো।”

“ঠিক তো।”

“হুম একদম ঠিক।”

রুহি মুচকি হেসে শুভ্রতার গালে একটা চুমু খেয়ে ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে লাফ দিয়ে নেমে বলল
“ফুপি তুমি কিন্তু সাবধানে কলেজ যাবে। আমি মিনির কাছে গেলাম।”

বলেই দৌড়ে রুম থেকে চলে গেল রুহি। শুভ্রতা রুহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রেডি হতে লাগল।

শুভ্রতা নাস্তা করে রওনা হলো কলেজের উদ্দেশ্যে। কলেজে পৌঁছনোর পরেই শুভ্রতা পুষ্পকে দেখে দৌড়ে ওর কাছে গেল। পুষ্পকে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
“কিরে পুষ্প তোর মন খারাপ কেন কি হলো আবার!”

পুষ্প মিনমিনিয়ে বলল
“না কিছু হয় নি।”

শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে পুষ্পকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলল
“ভালোই ভালোই বলবি নাকি আমি তোর খবর করবো!”

পুষ্প একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“কাল তো তুই কলেজ আসছিলি না।”

“হুম তো”

“কাল যখন আমি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম তখন আলিফ ভাইয়া আমাকে…!”

শুভ্রতার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। সে অবাক হয়ে বলল
“আলিফ ভাইয়া সে আবার কি করলো!”

পুষ্প মিনমিনিয়ে বলল
“আই লাভ ইউ বলেছে।”

শুভ্রতা কিছুক্ষণ তব্দা মেরে বসে ছিলো। পরক্ষণেই ফিক করে হেসে দিয়ে বলল
“তুই কি বললি?”

“আমি কিছু বলি নি।”

শুভ্রতা বিরক্তি নিয়ে বলল
“তুইও না। কোথায় তুই সিনেমাটিক ভাবে বলবি আমি ও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আর তুই নাকি কিছুই বলিস নি।”

পুষ্প কিছু বলতে নিবে তার আগেই শুভ্রতা বলল
“তোর প‍েনপেনানি আর শুনবো না আমি। এখন ক্লাসে চল। পরে তোর ব‍্যবস্থা নিচ্ছি।”

বলেই শুভ্রতা ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। পুষ্প একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্রতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর সঙ্গে ক্লাসে গেল।

ক্লাস শেষে পু‍ষ্প আর শুভ্রতা কলেজ থেকে বেড়িয়ে ফুচকার দোকানে বসে পড়লো। শুভ্রতা দোকানদার মামাকে বলল
“মামা একটা ঝাল দিয়ে ফুচকা দিন। আর একটা কম ঝাল দিয়ে।”

কিছুক্ষণ বাদেই ফুচকা চলে এলো ওদের সামনে। শুভ্রতা টপাটপ গিলতে লাগল। একদমে পুরো প্লেট সাবার করে দিলো শুভ্রতা। ঝালে চোখ মুখ জ্বলছে তার। পুষ্প ফুচকা খেয়ে বলল
“এতো ঝাল দিতে যাস কেন সবসময়। প্রতিদিনই এক অবস্থা হয় তোর। ঝালে চোখের জল নাকের জল একসঙ্গে করিস।”

শুভ্রতা টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল
“ফুচকা ঝাল দিয়ে না খেলে ফুচকা খাওয়ার মজা আর কোথায়।”

পুষ্প একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কারণ সে জানে শুভ্রতার কথার সঙ্গে সে পারবেনা। শুভ্রতা দু প্লেট পেকিং করতে বলে পুষ্পকে বলল
“রিক্সা ধর আমি আসছি।”

শুভ্রতা ফুচকার পেকেট নিয়ে পিছু ঘুরতেই দেখলো পুষ্প গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আলিফ।

শুভ্রতা মুচকি হেসে ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে আলিফকে উদ্দেশ্য করে বলল
“ভাইয়া কেমন আছেন?”

আলিফ মুচকি হেসে বলল
“এই তো ভালোই তুমি কেমন আছো?”

“আমিও ভালো আছি। তুমি তোমার বউকে নিয়ে থাকো।আমি বাসায় যাই তাহলে।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে