#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১
কালো কুচকুচে রঙের একটা জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে এক যুবক তীক্ষ্ণ চোখে আয়নার দিকে তাকালো। কি যেন ভেবে সে মুচকি হেসে একটা কালো মাক্স আর কালো সানগ্লাস দিয়ে নিজের পুরো মুখটা ঢেকে ফেলল। পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘড়ির দিকে চোখ রাখলো সে। ঘড়িতে রাত দুটো বেজে পনেরো মিনিট।
ছেলেটা আর দাঁড়ালো না আলিশান বাড়ির উঁচু দেয়াল টপকে বাহিরে চলে এলো সে। চারপাশে সর্তকতার দৃষ্টি বুলিয়ে ছেলেটি সামনে আগালো। সামনে এগোতেই একটা কালো বিএমডাবলিউ গাড়ি তার জন্যই দাঁড় করানো ছিলো। ছেলেটা আবারো পিছনে ফিরে ভালো করে দেখে নিলো। পিছনে সবকিছু স্বাভাবিক দেখে ছেলেটি গাড়িতে উঠে পড়লো।
খানিকবাদেই সে পৌঁছে গেল এক পোড়া বাড়িতে। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার, নিস্তব্ধ। পরিবেশ এতটাই নিস্তব্ধ যে সামান্য টু শব্দ হলেও ভয়ংকর আওয়াজ হয়ে শোনা যাবে।
ছেলেটা গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটির ভিতরে ঢুকলো। বাড়ির ভিতর ঢুকতেই একটা মেয়ের চাপা কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। ছেলেটা একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে পাশে থাকা চেয়ারটা বা পা দিয়ে নিজের সামনে এনে পায়ে পা রেখে জমিদারি ভাব নিয়ে বসলো।
কিছু ছেলে সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো সেই যুবকটির সামনে। যুবকটি বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল
“কিছু বলেছে?”
একটা ছেলে মাথা নিচু করেই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
“না স্যার, মেয়েটা তো কিছুই বলছেনা।”
যুবকটি ডান হাতের দুই আঙুল কপালে ঘষতে ঘষতে বলল
“এই মেয়ে কি আমাকে চেনে না! চিনলে এতক্ষণ বলে দিতো। সে যাইহোক আমি দেখছি তোমরা বাহিরে যাও।”
যুবকটির কথা বলতে দেড়ি ছেলেগুলোর চলে যেতে দেড়ি হলো না। যুবকটি চেয়ার থেকে উঠে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“যা জানিস ভালোই ভালোই বলে দে।”
মেয়েটা ক্লান্ত দৃষ্টিতে যুবকটির দিকে তাকালো। অন্ধকার একটা সুঠাম দেহের পুরুষের অবয়ব ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়লো না মেয়েটির।
মেয়েটি দূর্বল কন্ঠে বলল
“কে আপনি!”
যুবকটি হেসে বলল
“কে.এম”
যুবকটির কথা কর্ণকূহরে পৌঁছাতেই মেয়েটি ভয়ে কুকড়ে গেল। মেয়েটা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
“পানি…পানি খাবো!”
যুবকটি এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। মুহুর্তেই রাগে গর্জে উঠে মেয়েটার চোয়াল চেপে ধরে বলল
“বলবি না মরবি!”
মেয়েটা আর সময় না নিয়ে গড়গড় করে সব বলে দিলো। যুবকটি এক রহস্যময় মুচকি হাসি দিয়ে জিন্সের পকেট থেকে গান বের করে মেয়েটার কপালে পরপর দুটো গুলি করে দিলো।
এই নিস্তব্ধ পরিবেশে গুলির আওয়াজগুলো যেন বিকট শব্দে বাজতে বারবার। যুবকটি হুংকার দিতেই কিছু ছেলে এসে মেয়েটির লাশ নিয়ে গেল।
————————-
সারা বিছানায় টিস্যু আর চকলেটের খোসা ফেলে রেখে কান্না করছে শুভ্রতা। তার দফা এক দাবি এক সে কলেজ থেকে আসার সময় ব্যাগে করে যে বিড়াল ছানা নিয়ে এসেছিলো সেটা তাকে ফিরিয়ে এনে দিতে হবে।
কিন্তু তার মা তাতে নারাজ। একে তো শুভ্রতা আর রুহিকে সামলাতে সামলাতে তার দিন যায়। তার উপর বিড়াল কোনোদিনও না। (রুহি শুভ্রতা বড় ভাই অভ্রের মেয়ে।)
শুভ্রতা রিতিমতো নেকা কান্না শুরু করে দিয়েছে। শুভ্রতা কান্না করছিলো তখন ছোট ছোট পা নিয়ে ছুটে শুভ্রতার কাছে এলো রুহি। শুভ্রতাকে এমন ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে কান্না করতে দেখে রুহি কিছুসময় চুপ থেকে হুট করেই ফিক করে হেসে দিলো।
শুভ্রতা আড়চোখে রুহির দিকে তাকাতেই রুহি দমে গিয়ে বেডে উঠার চেষ্টা করতে করতে বলল
“ফুপি আরও একটু কান্নু করো। তাহলেই বুবু মেনে যাবে।”
শুভ্রতা রুহিকে বেডে টেনে তুলে হিসহিসিয়ে বলল
“তুইও শুরু কর। আমি কেন একলা আমার এনার্জি খোয়াবো কেন রেএ।”
রুহি ফিসফিসিয়ে বলল
“তাহলে শুলু করবো বলছো।”
“হুম হুম শুরু কর।”
রুহি মুচকি হেসে ভে ভে শুরু করলো।
রুহিকে কান্না করতে দেখে ওর মা দিয়া দৌড় এলো শুভ্রতার রুমে।
শুভ্রতা দিয়াকে দেখে ঠোঁট উল্টে বলল
“ভাবি আম্মুকে বলো না আমার মিনিকে নিয়ে আসতে।”
দিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না।
রুমা বেগম হাতে খুনতি নিয়ে হাজির হলো শুভ্রতার রুমের সামনে। বিরক্তি তার চোখে মুখে স্পষ্ট। রুমা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন
“যা বাগানে রেখে এসেছে নিয়ে আয়। তাও এমন করে মাথা খাস না। নিজে তো খারাপ হচ্ছে সঙ্গে নিয়ে আমার নাতনিকেও খারাপ করছে।”
বলেই হনহনিয়ে চলে গেলেন রুমা বেগম।
রুমা বেগম যেতেই শুভ্রতা আর রুহির ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। দিয়া ওদের হাসতে দেখে নিজেও হেসে চলে গেল। দিয়া যেতেই ওরা দুইজন ছুটে গেল বাগানের দিকে।
বাগানে গিয়ে দেখলো বিড়াল ছানাটা গুটিসুটি হয়ে বসে আছে আম গাছের নিচে। রুহি সেটা প্রথমে দেখে ছুটে গেল আম গাছের দিকে। বিড়াল ছানাটাকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে লাগল।
শুভ্রতা মুচকি হেসে রুহিকে কোলে তুলে নিলো। রুহি বিড়ালছানাকে আদর করতে ব্যস্ত।
#চলবে কি?