গাঁইয়া_বউ।পর্ব_৮
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
।
-কি করছেন এসব?ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন,(এই বলে অর্না অপূর্বকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়)
-আমি আপনার মনা না,আমি অয়নের অর্না, মিসেস অয়ন।সো দূরত্ব বজায় রাখুন।
(অর্নার আর মনার শাড়ী একই ডিজাইন আর একই রঙের,সেই জন্য অপূর্ব অর্নাকে মনা ভেবে জড়িয়ে ধরে আর কথা গুলো বলে)
-সরি সরি সরি।আমি আসলে বুঝতে পারিনি।তাছাড়া এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?আমিতো কোন বাঘ ভাল্লুক নই যে তোমাকে খেয়ে ফেলবো।
আর আমরা অপরিচিতও নই যে আমাকে তুমি ভয় পাবে।
-হা হা হা,হাসালেন মিঃ অপূর্ব
আপনি তো বাঘের চেয়েও ভয়ংকর।
তাছাড়া আপনার কি করে মনে হয় আমরা পরিচিত?আমিতো আপনাকে চিনিনা।
-অর্না প্লিজ,এসব ভালো লাগছেনা।
-কিসব?
-তুমি কি দুনিয়াতে আর কোন ছেলে পাওনি?যে অয়নকেই তোমার বিয়ে করতে হলো?
-অয়নের মত কেউ যে আর এত ভালবাসেনি।তাই ওকে ছাড়া অন্য কাউকে করার চিন্তাও করিনি।
-জাস্ট অসহ্য লাগে আমার এসব।একটা মুহূর্ত শান্তি পাচ্ছিনা আমি।
-আজব তো,কেন পাচ্ছেন না শান্তি আপনি?
-আজব না?আমার মেয়ে আমার সামনে আরেকজন কে বাবা ডাকে,এটা কিভাবে সইবো আমি?আমার কেমন লাগে বোঝ তুমি?
-আমার এক্স ওয়াইফ আমার সামনে আমারই বউ এর ভাইয়ের সাথে সংসার সাজাচ্ছে।কেমন লাগে আমার এসব দেখলে?
-কই আমারতো কিছুই লাগেনা।
বরং আমি বলবো মনা আপুকে কখনো কষ্ট দিয়েন না।মেয়েটা খুব ভালো।যদি কখনো আপনার আসল রুপের কথা জানতে পারে তবে খুব কষ্ট পাবে।আমি চাইনা সে আপনার আসল রুপ টা কেমন তা জানুক।
-অর্না।
-চিল্লাবেন না, চা হয়ে গেছে,আমি অয়নের জন্য নিয়ে যাচ্ছি।অয়ন অপেক্ষা করছে।
অপূর্ব রাগে দেয়ালের মধ্যে সজোরে একটা ঘুষি মারে।
-এই নিন আপনার চা।
-আম্মু আমার টা কই?
-এইতো আম্মু এটা তোমার।
-বাহ্ দারুণ চা বানাওতো তুমি।
-থ্যাংক ইউ।
-কি হয়েছে?মন খারাপ?
-নাতো, আচ্ছা শুনুন।আমরা যদি পরশু না গিয়ে কালই হানিমুনের উদ্দেশ্যে রওনা হই তাহলে কি সমস্যা আছে?
-নাতো,কোন সমস্যা নেই।
তাহলে ডিনার করে সব কিছু গুছিয়ে রেখো।আর অনুকে যাবার সময় শপিং করে দেয়া যাবে।আর আমরাও কিনে নেবোনে যা যা প্রয়োজন।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
রাতে খাবার টেবিলে বসে অয়ন সবাইকে জানায় ওরা হানিমুনে যাচ্ছে।
সবাই খুশি হয়,শুধু অপূর্ব ছাড়া।
খাওয়া দাওয়া শেষে অপূর্ব অপূর্বের রুমে যায়।
-মনা,
-হুম।আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
-তাই বুঝি?
-হ্যাঁ।আর তখনকার জন্য সরি।মন টা কেন যেন ভালো ছিলোনা তাই ওভাবে কথা বলে ফেলেছি।
-ইটস ওকে ইয়ার,সমস্যা নেই।
আমি বুঝিতো একটা বাচ্চার জন্য হয়তো তোমার মন খারাপ থাকে।
আর আমিতো তোমাকে এই সুখ টাই দিতে পারছিনা।কতটা অভাগী আমি।
অপূর্ব মনাকে জড়িয়ে ধরে,
আর বলে,কোন দিন আমাকে ছেড়ে যেওনা।
-কক্ষনো যাবোনা আমি অপূর্ব,শুধু তুমি আমাকে আগলে রেখো।
-রাখবো।
পরের দিন অয়ন,অর্না অনুকে নিয়ে হানিমুনের উদ্দেশ্যে বের হয়।
অর্না চেয়েছিলো কিছুটা মুহূর্ত অপূর্বের কাছ থেকে দূরে থাকতে।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,সারাজীবন ওদের এক সাথেই থাকতে হবে।
এ কথা ভাবতেই অর্নার গা শিউরে উঠে।
অনেক ক্ষণ জার্নির পর ওরা ওদের গন্তব্যে পৌছায়।
হোটেলে উঠে এবং ওখানে রেস্ট নেয়।
তার কিছু ক্ষণ পরই অপূর্বের মা ফোন দেয় অর্নার মোবাইলে।
-হ্যালো মা আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম সালাম।কেমন আছো মা?
-এইতো ভালো আছি মা,
-অনু কেমন আছে?কি করছো তোমরা?
-এইতো মা এখন একটু ঘুমাচ্ছে,
আমি অয়ন আর অর্না বেড়াতে এসেছিতো,কিছু ক্ষণ হয় পৌছালাম।
-তুমি ভালো আছো তো?অয়ন কেমন?
-ও অনেক ভালো মা,আমি ভালো আছি।
দোয়া করবেন।
-তা কি আর বলতে হয়?আচ্ছা তোমরা এখন তাহলে রেস্ট নাও।
ওরা কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়।
ঘুম থেকে উঠে খাবার অর্ডার করে।
খাওয়া দাওয়া করে ঘুরতে বের হয়।
অর্না অয়ন আর অনু মিলে অনেক আনন্দ করে।মজা করে।
-বাবা,তুমি আর মা একসাথে দাঁড়াও আমি তোমাদের ছবি তুলে দেই।
-আচ্ছা মা দাঁড়াচ্ছি।
রাতে ওরা ওদের রুমে চলে যায়।
খাওয়া দাওয়া করে নেয়।
অপূর্ব আজ অফিসে গিয়েছে।
কিছুতেই অফিসে মন বসাতে পারছেনা।
তাই অল্প সময় থেকেই আবার বাসায় চলে যায়।
-আচ্ছা মনা,তোমার কাছে আমি মানুষ টা কেমন বলোতো?
-আমার কাছে তুমি পৃথিবীর সব চেয়ে ভালো একটা মানুষ।
-যদি কখনো জানতে পারো এই ভালো মানুষীর পেছনে একটা নোংরা মানুষও লুকিয়ে আছে,তখন কি করবে?
-শোনো অর্নব,প্রতিটা মানুষেরই দুটো দিক থাকে।একটা ভালো দিক,একটা মন্দ দিক।
তোমারও থাকতে পারে,অস্বাভাবিক তো কিছুনা।কারণ তুমি মানুষ।
-আচ্ছা চলো ঘুমিয়ে পরি।
-আজ হঠাৎ এসব কথা কেন?
-না এমনিই,তেমন কিছুনা।
মনা খেয়াল করছে,অয়নের বিয়ের পর থেকেই অপূর্ব যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।
সকাল বেলা অর্না অয়ন আর অনু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নেয়।
আশেপাশে একটু ঘুরে নেয়।
এর ফাঁকে অর্না ওর মা বাবার সাথে,আর অয়নের বাবার সাথে একবার কথা বলে নেয় ফোনে।
-অয়ন,
-হুম।
-জানেন,প্রতিটা মেয়েই চায় ওর একটা এমন বর হোক,যে কিনা ওকে খুব ভালবাসবে,যত্ন নিবে,আগলে রাখবে।
আমিও তাই চেয়েছিলাম,
যা কিনা দেরিতে হলেও আল্লাহ্ আমাকে মিলিয়ে দিয়েছেন।
-সারাটি জীবন এমনই থাকবেন প্লিজ।
চেঞ্জ হলে আমি পাগল হয়ে যাবো।
-ধুর পাগলী,এত ভালবেসে বিয়ে করেছি কি আমার বউটাকে কষ্ট দিতে?
-লাভ ইউ অয়ন।
-আই লাভ ইউ টু অর্না।
-বাবা ও বাবা,
-কি মা?
-আমরা ঘুরতে বের হবোনা?
-এইতো দুপুরের খাবার খেয়েই ঘুরতে বের হবো।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে বিকেলের দিকে যখন অর্নারা ঘুরতে বের হয়,তখন দূর থেকে কাকে যেন দেখে অর্নার বুক কেঁপে উঠে।
-অয়ন,এই অয়ন।
ধুর অনুকে নিয়ে পেছন থেকে অয়ন কই গেলো?
-হাই!
-হাই,
-কেমন আছেন ভাবী?ও নো নো নো।আপনি তো এখন আর ভাবী নন,আপনি তো এখন আমার বন্ধুর এক্স।কেন ডিভোর্স হলো আপনাদের ভাবী?
-ও কি আপনাকে খুশি করতে পারতোনা?
নাকি আপনি তাকে খুশি করতে পারতেন না?
আর সাথে সাথে লোক টাকে টান দিয়ে সামনে ঘুরিয়ে ঠাস ঠাস থাপ্পড় বসিয়ে দেয় অপূর্ব।
-দোস্ত তুই?
-চুপ,কিসের দোস্ত?সেদিনই আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিলো যেদিন তুই আমাদের বাসায় এসে অর্নাকে বাজে কমেন্ট করেছিলি।
-হ্যাঁ,সেদিনের থাপ্পড় টা আমি এখনো ভুলিনি,
কিন্তু সেদিনতো তোর ওর উপর অধিকার ছিলো।কিন্তু আজ তো নেই।
তবে আজ কোন অধিকারে মারলি আমায়?
-কারণ এখন সে আমার সম্পর্কে ভাইয়া হোন,বড় ভাইয়া।ক্লিয়ার?
-কিছুই বুঝতে হবেনা তোর।তুই যা এখান থেকে।নয়তো তোর বউকে সব খুলে বলবো এখন আমি,অবশ্যই বউকে নিয়েই ঘুরতে এসেছিস।
-যাচ্ছি আমি,তবে শোন অর্নাকে ডিভোর্স দিয়ে সারাজীবনের জন্য ঠকেছিস কিন্তু তুই।আর এই ভুলের মাশুল তোর সারাজীবন দিতে হবে।
কথা টা মনে রাখিস।
-আপনি এখানে?এখানেও এসে গেছেন?
-বাসায় বোর হচ্ছিলাম,তাই ভাবলাম মনাকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
আর মনা বল্লো,এখানেই আসবে,তোমাদের এখানে।
তাই এখানেই নিয়ে এলাম।
মনা,অয়ন আর অনুর সাথে ওদিকে আছে।
চলো যাই।
আর তুমি কিছু মনে করোনা ওই লম্পট টার কথায়।
-লম্পট হলেও কথা তো আর মিথ্যে বলেনি,
আমি আপনাকে সুখী করতে পারিনি।তাইতো ছেড়ে গিয়েছিলেন আমায়।তাইনা?
-অর্না প্লিজ,আর শাস্তি দিওনা,আমি অনেক পস্তাচ্ছি এখন।
ভোগ করছি আমার পাপের শাস্তি।
-আমিও অনেক কষ্ট করেছি জীবনে।দয়া করে আমার সুখ টুকু কেড়ে নিতে আসবেন না।অনুরোধ করে গেলাম।
-অর্না দাঁড়াও,দাঁড়াও প্লিজ।
আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আমি জানি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি,আর এ অন্যায়ের শাস্তি আমি সারাজীবন ভোগ করবো।শুধু তুমি আমাকে একটা বার ক্ষমা করে দাও।আমি আর এ ছাড়া তোমার কাছে কিছুই চাইনা।
প্লিজ অর্না প্লিজ (কেঁদে কেঁদে)
-কাঁদবেন না প্লিজ,আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
-সত্যি দিয়েছো?
-হ্যাঁ সত্যি।
-থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ।
-এবার চলুন ওদিকে যাই,মনা আপু আর অয়নের ওখানে।
-চলো।
-হেই আপু,কেমন আছেন?
-এইতো ভালো,তোমাদের ছাড়া ভালো লাগছিলোনা,তাই চলে এলাম।
-খুব ভালো হয়েছে আপু।এবার আমরা এক সাথে মজা করতে পারবো।
-ইয়াহু,ফুফু মা আর ফুফাবাবাও এখন আমাদের সাথে মজা করবে।
তাইনা বাবা?
-হ্যাঁ মা,
অনুর অয়নকে বাবা বলে ডাকা শব্দ টা অপূর্বের যেন কলিজা ভেদ করে যায়।
কিন্তু কি আর করার,
ভুলতো ও ই করেছে,
এখানেতো আর অর্না বা অনুর কারোই দোষ নেই।
৭ দিন ওরা ঘুরাঘুরি করে,অনেক আনন্দ করে।হানিমুন টা ইঞ্জয় করে।
এবং ৮ম দিনের দিন সবাই মিলে এক সাথে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আর পথেই একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে ওদের বাসটা এক্সিডেন্ট করে।
আর বাসের অনেকেই আহত এবং নিহত হয়।
অনু,অর্না,অয়ন,মনা,অপূর্ব ওরা সবাই ঠিক আছেতো?
নাকি এদের মধ্যে কেউ আবার এই পৃথিবী মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিলো?
সুখ কি সইবে ওদের কপালে?
চলবে…