#গহন_কুসুম_কুঞ্জে
৮.
সকালটা ভীষণ অন্যরকম। কারো শরীরের উষ্ণতায় জেগে ওঠা, আলতো করে তাকে ছুঁয়ে দেয়া, ঘুমজড়ানো চোখ খুলে প্রথমবার তাকে দেখা! তনয়ার ভারি ভালো লাগল। মিষ্টি ভালোলাগা তাকে ছুঁয়ে রইল অনেকটা সময়। স্বরূপ ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মধ্যে তাকে অগোছালো সুন্দর লাগছে। তনয়া অনেকক্ষণ এভাবেই সুখের একটা আবেশের মধ্যে শুয়ে রইল। তারপর স্বরূপের গালে একটা হাত রাখল।
ওর স্পর্শে চোখ মেলে তাকাল স্বরূপ। প্রথমটায় বুঝতে পারল না কী হচ্ছে। তারপর উঠে বসে বলল, “আরেহ মনেই ছিল না বিয়ে হয়ে গেছে।”
“ঘুমের মধ্যেও মনে থাকবে?”
স্বরূপ কিছু বলল না৷ উঠে বাথরুমে ঢুকে গেল। তনয়াও উঠল। গতকাল মেকআপ তোলা, শাড়ি বদল কিচ্ছু হয়নি। সে শুয়েছিল ওড়না জড়িয়ে! স্বরূপ বের হলে সে গোসল করতে চলে গেল। অনেকটা সময় নিয়ে সুন্দর করে গোসল করল। গতরাতের ভালোবাসার স্পর্শ এখনো শরীর, মনে জীবন্ত! ধোঁয়া ওঠা বাথরুমে বসে তনয়ার সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হতে লাগল।
শাড়ি পরবে সে। কিন্তু বাথরুমে কেমন করে শাড়ি পরা সম্ভব? কোনোরকমে শাড়িটা জড়িয়ে বেরিয়ে এলো। বিশাল ড্রেসিং টেবিল এই ঘরে। সেটার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি পরতে শুরু করল। স্বরূপ মোবাইলে ব্যস্ত, এদিকে খেয়াল নেই।
তনয়া শাড়ি পরতে অভ্যস্ত নয়। বারবার পেঁচিয়ে যাচ্ছে, উল্টোপাল্টা হচ্ছে। সামলাতে পারছে না এত বড় শাড়িটা। বিরক্ত হয়ে গেল তনয়া। আয়নার ভেতর দিয়ে হঠাৎ চোখ পড়ল স্বরূপের দিকে। সে তাকিয়ে আছে হা করে।
তনয়া তার দিকে ফিরে বলল, “একটু হেল্প তো করতে পারেন!”
স্বরূপ জিজ্ঞেস করল, “এতদিন কে হেল্প করত?”
“মা।”
“মাকে ডাকব?”
“আপনি একটু ধরলেই চলবে।”
স্বরূপ এগিয়ে এসে তনয়াকে জড়িয়ে ধরল। তনয়া অবাক হয়ে বলল, “এটা কী হচ্ছে?”
স্বরূপ তাকে আরো গাঢ় করে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমিই তো বললে ধরতে।”
তনয়া হেসে ফেলল, “শাড়ি ধরতে বলেছি।”
স্বরূপ তাকে ছেড়ে দিয়ে শাড়িটা সুন্দর করে গুছিয়ে পরিয়ে দিল।
তনয়া চোখ গোল করে জিজ্ঞেস করল, “এক্সপিরিয়েন্সড?”
“হুম। আমার পাঁচ নম্বর গার্লফ্রেন্ড শাড়ি পরতে জানত না। তাকে পরিয়ে দিয়ে অভ্যাস করেছি।”
তনয়া ভুরু কুঁচকে তাকাতেই স্বরূপ দুই হাত তুলে বলল, “না না, পাঁচটা গার্লফ্রেন্ড ছিল না। ভুল বুঝো না প্লিজ! মজা করে বললাম। সত্যিটা হলো, আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সংখ্যা আঠারো জন।”
তনয়া হাসল। স্বরূপ জিজ্ঞেস করল, “তোমার ক’টা ছিল?”
“পাঁচশো আঠারোটা!”
বলে স্বরূপকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
রান্নাঘরে মা-চাচী-খালা-ফুপুরা তখন আসর বসিয়ে সকালের নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। ওকে দেখে চাচী আম্মা খুব খুশি হয়ে বললেন, “বউটা এক্কেবারে চান্দের মতোন হইছে।”
মামী মা এগিয়ে এসে বললেন, “দেখি দেখি, কালকে তো মেকআপ ছিল, মেকআপ ছাড়া কেমন দেখি। নাকি এখনও মেকআপ করছো?”
তনয়া জিজ্ঞেস করল, “আমি কী করব?”
শাশুড়ী মা বললেন, “বসে থাকো। খাবার হলে খাবে।”
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু