গল্প_সুখপাখি পর্ব_৫ম_এবং_শেষ

0
2621

গল্প_সুখপাখি পর্ব_৫ম_এবং_শেষ
#লেখক_আলভি_আহম্মেদ

তামান্নার সত্যিই ব্রেইন ক্যান্সার। সবটা জানার পর
আজমান এখন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। আর রোদেলা
চিৎকার করে বলছে,
: বুবু আমাকে মিথ্যা বলেছে। বুবু আমাকে বলেছে, ওর
নাকি লম্বা চুল ভালো লাগে না। তাই চুল কেটে
ফেলেছে। বুবু আমাকে কেন বললো না, বুবু আমাকে ছেড়ে
চলে যাবে।
আজমান ভিতরে উকি দিয়ে দেখলো তামান্নার মাথায়
ছোট ছোট চুল। পার্কে ওর মাথায় হিজাব ছিলো তাই সে
বুঝে নাই তামান্না ওর চুল কেটে ফেলেছে।
কিছুক্ষনের মাঝেই রঙিন পৃথিবীটা সাদাকালো হয়ে
গেলো।
এর মাঝেই আজমানের ফোনটা বেজে উঠলো।
: হ্যালো।
: ভাইয়া, আমি রিজু। আপনারা কই?
: ( আজমান মুখ চেপে কাদছে এখন। এটা তামান্নার ছোট
ভাই রিজু। আজ সকালে আজমান তামান্নার মা বাবার
সাথে কথা বলেছে। ওনাদের সবটা বুঝিয়েছে এবং
সবকিছুর জন্য সে মাফ চেয়েছে। আজমান চেয়েছিলো
আজ তামান্নাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে, তাই সে তার
বাবা মাকে এখানে আসতে বলেছিলো। আজমান
চেয়েছিলো আজ থেকে সবটা ভালো হবে। আর
কোনোদিন তামান্নাকে সে কষ্ট পেতে দিবে না। কিন্তু)
: হ্যালো ভাইয়া, শুনতে পাচ্ছেন? আমি আম্মু, আব্বুরে
নিয়ে আসছি এখানে। এখন বলেন আপনারা কোথায়?
: রিজু আমরা হাসপাতালে?( কাপা কাপা কন্ঠে)
: কেন ভাইয়া? কি হয়েছে?( উৎকন্ঠা নিয়ে)
আজমান চুপ)
: ভাইয়া, আমার আপু ঠিক আছে তো?
: তুমি হাসপাতালে চলে আসো রিজু।
এটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো আজমান। তামান্নার
ট্রিটমেন্ট চলছে। ডাঃ বার বার করে বলছেন, আগে যদি
উনাকে নিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতেন তাহলে
কিন্তু উনি ভালো হয়ে যেতেন। আমি বার বার করে
বলেছিলাম, আপনি বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করান।। কিন্তু
উনি তো আমার কথা শুনেন নি। কি আর করা? এখন
আমাদের হাতে কিছু নাই। আপনারা আল্লাহ কে ডাকেন।
এতোক্ষনে তামান্নার বন্ধুরা এসে হাজির হয়েছে
হাসপাতালে। সবার মাঝেই হাহাকার। কেউ কেউ
আজমানকে দেখে বলছে, আপনি তো আজমান? আপনার
কথা কতো শুনেছি। কিরে রোদ, আজমান এখানে
কীভাবে?
রোদ কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
চুপচাপ হয়ে বসে আছে আ.সি.ইউ য়ের সামনে।
হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে বললো,
: আপনি কেন করলেন এমনটা?
: আমি..
: জানেন তো। আমি তামান্নাকে চিনি আজ ৫ বছর। আমি
প্রথম যেদিন ওকে দেখেছিলাম, ঐ দিনই ওর প্রেমে পড়ে
গিয়েছিলাম। প্রেমে না পড়ার কোনো কারণও ছিলো
না,
তামান্না যখন হাসতো তখন মনের মাঝে অন্যরকম একটা
অনুভুতি তৈরী হতো। কিন্তু আফসোস আমি কখনও ওকে মন
খুলে হাসতে দেখে নি।
আমি যখন ওকে বলেছিলাম, আমি তোমাকে ভালোবেসে
ফেলেছি। আমি তোমার হাতের তিলটার প্রেমে পড়েছি।
ঐ দিন ক্যাম্পাস ভর্তি লোকের সামনে, তামান্না
হাউমাউ করে কেদেছিলো। কেন কেদেছিলো, আমি
কিছুই বুঝি নাই। ঐ দিন আবারও আমি ওর প্রেমে
পড়েছিলাম, ওর কান্নার প্রেমে পড়েছিলাম। একটা
মেয়ের কান্নায় এতোটা আকুলতা থাকতে পারে তা
হয়তো ওর কান্নাটা না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
দুদিন তামান্নার সাথে যোগাযোগ তো দূরের কথা,
দেখাও হয় নি। তারপর ওর এক বান্ধুবীর কাছ থেকে
জানতে পারি আপনার কথা। আপনিও নাকি ওর হাতের
তিলের প্রেমে পড়েছিলেন। তাই আমার মুখে তিলের
কথা শুনে এভাবে কেদেছিলো তামান্না।
এরপর আর কোনোদিন তামান্নার সাথে কথা হয় নি
আমার। আসলে তামান্নায় চাইতো না, কথা বলতে।
এগুলা শুনে আজমান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে। কি
বলবে সে? কি করবে সে?
সে তামান্নাকে চায়। খুব করে চায় তামান্নার হাতের
তিলটায় ওর ঠোট ছোয়াতে।
রিজু ওর মা বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছে
হাসপাতালে। তামান্নার মা সবটা জানার পর চিৎকার
করে কাদছে, আর বলছে,
: তোমার জন্য আমি আমার মেয়েকে হারাতে বসেছি।
রিজু, সবটা তোর বাবার জন্য। তোর বাবা যদি জেদ না
করতো তাহলে আমার মেয়ে আমার বুকে থাকতো।
এমন সময় ডাঃ..
আই এম সরি। আমরা রোগীকে বাচাতে পারবো না ।
কোনোকিছু আমাদের হাতে নাই। আপনারা একজন একজন
করে রোগীর সাথে দেখা করে আসেন। সাবধান, রোগীকে
ডিস্টার্ব করবেন না।
ওর মা বলছে, রিজুর বাব, আমি আগে যাবো। আমি
দেখবো আমার মেয়েকে।
তামান্নার মা বাবা দুজনেই গিয়ে দেখা করে আসছেন
তামান্নার সাথে। এখন বাইরে দাড়িয়ে তামান্নার বাবা
চিৎকার করে কাদছে। ওর মা, ওর বাবাকে সান্তনা
দিচ্ছে।
রিজু, দেখা করে এসে বললো। আজমান ভাই, আপু আপনার
জন্য অপেক্ষা করছে। আর রোদ কে? ওকে দেখতে চায়
আপু।
রোদ ভিড়ের মধ্যে থেকে চিৎকার করে বলে উঠলো আমি
রোদ। বুবু আমাকে দেখতে চাচ্ছে। আমি যাবো।
রোদকে নিয়ে আ.সি.ইউ এর ভিতরে ঢুকলাম। তামান্না
ক্লান্ত পথিকের মতো তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
রোদকে ইশারা দিয়ে ওর কাছে যেতে বললো,,
: রোদ কাদতাছিস কেন?
: বুবু ডাঃ কি বলে এগুলা? তুমি বলো না, সবটা মিথ্যা।
তোমার কিছু হয় নাই।
: রোদ, কান্না থামায়ও তুমি। তুমি এখন বড় হয়েছো।
নিজেরটা বুঝো এখন। তুমি আমার মা বাবার সাথে চলে
যাবা, ওদের সাথে থাকবা। ভালোভাবে থাকবা।
ঠিকমতো পড়াশোনা করবা।
: বুবু, আমি তোমার সাথে থাকবো। তুমি তো জানো আমি
তোমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারি না। বুবু, চলো না, বাসায়
চলে যায়। বুবু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
ডাঃএসে বললেন, ভিতরে ঢুকে কান্নাকাটি করছেন
কেন? বাইরে যান। প্লিজ।
আজমান নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে আছে এক পাশে।
রোদেলা কাঁদতে কাঁদতে আই.সি.ইউ থেকে বেরিয়ে
গেলো।
তামান্না তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কি করবো আমি?
আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে।
: আজমান, একটু কাছে আসবা আমার?
: হুম।
: দূর, তুমিও ওদের মতো হয়ে গেলা নাকি? তুমি কাদতাছো
কেন?
: তামান্না আমাকে মাফ করে দাও। আমি ভুল করেছি।
আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। প্লিজ তামান্না
আমাকে ছেড়ে যেও না।
: আজমান, বড্ড দেরী হয়ে গেছে। আমার যে আর সময় নাই।
আমাকে যেতে হবে।
: নাহ, তামান্না তুমি আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও না।
তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে মাফ করতে
পারবো না।
: একবার বলবা, ভালবাসি? প্লিজ..
: তামান্না আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। খুব
ভালোবাসি আমি তোমাকে।
: একবার স্পর্শ করবা আমার তিলটাই?
তিলটা কতো বছর ধরে অভুক্ত হয়ে আছে।
: তামান্না তুমি কোথায়ও যাবা না। তুমি আমার
তামান্না। ডাঃ আপনি আমার তামান্নাকে বাচান। আমি
তামান্নাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আপনি আমাকে
প্রায়শ্চিত্ত করার একবার সুযোগ দিন।
: আজমান, আমাকে শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরো। খুব
শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আমায়। আমি তোমাকে ছাড়া
যেতে চাই না। আমি তো আমার সুখ পাখিটা মাত্র
পেয়েছি কিন্তু আল্লাহ আমাকে কেন সময় দিলো না
আজমান। আজমান আমি বাচতে চাই আজমান।
এটা বলতে বলতে নিস্তেজ হয়ে গেলো তামান্না।
: তামান্না কথা বলছো না কেন? তামান্না তুমি চুপ হয়ে
গেছো কেন? এই কথা বলো না তুমি। কেন কথা বলছো না
তুমি?
ডাঃ আমার তামান্না কথা বলছে না। কথা বলছে না
আমার তামান্না।
তামান্না পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে আজ
প্রায় ৫ বছর হবে। আজমান এখন মানসিক হাসপাতালের
বাসিন্দা। মাঝে মাঝেই আজমান চিৎকার দিয়ে বলে
উঠে, আমার বড্ড পিপাসা পেয়েছে। তামান্না তোমার
তিলে একটু ঠোটটা ছোয়াতে চাই।
..
রোদ এখন তামান্নার মা বাবার সাথে ময়মনসিংহ থাকে।
রিজুর সাথে রোদের বিয়ে হয়েছে।
( পরিনতি পেলো না আর একটা ভালোবাসা। সুখপাখিটা
তামান্নার কাছে ধরা দিলেও বিধাতা তামান্না কে সময়
দিলো না। তামান্না চিরবিদায় নিলো। রোদ তার বুবুকে
হারালো। তামান্নার পরিবার তামান্নাকে
হারিয়েছিলো প্রায় অনেক বছর আগে, তবু এটা জানতো
তামান্না আছে কিন্তু তারা এখন জানে তামান্না আর
ফিরে আসবে না। আজমান সুখপাখি ছাড়া পড়ে আছে
মানসিক হাসপাতালে। সুখপাখিটা বিধাতা কারো হতে
দিলো না।পূর্ণতা পেলো না ভালোবাসা)
সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে