গল্প:-♥ফুলশয্যা♥
পর্ব:- ০৬
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
আবির-নীলিমার এমন চোখাচোখি দেখে ইমন মণিকে ধাক্কা দিয়ে সে দৃশ্য দেখায়। মণি কিছুক্ষণ সে দৃশ্য অবলোকন করে একটা বার কয়েক শুকনো কাশি দিয়ে রসিকতার ছলে বলে__
“এখানে আপনারা ছাড়াও আরো জলজ্যান্ত দু’দুটো প্রাণী আছে ভাইয়া।”
আবির-নীলিমা একে অপরের দিক থেকে লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয়।
তারপর সবাই চুপচাপ খাওয়া শুরু করে। নীলিমা’কে আবির একটা বারের জন্যও বলেনি খেয়ে নাও কিংবা খেয়েছ???
নীলিমাও তাই খাইনি।
সবার খাওয়া শেষ।
আবির চলে গেলে ইমন-মণিকে নীলিমা ওপরে ওর রুমে পাঠিয়ে দিয়ে বাসনপত্তর পরিষ্কার করার কাজে লেগে যায়।বাসনপত্তর ধোঁয়ার সময় নীলিমা টের পায় ওর আঙ্গুলটা সত্যি’ই অনেকাংশে কেঁটে গেছে।
বা’হাত দিয়ে নীলিমা কোনোরকম ভরা বালতিতে বাসনপত্তর চুবিয়ে উঠিয়ে ফেলে। তারপর ধুয়া বাসনগুলো ধাপে ধাপে সাজিয়ে রেখে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
-ঠিক সে সময় টান পরে নীলিমার হাতে। মনে হচ্ছে পিছন থেকে কেউ হাতটা টেনে ধরে আছে। নীলিমা পিছু ফিরে তাকালো। আবির নীলিমার হাতটা টেনে দাঁড়িয়ে বলছে__
“চলো খাবে…”
নীলিমা পলকহীনভাবে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে_
হঠাৎ করে আবিরের এতটা চেঞ্জ কিভাবে সম্ভব?
আবির:- কি হলো? খাবে বলছি শুনছ না??? বসো….
আবির নীলিমার দিকে একটা চেয়ার টেনে দেয়। নীলিমা অবুঝ শিশুর মত কোনো কথা না বলে বসে পরে চেয়ারে। আবির প্লেটে ভাত বেড়ে এনে তরকারী দিয়ে এগিয়ে দেয় নীলিমার দিকে।
_ নাও…এবার খেয়ে নাও।
নীলিমা এবারো কোনো কথা না বলে হাত ধূয়ে যেই না ভাত মাখতে যাবে ওমনি উহ্ করে কুকিয়ে উঠল।
কাঁটাস্থানে তরকারীর মরিচ লেগে যাওয়ায় প্রচন্ড জ্বলছে সে স্থান। আবির নীলিমার সামনে থেকে প্লেট’টা নিয়ে যায়। অতঃপর নিজে হাত ধূয়ে ভাত মাখে। আবির ভাত মেখে নীলিমাকে বলে চেয়ারটা সামনে নিয়ে আসতে যাতে ভাত মুখে তুলে দিতে সুবিধে হয় কিন্তু নীলিমা ওর জায়গা থেকে চুল পরিমান নড়েনি।শেষে আবির নিজেই ওর চেয়ার’টা নীলিমার কাছে টেনে নেয়। তারপর চেয়ারে বসে প্লেটটা হাতে নেয়। একমুঠো ভাত হাতে নিয়ে নীলিমাকে হা করতে বলে। পরপর তিনবার বলার পর মুখ খুলে নীলিমা। হা করে সে।
আবির নীলিমার মুখের ভিতর একমুঠো ভাত পুরে দেয়। প্রথমে একটু লজ্জা পেলেও পরে আবিরের ধমক শুনে অনায়াসে আবিরের দেওয়া মুঠোর পর মুঠো ভাত গিলে খেয়ে নেয় নীলিমা। খাওয়া শেষে পানি খাওয়ার জন্য যেই গ্লাসটি আনতে যাবে ওমনি আবির গ্লাসটা ধরে ফেলে। তারপর_
” তুমি না! আমি খাইয়ে দিচ্ছি…!”
নীলিমা অবুঝ বালিকার মত আবিরের কথা শুনে নিয়ে আবিরের হাতেই পানি খেয়ে নিল।
খাওয়া শেষে আবির নীলিমাকে বসিয়ে প্লেট ধূয়ে রেখে আসে। তারপর_
আবির:- কি হলো? চলো….
নাকি রাত’টা এখানেই কাটাবে ভাবছ???
নীলিমা:- আচ্ছা…..
আবির :- কি আচ্ছা???
নীলিমা:- আপনি উপরে যান আমি আসছি।
আবির:- কোনো কথা নয়…
তুমি এখন যাবে আমার সাথে।
নীলিমা:- ঠিক আছে, চলেন…..
আবির-নীলিমা সিড়ি বেয়ে একসাথে উঠলেও উপরে উঠে সিড়ির ডানদিকে মোড় নেয় নীলিমা।
আবির:- দাঁড়াও….
নীলিমা :- কিছু বলবেন???
আবির:- কোথায় যাচ্ছ?????
নীলিমা:- আমার রুমে….
আবির:- ও রুমে ইমন-মণি শুয়ে পরেছে।
নীলিমা:- তাতে কি হয়েছে? আমি ডাক দেয় গিয়ে…?!
আবির:- মাথা নষ্ট???
ওরা এতদূর থেকে জার্নি করে এসে কেবল শুইল আর তুমি কিনা ওদের…(…..)….???
নীলিমা:- তাহলে আমার কি হবে? আমি কোথায় ঘুমাবো???
আবির :- আমার রুমে চলো….
নীলিমা:- আ…আ…আমি???
আ..আ…আপনার রুমে????
আবির:- ভয় পেয়েছ???
নীলিমা:-……….
আবির:- কি?!!!
ভয় পেয়েছ?????
নীলিমা:- ভয় পাওয়ার কি আছে? আপনি কি বাগ না ভাল্লুক???
আবির:- তার থেকেও বড় কিছু…..
নীলিমা:- ঠিক বুঝলাম না…..
আবির:- আগে রুমে চলো। তারপর বুঝাচ্ছি…..
নীলিমা:-…………
আবির:- কি হলো? চলো…..
নীলিমা আবিরের পিছুপিছ আবিরের রুমে ঢুকে। রুমে ঢুকে’ই ধপাশ করে আবির দরজাটা লাগিয়ে দেয়। দরজা লাগানোর শব্দে নীলিমা কিছুটা ভরকে যায়। তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে_
“দরজা বন্ধ করছেন কেন?”
ঘুমাবো…
খুব ঘুম পাচ্ছে তাই দরজা বন্ধ করলাম।
নীলিমা কাঁপা স্বরে বলল__
” দরজা’টা বন্ধ করে’ই ঘুমোতে হবে?”
আবির:- জি, বন্ধ করেই ঘুমোতে হবে। কেন তোমার কোনো সমস্যা???”
নীলিমা:- আমি আবার রুমের দরজা বন্ধ করলে ঘুমোতে পারি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।মনে হয় এই বুঝি মরে যাব…..
আবির:- চুপ!
একদম চুপ। আর কখনো যাতে এমন কথা না শুনি। আমি দরজা খুলে দিচ্ছি….
আবির নীলিমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দরজা’টা খুলে দিয়ে আসল।
আবির:- এবার কোনো সমস্যা???
নীলিমা:- না…..
আবির :- এবার তাহলে ঘুমিয়ে পরো।
নীলিমা:-…….
আবির:- কি হলো? আবার গাল ফুলিয়ে বসে আছ যে??? আবার কি সমস্যা???
নীলিমা:- আমি বেড শেয়ার করে শুইতে পারব না।
আবির:- তো…???
নীলিমা:- আমি সোফায় শুইব আর আপনি খাটে শুয়ে থাকুন….
আবির আর কোনো কথা বাড়ালো না।রাগে কটমট করতে করতে বলল_
” ঠিক আছে! তোমার যখন এতই সমস্যা আমার সাথে থাকতে তখন থাকতে হবে না। তবে তোমায় সোফায়ও দিতে পারব না। সোফায় শুইব আমি। তুমি শুইবে খাটে….”
নীলিমা:- ঠিক আছে….
আবির:- হুম, এবার শুয়ে পরো।একটু পর ফজর নামাজের আজান দিবে।
নীলিমাকে খাটে শুইতে বলে আবির সোফায় শুয়ে পরে।
নীলিমা খাটে শুয়ে আছে আর ভাবছে__
” এ আমি কোন সে মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি? আমি তো কারো মায়ার বন্ধনে আটকা পরতে চাই না। তবে কেন ওনার জন্য এত খারাপ লাগছে?
কেন বুকটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে???
নীলিমা বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে। ঘুমতো ধরা দিচ্ছে’ই না উল্টো কেউ যেন বুকের ভেতর হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে….
নীলিমা একবার কুলবালিশ বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে তো আরেকবার কুলবালিশ ছেড়ে এপাশ-ওপাশ করছে…
এ এক অন্যরকম দৃশ্য।
যা সোফায় শুয়ে থেকে আড়চোখে খেয়াল করছে আবির।
কিছুক্ষণ পর_
আবির সোফা থেকে উঠে পরে। শরীরটা টানা দিয়ে বলে_
” সারাদিনে অনেক ধকল গেছে শরীরের উপর দিয়ে। খুব ঘুম পাচ্ছে। এখন ঘুমিয়ে পরলে আবার একটু পরই উঠে পরতে হবে। রান্না বান্নায় হেল্প করতে হবে। আমি বরং কাজের লোকদের ফোন করে জানিয়ে দেই!
আবির কাজের লোকদের ফোন করে বলে সকালে ৭টার ভেতর যাতে বাসায় থাকে। তারপর ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট হাতে নিয়ে বলে__
” এই হলো ঘুমের ট্যাবলেট! আজ একসাথে ৫টা খাবো। তারপর ঘুম দিব। আহা! কি মজার ঘুম…????”
আবির ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট থেকে ৫টা ট্যাবলেট খেয়ে সোফায় শুয়ে পরে। এদিকে খাটে শুয়ে নীলিমা চোখ বন্ধ করে রাখলেও আবিরের কথাগুলো ঠিক শুনতে পেল। আবির এখন ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমের প্রস্ততি নিচ্ছে। না জানি কতক্ষণ ধরে ঘুমায়? ওনি আবার জার্নি করে এসেছেন। যায়…
ওনাকে বরং সোফা থেকে ডেকে আনি। খাটে শুইতে বলি। একটা রাতেরই তো ব্যাপার!!! ”
নীলিমা আবিরকে ডেকে তুলে।তারপর_
আবির :- নীলিমা! আমি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছি।খুব ঘুম পাচ্ছে।ডাকো কেন???
নীলিমা:-ইয়ে মানে বলছিলাম কি আপনি খাটে ঘুমাতে পারেন। আমার কোনো সমস্যা হবে না….??
আবির:- কিন্তু আমার সমস্যা হবে মিসেস…..
নীলিমা:- কি সমস্যা???
আবির:- আমি ঘুমের সময় একজায়গায় স্থির থাকি না। হাত-পা ছুড়াছুড়ি করি। আর সাথে যদি কেউ থাকে তাহলে তো কোনো কথায় নেই। একেবারে সাথের মানুষটাকে কুলবালিশ বানিয়ে হাত-পা উঠিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকি….??
নীলিমা:-……
আবির :- হা, হা চুপ হয়ে গেলে???
নীলিমা:- আপনি শুইতে পারেন।আমার কোনো অসুবিধে হবে না। আর আমি কিছু মনেও করব না।
আবির:- Oh,Really?
নীলিমা:- হুম…..
আবির :- দেখো আবার পরে কোনো ঝামেলা যেন না হয়…!!!
নীলিমা:- আমি কোনো ঝামেলা করব না।আপনি নিশ্চিন্তে শুয়ে পরুন।
আবির আর কোনো কথা না বলে একলাফে সোফা থেকে খাটে চলে আসে। তারপর সোজা হয়ে শুয়ে চোখটা বন্ধ করে ফেলে।
একটু পরই আজান দিয়ে দেয়।
নীলিমা আবিরকে ডাকতে গিয়েও ডাকল না যদি ঘুমের ব্যাঘাত হয় সে জন্য।নীলিমা অজু করে নামাজ পরার জন্য উঠে নিচে চলে গেলে আবিরও লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে। তারপর চটজলদি অজু করে নামাজটা আদায় করে নেই রুমে।অতঃপর নীলিমা আসার আগেই পূর্বেই ন্যয় ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে।
এদিকে নীলিমা এসে দেখে আবির তখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। নীলিমা আবিরের কপালে গিয়ে ছোট্ট একটা চুমু এঁকে দিয়ে সোফায় শুয়ে পরল। যেহেতু এটা শহর এলাকা তাই নামাজ পরে একবার শুইলে সকাল আট’টায় উঠলেও নো প্রবলেম….
নীলিমা একটা ঘুম দেওয়ার জন্য সোফায় গিয়ে শুইল।
কিন্তু আবিরের মুখের দিকে তাকাতেই ভেতরটা কেমন অস্থির অস্থির লাগছে ওর। নীলিমা সোফায় শুতে পারল না। দরজাটা বন্ধ করে ধীর পায়ে আবিরের পাশে গিয়ে শুয়ে পরে। আবিরের পাশে গিয়ে শুয়ার পরও নীলিমার অস্থির অস্থির ভাবটা যেন কাটেনি। নীলিমা মিনিট ত্রিশেক বিছানায় এপাশ ওপাশ করে।এরই মাঝে বার কয়েক আবিরকে ছুঁতে গিয়েও ছুঁইনি।
এদিকে পুরো ব্যাপার চোখ বোজে থেকেও জেনে যায় আবির।
বুঝতে পারে আবির একটা হাত বার বার ওর পিঠের খুব কাছে এসেও সরে গেছে। আবির চোখ বোজেই ওপাশ থেকে নীলিমার মুখী হয়ে শুইলো। নীলিমা আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে জল ছলছল চোখে। একটু পর’ই আবির ইচ্ছেকৃতভাবেই নীলিমার উপর ওর একটা হাত রাখে। নীলিমা হাতটা সরিয়ে দেয়।এবার আবির ঘুমের মধ্যেই নীলিমার অনেকটা কাছে চলে আসে। তারপর আলতো করে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের ভান করেই। আবির জানে নীলিমা ওকে এখনি সরিয়ে দিবে।
কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেল নীলিমা কিছুই করছে না। আবির ব্যাপারটা বুঝার জন্য নীলিমার থেকে একটু পিছু সরে যাচ্ছিল ঠিক তখন’ই নীলিমা আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবির আবারো নীলিমা আলতো করে জড়িয়ে ধরে। নীলিমা আবিরকে প্রথমে জড়িয়ে ধরে। তারপর শক্ত করে জাপটে ধরে। শক্ত থেকে আরো শক্ত করে নীলিমা আবিরকে জড়িয়ে ধরে আছে। আবির বার কয়েক চেষ্টা করে সারিয়ে নিতে কিন্তু পারেনি। নীলিমা এমন নিবিড়ভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে যে আবির সেখান থেকে বেরোতে পারছে না।
আবির আর চেষ্টা করেনি ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। আবির অবশ্য ঘুমাইনি তবে চোখ বোজে আছে….
একটু পর নীলিমা আবিরকে ছেড়ে দেয়। উঠে চলে যায় আবিরের কাছ থেকে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল।
নীলিমা রুমে আসছে না দেখে আবির শুয়া থেকে উঠে পরে। বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বাথরুম ওয়াশরুম খুঁজে ছাদে যায় আবির। দুর থেকেই আবির দেখে নীলিমা ছাদের কর্ণারে চুপটি করে দু’হাটু চেঁপে বসে আছে। আবির একটু কাছে যেতেই টের পায় নীলিমা কাঁদছে। আবির আর একমুহূর্ত সেখানে দাঁড়ালো না। দৌঁড়ে নিচে নেমে যায়। মণির কথামতো ফোন করে আবির আবিরের বাবা-মা, বোন দুলাভাইকে।
আবির ফোন করে জানাই নীলিমা মা হতে চলেছে। ওকে যেন সবাই এসে দেখে যায়….
এদিকে কাজের লোক চলে আসে।
মণি ছাদে যায় নীলিমাকে আনতে।
সন্ধ্যার পর পর’ই আবিরের পুরো ফ্যামিলি এসে উপস্থিত হয় ঢাকায়। সবাই এসেই কি খুশি।
আবিরের মা তো খুশিতে আত্মহারা।
নীলিমাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমো খেতে থাকে। আবিরের বাবা এসে নীলিমার হাতে হরেকরকমের ফলের প্যাক ধরিয়ে দিয়ে বলে__
“এগুলো তোমার জন্য। তুমি খাবে সব।”
আবিরের বোন এসে নীলিমার পাশে বসে বলল__
” শুনো নীলিমা! একদম কাজকর্ম করবে না। সবসময় হাসিখুশি থাকবে আর টেনশন মুক্ত থাকবে।”
আবিরের দুলাভাই_
” নীলিমা! এটা কিন্তু তোমার প্রথম বেবি। সো বি কেয়ারফুল।”
কাজের মেয়ে নীলিমার হাতে একটা বাচ্চার ক্যালেন্ডার ধরিয়ে দিয়ে বলল সেটা যাতে প্রতিদিন দেখে।তাহলে ঐ রকম চাঁদের মত সুন্দর বাচ্চা হবে।
নাহ!
আর পারছে না নীলিমা।
অনেক হয়েছে।
এবার কথা বলতেই হবে আবিরের সাথে….
নীলিমা হুট করে আবিরের রুমে প্রবেশ করে। আবির তখন বসে ল্যাপটপ টিপছিল, নীলিমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে। যেকোনো মুহূর্তে একটা কিছু ঘটে যেতে পারে। আবির আগেবাগেই ল্যাপটপটা বন্ধ করে নীলিমার দিকে তাকালো।
নীলিমা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল__
” কেন করলেন এমনটি?”
আবির নীলিমাকে বসতে বললে নীলিমার জবাব__
” আমি বসতে আসিনি। আমি জানতে এসেছি। জেনেই চলে যাব।”
আবির:- নীলিমা!
তুমি শান্ত হয়ে বসো আগে।
নীলিমা:- আমি কিভাবে শান্ত হবো?
আমি এটা কিভাবে করলেন? কেমন করে আপনি ওদের এত বড় মিথ্যেটা বলতে পারলেন???
ওরা সত্যিটা যখন জানতে পারবে, তখন কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছেন? বুঝতে পারছেন ওরা কতটা কষ্ট পাবে???
কেন করলেন এমনটা???
সত্যিটা জানার পর ওদের আমি কিভাবে মুখ দেখাব???
আবির:- শান্ত হও নীলিমা।
মাথা ঠান্ডা করো….
নীলিমা:- আমি পারছি না শান্ত হতে।পারছি না মাথা ঠান্ডা করতে।
আবির:- আমি বুঝতে পারিনি এমন হয়ে যাবে। পরিণাম না ভেবেই আমি এমনটা করছি। স্যরি….
নীলিমা:- Sorry, বললে সবকিছুর সমাধান হয়ে যায় না আবির সাহেব।
আপনি ভুল করছেন। অনেক বড় ভুল। যার কোনো সঠিক সমাধান নেই।
নীলিমা চলে যাচ্ছিল।
আবির পিছন থেকে ডেকে বলে__
“কোথায় যাচ্ছ?”
নীলিমা:- মায়ের কাছে যাচ্ছি সব সত্যি বলতে। বলতে যাচ্ছি ওরা যা জানে সব মিথ্যে….
আবির:- নীলিমা প্লিজ এ কাজ করো না। ওরা কষ্ট পাবে জানলে….
নীলিমা:- ওরা যখন পরে সত্যিটা জানবে তখন? ওদের সব ধারণা মিথ্যে এটা শুনলে ওরা কি পাবে না কষ্ট???
আবির:- না….পাবে…..না……
নীলিমা:- মানে????
আবির:- মানে ওরা কষ্ট পাবে না।
নীলিমা:- কিভাবে সম্ভব???
আবির:- চলো না আমরা মিথ্যেটাকে সত্যি করে ফেলি….
নীলিমা:- মানে????
আবির:- অতি সহজ কথা। সেটাও বুঝতে পারছ না???
তুমি না সায়েন্সের স্টুডেন্ট ছিলে?
বায়োলজিতে পড়’নি জীবের বিকাশ সম্পর্ক???
পড়’নি কিভাবে কালক্রমে জীবনের উৎপত্তি আর বিকাশ ঘটে চলেছে???
নীলিমা:- You…..????
আবির:- চলো না সেই নিয়মেই একটু সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আমাদের বাবা-মা’কে উপহার দেয় ডজনখানেক নাতি-নাতনী…..??
নীলিমা:- আ….প….আপনি…??????
আবির:- ?????
চলবে………