গল্প : হৃদয়ের অন্তরালে !!

0
1517

গল্প : হৃদয়ের অন্তরালে !!

#Writer : Tannoy(পিচ্ছি ফাজিল)

এই দিকে নীলা আপুকে ৭০ বার,
প্রপোজ করে ৭০ টার মতো চর
খাইছি।
নীলা আপুর পিছন পিছন আসতেছি,
প্রতিদিন আসি ওইটাই আমার নিত্যদিন
এর কাজ।
কলেজ ছুটি হওয়ার পর নীলা আপুর
পিছন পিছন আসা, ওনি অবস্য
কিছু টের পান না কারণ আমি তো
এখন লুকাই লুকাই আসি।
কারণ শেষ দিন বলে দিছে এই বার
দেখলে নাকি পুলিশে দিবে।
আমি আবার পুলিশ দেখে
ভয় পাই তাই লুকাই লুকাই আসি।
ভালই দুইদিন লুকাই লুকাই আসছিলাম,
কিন্তুু না চোরের দশ দিন আর মালিকের
একদিন কথাটা একদম লাইগা গেল।
– ওই তন্নয় এই দিকে শোন (নীলা)।
– আমাকে বলছ আপু।
– না তো কে তুই, তারাতারি আয় না হলে কিন্তুু।
– হুমমমমম আসছি বলো।
– কতদিন ধরে লুকাই লুকাই ফলো করতেছিস।
– কতদিন মানে কী? দুই দিন আগেই না ক্যালাইলা। মাত্র আজকে আসতে গিয়া ধরা খাইছি।
– তোরে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি, সত্যি বল নয়তো আবার একটা চর খাবি।
– আসলে না মানে গত কাল থেকে, কিন্তুু আজকেই তো ধরা খেয়ে গেলাম।
– তার মানে তোর মাথা থেকে ওই ভূত নামে
নি এখন ও।
– আরে ভূত আবার কই, থাকলে না নামবে।
– আচ্ছা কেন লুকাই লুকাই আসছিলি তাই বল আগে।
– কেন আবার আমি মকলেজ কাকুর দোকানে সন্দেস নিতে যাচ্ছিলাম।
– আবার মিথ্যে কথা, এবার সত্যি সত্যি চর খাবি।
– ও হ্যা মনে পড়েছে, আপু আমি না তোমাকে
ভালাবাসি। হি হি, বলেই দৌড়
আজকে বেঁচে গেছি, ওরে বাবা এক দৌড়ে
বাসাই।

হায় হায় আমাদের তো পরিচয়টাই দেওয়া হয় নাই।
আমি তন্নয় একাদশ শ্রেণীতে পড়ি, আর
নীলা আপু এবার দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে।
সেই একবছর থেকে প্রপোজ করেই যাচ্ছি,
আর ওনি চর মেরেই যাচ্ছে।
আরে বাবা ছোট্ট করে একটু ভালবাসি কইলে
কিতা হয়।

ঘরে বসে বসে গেমস খেলছি,
হঠাৎ আব্বার ডাক।
– সারাদিন তো তোর কোন কাজ নাই,
যা নীলাদের বাসাই গিয়ে দুধটা দিয়ে
আয়।
– ও হ্যা আমার খুব গরিব না হলে ও
হালকা গরিব, বাবার দুধের বিজনেস
হা হা।
দুধটা নিয়ে নীলা আপুদের বাসাই যাচ্ছি
আর ভাবছি, ওরা কত বড়লোক আবপমট ্রার
আমার থেকে ও এক বছরের বড়।
আর আমি কী না ওরেই ভালবাসতে গেলাম,
দূর কী ভাবছি এই গুলো।
অনেক বড় বাড়ি আপুদের, আর আমাদের বাড়িটা এর ১০ ভাগের এক ভাগ।
আবার কেমন লজ্জা লাগছে,
একজন দুধ ওয়ালার ছেলে নাকি
ওকে ভালবাসার কথা বলে।
ভাবতে ভাবতে কলিং বেলটা চাপ
দিলাম।
আন্টি বের হয়ে এল আন্টি জানে
আমি দুধ ওয়ালার ছেলে,
কিন্তুু নীলা আপু জানত না, মনে
হয় আজকে যেনে যাবে।
– আন্টি এই নেন দুধ।
– ওহহহ তন্নয় এসো ভিতরে এসো।
– না না আন্টি থাক আজকে না অন্য একদিন
আসব।
– আবার বড়দের মুখে মুখে কথা এসো ভিতরে
এসো।
– মাথা নিচু করে ভিতরে আসলাম।
– নীলা তোর হাবিবুর আংকের এর ছেলে আসছে কিছু খেতে দে।
– নীলা আপু বের হয়ে আসছে, আমি মাথা নিচু
করে আছি।
তা ছারা কী করব বুঝতে পারছি না।
আপু এমন করে তাকায় আছে যেন ভূত
দেখছে।
– ওই কুত্তা তুই আমার এখানে ও চলে আসছিস,
তোর সাহস তো কম না, একটা……..।
– থামো আপু আর বলতে হবে না, আমার
ওইটা শুনতে ভাল লাগে না। আমি চলে
যাচ্ছি।
বলে চলে আসলাম,
আমি যানি আপু আমাকে দুধ ওয়ালার ছেলে
বলবে।
থাক ওটা আমার সয়ে গেছে,
না আর নীলা আপুর পিছন পিছন
ঘুরব না,
ওরা কত বড় মানুষ আর আমি তো
সামান্য দুধ ওয়ালার ছেলে।
আমার না আছে টাকা না আছে ওদের মতো
বড় বাড়ি, গাড়ি।
বাসাই এসে শুয়ে আছি আর গান শুনছি।
( তুই হাঁসলেই, কাছে আসলেই,
ভালবাসলেই
খুব পাগল পাগল লাগে।
তোকে দেখে দেখতেই আবার
যেন দেখার ইচ্ছে জাগে।)

মার ডাকে কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরলাম।
– তন্নয় খেতে আয়।
– হুমমমমম যাচ্ছি, একটু খেয়ে উঠে আসলাম,
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি না আর নীলা আপুকে
মনে করব না, ভুলে যাব একদম,
ও কী আর আমি কী ?
কী আছে আমার, ভাবতে ভাবতে ঘুমাই
পড়ছি।

সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে কলেজে যাচ্ছি,
নীলা আপুদের বাসার সামনে দেখি।
নীলা আপু দাঁড়াই আছে,
না ওই দিয়ে আর যাব না, ঘুরে
অন্য দিক দিয়ে আসলাম।

কলেজ এর বারান্দাই বসে আছি,
একটু দূরে দেখি আপু অন্য একটা ছেলের
সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।
থাক বলুক আমার কী,
আমি চলে আসলাম ক্লাসে।
ভাল লাগছে না, তবু কিছু করার
নাই ভূলে যেতেই হবে।

বাসাই আসছিলাম, সামনে দেখি আপু তার বান্ধবীদের সাথে হেঁসে হেঁসে গল্প করতে করতে
যাচ্ছে।
আমি পিছন ফিরে চলে আসলাম।
এমন করে ভালই কেটে যাচ্ছিল
পনের দিন থেকে আর তাকে ডিস্টার্ব
করি নাই,
একদিন বিকেলে কানে হেডফোন দিয়ে
তুপুর গান শুনছি আর মাথা নিচু করে আর হাঁটছি।
একটা নির্জন জায়গায় চলে আসছি,
সামনে নদী, নদীর পারে বসে আছি আর
একটা দুইটা ঢিল পানিতে ছুঁড়ে মারছি।
ডান দিকে তাকাতেই দেখলাম নীলা
আপু একটু ছেলের সাথে কী যেন বলছে,
মনে হয় ঝগড়া করছে, হঠাৎ ঠাসসসস
ছেলেটার গালে।
পোলাটা রেগে চলে গেল।
আগে আমি অনেক খাইছি, পোলাটা মনে হয়
আজকে নতুন।
আবার আমার কাজে মন দিলাম,
ঢিল ছুঁড়ে মারছি।
একটু পরে বুঝতে পালাম কেউ মনে
হয় আমার পাশে বসে কাঁদছে।
হেঁডফোন টা খুঁলে ফেল্লাম,
পাশে তাঁকাই দেখি নীলা আপু।
কিছুই বলিনি আবার আমার কাজে
মন দিলাম।
একটু পড়ে আপু বলল ওই হারামী
তুই আর আমার পিছু নিস না কেন।
– এমনি।
– এমনি মানে কেন।
– আরে শুধু শুধু তোমাকে ডিস্টার্ব করে
লাভ কী? তাই।
– আমি একদিন বলছি আমি ডিস্টার্ব হই।
– কিছু বললাম না চুপ করে আছি।
– ওই কী হল কিছু বল না, আগে তো
খুব বক বক করতি।
– আমি বক বক করা ভূলে গেছি,
– এমন করছিস কেন।
– আরে আমি কই দুধ ওয়ালার ছেলে আর তুমি কত বড় লোকের মেয়ে।
কেউ দেখলে কী মনে করবে।
– খুব তো কথা শিখেছিস।
– হুমমমমম, এখন বাসাই যাব, বলে উঠে
চলে আসলাম।
– ওই দাঁড়া আমি ও যাব।
– হুমমমমম।
– তন্নয় একট কথা বলব তোকে।
– হুমমমমম বলো।
– আজকে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
– আমি কী করব এখন।
– আরে ব্রেকআপ হলে সবাই কেমন কাঁদে না।
– আমার কোনদিন হয় নাই তাই জানি না।
– আর আমার ভাল লাগছে।
– হুমমমম ভাল, এখন ডান্স করো।
– ও কুত্তা, তোরে দেখলেই কেমন আমার
মন ভাল হয়ে যায়।
আয় তোর একটা ছবি তুলি।
– কেন।
– যখন আমার মন খারাপ হবে তখন তোরে দেখব তাই, এখন একটু এই দিকে তাঁকা।
এই তো হয়ে গেছে।
তোর ফোনটা এখন দে।
– কেন।
– দিতে বলছি দিবি ব্যাস।
– হুমমমমম নাও।
– ছি ছি কী ফোন ব্যাবহার করিস তুই।
– তোমাদের মতো আমরা বড়লোক
না, তোমার আই ফোন সেভেন এর টাকা
দিয়ে আমাদের ফ্যামিলি ৩ মাস চলতে পারবে।
– হুমমমমম হইছে, এইনে আমার নাম্বার সেভ
করে দিলাম আর তোর নাম্বার ও নিছি।
রাতে ফোন করবি কেমন।
– না আমার ফোনে টাকা থাকে না, সিমের মেয়াদ মনে হয় শেষ।
– ওকে ওকে আমি করব।
– হুমমমমম।
– এখন লক্ষী ছেলের মতো বাসাই যা।
বলে নীলা ওর বাসাই চলে গেল।
আমি বাসাই এসে রুবিক্স কিউব
মিলাইতেছি।

হঠাৎ আমার ফোনে ফোন আসল,
স্কিনে দেখি নীলা আপুর নাম্বার।
– হ্যালো।
– কী করিস কিউট বাবু।
– কিছু না বসে বসে রুবিক্স কিউব মিলাই।
– কীইইই সত্যি, আমাকে একটু শিখাবি।
– কেন।
– এমনি,,, শিখাবি বলছি শিখাবি।
– আচ্ছা।
– হুমমমমম কালকে কলেজে এসেই শিখাবি।
– হুমমমমম আচ্ছা।
– আরো অনেক কথা বলল, আর আমি শুধু
হুমমমমম, আচ্ছা বলছি।
– এখন বাই কেমন, কালকে কলেজে আসবি।
– হুমমমমম আচ্ছা।
রাতে খেয়ে ঘুমাই গেলাম,
সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে খেয়ে রুবিক্স কিউব আর ব্যাগটা নিয়ে কলেজে চলে গেলাম।

কলেজের ভিতরে দেখলাম নীলা আপু
একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।

কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসছিলাস,
হঠাৎ নীলা আপুর ডাক ওই তন্নয় দাঁড়া।
– থেমে গেলাম হুমমমমম বলো।
– তুই আমাকে দেখে চলে আসছিলি কেন।
– আরে তুমি বিজি ছিলে হয়তো তাই
ডিস্টার্ব করলাম না।
– একটা চর দিমু কুত্তা, চল আজকে কলেজ
করব না, নদীর পারে যাব।
– আমার কাছে ২৫ টাকা আছে মাত্র।
– দূর চল আমি আছি না গাধা।
– হুমমমমম চলো।
– নদীর পারে বসে আছি, আর রুবিক্স কিউব
মিলানো শিখাইতেছি।
– ওই আমার মাথাই কিচ্ছু ঢুকছে না।
তন্নয় একটা কথা সত্যি বলবি।
– হুমমমমম বলো।
– আমাকে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে তুই না দেখার ভান কেন করিস।
– চুপ করে আছি।
– আর আমার পিছু নিস না কেন।
সেদিন বাড়ির কথার জন্য রাগ
করে আছিস।
– আরে আপু দূর, আমি সামান্য একটা দুধ
ওয়ালার ছেলে আমি কেন রাগ করব।
তোমরা কত বড়লোক মানুষ।
আমি পিছু নিলে হয়তো ডিস্টার্ব মনে করো
তাই আর যাই না।
– তাই না হারামী ৭০ বার প্রপোজ করার আগে মনে ছিল না।
একটা থাপ্পড় দিমু, কত মিস করছি তোকে
জানিস, তোরে দেখে দেখে অন্য পোলাদের
সাথে কথা বলতাম যাতে তুই কিছু বলিস,
কিন্তুু তুই তো একটা গাধা,
কেঁদে কেঁদে বলছে।
এখন আবার প্রপোজ কর না হলে আবার চর খাবি।
– কিন্তুু আপু।
– আবার আপু নীলা বলবি ওকে।
-হুমমমমম।
– আমি তোমাকে ভালবাসি নীলা।
দৌড়ে আমারে জরাই ধরছে।
আর কেঁদে দিছে।
আমি ও তোকে ভালবাসিরে অনেক।
৭১ এর পর আমাগো দেশটা যেমন
স্বাধীন হইছিল, তেমনি ৭১ বার প্রপোজ করার
পর আমার হৃদয়ের অন্তরাল এর প্রেমটা
ও স্বাধীন হলো।

>>সমাপ্ত< < >>The End

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে